
দৈনিক পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে নিয়মিত লিখতাম। মাঝে মাঝে দুই একটি কবিতা প্রবন্ধ সাহিত্য পাতায় ছাপা হত। মনে মনে বিশাল কবি কবি ভাব। আর হবেই না কেন প্রচুর চিঠি আসতো ভক্তদের। ভক্তদের চিঠি পেয়ে আমিও বাকবাকুম পায়রার মত ফুলতে থাকি। চিঠিগুলো সের দরে বিক্রি করল বন্ধ হতো না। যেহেতু চিঠি আসতো চিঠি উত্তর দেওয়া তো ভদ্রতার ব্যাপার। কবি হয়ে তো আর অভদ্র হতে পারি না। কবির মান ইজ্জত বলে কথা।
একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি। চিঠি কিন্তু ছেলেরাই বেশি লিখত। এর মধ্যে কিছু চিঠিতে আবার ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেমের অফার থাকতো। আমি কবি কবি ভাব বজায় রেখে ওসকল পাত্তাই দিতাম না।
এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বাসায় এসে হাজির হতো। বাসায় আসলে কি আর খালি মুখে ফেরানো যায়। শুনেছি খালি মুখে ফেরালে নাকি গৃহস্থের অকল্যাণ হয়। অকল্যাণ রোধে হোক ভদ্রতার খাতিরেই হোক। যৎসামান্য চা-পানের ব্যবস্থা থাকত। রক্ষণশীল পরিবার হয়েও বাসা থেকে কোন বাধা আসতো না। বুঝতে পেরেছিলাম। মা মনে মনে ভাবতেন যদি এর মাঝে কোন ভালো পাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
একদিন সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলতেই অচেনা আগন্তক দাঁড়িয়ে।কে আপনি ? আপনার ছোট ভাই রহমত। আমার ছোট ভাই তো বাসায়। আর আমার বাবা তো একটাই বিয়ে করেছেন। আমারে চিনেন নাই। আমি ভোলার রহমত। এমন ভাবে বলছে, যেন কত জনমের চেনা। আপনাকে যে চিঠি লিখি। এতক্ষণে বুঝলাম এতো আলা ভোলা। চিঠি গুলো আমরা ভাই-বোনেরা মিলে পড়তাম। চিঠির অবস্থা অনুসারে একেক জনের খেতাব দেয়া ছিল। ভোলা থেকে লিখতো বলে এর নাম ছিল আলা ভোলা।
আলা ভোলাকে দেখে মনে হল বরিশালের লঞ্চে উঠে সরাসরি আমার বাসায় এসে পৌঁছেছে। লাঞ্চচেন গল্পের কথা মনে হলো। লেখকের ভক্ত ছিল মোটাসোটা একটু বয়স্ক।এ তার বিপরীত। বয়স কম দেখতে তালপাতার সেপাই। উদ্দেশ্য এক পকেট ফাঁকা করা। কোনমতে ভরপেট নাস্তা খাইয়ে বিদায় করে দিলাম।
সন্ধ্যা বাসায় ঢুকেই দেখি ড্রইং রুম একটা শার্ট ঝুলানো। ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কার। আপা আলা ভোলা তো আবার আইছে। কস কি। বলে গেছে রাতে এখানে থাকবে। মেজাজ বিগড়ে গেলো। এটা কি তার শ্বশুর বাড়ি নাকি। এতো জোঁকের মতো। আমিও লবণ নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে রইলাম। ঘন্টা খানেক পর বাবু সাহেব ফিরলেন।
কি ব্যাপার। আপনি আবার আসছেন যে।
আজ এখানেই থাকবো।
মামা বাড়ির আবদার আর কি। আপনি কে আপনাকে বাসায় থাকতে দেবো। সকালবেলা নাস্তা খাইয়েছি সেটাই বেশি।
আমি ঢাকা শহরে কিছু চিনি না।
আমার বাসা চিনলেন কি করে তাহলে।
কোথায় যাব।
আপনি জানেন। আপনি কোথায় যাবেন। ঢাকা শহরে অনেক হোটেল আছে।
আমি হোটেল চিনি না।
রাস্তায় বের হলে চিনে যাবেন।
আজকের রাতটা না হয় থাকি।
রাত তো দূরের কথা, আর এক মুহূর্ত নয়। আপনার সাহস হয় কি করে। সকালে ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলিনি।
অনেক কষ্টে অবশেষে বিদায় করতে পারলাম। কিছুদিন পর সে আলা ভোলার চিঠি। আপা আপনাকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। আপনি খুব বিপদে পড়েছেন। আমি আপনাকে সাহায্য করতে আসছি। মনে মনে বললাম তুই স্বপ্ন দেখতে থাক।
ছবি সংগ্রহ-নেট থেকে
১৫টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
দারুণ মজার ব্যাপার তো।
চেনা জানা নেই আজ রাতে থাকে
এমন অদ্ভুত আবদার আলা ভোলারাই করতে পারে
হালিমা আক্তার
আলা ভোলারা জাতে মাতাল তালে ঠিক। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
আলাভোলা দেখছি গল্পের সেই মোটু ভক্তের চাইতেও এককাঠি সরেশ! ঐ ভক্ত লেখকের সাথে মাত্র একবেলার খাবার খেয়েছিলো, আর ইনি একদম রাত্রি নিবাসের প্রস্তুতি নিয়েই হাজির হয়েছিলেন!
হাহাহাহা, ভালো লাগলো রম্য পড়ে।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
ওনার একবেলা পোষাবে না হয়তো। রাত্রি যাপন করে গাটের পয়সা বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লেখক বেরসিক, তার ইচ্ছা পূর্ণ হতে দিল না। শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
ভক্ত তো এমনিতেই আলাভোলা! আহারে বেচারা!
হালিমা আক্তার
বেচারার ইচ্ছা পূরণ হলো না। বেরসিক লেখকের হাতে পড়লে যা হয়। শুভ কামনা রইলো।
রিতু জাহান
ভক্তের বিড়ম্বনা কম হয় না সেলিব্রিটিদের জন্য।
এসে একেবারে রাত্রি যাপনের আবদার।
ইনিবিনিয়ে চিঠির প্রতুত্তর না পেলে আবার অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
হালিমা আক্তার
সত্যি বলেছেন। চিঠির উত্তর না দিলে, লেখক হবে অহংকারী। ভক্তদের আবদার মিটানোর যন্ত্রনা কম নয়। শুভ কামনা রইলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
বেশ সুন্দর লেগেছে রম্যকাহিনী। এরকম চরিত্র তো হুমায়ুন সাহিত্যে পাওয়া যেত মাঝে মাঝে। শুভকামনা।
হালিমা আক্তার
অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। শুভ রাত্রি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আহারে বেচারা, কি ক্ষতি হতো এট্টু জায়গা দিলে। বেচারা আলাভোলা বলে কথা। স্বপ্নের পর এসেছিল কিনা জানতে মন চায়।।।
হালিমা আক্তার
বেচারা বেরসিক লেখকের কাছে আইসা পড়ছে। আর আসার সাহস পাবে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
হা – হা – হা
শেষে কিন্তু কবির আচরণ লঙ্ঘন করেছেন, আপু!
লোকটা নিশ্চয় অতি ভক্ত ও নিয়মিত পাঠক।
তবে সমস্যা নেই
আমার বিশ্বাস ও আবার আসবে, আপনার বিপদ অনুমান করতে পারলেই।
তখন কিন্তু বিরক্ত না হয়ে দুপুরের খাবারটা অন্ততঃ দিবেন।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
দুপুরের খাবার কোন সমস্যা নয়। সব সময় কবি রোমান্টিক থাকলে হয় না। কবি ও সমাজ নিয়ে বাস করে। এমন আবদার করা উচিত নয়, যা সম্ভব নয়। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
মনির হোসেন মমি
হাহাহা বেচারা৴৴
রম্য চমৎকার হইছে।