অ-লেখা

মুহাম্মদ শামসুল ইকরাম পিরু ২৯ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ০৩:৫৮:০৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

সুগন্ধা নদীর চরে রোজ দুপুরে দলবেধে হুল্লোর হইচই করতে করতে ডুবিয়ে গোছল করতে গিয়ে কাদামাটিতে ছোট ছোট গর্তের দুপাশে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দর্গি মাছ ধরা হাফপ্যান্টওয়ালা বালক, মাছগুলো ধরে কেন আবার নদীতেই ছেড়ে দিতে? নদী তো তোমার ছিলনা যে মাছ গুলো আবার ইচ্ছে মত ধরে নিতে পারবে!

ক্লিওপেট্রা, শুধু ভালোবাসি বলাতেই অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করলে! তোমার শক্তি তেজ বুদ্ধি সৌন্দর্যে কেউ যদি তোমার প্রেমে পড়েই যায় কি করার আছে প্রেমিকের?

হিরো ভাবা বাবুল ভাইয়ের কাছে কৌশল শিখে যাবার পরে সেই নদীর চরে ডুব দিয়ে কাছিমের বাচ্চা ধরে ফেলা, আহা কত শিহরন সে প্রথম ধরার ক্ষন। প্রথম কাছিম ধরার সুখ স্মৃতি এখনো তরতাজা। খোল থেকে মুখ বের করে আঙ্গুল কামড়ে দেয়ায় কাছিমকে ছেড়ে দিয়েছিলে কেন তুমি? মানুষের চেয়ে বহু বছর বেশি বেঁচে থাকা সেই শিশু কাছিম কি বেঁচে আছে এখনো?

কারাগারের সতেরো তম দিনে পায়ে হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায় তোমার সামনে নিয়ে গেল আমাকে তোমার কারারক্ষীরা হে সম্রাজ্ঞী। শিকলের ভারে নুয়ে পড়া আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পস্ট উচ্চারনে বলেছিলাম, ভালোবাসি ভালোবাসি তোমাকে ক্লিওপেট্রা। উচ্চারিত ভালোবাসি ভালোবাসি ধ্বনিতে স্তব্ধ নিথর হয়ে গেল দরবার কক্ষ। ক্রুদ্ধ হবার আগ মুহুর্তে তোমার মুখে একচিলতে হাসি আমি দেখেছি হে সম্রাজ্ঞী। অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করো এই পাগলকে।

স্কুলের সামনের লিচু বাগানের একটি গাছে বিশাল মৌচাক। নারকেলের পাতা, ধান গাছের খড় দিয়ে বানানো বড় বড় লম্বা মশালের মত করে বানিয়ে আগুন ধরিয়ে গেলে মৌচাকের নীচে। যেমনটা চেয়েছিলে আগুন নিভিয়ে প্রচন্ড ধোয়ার কুন্ডলীতে অন্ধকার করে দিলে মৌচাকের আশপাশের স্থান। ধোঁয়ায় মৌমাছি পালিয়ে গেলে হিরো বাবুল উঠে যায় গাছে। রশি দিয়ে বেঁধে মৌমাছির চাক ঝুলিয়ে দেয় তোমার সামনে বালক। তুমি তো তখন জানতে না যে রানী মৌমাছি তখনো তার সাম্রাজ্যে। সেই হুল ফুটানোর ব্যাথা কি এখনো অনুভব করো না?

অন্ধকার প্রকোষ্ঠের আজ কততম দিবস ক্লিওপেট্রা? অন্ধকার গ্রাস করেছে সময়কে। তুমি আসবেই এখানে এই পাগলকে দেখতে এই বিশ্বাস আমার ছিল সম্রাজ্ঞী। অন্ধকারের আলোয় তোমায় দেখে সময় চলে যায় আমার। ঘুমিয়ে পড়লে তোমাকে যদি আর না দেখি? অবশেষে এলে তুমি। মশালের আলোতে দেবীর মতই লাগছে তোমাকে। কেন এলে?

রমাদির বাসার আম গাছে পাখির বাসা। রোজ গাছ বেয়ে উঁকি দিয়ে দেখা, পাখির বাচ্চা আসেনা কেন? মা পাখি হাসপাতাল থেকে বালকের মায়ের মত বাচ্চা কেন আনে না? পাখির হাসপাতাল কি তবে মা পাখি চেনে না? দীর্ঘ ৬ মাস রোজ দেখতে যাওয়া পাখির বাসায় বাচ্চার পরিবর্তে বালক দেখতে পায় চারটি ডিম। অবাক বালকের চিন্তায় ঘুম হয়না, পাখি ডিম পেল কোথায় মুরগির মত!

একটি প্রকোষ্ঠে আর কতদিন? দাঁড়িয়ে বসে থাকতে থাকতে পায়ে পঁচন। তাকিয়ে থাকা আর অপেক্ষা। এত বড় সাম্রাজ্য তোমার, আর কোথাও আমার স্থান নেই। আসলেই কি বিশাল তোমার সাম্রাজ্য? কেন মেরে ফেলোনা আমায়? কেন বাঁচিয়ে রাখছো হে সম্রাজ্ঞী? কেনইবা দেখতে আসো হিসেবহীন সময় অন্তর? ভালোবাসো বলে?

ধানসিঁড়ি নদী আর সেই নদী নেই। বারবার খনন করেও নদীটির খালে রূপান্তর হওয়া রোধ করা যায়নি। যে নদী ইচ্ছে করে মরে যায়, তাকে কে বাঁচায়?

তোমাকে,

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ