গালে যে কত চিমটি খেয়েছি তার কোন হিসেব নেই। ফোলা গাল,নাদুস নুদুস চেহারার ফলাফল এটা। আম্মার কাছে এসব শুনেছি। কারো কু নজর যাতে না লাগে, এজন্য কপালে কালো টিপ দিয়ে দিতেন আমার আম্মা।

অনেকেই নিজের স্মৃতি কথা লেখেন।ওসব লেখা দেখে লোভ জাগায়, স্মৃতি কথা লেখার ইচ্ছে হলো।কিন্তু লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু(কাহিনী ফ্লপ)হতে পারে জেনেও রিস্কটা নিলাম। যতটা মনে পরে,তা থেকে কিছু মজার কথা লিখবো।

১। আমার প্রথম স্কুলের দিন।এ্যাডাম টিজিং এর শিকার 🙁
তখন কেজি স্কুল ছিলনা। পাঠশালা টাইপের কিছু একটা ছিল। তাও আমাদের বাসা হতে অনেক দুরে। কোথায় ভর্তি করানো হবে ? খুব চিন্তিত আব্বা,আম্মা। এরপর খুব সহজ উপায় বের হলো। আব্বা একটা বালিকা বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি। ক্লাস ওয়ানে আমাকে বালিকা বিদ্যালয়েই ভর্তি করানো হলো।ঐ পিচ্চি বয়সে আবার জেন্ডার কি ? 🙂

গেলাম ক্লাসে,হেড মিস্ট্রেস ম্যাডাম মিষ্ট খাওয়ালেন। খুব খুসি মনে আমেনা বুয়ার হাত ধরে ক্লাসে গেলাম  🙂 সব মেয়ে। আমি একা ছেলে। পাশে বসা মেয়েটা ( পরে নাম জেনেছিলাম, কুন্তলা) অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।
আস্তে জিজ্ঞেস করলো :
কুন্তলা: তুমি কি মেয়ে ?
জিসান: না,আমি ছেলে।
কুন্তলা : না তুমি মেয়ে। এখানে ছেলেরা পড়েনা। দেখনা আমরা সাবই মেয়ে?
জিসান : আমি ছেলে।
ক্লাস চল্লো আরো ৪ টা। ক্লাসের পর সব মেয়েরা আমাকে ঘিরে ধরলো।
কুন্তলা : আমরা সবাই বলছি তুমি মেয়ে।
জিসান : না আমি ছেলে
কুন্তলা : তুমি মেয়ে
মেয়েরা একদম কাছে ছিল আমার । কুন্তলা হঠাৎ আমার হাফ প্যান্ট ধরে নীচে টান দিলো। কোমরের রাবার আমার প্যান্টকে কোমরের সাথে আটকে রাখতে পারলো না 🙁
মেয়েরা সবাই একসাথে চিৎকার : ছেলে ছেলে ছেলে।

মেয়েদের নিয়ে ঐ পিচ্চি বয়সের ভিতিটা আমি এখনো কাটাতে পারিনি 🙁

২। আমার ছেলেবেলা ( এটিও এ্যাডাম টিজিং ) 🙁
ক্লাস টু পর্যন্ত গার্লস স্কুলে পড়ার পর, ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হলাম সরকারী বালক বিদ্যালয়ে। প্রথম ক্লাসের দিন,পরিচিতি: নাম , কে কোন স্কুল হতে আসলাম তা জিজ্ঞেস করছেন ক্লাস টিচার। সবাই বলছে। আমার বলার পালা।

জিসান : আমি ........ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছি।
টিচার : কি ????? কোথায় ????
জিসান : .......... বালিকা বিদ্যালয়।
টিচার অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে। ক্লাস রুমে হাসাহাসি 🙁
আমার পাশে বসা ক্লাসমেট মামুন আমার উরুতে জোরে একটা চিমটি দিল 🙁
মামুন : তুমি মেয়ে ?
জিসান: না আমি ছেলে।
মামুন : তাহলে মেয়েদের স্কুলে পড়েছ কেন ?
জিসান: আব্বা ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাই।
মামুন : তোমার আব্বা তুমি মেয়ে বলে ওখানে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন।
জিসান: না আমি ছেলে
এখানেও ৪ টা ক্লাসের পর টিফিনের বিরতি। ছেলেরা ঘিরে ধরলো। এরপর বালিকা বিদ্যালয়ে যা হয়েছিল তাই। কিছুটা প্রতিরোধের ব্যার্থ চেষ্টা করেছিলাম 🙁
বালক বিদ্যালয়ে পাজামা পরে যেতে হতো। পরদিন হতে কোমরে একটা বারতি রশি দিয়ে পাজামা আটকে যেতাম। আর যেন খুব সহজে কেউ পরীক্ষা করতে না পারে।

এসএসসি পর্যন্ত আর কোন সমস্যা হয় নাই 🙂
কিন্তু এইস এস সি ? 🙁
এটা লেখা কি ঠিক হবে ?

ছবিটা জিসানের দেড় বছর বয়সের। যা ১৯৭১ এর যুদ্ধেও হাড়ায়নি 🙂

0 Shares

৪৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ