IMG_20140528_073847
কক্ষ নং ৬০২, একটি হোটেলের সাধারণ একটি কক্ষ। এই সাধারণ কক্ষটিই অসাধারণ হয়ে গিয়েছে এই কক্ষের মানুষদের কারনে। রহস্যময় হরর কাহিনীর মত কোন কক্ষ এটি নয়, তবে হরর কাহিনী ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছে এর কাছে। বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বে এমন একটি কক্ষ পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

৩২ বছর পূর্বে এক নব দম্পতি এই কক্ষে হানিমুন করতে এলেন। সেই যে এলেন এখনো তাদের হানিমুন সমাপ্ত হয়নি। এই কক্ষে থাকাকালীন জন্ম হয়েছে তাঁদের প্রথম সন্তান, দ্বিতীয় সন্তান। দুই ছেলের গর্বিত বাবা আর মা এই হানিমুন চলমান দম্পতি। সন্তানের লালন পালন, বড় হওয়া, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় এর পড়াশুনা সবই এই কক্ষে অবস্থান কালীন সময়ে। বুয়েট পাশ করা প্রকৌশলী ছেলের বিয়েও এই কক্ষে সম্পাদন হয়েছে। প্রকৌশলী ছেলে বর্তমানে আলাদা বাসা নিয়েছে। ছোট ছেলে নটরডেম এর ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ। হানিমুন দম্পতির ইচ্ছে ছোট ছেলে ডাক্তার হবে। তার যে মেধা তাতে ছোট ছেলে ডাক্তার হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

ছোট এই কক্ষে ছেলের পড়াশুনার বই রাখার স্থান সংকুলান হয়না,তাই বারান্দা বই এর দখলে।
ছোট এই কক্ষে ছেলের পড়াশুনার বই রাখার স্থান সংকুলান হয়না,তাই বারান্দা বই এর দখলে।

হানিমুন দম্পতির অত্যন্ত ফিটফাট আপু নিয়মিত হোটেলের লবিতে দুইবেলা হালকা জগিং করেন। কাঁধ পর্যন্ত চুলে নিয়মিত কালার করেন, অবশ্যই তা মাল্টি কালার। একদিন সাহস করে আলাপই করে ফেললাম আপু সম্বোধন করে। কেন এই জীবন বেঁছে নেয়া?
* নিশ্চিন্ত এই জীবন
* রান্না বান্নার কোন ঝামেলা নেই
* হাড়িপাতিল সহ সংসারের কোন কিছুই কেনার ঝামেলা নেই
* বিছানার চাদর, বালিশ,জানালার পর্দা ম্যাচিং করে কেনার দরকার নেই
* আত্মীয় স্বজনের কোনই চাপ নেই,তারা এসে থাকা তো ভালো, বসারই তো কোন জায়গা নেই। কেউ যদি এসেই পরে হোটেলের রিসিপশন তো আছেই।
* ছেলের বিয়ের কথাবার্তা সব একটি হোটেলে হয়েছে।
* ইচ্ছে মত চলা যায়,খাওয়া যায়। যেমন ভাবির একটি সিঙ্গারা খাবার বা পিঁয়াজু খাবার ইচ্ছে হলো। বয়কে দশ টাকা দিয়ে হোটেল থেকে কিনে আনান। বাসায় বসে এসব খেতে চাইলে হয় বানাতে হবে, নতুবা নিজের বা কাজের লোককে দোকানে পাঠিয়ে আনাতে হবে।
* বুয়ার কোন উপদ্রপ নাই
* কারেন্ট বিল, ওয়াসা, তিতাস গ্যাস এর বিল প্রদানের কোন টেনশন নাই
* বাড়ির প্ল্যান পাশ, ইনকাম ট্যাক্স, পৌর ট্যাক্স এর চিন্তাই নাই
* একটি বাড়ি বা সংসারে যত ধরনের কাজ আছে সব থেকে এনারা মুক্ত।

IMG_20140528_074142
কি করেন তাহলে এনারা? সমস্ত দিন চলে যায়, শরীরের যত্ন নিতে, টিভি দেখে, বারান্দায় বসে আকাশ দেখে, জ্যাম দেখে, বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে। এই যে ৩২ বছরের হানিমুনের আইডিয়া, এটি আপুর। কত বুদ্ধি যে আপুর তাই ভাবছি। জীবন একটিই তা যদি একটি সংসার গোছাতে গোছাতেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে কিভাবে চলে? ইচ্ছে পূরণের একটি জগৎ তারা তৈরী করেছেন, যে জগতে বাইরের কেউ নেই।
IMG_20140528_134119

আপুর বরটাও যে দারুণ উপভোগ করছেন এই ৩২ বছরের হানিমুন তা তার চেয়ারে বসে এমন করে পায়ের পাতা দোলানো দেখেই বুঝা যায়। রুম বিভিন্ন মালামালে ঠাসা। এর মাঝেই ঠিক দরজা লাগোয়া একটি চেয়ারে বসে ভাইয়া পেপার পড়েন আর পা নাড়ান। শান্তি একেই বলে। তাদের এই অফুরান হানিমুনে শুধু শান্তি আর শান্তি। ওম শান্তি ওম............

বিচিত্র মানুষ বিচিত্র পরিবার- ১

ছবিগুলো সব মোবাইলে বিভিন্ন সময়ে  তোলা হয়েছে।
তাদের সুখি আনন্দিত চেহারা মুবারক দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত।

0 Shares

৬৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress