কিছু কিছু ভাবনা খেলা করে মস্তিস্কে , যা লিখে রাখি সংক্ষেপে বিভিন্ন জায়গায় । ভাবি এসব বিষয়ে বড় করে কিছু লিখবো। পরে তা আর মনে থাকে না। মনে রাখার বিকল্প হিসেবে , ভাবনা গুলোকে এখানে রাখবো , আজ কিছু ফেইসবুকের স্ট্যাটাস এখানে জমা করে রাখছি ।

অক্টোবর ১৩ , ২০১২ : আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ----
হতে পারি আমি একটু বেশী আবেগি , এই আবেগ আমার গর্ব , আমার অলংকার , আমার অহংকার ।
তাইতো টিভিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার সময়ে যখন আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠে , আমি আবেগ তাড়িত হই , আমার শরীরের প্রতিটি লোমকুম কিভাবে যেন জেগে উঠে। চোখে পানি চলে আসে নিজের অজান্তেই। আমার ছেলেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। বিশ্বাস করুন - এসব আমি ইচ্ছে করে করি না ।
বিদেশের কোন বড় অনুষ্ঠানে ষ্টেজে যখন আমাদের দেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়ে হেটে যায় আয়োজকদের নির্বাচিত অচেনা অজানা কেউ - মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি পতপত উড়তে থাকা পতাকার দিকে। ওই তো আমার পরিচয় , এই পরিচয়ের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন ৩০ লাখ মানুষ , সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লাখ মা বোন , এক কোটি লোক উদ্বাস্তু  হয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন- ভিন দেশে। দাড়িয়ে গিয়ে গাইতে থাকি " আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি " ।

হয়ত আপনি এভাবে ভাবেন না , কিন্তু আমার এই আবেগকে আপনি বাঁধা দিতে পারেন না । উপহাস ও করতে পারেন না । আমি নিজেকে পাল্টাতে চাইনা - এ আবেগকে বয়ে নিয়ে যেতে চাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ।

@ একজন ফেইসবুক ফ্রেন্ডকে যিনি আমার দেশের প্রতি এত আবেগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

 

অক্টোবর ৬, ২০১২  : ধর্ম । আমার কাছে এটা propertiy এর বাংলা । কোন কিছুর স্বাভাবিক গুন বা ধর্ম ।
প্রতিটি বস্তুর আলাদা আলাদা ধর্ম। লোহা , সোনা , কাচ , কাঠ সব কিছুর ই ভিন্ন ভিন্ন গুন । লোহার ধর্ম আর সোনার ধর্ম এক নয় । বিভিন্ন রাসায়নিক গুনের সমষ্টি দিয়ে এসব সৃষ্টি এবং এই রাসায়নিক উপাদানের কারণেই এরা  একে অন্য থেকে আলাদা।
বায়ু , পানি ইত্যাদির বেলায় একই কথা।

মানুষ , পশু , পাখি ইত্যাদি আলাদা এদের ভিতরকার গুনের কারণে। মানুষ কুকুরের মত মানুষকে কামড়ে দেয় না , বা পাখির মত উড়ে বেড়ায় না ।

মানুষের গুন ( ধর্ম ) হতে হবে একজন মানুষের মতই । তার আচার আচরণ প্রাণী জগতের অন্য সব থেকে আলাদা ও মানবীয়। মানুষের মাঝে যখন পশু ও দানবীয় আচরণ দেখা যাবে - তখন তার ধর্মান্তর হবে ।
তার খোসা থাকবে মানুষের , কিন্তু তার ধর্ম ( গুন ) হবে পশু বা দানবের।

 

অক্টোবর ১ , ২০১২: ছোট বেলায় হুজুর সুর করে পড়াতেন - ইসলাম অর্থ শান্তি
এই বড় বেলায় রমজান মাসে মিছিল শুনি
রমজানের পবিত্রতা বাজায় রাখতে গিয়ে
অথবা বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানে-
আমরা চাই আমরা চাই - শান্তি শান্তি !!

ফিরে যাই ১৯৭১ এ কিশোর বয়সে---
রাজাকারদের নেতৃত্বে " নারায়ে তাকবির আল্লাহ হু আকবর " হুংকার দিয়ে
প্রতিদিন কয়েকশত লুটেরা লঞ্চে করে আমাদের এখানের পেয়ারা বাগান এলাকায়
চালিয়েছে লুটতরাজ , পুরিয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম

প্রতিদিন টেনে হেঁচড়ে নিয়ে এসেছে ওদের প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য
হিন্দু যুবতীদের
হয়ত শান্তি নামের কোন হিন্দু যুবতী ও ছিল সেই সব হায়েনাদের খাদ্য ভাণ্ডারে।আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে হামলার পরে
শুধু মাত্র পাসপোর্টে আমার নামের পূর্বে মুহাম্মদ লেখার কারণ
বিদেশের এয়ারপোর্ট গুলোর ইমিগ্রেশন কঠিন হয়ে পরে
২০০৯ এ বেজিং এয়ারপোর্টে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সব পরিধান এমনকি
টাই পর্যন্ত খুলে সার্চ করা
১৫ বারের অধিক বার যাওয়া ব্যাংকক এয়ারপোর্ট এও বাড়তি প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া
শুধুমাত্র এই সব উগ্র মুসলিমদের কারণ
এই ভোগান্তি আমার।রামু জ্বলেছে আবার সেই ১৯৭১ এর মত
আবার সেই হায়েনাদের ভিতরকার হিংস্রতা বেড়িয়ে এসেছে
শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এরা - -
এই সব হায়েনাদের কারণ বলিষ্ঠ ভাবে বলতে পারিনা এখন আর " ইসলাম শান্তির ধর্ম " ।

 

সেপ্টেম্বর ৩০ , ২০১২ : ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন - এই নীতিতে ১৯৪৭ এ ২ টি দেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বাঙ্গালীরা এই বিভাজন মেনে নেয়নি। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ত্যাগ এর মাধ্যমে বাঙ্গালীরা এই বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে সম্পূর্ণ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বোধ থেকে । নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যারা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনকে আঁকড়ে ধরেছিল তারা পরাজিত হয়েছে । যারা পরাজিত হয়েছে , তারা বাতিল অকার্যকর। বাতিল বা অকার্যকর কিছু গ্রহণ আমরা করতে পারিনা।
যেহেতু ধর্মের বিভাজন পরাজিত , সেহেতু ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলে আমাদের দেশে কিছু থাকতে পারে না।
যদি সংখ্যা লঘু বলতেই হয় , তবে এদেশের একমাত্র সংখ্যা লঘু জামায়েতে ইসলাম । যারা ধর্মীয় বিভাজনের ধারক এবং বাহক।

সেপ্টেম্বর ২৬ , ২০১২ যারা ভাবে ৭১ কে সবকিছুতে টেনে আনা উচিৎ নয় , তারা তা ভাবুক। প্রত্যেকের আলাদা ভাবনা চিন্তা আছে। " সবকিছুতে ৭১ কে টেনে আনা দেশের উন্নতির জন্য বাধা " - এই ধরনের মানসিকতা এবং এর প্রচার শুরু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে । কালি মেখে দাও জাতীয় বীরদের গায়ে , নিশ্চনহ করে দাও মুক্তি যোদ্ধাদের ( বিভিন্ন অয়ুথ্যানে ২০০০+ মুক্তিযদ্ধা অফিসার নিহত ) , সব কিছু করবে বন্ধুর বেশে - চলছে এভাবেই , চলতেই থাকবে , জানি এবং বুঝি আমরা ।

কিন্তু আমি এবং আমার মত কিছু মানুষ ভুলতে পারিনা ৭১ কে । আর ভুলতেও চাই না ।
৭১ এর চেতনা আমাদের সব কিছুর প্রেরনা । এ বিষয়ে আমরা অনেক বেশী উগ্র ।
আমরা আমাদের শিকড় (Roots ) কে অস্বীকার করতে চাইনা।

আর আমি খেলার মাঝেও ৭১ দেখি । আমার সব কিছুতে ৭১ । কোন রাজাকারের সাথে হাত মিলাই না , ওদের ছালামের জবাব দেই না, ওদের কোন অনুষ্ঠানে যাই না , ওদেরকে কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ দেই না , ওরা মরলে ওদের জানাজায় যাই না ,যেনে শুনে কোন রাজাকারের দোকান থেকে কোন কিছু কিনি না , ওদের সাথে কোন আত্মীয়তা করি না । এভাবেই কেটে গিয়েছে ৭১ এর পরে এত গুলো বছর । আমি আমার ছেলেদেরও এভাবে শিখিয়েছি , আশাকরি আমার ছেলেরাও ওদের সন্তানদের এভাবে শিখাবে। আমার কোন সমস্যা হয়নি এতে। হবেও না কোন দিন। কিছু অনুভুতি থাকে সবসময় সতেজ । ১৯৭১ আমার কাছে তেমনই এক অনুভুতি।

সেপ্টেম্বর ২৩ , ২০১২ :  ১। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন লালন পালন কোন ভাবেই উচিৎ নয়। এটি একসময় পালনকারীর দিকেই চোখ তুলে তাকাবে। প্রমাণ করে দিবে- সে একজন আসল ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

২। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাঁদের নবীর বিরুদ্ধে অপমান জনক কিছু লেখায় ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। অতি ক্ষুব্ধ হয়ে আবেগে অনেক কিছু বলতেই পারেন। এই আবেগকে উপহাস করা , হযরত মুহাম্মদ ( দ : ) কে অপমান করা লেখায় সমর্থন প্রমান করে।

৩। এই ধরনের লেখা ধর্ম ভীরু সাধারণ মানুষকে , জামায়েত শিবিরের পক্ষে নিয়ে যায়। সাধারণ অরাজনৈতিক মানুষ এই লেখায় প্রতিবাদ করে , প্রতিবাদ করে জামায়ত শিবিরও। স্বাভাবিক ভাবেই তখন এই প্রশ্নে কিছুটা সখ্যতা গড়ে উঠে।

৪। জামায়াত শিবিরের দল ভারী করা এই সব লেখার লেখকদের উদ্দেশ্য আর জামাত শিবিরের উদ্দেশ্য এক হয়ে যায়। - দল ভারী করা , যে কোন উপায়ে।

৫। উদ্দেশ্য এক - পথটা ভিন্ন ।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ