ছাদের উপরে কৌনিক ভাবে রাখা এগুলো সোলার প্যানেল। ফ্লাট বাড়ির ছাদে স্থাপিত এসব সোলার প্যানেল দেখে মনে প্রশান্তি এসে যায়। দিনের বেলায় এই সোলার প্যানেল সূর্যের আলোতে সংযুক্ত ব্যাটারী চার্জ হয়ে রাতে ফ্লাট সমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ফ্লাটের সমস্ত লাইট, ফ্যান সহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সমূহ চলবে এই বিদ্যুতে। এর ফলে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রীড লাইনে চাপ কম হবে, লোড শেডিং কম হবে, সমস্ত দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
কেবলমাত্র ঢাকা মেগা সিটিতেই কয়েক লক্ষ ফ্লাট বাড়ি, সমস্ত ফ্লাট বাড়িতে যদি এই সোলার প্যানেল দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতে অন্তত এসি, ফ্রীজ ব্যাতিত সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালিত হতো তবে কত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো! উদ্দেশ্য এবং প্রকল্পটি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসু হতে পারত।
এই ভাবনা আসলে কল্পনা প্রসূত, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। ফ্লাট বাড়ি নির্মাণ করার একটি শর্ত হচ্ছে এর এসি, ফ্রিজ ব্যাতিত সমস্ত বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল দিয়ে উৎপাদিত হতে হবে। এটি কিছুটা ব্যয়বহুল। কী করছে ফ্লাট-মালিকরা? জাস্ট লোহার ফ্রেমের উপর কাচ বসিয়ে কালো রঙ করে, কিছু তার সংযুক্ত করে কয়েকটা অকেজো ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিয়ে রাখা হয়। সব নিয়ে ১০ হাজার টাকায় এসব করা হয়। ফ্লাট পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে সনদ নেয়া হয় যে এটি কর্মক্ষম। ঘুষ খাওনেওয়ালা নির্বিঘ্নেই এটি করে, সে যখন দেখেছে তখন ভাল ছিল, পরবর্তীতে এটি নষ্ট হয়ে যেতেই পারে।
এক পরিচিত ফ্লাট মালিক বেশ গর্বের সাথেই বললেন তার কৃতিত্বের কথা। এটি যে অন্যায়, এটি যে কোনোমতেই উচিত না, তা তার মুখের অভিব্যক্তিতে একবারের জন্যও প্রকাশ পায়নি।
আমরা কিছু হলেই রাজনীতিবিদদের ধুয়ে দেই। তাদের অসৎ বলি। এই রাজনীতিবিদরা কোথা থেকে আসে? এই যে লক্ষলক্ষ ফ্লাট মালিক, এদের সন্তানরা কি রাজনীতি করে না? এদের সন্তানরা কি আমলা হয়না? কী শিখছে এদের সন্তানগন ছোটবেলা থেকে? শিখছে কিভাবে ঠকাতে হয়, কিভাবে প্রতারণা করতে হয়, কিভাবে কারেন্ট থেকে বঞ্চিত করতে হয় সাধারণ মানুষকে, কিভাবে স্বার্থপর হতে হয়।
এই যে অসৎ মানুষগুলো আছে, এদের মাঝ থেকেই উঠে আসে রাজনীতিবিদরা, আমলারা। রাজনীতিবিদরা স্বর্গ থেকে দেবদূত হয়ে আসেনা। এদের শিক্ষক হচ্ছে এদের অসৎ পিতা মাতা, টার্গেট করতে হবে সেইসব ভন্ড প্রতারক পিতামাতাকে।
গাছের শিকড়ে রোগ রেখে শাখা প্রশাখা কেটে ফেলে কতটুকু লাভ হবে এই সমাজের?
২১টি মন্তব্য
ইঞ্জা
বাস্তবতা এতটাই করুণ ভাইজান যা আপনার প্রতিটি বাক্য সত্যরূপে তুলে ধরেছেন, আমার হটসিটে বসা অবস্থায় মনির ভাই প্রশ্ন রাখলেন “দেশ প্রেম কি”?
আমি উনাকে পাল্টা বললাম এইটা কি জিনিষ, আমরা কি আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত দেখলে কি স্যালুট করি নাকি দেশের সার্থে নিজের সার্থ বিসর্জন দিতে পারি?
এর অর্থই হলো, দুঃখজনক ভাবে আমরা অতি সার্থপর, যার সামনে দেশ কিছুই না। 🙁
জিসান শা ইকরাম
দেশের অধিকাংশ মানুষ যে যেভাবে পারে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে অবৈধ ভাবে। আমরা দোষ দেই কেবল রাজনীতিবিদদের, রাজনীতিবিদরা তো আকাশ থেকে আসেনা, স্বার্থপর এই সমাজ থেকেই আসে।
এমন কিছু বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার ইচ্ছে আছে।
” দুঃখজনক ভাবে আমরা অতি স্বার্থপর, যার সামনে দেশ কিছুই না” – একমত আপনার কথার সাথে।
ইঞ্জা
;(
রিমি রুম্মান
দেশপ্রেম মনের গহীন কোণ থেকে আসতে হয়। এই অনুভূতি জাগাতে হয় পরিবার থেকে, শিশু বয়স থেকে। কিন্তু দুৰ্ভাগ্য এমনটি কমই দেখা যায়।
জিসান শা ইকরাম
ঠিক বলেছো দিদি ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
ভাগ দেয়া-নেয়া একদিনে তৈরি হয়নি, তাই রোগমুক্তি সুদূর পরাহত।
জিসান শা ইকরাম
এ রোগ থেকে মুক্তি নাই আমাদের।
রিতু জাহান
লেখাটা আসলেই দারুন।
প্রতিটা ঘরেই ধরতে গেলে দূর্ণীতিতে ভরে গেছে।
আমি এ বিষয়টা টোটালে জানতাম না। হায়রে! বাঙ্গালী যদি ভালো কাজে এমন বুদ্ধি খাটাইতো তবে আজ পৃথিবীর সেরা জাতি হইতো।
কতো বড় চোর এক একটা!
জিসান শা ইকরাম
এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি,
এ থেকে মুক্তি আমরা কখনো পাবো কিনা সন্দেহ আছে।
মায়াবতী
বাহ! এই প্যানেল গুলো অনেক বাড়ির ছাদে ই চোখে পরছে কিন্ত এর ব্যাপার স্যাপার কিছু ই কখনো জানার ইচ্ছা জাগেনি, এ দেশ জাতিকে জানতে জানতে নিজেকে কেমন যেন জানোয়ারের মত লাগে স্যার বিশ্বাস করেন। আমি মানুষ না হয়ে জানোয়ার হয়ে জন্ম নিলে হয়তো মানুষ নামের এই মাকাল ফল হবার কষ্ট টা আর বোধ করতাম না।
জিসান শা ইকরাম
এমন কোনো স্থান নেই যেখানে দুর্নীতি নেই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গাছের শিকড়ে রোগ রেখে শাখা প্রশাখা কেটে ফেলে কতটুকু লাভ হবে এই সমাজের?
কথায় আছে গোড়ায় গলদ -{@
জিসান শা ইকরাম
গোড়ায়ই গলদ, কে কাটবে এই গাছ?
মাহমুদ আল মেহেদী
আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ স্থান থেকে সচেতন হতে পারতুম !!!! আফসোস নামের কোন শব্দই থাকত না । ভালো মানুষ যে সময়ের সবচেয়ে মূল্যবান দাবি ।
জিসান শা ইকরাম
আফসোস থেকেই যাবে আমাদের মাঝে।
তৌহিদ ইসলাম
আমরা নিজেরা দুর্নীতি করতে করতে এখন আমাদের বাচ্চারা ভুলে যাচ্ছে দেশপ্রেম দ্বায়িত্ববোধ এসব নামের শব্দগুলো। অথচ এসবের জন্য আমরাই দ্বায়ী। নিজের বিবেক জাগ্রত রাখা জরুরী।
জিসান শা ইকরাম
দেশপ্রেম শব্দটি আছে কেবল অভিধানে তৌহিদ ভাই। যাদের মাঝে দেশপ্রেম আছে, তাঁরা সবাই কোন ঠাসা হয়ে আছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
দুর্নীতি ছাড়া এখন গাড়ীর চাকাও ঘোরেনা। যারা সৎ, তারাই ভোগান্তি পোহায় বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই যে সৎ মানুষও অসৎ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। পাঁচটা পঁচা আমের মধ্যে একটা ভালো আম কতোদিন তাজা থাকতে পারে? আমাদের দেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি।
দেশের কথা বলি কেন, দেশের বাইরের বাংলাদেশীদের কথা শোনো নানা। আমার দূর্ঘটনা হলো। জানো আমাকে কি বুদ্ধি দেয় আমার দেশীয় মানুষরা? বেশি করে অভিনয় করতে, তাতে নাকি ইন্সুরেন্স আমাকে অনেক টাকা দেবে।
“স্বভাব যায়না ম’লে
কয়লা যায়না ধুইলে।”
নানা অনবদ্য প্রকাশ। 🌹
জিসান শা ইকরাম
জগতের সবচেয়ে বড় করাপ্টেড জাতি মনে হয় আমরাই, যে যেভাবে পারে দুর্নীতি করে টাকা কামাচ্ছে।
রেজওয়ান
আমরা যতদিন নিজ ইচ্ছায় মানুষ না হতে পারবো ঠিক ততদিন আমাদের দেশটা অন্যদের কাছে ছোট দেশ হিসেবেই পরিচিতি পাবে😭
জিসান শা ইকরাম
তোমার সাথে একমত রেজওয়ান।