দুই পুরুষ

সাবিনা ইয়াসমিন ১১ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১০:৩১:১০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৪ মন্তব্য

পুরুষ-১

দুপুর বেলা। ছোট একটি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এলো। মেয়েটির বয়স ৬/৭ বছর। সে অনবরত কেঁদেই চলেছে। অনেকক্ষণ বাদে কান্না থামলে তাকে সবাই জিজ্ঞেস করলো কান্নার কারণ। তার মুখে জানা গেলো, সে বাড়ির সদর দরজার সামনে খেলছিলো। এমন সময়ে তার পরিচিত এবং একই বাসায় ভাড়া থাকা এক আংকেল তার সামনে এসে তাকে বাড়ির পিছনে নিয়ে যেতে চাইছিলো। ও রাজি হয়নি দেখে তার গালে ঐ আংকেলটা জোরে চড় মেরেছে। সব শুনে মেয়ের বাবা গেলো ভীষণ ক্ষেপে। সে তক্ষুনি সেই আংকেলকে ধরে আনলেন। গালাগালি করলেন। নিজের বউকেও যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করলেন। আংকেল দুঃখ প্রকাশ করে স্যরি বলে সবার কাছে ক্ষমাও চাইলেন।

এরপর, সে যা বললো তা এই রকম _

আংকেল- বউটা বারোমাসি অসুস্থ। সারাদিন কাজ করে ঘরে ফিরতে মন চায় না। শরীরের একটা চাহিদা, তাও মিটে না। মাথাটা সময়ে অসময়ে নস্ট হয়ে যায়রে ভাই,,,

মেয়ের বাবা- কিন্তু তাই বলে আমার মেয়েটাকেই দেখলেন! ও কতো ছোট, আর শরীর স্বাস্থ্যও বেশি ভালো না। যদি দুর্ঘটনা ঘটতো তখন বিপদ সামাল দিতেন ক্যামনে?

আমরা এসব শুনে দেখে হতভম্ব + বাকরুদ্ধ ছিলাম কিছুক্ষণ। আসলে ঘৃণা প্রকাশ করার জন্যেও মাঝে মাঝে উপযুক্ত ভাষার দরকার হয়। সব সময়ে উপযুক্ত ভাষা গুলো মুখে আসে না।

মেয়েটার বাবা চটপটি বিক্রি করে, আর ঐ আংকেল বিভিন্ন দোকানে দুধ সাপ্লাই দেয়।

 

*******************************************************************************************************

পুরুষ -২

রাজধানীর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই কলেজের সবই ভালো, শুধু কলেজের অধ্যাপকদের কাছে প্রাইভেট পড়াটা অলিখিত বাধ্যতামূলক। ছেলে-মেয়েদের সেমিস্টার টপকাতে হলে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তেই হবে।

একটি মেয়ে সম্প্রতি এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। একমাসের মতো নিয়মিত ক্লাস করেছে। প্রাইভেট পড়ার নিয়ম তাকে জানাতে ভুলেনি শ্রেণীর অধ্যাপক মহোদয়। মেয়েটি নিয়ম মানেনি। সে তার নিজের মতো কলেজে আসা-যাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অধ্যাপক তা সহজে মেনে নিতে পারলো না। শুরু করলো নানা বাহানায় মেয়েটিকে ক্লাসে নাজেহাল করা।

সেদিনের ঘটনা _

স্যার- তুমি আজকে ১১মিনিট লেট। আর তোমার চুল খোলা কেন? কি করো ঘুম থেকে উঠে ? দেখতে তো মাশাল্লাহ, এই চেহারা নিয়ে ফিল্মের নায়িকা হতে পারবে। কিন্তু পরীক্ষায় পাশের আশা নেই।

মেয়ে- স্যার আমার বাসা একটু দূরে। আর আমি বাসে করে আসি।

স্যার- তা, বুঝলাম কিন্তু পড়াশোনার কি খবর? কবে আসছ কোচিং এ?

মেয়ে- স্যার, আমার বাসায় টিচার আছে। আর আপনার কোচিং সেন্টার অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে পড়লে আমার বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

- আরে, আসো। একবার এলেই তোমার ভালো লাগবে। এই ক্লাসের অনেক মেয়েরা আমার কাছে পড়তে যায়..

এইসব বলতে বলতেই স্যার মেয়েটির হাত ধরেছিল ভরা ক্লাসরুমে। মেয়েটি হাত ছাড়াতে পারছিল না, এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। তখনই পাশের সিটের ছেলেটা স্যারের মুখে দুম করে এক ঘুসি মেরে দিলো। স্যার ভ্যাবাচেকা খেয়ে ছেলের দিকে তাকালো, মুহূর্তে আরেকটা চড়। সারা ক্লাসে হৈচৈ শুরু হলো। তাদের ডাক পরলো প্রিন্সিপলের রুমে। সব জানার পর প্রিন্সিপল প্রশ্ন করলেন, তোমরা এখানে অভিযোগ না করে এমন করলে কেন? শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার শিক্ষা কে দিয়েছে তোমাকে?

- আমার মা বাবা দিয়েছে। আমার মা বলেছে যখনই কোন মেয়েকে অপমান হতে দেখবি, সাথে সাথে প্রতিবাদ করবি। কার সামনে দাঁড়িয়েছিস এটা দেখবি না। জালিমদের কোন পরিচয় থাকে না, তাদের মর্যাদা দিতে হয় না।...... এটা ছিলো ছেলেটির উত্তর।

এই ঘটনাটি জেনে আনন্দে চোখ ভিজেছিল সেদিন। হ্যা, সমাজে কুলাঙ্গার যেমন আছে তেমনি রত্নগর্ভা মায়েরা এখনো বিদ্যমান। সেই ছেলেটি এমন মা বাবার অস্তিত্ব এভাবেই জানান দিয়েছিলো।

* সত্য ঘটনা *

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ