ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। আমার কাছে অনেক স্মৃতি আর আবেগের একটি চ্যাট এপ্লিকেশন। ইয়াহু মেসেঞ্জার হচ্ছে বিশ্বে প্রথম চ্যাট এপ্লিকেশন। ওয়ান টু ওয়ান চ্যাট বা গ্রুপ চ্যাটকে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এই ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। এনড্রয়েড মোবাইল বাজারে আসার পূর্বে সিম্বিয়ান মোবাইল ছিল প্রায় সবার হাতে হাতে। নকিয়া, স্যামসং, এরিকশন, সনি কোম্পানীর সিম্বিয়ান সেট গুলো বাজার দখল করে ছিল। এই সিম্বিয়ান মোবাইল উপযোগী একটি সফট ছিল এই ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। তখনকার সময়ে আর একটি সফট ছিল স্কাইপি। তবে স্কাইপি মুলত নেট ভিত্তিক কথা বলার জন্য ব্যবহৃত হত বেশী।
মোবাইল, পার্সোনাল কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্সটল করে ইয়াহু ব্যবহার করেননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।
যখন পার্সোনাল কম্পিউটারে ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে ফিনল্যান্ডে বসবাস করা ছোট ভাইর সাথে কথা বলতাম, তখন আলাদা স্টান্ডে স্থাপন করিয়ে নিতাম ক্যামেরা। আর স্পিকার এবং এয়ারফোন টিএন্ডিটির অপারেটরদের মত মাথার উপর দিয়ে বেন্ড করে রেখে কথা বলতাম। পরিবারের সবাই একরুমে এসে একজনের পর একজন কথা বলতাম ছোট ভাইর সাথে। সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন পারিবারিক সম্মিলন ঘটতো অত্যন্ত আন্তরিকতার মাঝে।
ইয়াহুতেই আমি এমন একজন বন্ধুর সাথে সময় কাটিয়েছি দিনের পর দিন, মাস বছর- কাল ক্রমে সেই আমার হয়ে উঠেছে সময়ের সেরা বন্ধু। কত স্মৃতি যে ভিড় করে আছে এই ম্যাসেঞ্জার কে ঘিরে। ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে কেটেছে আমার অনলাইনের অনেক সময়। ওয়ান টু ওয়ান চ্যাটের মাধ্যমে আমি কয়েকজন অত্যন্ত ভাল বন্ধু পেয়েছি।
শত্রুদের গালাগালিও শুনেছি এই ইয়াহুতে। সারাক্ষণ শ্রদ্ধা শ্নেহের একজন ছিল এখানে, যে পরবর্তিতে আমারই বিরুদ্ধাচারণ করে পরিচিত হয়েছে সবার সাথে।
এন্ড্রয়েড মোবাইল বাজারে আসার পরে কত ধরনের যে চ্যাট এপ্লিকেশন প্রকাশ হয়েছে তাঁর হিসেব নেই। ভাইবার, উইচ্যাট, হোয়াটসেপ, লাইন, ফেসবুক মেসেঞ্জার এসব এপ্লিকেশন প্রায় সবার মোবাইলেই বর্তমানে আছে। সবাই ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারের চ্যাট সিস্টেমটা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অথচ এই চ্যাট ধারনার সৃষ্টিকারী ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার এদের সাথে প্রতিযোগিতায় কেবল পিছিয়েই পরেনি, অবশেষে বন্ধই করে দিল এটি।
বন্ধ সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার বন্ধ হয়ে যাবার তারিখঃ ১৭ জুলাই ২০১৮
এর চ্যাট হিস্ট্রি ডাউনলোড করা যাবেঃ ৩০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত
যাদের ইয়াহু মেইল আছে এবং ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করতেন, তারা মেইলে একটি মেইল পাবেন এ সম্পর্কে।
এখানে গিয়ে ডাউনলোড করে ফেলুন আপনার হিস্ট্রি
আমার মত নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত ফাগলেরা আপনাদের চ্যাট হিস্ট্রি ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।
বিদায় ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার, ভুলবোনা তোমাকে কখনো।
তোমার আত্মা শান্তি লাভ করুক।
১৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আমিও নোটিস পেয়েছি, শুনে আসলেই মন খারাপ হয়ে গেল, আপনার মতো আমারো প্রচুত স্মৃতি আছে।
বিদায় ইয়াহু মেসেঞ্জার। 🙁
জিসান শা ইকরাম
বিদায় ইহায়ু মেসেঞ্জার (y)
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
খুবই দুঃখজনক।এক সময় এর রাজত্য ছিলো একচেটিয়া।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা আসলেই দুখজনক
ছাইরাছ হেলাল
আপনাকে বেশ নস্টালজিক করে ফেলছে দেখছি।
সব কিছুরই শেষ আছে, যদিও র্যে যাবে কিছু রেশ।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা আসলেই নস্টালজিক হয়ে গেছি।
একদিন হয়ত ভুলেই যাবো একে।
মৌনতা রিতু
আমার কোনো স্মৃতি নেই এটার সাথে। তখন সময়ই ছিলো না এসব নিয়ে ভাবার। বাবুরা খুব ছোটো তখন। তবে আমার ছোটো ননদ কম্পিউটারে খুলেছিলো এই ম্যাসেঞ্জার। সত্যি কথা আমি ভুলেই গেছি এর সিস্টেম। জোবায়দা মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ বসতো। আমি সময় পেলে বসতাম। শুধু দেখতাম একসাথে কতোগুলো ম্যাসেজ চলে আসে পুরো কম্পিউটার স্কিন জুড়ে।
জীবন থেকে কতো কিছুই তো চলে যায়।
জিসান শা ইকরাম
অনেক অপশন ছিল এতে, তারপরেও টিকতে পারল না এই মেসেঞ্জার।
হ্যা জীবন থেকে কত কিছুই চলে যায়,
মোঃ মজিবর রহমান
মেইল আছে চ্যাট নাই।
তবে জিমেইল এখন বেশি ব্যাবহার করি।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
এটি মেইল ছিলনা, ম্যাসেঞ্জার ছিল। গুগলে আছে জিটক।
মোঃ মজিবর রহমান
(y) -{@
তৌহিদ ইসলাম
বিদায় ইয়াহু ম্যসেঞ্জার, ইউনিভার্সিটির অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
জিসান শা ইকরাম
ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার নিয়ে অনেক স্মৃতি আমার,
নীলাঞ্জনা নীলা
ইয়াহু মেইল খুলে দিয়েছিলো তরুণ। ছেলের জন্মের পরে ২০০২ সালে। তরুণ জাপান গেলো ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে কথা হতো। তরুণই শিখিয়ে দিয়েছিলো চ্যাটিং। তারপর তো কতো ভালো বন্ধু পেলাম! অনেকের সাথে যোগাযোগ নেই। আবার বেশ কয়েকজন আজোও সেই ভালো বন্ধু হয়েই আছে। মনেই হয়না যে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো। বেশ কয়েকমাস আগে খবরটা যখন পত্রিকায় পড়লাম, খুব খারাপ লেগেছিলো। তারপর লগিন করেছিলাম প্রায় সাত বছর পর। খুব মনে পড়ছিলো আমাদের গ্রুপ আড্ডার কথা। আমাদের গ্রুপের প্রাণ ছিলো তিন্নি। যাকে আমি জানু বলে ডাকতাম। এতো হাসাতে পারতো! জীবনযাত্রায় ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, ওর ফেসবুক নেই। যদি কাউকে খুব মিস করি জানুকে খুব বেশী মিস করি।
নাহ আর থাক। ফেসবুক এসে মানুষের মনটাকে কেমন জানি কৃত্রিম বানিয়ে দিয়েছে! একটা সময় ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারের আড্ডায় কোনো একজন না এলে কতো চিন্তা করতাম আমরা! আর এখন ফেসবুকে কে যে কখন ডিএক্টিভেট করে খবরও নেইনা।
নানা মনে আছে তোমার সাথেও আড্ডা দিতাম ম্যাসেঞ্জারে? 🙂
জিসান শা ইকরাম
হ্যা ম্যাসেঞ্জারে আমার সাথে আড্ডা দিতি তা মনে আছে।
অনেক স্মৃতির আধার ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার, বন্ধ হয়ে গেলো সব।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক আগে থেকেই তবে ইয়াহু মেসেঞ্জার ইউজ করেন।
আমার অবশ্য আবেগ কাজ করছেনা। রুম চ্যাটে অনেকের সাথে চ্যাট করতাম, ওটা ছিলো ওপেন বোর্ডের মতো। সবাই সবার মেসেজ দেখতো। ভালই মজা হতো। একটা আইডি ছিলো, সে সবসময় গান ছাড়তো, সবার কাছ থেকে গানের চয়েজ নিতো। আর এখানকার ইমোগুলো ছিলো চমৎকার। ইমোর জন্যই মেইনলি ভাল্লাগতো চ্যাটিং। ইমোতে ক্লিকের পরিবর্তে আমি কিবোর্ডেই সব ইমো দিতে পারতাম।
বুঝলাম না এতো মজার সফট কেন ওরা ধরে রাখতো পারলো না। শুধুতো সফট নয়, ইয়াহু মেইলও আজকাল কেউ তেমন ইউজ করেনা, বিশেষ করে এসমস্ত দেশে।
যে কারো চলে যাওয়াতেই আমাদের অভ্যস্থতা আসতে হবে। বিদায় ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার।
জিসান শা ইকরাম
আমি কিছুটা পুরাতন পন্থি, হুটহাট করে ভুলতে পারিনা সব কিছু, কিছুটা কষ্ট থেকেই যায়।
কত স্মৃতি একে নিয়ে, আমার পক্ষে এসব ভুলে যাওয়া আসলেই সম্ভব নয়।
শুভ কামনা।
অরুণিমা মন্ডল দাস
-{@
জিসান শা ইকরাম
-{@