স্কুলে পড়ার সময়ের একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বান্ধবী একদিন ক্লাশে এলো কাঁদতে কাঁদতে। একটু সুস্থ হবার পর সে যা বলল তা হলো যে ভ্যানে করে সে এসেছে সেই ভ্যানচালক তাকে একা পেয়ে সারারাস্তা তার স্তনে খামচি দিতে দিতে এসেছে। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা এইরকম করেছে সে। মেয়েটা ভ্যানে একা হবার পর আর কাউকে সে ভ্যানে উঠায়নি। গ্রামের রাস্তা এতো লোক ছিলো না, যেই ফাঁকা হয়েছে অমনি পেছনে ঘুরে সে এই কাজ করেছে। আমাদের দেশের ওই বয়সী মেয়ে নরমালি যা ভাবে, সেও তাই করেছে। নিজেই নিজেকে অপরাধী ভেবেছে, কান্না করেছে কিন্তু চিৎকার করে কাউকে ডাকতে পারেনি লজ্জায়। স্কুলে এসে আমাদের বলতেও তার কতো সংশয় ছিলো, লজ্জা ছিলো। পরে কদিন ও স্কুলেই আসেনি ভয়ে। হ্যাঁ লোকটি কিন্তু ভ্যানচালক ছিলো।

আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। খুলনা শহরে গেছি কাকুর বাসায়। দুপুর বেলা কিছু একটা কিনতে পাড়ার দোকানে গেছি। ফেরার সময় দেখি এক রিক্সাওয়ালা রিক্সার উপরে বসে লুঙ্গি উপরে তুলে দিয়ে লিঙ্গখানা হাত দিয়ে নাড়ছে আর বিশ্রী শব্দ করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মূলত তার হাসি শুনেই আমি তাকিয়েছি। আর তাকানোর পর যা দেখলাম তা আমার আজীবন মনে থাকবে.... ওই বিশ্রী হাসি আমি ভুলব না। বিশ্রী লাল দাঁতের নোংরা হাসি, ঢিঙঢিঙে শুকনা নোংরা একটা জানোয়ার। ভয়ে আতংকে সেই দুপুরের রাস্তায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কোন চিৎকার করে কাউকে ডাকার কথা মনেই আসেনি। এক দৌঁড়ে বাসায় এসে কাকীকে সব বলছিলাম আর ভয়ে কাঁপছিলাম।

তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। ফার্স্ট ইয়ারে, হলে সিট পাইনি বলে আজিমপুর এতিমখানা কলোনীতে সাবলেটে থাকি। আমার রুম দোতলায়। আমার সাথে ইডেনের আরও তিনটা মেয়ে আছে। ২০০৮ সালের ঘটনা। আমি রাত বারোটার একদিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। হঠাৎ দেখি নিচে একটা লোক মুখে নোংরা শব্দ করছে। কেউ পুঁইশাকের মাচা করেছে নিচে তার পাশে দাঁড়ানো। লোকটা খুব খর্বকায় কারণ পুঁইমাচা আর তার মাথা প্রায় সমান। আমি ভাবলাম চোর টাইপের কেউ হবে, লুঙ্গি পরে দাঁড়ানো। পরে দেখি সে লুঙ্গি উঁচা করে মাস্টারবেট করছে। তারে পরিস্কার দেখা যায় না কিন্তু আলো ছায়ায় সে কি করছে সেইটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি কে কে বলে উঠলে সে তো গেলোই না বরং বাসার কাছে এগিয়ে এসে নীচতলার ব্যালকনির গ্রীল ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করে। সে জানে জীবনেও উপরে উঠতে পারবে না কিন্তু চেষ্টা করে। আমি চিৎকার করে বাসার আঙ্কেল আর আমার রুমমেটদের ডাক দিলে সে দৌড় দেয়।

একটু ভেবে দেখুন যদি কোনভাবে আমি তার হাতের নাগালের ভেতরে থাকতাম সে কি করতো? সে ধর্ষণ করতে পারে নাই কারণ সে সুযোগ পাইনি। ধর্ষকামী মন নিয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো এমন অনেক পুরুষই আছে। পরদিন সকালে এইটা নিয়ে কথা হতে শুনলাম আমাদের নীচতলার এক মেয়েও এই লোককে দেখেছে। বারান্দার জানালার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ওকেও ছুঁতে চেয়েছিলো এইলোক। আমরা ধারণা করেছিলাম রাতে যারা কলোনী পাহারা দেয় সে সব দাঁড়োয়ান বা কলোনীর ভেতর দিয়ে ঘোরে এমন কেউ হয়তো রাতে বাসার নিচ দিয়ে ঘোরে আর সে জানে সব বাসাতেই সাবলেটে আছে মেয়েরা। রাতে অন্ধকারের সুযোগে সে মেয়েদের সামনে মাস্টারবেট করার সুযোগ খোঁজে।

এমন ঘটনা আরও আছে। অনেকেরই এধরনের অভিজ্ঞতা আছে। এখানে যাদের কথা বললাম তারা কেউ মাসলম্যান না, একেবারেই ছিন্নমূল টাইপের লোক। যারা ধর্ষকের চেহারা দিয়ে সে ধর্ষক কিনা বিচার করছেন তাদের জন্য লিখলাম। কুর্মিটোলা কেইসে ধৃত মজনু মিয়া আসলে ধর্ষক কিনা এইটা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে, করতেই পারেন। সেইটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু তার চেহারা ধর্ষকের মতো না, সে বলশালী না এইটা বলতে যাবেন না। ধর্ষকের কোন নির্দিষ্ট চেহারার বৈশিষ্ট্য নাই। ধর্ষণ পুরোপুরি মানসিক বিষয়, শারিরীক না। পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ধর্ষণের জন্য দায়ী।

যে ধর্ষক সে যে কোনো বয়স, পেশা, শ্রেনির হতে পারে। একজন হকারও হতে পারে অথবা একজন শিক্ষিত পেশাজীবিও হতে পারে। এই চেহারার একজন পুরুষ কি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা মেয়েরে ধর্ষণ করে এসব বলে আসলে আপনি আবার সেই ভিক্টিম ব্লেইমের দিকেই চলে যাচ্ছেন। ধর্ষক তা সে যে পেশা বা শ্রেনিরই হোক সে যখন রেইপ করে তখন সে সামনে কে আছে, সে ঢাবিতে পড়ে নাকি চাকুরি করে নাকি প্রতিবন্ধি এসব ভাবে না, সে ভাবে সামনে একজন নারী। সে পুরুষ, তার পৌরষত্ব জাহির করার জন্য, নিজের নোংরা লালসা চরিতার্থ করতে সে ঝাঁপিয়ে পরে। এখানে ধর্ষকের চেহারা, পেশা, মাসল এসব কিছু না। ধর্ষকের একটাই পরিচয় সে একজন ধর্ষক পুরুষ।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ