আজ ঘোর মহা অমাবস্যা!
বিলাস বাবু একজন তান্ত্রিক কালী মায়ের উপাসক।
বাড়িতে আজ কালীপূজার আয়োজন করেছেন।
বিলাস বাবু একজন সদাচারী ব্রাক্ষণ।
কালীপূজা, দূর্গাপূজা,সরস্বতীপূজা আর যাজনিক করে সংসার পরিচালনা করেন।
পরিবারে সস্ত্রীক ও ছেলেমেয়ে নিয়ে মোট চারজনের সংসার।
বড় ছেলে বিনু পাড়ার ছোটখাটো টুলের পন্ডিত।
বিলাস বাবুর গিন্নী ললিতা রাণী ঘরের কাজকম্ম নিয়ে সারাদিন ক্লান্ত। এমনিতেই আজ কালীপূজা বাইরে থেকে অনেক তান্ত্রিক জটাধারী সাধু ঋষির আগমন বাড়িতে।
ললিতা রাণীর ছোটমেয়ে অনিতা লেখাপড়ার পাশাপাশি ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে তাকে।
এ নিয়ে বিলাস বাবুর সংসার বেশ ভালো চলছে।
কোন দন্ধ নেই , বিবাদ নেই।
সকাল থেকে বিলাস বাবুর পরিবারের সবাই উপোস।
তান্ত্রিক ঋষিদের আপ্যায়নে ললিতা রাণী ও তার বড়ছেলে আর ছোটমেয়ে অনিতা তিনজনি ব্যস্ত।
এদিকে বিলাস বাবু মা মা বলে ডাকছেন আর শ্যামাসংগীতে নিজেকে অবগাহন করছেন।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে। তান্ত্রিক ঋষিরা একে একে দিচ্ছে গাঁজায় টান আর গাইছে গলাছেড়ে তন্ত্রমন্ত্রের গান।
গাঁজার গন্ধে পুরো মন্দির আর পাড়া ঘুমঘোরে আচ্ছন্নভাব।
ধূপ,ধূনার সুগন্ধি আর মোমবাতির আলোক সজ্জায় সজ্জিত পুরো মন্দির।
পাড়ার রামলোচন ভট্টাচার্য নিজের স্ত্রীর
জন্য সাতটা পাঁঠাবলি আয়োজন করবেন বিলাস বাবুর কালীমন্দিরে। এ কথা শুনে বিলাস বাবু আনন্দে ভরপুর।
খাসির মাংস,পাঁঠার মাংস এছাড়া হাঁসের মাংস খেতে বড্ড ভালোবাসেন বিলাস বাবু।
বিলাস বাবুর মনে মনে যুগছে আজ না হয় বেশ কয়েকটা দিন পর পাঁঠার মাংস খেতে পারবে।
যাই হোক বিলাস বাবু সকাল থেকে এমনিতেই উপোস তারমধ্য বলির ব্যবস্থা।
তখন রাত্রি দশটা বাঁজে স্নান করে সন্ধ্যান্হিক করতে বসলেন। আর মা মাগো মা বলে চিৎকার করে জয়তারা জয়তারা বলে ডাকছেন।
এমন মা মা ডাকে বিলাস বাবু সকলের মন ভরে তুলেছেন।
কালীপূজা রাত্রি ঠিক বারোটার দিকে আরম্ভ হবে।
এদিকে গিন্নি ললিতা রাণী ফলমূল ও পিঠাপুলি বানাতে ব্যস্ত।
একে একে বাড়িতে লোকের মহাসমাগম। কিছুক্ষণ পর মন্দিরে শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে কালীপূজা আরম্ভ করতে চলছেন বাড়ির কর্তা বিলাস বাবু।
অঙ্গে লালসালু আর কপালে রক্তচন্দনের ফোঁটা তারমধ্য গলায় রুদ্রাক্ষমালা।
অঞ্জলি প্রদান করে পূজোপকরণ নিয়ে পূজা করতে লাগলেন।
এদিকে গ্রামের রামলোচন ভট্টাচার্য সাতটে পাঁঠা বলি দিতে মন্দিরে হাজির। উৎসর্গ করে বিলাস বাবু একে একে সাতটি পাঁঠা বলি দিয়েই বিলাস বাবু রামলোচন ভট্টাচার্যকে বলছেন আমার জন্য দুটো পাঁঠা রেখে যেও। অনেকদিন হলো ভালোমন্দ পাঁঠার মাংস খেতে পারি নি।
যথাআজ্ঞা কর্তা মশাই।
আমার মনস্কামনা পূর্ণ হলেই হলো।
কি মনস্কামনা রামলোচন বাবু?
- কর্তা মশাই আমার স্ত্রী শ্মশান কালী মায়ের শিষ্য। রোজ রাতেই আমার গলাটিপে ধরে। রোজ রোজই মরা থেকে বেঁচে উঠি। ঘরের মধ্য ছেলে নেই,মেয়ে নেই বিয়ে করেও শান্তি নেই।
বড্ড কষ্টে দিন কাটাচ্ছি কর্তা মশাই।
এইবার আমার জন্য কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করুন।
রামলোচন এর জন্য আলাদা টাকা লাগবে কিন্তু।
আজ্ঞে কর্তামশাই যতটাকা লাগে আমি দিতে রাজী। প্রয়োজনে আমি আমার বউয়ের নাক,কান,গলার স্বর্ণ বিক্রি করে আপনাকে টাকা গুলো দিয়ে দিবো।
বিলাস বাবু- তাহলে বেশ হলো রামলোচন।
আমি এখনি মায়ের কাছে আরাধনায় বসবো আর যজ্ঞে তুমি তোমার বউয়ের নামে ঘৃতাহুতি অর্পণ করবে।
রামলোচন ঠিক আছে কর্তা মশাই।
আপনার দেওয়া যথাজ্ঞা পালন করতে আমি সদা প্রস্তুত।
এদিকে তান্ত্রিক সাধুরা শাঁখ, শঙ্খ, ডুমুর বাজাচ্ছে আর কলকি হাতে গাঁজার টানে উড়িয়ে দিচ্ছে ধোঁয়া।
রাত্রি বারোটা পেরিয়ে দুটোর কাটা ছুঁই ছুঁই। তারমধ্য শীতে মাস মাঘমাস। হাঁড়কাপা শীত। সকলেই অপেক্ষার প্রহর গুণছে বিলাস বাবুর পূজা শেষ হলে প্রসাদ খেয়ে যারযার বাড়িতে ফিরতে।
রামলোচন বাবু নিজের বউয়ের মঙ্গলের জন্য বিলাস বাবুর মন্ত্রে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন।
এদিকে রামলোচনের পেছনে এসেই তার স্ত্রী শ্মশান কালীর রূপ ধরেই গলায় টিপে ধরে বলছে এ হতচ্ছাড়া আমার পতি তুমি আমার নাম ঘৃতাহুতি দিচ্ছ।
আমি কী মরে গিয়েছি? আমি কি পাগল?
রামলোচন বাবু চিৎকার বলছে না গো গিন্নী না আমি এমন করছিনা শুধু তোমার মঙ্গলের জন্য বিলাস বাবুর মন্ত্রে ঘৃতাহুতি দিচ্ছি।
ওগো গিন্নী আমায় ছাড়ো। আমি শ্বাস ফেলতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করো ওগো গিন্নী।
ক্ষমা করে দিলাম, আজকের মতো হতচ্ছাড়া আমার পতি।
ওগো গিন্নী তুমিও ক্ষমা চাও তুমি ভালো হয়ে যাবে আর রোজ রোজকার মতো করে রাত্রিবেলা আমার গলাটিপে ধরবে না বলো?
ঠিক আছে আমার হতচ্ছাড়া পতি। আর তোমায় গলাটিপে ধরবো না। আর পাগল হয়ে শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে বেড়াবো না। যদিও ঘুরে বেড়াই তাহলে তোমায় সাথে নিয়ে ঘুরবো!
ও গিন্নী এ আবার কেমন কথা?
হ্যাঁ সত্যি বল্লুম আমার নামে উল্টাপাল্টা যেখানে সেখানে বকবক করলেই আমি গলাটিপে ধরবো না হয় শ্মশানে নিয়ে বেঁধে রেখে আসবো।
বিলাস বাবু প্রায় পূজা শেষ করে ফেলছেন।
বিলাস বাবু রামলোচনকে বলছেন ওহে রামলোচন তুমি বলেছিলে তোমার বউ নাকি পাগল?
আজ্ঞে না কর্তা মশাই, আমার বউ বড্ড ভালো..।
এদিকে বড় একটা কান্ড ঘটে গেলো...!
১৮টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। এগিয়ে চলুক মহাতান্ত্রিকের বর্ণনা। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
তৌহিদ
তান্ত্রিকদের গল্প পড়তে ভালো লাগে, কিরকম যেন উত্তেজনা কাজ করে। মনে হয় এই বুঝি নরবলি দিচ্ছে এখন।
চলুক গল্প।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
ফয়জুল মহী
বেশ মন ছুঁয়ে গেল লেখা। ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার দৃশ্যপট। মনে হলো সিনেমা দেখছি
দারুণ লিখেছেন দাদা। পরের পর্বের অপেক্ষায় শুভকামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লিখছেন।
পড়ে বেশ ভালো লাগছে, এগিয়ে যান পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা রইল দাদা ভাইয়া।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
সুপায়ন বড়ুয়া
সুন্দর তো !
বউয়ের নামে নিত্য অপবাদ দিয়ে বেড়ায়
তাদের এই শাস্তিটাই প্রাপ্য।
আর তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে থাকবে
উপকার করারচ্ছলে প্রনামির বিনিময়ে।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
হালিম নজরুল
ডিটেকটিভ এবং তান্ত্রিক রহস্যময়তা সবসময়ই আমার পছন্দ, চলুক।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
অমাবস্যা, তান্ত্রিক নিয়ে আমার আগ্রহ প্রচুর, এক সময় এ নিয়ে কিছুটা পড়াশুনাও করেছিলাম।
সূচনা পর্ব ভালো হয়েছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।
রেহানা বীথি
শুরুটা বেশ ভালো। দেখি এরপর কি হয়!
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, গল্পে থাকুন।