করোনায় মৃত্যুর মিছিল। গতবছরের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে সবকিছুতেই। আবার পুলিশ, মাইকিং, সচেতনতামূলক পোষ্টার, বিভিন্ন এ্যাড, সারাক্ষন টিভিতে সচেতনতামূলক খবর। এতসবের পরও করোনা ভাইরাসের কারনে গতবছরের চেয়ে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। কারন এত লেখালেখি, প্রচার , বলাবলি আমাদের কানেই যেন ঢুকছে না।

নানা মুনির নানা দাঁত কেলানী মতামতকে উপেক্ষা করে এবারের করোনা ভাইরাস আগ্রাসী রুপ নিয়েছে। একজনের মাধ্যমে তিনজন ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ পিথাগোরাসের সূত্র ফলো করছে- ১,৩ ,,,,২৫ এভাবে। আর অধিকাংশ রোগীদের ৪০ শতাংশ ফুসফুসই আক্রান্ত  অবস্থায় তারা হাসপাতালে যাচ্ছে। তবুও আমরা কি করছি, যেমন চলছিলাম তেমনি চলছি।এমন অবস্থা চলতে থাকলে সামনে কোথায় গিয়ে বাংলাদেশ দাঁড়াবে কেউ জানে না।

সারি সারি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে কারণ যে কোন সময় লাশ আসতে পারে। এবং আসছেও তাই মাঝে মাঝে দশবারো জন একসাথে। যে মানুষটার জন্য মা-বাবা আত্নীয়-বন্ধুদের কাঁদবার কথা ছিল। একবার প্রিয় মানুষটার মুখ দেখবার কথা ছিল, তা আর হচ্ছে না। চোখের পানি ও স্বজন ছাড়াই মাটি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি শেষ ইচ্ছা ছিল যেখানে থাকবার, তাও হচ্ছে না।

সামান্য কাজে বাইরে গিয়েছিলাম। আজকে সর্বোচ্চ মৃত্যুতে কেমন যেন যমরাজ সাথে সাথে ঘুরছে বলে মনে হচ্ছে। অথচ সেই নিম্ন শ্রেনীর মানুষ নির্বিবাদে পান চিবিয়ে বিনা মাস্কে রাস্তায় ঘুরছে। কোন সামাজিক দুরত্ব নেই। গাদাগাদি করে যেখানে সেখানে যাওয়া আসা করছে।তারা একবারও ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না। দেশকে, দেশের সকল মানুষকে চরম বিপদে ফেলছে। দেশের সামনের অপার সম্ভাবনা লুটিয়ে পড়ছে।

এ বছর করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা দারিদ্রতায় আবার ৪২% এ নেমে গেলাম। করোনা সংক্রমন আরও বাড়তে থাকলে দেশ চরম দুরঅবস্থার মধ্যে পরে যাবে। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ এ পড়বে নিম্নবিত্ত ও শ্রমিক শ্রেণী। যাদের সাহায্য করার কেউ থাকবে না। অথচ এই শ্রেনীর কোন সচেতনতার বালাই নেই।

এমতাবস্তায় উপায়ান্তর না দেখে সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন —-

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধরাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে :

“ ১. সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরানিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞারআওতা বহির্ভূত থাকবে।

২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৩. সব প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদনব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃকনিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরি সেবা, যেমন: কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ওখাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্টও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গেসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকারইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখানো সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াতকরা যাবে।

৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্যবিক্রয় বা সরবরাহ করা যাবে। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানগুলো বন্ধ থাকবে।

৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয়করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়ক্ষমতা প্রদান করবেন।

১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবিহ নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।

১৩. এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।”

করোনা রোধে কঠোর লক ডাউন না স্বাস্হ্য বিধি কোনটা জরুরী? সরকার লকডাউন দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু করোনা যেহেতু আমার। চিকিৎসা, ভোগান্তি, আর্থিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও আমার তাই আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কঠোর স্বাস্হ্য বিধি মেনে চলব তাহলেই শুধু করোনা রোধ করা যাবে।

আসুন আমরা সরকার নির্দেশিত সকল নিয়ম মেনে চলি। নিজ নিজ অবস্খান থেকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। কারন করোনা নির্মূল হবে এমন কথা বলা যাবে না। তাই সচেতনতার সাথে অন্যান্য রোগ- ব্যাধির মত তাকে সাথে নিয়েই চলতে হবে।সচেতন থাকব, স্বাস্থ্যবিধি মানব তবেই সুস্থ থাকব।

ছবি- নেট।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ