– আপনি তো গ্রামের মাতব্বর তাই না?
– হ্যাঁ যা শুনেছেন, সত্যই শুনেছেন।
– আপনাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাই না?
– আর কন না! বহুত ঝামেলা। বাল্যবিবাহের ব্যাপার, মাইয়া মাইনসের উপর অত্যাচার, বিভিন্ন অপকর্মের বিচার শালিস, নারীগো বিভিন্ন অধিকার, গ্রামীণ উন্নয়ন এইসব দেখি আরকি?
– চৌদ্দ বছরের মেয়েটির বিয়েতে তো ছিলেন?
– গ্রামে থাকতে গেলে কতকিছুই সামাল দেওন লাগে। মাইয়া অতি দুষ্টু প্রকৃতির, ছেলেগোরে নষ্ট করতেছে। তাই বাপে আইসা হাতে পায়ে ধরল বিয়াটার যাতে ব্যবস্থা হয়। বিশহাজার টাকা নিয়া থানা টানা মাতায়া ব্যবস্থা করলাম। একটা দূর্ঘটনা হইলে সবার মান সম্মানের ব্যপার।
– কিন্তু যার সাথে বিয়ে হয়েছে, তার তো আরও একটা বউ আছে।
– হে হে হে হে। শক্ত সমর্থ পুরুষ মাইনসের চাইরটা বিয়া করা যায়। একজনে কি মিটাবার পারে?
****
– শুনলাম আপনি বউ পিটান।
– মহিলা মানুষ বুজলেন? লাঠির উপরে চালাইতে হয়। গরু যেমন ল্যাজ না নাড়লে হাল বোয়ায় না। তেমনে এদেরও মাজে মাজে একটু দেওন লাগে। দুই দিন ব্যাথায় নড়বার না পারলে পুরুষ মাইনসের কদর বুজে।
– তা কি বেয়াদবী করেছে?
– প্রতিদিন ভাত খাইতে ভাল্লাগে কন! গেছিলাম এট্টু পোলাও খাইতে। হের লাইগা হুমকি দেয়। দেইখা ফালাইছে, পুলিশে দিব। মাইয়া মানুষের কিসের দেমাগ। তলে থাকার জিনিস তুই। এইটা বুজাইতে দিছি ইচ্ছা মত পিডানি। এক্কেবারে টনটনা।
****
– আপনি নাকি পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন এর দরবার করে বহু মানুষের উপকার করেছেন।
– কি যে কন না ( সরম )! এইসব গ্রামের মানুষ কিছু বোজে না। কোথায় যাওন লাগে কি করন লাগে। এইসব তো আমার দায়িত্ব।
– যাওয়ার কি দরকার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে তো জরিপ করে লাইন দিয়ে দেয়। সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছেন।
– হ তা তো দিছে। কিন্তু মুখে মুখে। আমাগো ছাড়া কি আগাইতে পারে। আমরা তো ইন্জিনিয়ার সহ সবাইরে ডর দেহাই। ভয়ে তারা কিছু কয়না।
– ভয় কেন দেখান?
– এই আমি সারাদিন মাইনসের উপকার করি। আমার কি বাল বাচ্চা নাই? তাছাড়া দৌড়া দৌড়ি করা লাগে। তাই মনে করেন, জন প্রতি দশহাজার করি টাকা নিয়া আমার গ্রামের দুইশ বাড়িত বিদ্যুৎ আনি দিচি। ডর না দেহাইলে কি হইত।
– বাহ্ দারুন! বহু টাকা ইনকাম!
– হ হইচে, চা পানির টাকা।
****
– আপনার তো বাবার রেখে যাওয়া বেশ জমিজমাও আছে তাই না?
– হ আল্লাহর রহমতে বাপে থুইয়া গ্যাছে আমার জন্যে।
– বোন আছে না?
– মাশাআল্লাহ একটা বোন। বিয়া দিছি মহাসুখে আছে। সমায় পাই না দেখতে যাওয়ার বুজলেন। মন কান্দে খুব।
– আপনার দু’বছরের বড় তিনি। আপনি বিয়ে দিলেন কিভাবে?
– ওই একই কতা।
– শুনলাম তিনি অসুস্থ। আপনার কাছে এসেছিলেন। বাবার মেয়ে হিসেবে
তার তো জমির অংশীদারি আছে । আপনি তাকে ঘাড় ধরে, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
– বইনরে বিয়া দিতে কতটাকা খরচ হইছে না। আবার ভাগ কি?
– বিয়ে তো আপনারও হয়েছে। তাতেও তো টাকা খরচ হয়েছে।
– শোনেন মাইয়া মাইনসের স্বামী হইল সব। স্বামীর পায়ের নিচে হইল বেহেশত্। সে গাছের তলে রাখলে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ্ কইতে হইব। বাপের সম্পত্তি আবার কি?
– মায়ের পায়ের নিচে বেহেশত্। স্বামীর নয়, জানেন না বোধহয়। মোল্লারা নারীদের অবমাননার জন্য বানিয়েছে। তারপর বলেন?
– কেমন বেয়াদ্দপ মাইয়া আবার বলে কিনা বাপের অংশ তার ইসলাম নির্ধারিত অধিকার।
– হ্যাঁ তাই তো। “এক কপর্দকের হক হেরফের কারী জান্নাতে যাবে না।”
– আল্লাহর নামে নিয়ত করছি এ বছর হজে যামু। আর জান্নাতের বাকি কি থাকে , একেবারে রাস্তা ফকফকা।
****
– আপনার মা কোথায়?
– সারাদিন বুড়ির ফ্যাচর ফ্যাচর। ঘাড় ধইরা দিছি বাইর কইরা। মাইয়ায় নাকি নিয়া গ্যাছে।
– আর আপনার কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা তো স্টুডেন্ট ভালো। পড়াশুনা বন্ধ করে দিলেন কেন?
– মাইয়া মাইনসের পড়াশুনা আবার কি? বেশি শেখাইলে আবার অধিকার নিয়া মাতামাতি করবে। বিয়া দিয়া দিমু।
– নাকি অন্য ঘটনা। তার বান্ধবী আপনার বাসায় এসেছিল। আপনি তাকে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিলেন। এটা আপনার মেয়ে দেখে ফেলেছে।
– সাহস কত ! আমার খাইয়া আমার পইরা আমারে হুমকি দেয় পুলিশে দিব।
– আপনি বোধহয় জানেননা, আপনার মেয়ে আমাদের খবর দিয়ে এনেছে। আমিও একজন নারী। আর আগামীর নারীরা আপনার মত পুরুষকে পায়ে পিষে মারবে। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দেবেনা। নিজের যোগ্যতায়, পদমর্যাদায় পরিচিতি গড়বে। আপনি তাকে বাঁধা দেবার কেউ না। সুতরাং সাবধান!!!!!!!
ছবি: সংগ্রহ।
২৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
টাকায় বাঘের দুধ মিলে । থানা পুলিশতো নরমাল ব্যাপার । এটি চলমান বাস্তবতা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাইয়া একদম সত্যি কথা। প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
শুভ কামনা। শুভ সকাল।
রেজওয়ানা কবির
গ্রামের অসাধারণ বাস্তবতা।এখনো অনেক জায়গায় এসব ঘটনা বিরাজমান। ভালো লিখেছ আপু। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমাদের সমাজের করুন দৃশ্য।
ধন্যবাদ তোমাকে। শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আসল চরিত্র তুলে ধরেছেন, কিন্তু এ সব হুঙ্কার কাগুজে বাঘের, তাই ভয়ের কিছু নেই।
যেমন চলছে তেমন ই চলবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ফুটা বেলুনে বাতাস ভরাবার চেষ্টা।
আর কি করার!! শুভ কামনা ভাইয়া।
মুহাম্মাদ মাসুদ
চরিত্রগুলো যথার্থ ফুটে উঠেছে। সত্যি গ্রামে এখনো এগুলো দেখা যায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন। শুভ সকাল।
সুপায়ন বড়ুয়া
সমাজের টাউট বাটপারদের চরিত্র নিয়ে অসাধারন গল্প।
এক চরিত্রে সব তুলে আনলেন।
এই যাদের মানষিকতা তাদের দিয়ে
কি বলব ভেবেই পাইনা।
ভাল থাকবেন আপু। শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
টাউট বাটপারদের দমন করতে হবে।
শুভ কামনা দাদা। শুভ সকাল।
সাবিনা ইয়াসমিন
দুষ্টের অজুহাতের শেষ নেই। ঘটনা/ দুর্ঘটনা যা কিছুই ঘটাক, কিন্তু এদের অজুহাত/ বাহানা এক্কেবারে ইস্পাতের মত মজবুত। অবস্থা বুঝে এরা গিরগিটির রঙের মত স্বর বদলায়। ভেতরটা একই থাকে।
সেদিনের অপেক্ষায় রই 🙂
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ সেদিনের অপেক্ষায় রই, যেদিন দুষ্টু লোকের আনাগোনা আর থাকবে না। একটু শান্তি স্বস্তি মিলবে নারীজীবনে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা। ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
পড়লাম বর্তমান সমাজের অবস্থা এরকমী আছে
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলেই অবস্থা এরকমই আছে।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পুরোই বাস্তব । এভাবেই চলছে এসব চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কর্মযজ্ঞ। গ্রামের মানুষ এদের হাতে বন্দী। যতই হুঙ্কার দেয়া হোক এরা নিজেদের নিয়ত থেকে পিছপা হয় না। নারীকে সব ক্ষেত্রে পায়ের তলায় পিষিয়ে রাখতে সচেষ্ট।এমন চরিত্র খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
মা, বোন, মেয়ে,অপরিচিত মহিলা কোথাও রক্ষা নেই।
মানে সমস্ত নারীদের যেন জন্মই পাপ। প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে নারাজ।
শুভ কামনা রইলো দিদিভাই।
উর্বশী
বাস্তবতার উপখ্যান। পুরো গ্রামের নানাবিধ ঘটনাবলী সুন্দর পরিপাটি করে উপস্থাপন করেছেন।যুগের পর যুগ এই ব্যবস্থার মাঝেই বিচরণ করছে। দিন যত যায়,নতুন চিন্তা ভাবনার সম্ভাবনা হলেও এদের মানষিকতার পরিবর্তন আসতেই চায়না।
তবুও আশা করতেই পারি একদিন সুদিন ফিরে আসবে। মেয়েরা সহজ ভাবে পথ চলবে।দারুন লিখেছেন। ভাল লাগলো।
শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
যুগের পর যুগ চলে যায় পরিবর্তন আর আসেনা। আমরাও আশা নিয়েই মুখ বুজে সহ্য করি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা। শুভ সকাল।
সুরাইয়া পারভীন
পুরো গল্প পড়ে একটি ভিডিও দেখা হয়ে গেলো। যেখানে অসৎ, শোষক, নিপীড়ক মোড়ল/মাতব্বরের চিত্র চিত্ররায়ণ করা হয়েছে। শয়তানের ছলের অভাব হয় না। প্রতিটি ঘটনা দুর্দান্ত উপস্থাপন করেছেন
চমৎকার লিখেছেন আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে এসবের শিকার বলেই সহজে বোঝা যায়।
শুভ কামনা। শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
চোরের মায়ের বড় গলা।
আপু শেষের প্যারা অসাধারণ। এদের পিষে মারতে হবে। এতোদিন ওরা মারছে। এখন ওরা একটু খেয়ে দেখুক কেমন লাগে
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার কালকের পিকটা ভীষন পছন্দ হয়েছে। ওভাবে চলা উচিত। মেয়েদের এখন কারাটে শেখাতে হবে।
নারীরা ফুলন দেবী হতে চায় না। হতে বাধ্য করে।
শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ। এখন সবসময় আপডেট হতে হবে মেয়েদের।
কংফু কারাত সব শিখতে হবে
তৌহিদ
এরা হচ্ছে হেপোক্রেট টাইপ মানুষ। নিজের ঘরে একরকম বাইরে আর একরকম। আমাদের সমাজে এইসব মানুষদের জন্যই অবহেলিত নারী সমাজের অনেকেই।
শিক্ষণীয় লেখা আপু। শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মোড়ল তোমার চরকায় তেল দাও আগে। তারপর পাড়া গ্রামে বিচার শালিস। আসলে এসব কিছুই না। নাম ভাঙিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে এসব লোক।
শুভ সকাল ভাই।