ফেব্রুয়ারি মাস আসলে কি বাংলা ভাষার কথা মনে পড়ে?

ফেব্রুয়ারি, বছরের দ্বিতীয় মাস, যা বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে 'ফাগুন' নামে পরিচিত। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে এই মাস। প্রকৃতি নবজীবনে পূর্ণ হয়, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারপাশ।

কিন্তু, ফেব্রুয়ারি মাস কি শুধুই বসন্তের আগমনী বার্তা বহন করে? বাংলা ভাষার কথা কি মনে পড়ে এই মাসে?১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সেদিন বহু শহীদ তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন।বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার সূচনা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসেই।সেই সময়ে ১৯৫২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলা ভাষা দিবস পালন করে।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলা ভাষার গুরুত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষা শুধু আমাদের মাতৃভাষা নয়, এটি আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রতীক।ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করি, তাদের ত্যাগ ও বলিদান প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য ফেব্রুয়ারি মাস একটি উপযুক্ত সময়। আমরা সকলে বাংলা ভাষা ব্যবহারে সচেতন হই, বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করি।

তবে বাংলা ভাষার এই আয়োজন সব কিছু কি এই ফেব্রুয়ারি মাস কে ঘিরে। কিন্তু কেনো? এই মাসে এই অনুষ্ঠান গুলো পালন করে ফেসবুকে বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা পোস্ট দিব এইজন্য। ভাষা আন্দোলনের এই মাসকে ঘিরে এতো আয়োজন।তবে সেই আয়োজন এবং শ্রদ্ধা কেবল ফেব্রুয়ারি মাসে কেনো? আর বাকি মাস গুলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি বলার জন্য, বাকি মাসগুলোকে ফেসবুকে ইংরেজি লিখে পোস্ট দেবার জন্য যাতে আমরা কতটা আধুনিক তা বোঝানোর জন্য। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা আমারা গর্বিত আমাদের ভাষার জন্য লড়াই করে টিকিয়ে রাখতে পেরেছি এটা স্বীকার করতে এতটা দ্বিধা কেনো।

বর্তমান বাংলা ভাষার মর্যাদা হানি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ।বাংলা ভাষা, আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের গর্ব, আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রতীক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে বাংলা ভাষার মর্যাদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, এমনকি ঘরে-বাইরেও ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বেড়ে চলেছে।বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা ও উপেক্ষা বাংলা ভাষার মর্যাদা হানি করছে।

আমরা কি কখনো ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেছি বাংলা ভাষা কতটা প্রাচীন। যাকে আমরা অবহেলা করতে পারি না।বাংলা ভাষার উদ্ভবের সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ ভাষার বিবর্তন একটি ধীর ও ক্রমবিকশিত প্রক্রিয়া। তবে, ভাষাবিদদের ধারণা অনুসারে, আধুনিক বাংলা ভাষার উৎপত্তি ১০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে।সেই সময়ের আগে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে "প্রাকৃত" ভাষার উদ্ভব আর ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ দিকে "অপভ্রংশ" ভাষার উদ্ভব, যা পরবর্তীতে বাংলা, অসমীয়, ওড়িয়া ভাষার পূর্বপুরুষ।প্রাচীন বাংলা ১০০০-১৪০০ সময়কালে চর্যাপদ, বৌদ্ধ গান, ও হিন্দু ধর্মীয় গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এছাড়া "আমি", "তুমি" ইত্যাদি সর্বনাম এবং "-ইলা", "-ইবা" ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব।মধ্য বাংলা ১৪০০-১৮০০ সময়কালে চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, কাব্য, ও অন্যান্য সাহিত্যকর্ম এই সময়ের উল্লেখযোগ্য।শব্দের শেষে "অ" ধ্বনির বিলোপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফারসি ভাষার প্রভাব। আধুনিক বাংলা ১৮০০ থেকে বর্তমান সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দের কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি তাহার প্রভাব উপলব্ধি করা যায়।ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ, যেমন "তাহার" → "তার"; "করিয়াছিল" → "করেছিল"।উল্লেখ্য, বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশে বিভিন্ন ভাষার প্রভাব রয়েছে, যেমন সংস্কৃত, ফারসি, আরবি, ইংরেজি ইত্যাদি।

তাহলে কি আমরা আমাদের মাতৃভাষা ভাষা আমাদের রাষ্ট্রভাষা কে সকল যাইগায় ছড়িয়ে দিতে পারি না।আমরা ইংরেজি ভাষার ব্যবহার কমিয়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে পারি না। আজ কাল রেস্টুরেন্টে ক্যাপ সব যাইগায় ইংরেজির ছড়াছড়ি অথচ চাইনা জাপান তাদের ভাষায় প্রতি অনড়।তারা তাদের ভাষার মর্যাদা রেখেছে। এরপর ইংরেজি। আমরা হয়তো অনেক এ জানি না বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা বাংলা ভাষা।বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন সুমধুর ও সুন্দর শব্দ,সহজ ব্যাকরণ,সমৃদ্ধ সাহিত্য,বিভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ।আমাদের কর্তব্য বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখা,শুদ্ধ ও সঠিক ভাষা ব্যবহার,
বাংলা ভাষার চর্চা ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করা। আসুন আমরা সবাই বাংলাকে ভালোবাসি বাংলা ভাষায় কথা বলি শুধু ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আনুষ্ঠানিকতা পালনে নয় সব সময় সর্বোপরি।

শিক্ষার্থী সৌরভ হালদার ব্যবস্থাপনা বিভাগ সরকারি ব্রজলাল কলেজ খুলনা

0 Shares

একটি মন্তব্য

  • হালিমা আক্তার

    খুব গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্লেষণ মূলক লেখা। বিশ্বায়নের এই যুগে ইংরেজি ভাষার প্রতি নির্ভরশীলতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে মাতৃভাষার জগা খিচুড়ি ব্যবহার দেখলে কষ্ট লাগে। ছোট বেলা থেকেই ইংরেজীতে দুর্বল। বর্তমান কর্পোরেট জগতে ভালো ইংরেজি না জানলে চাকরি পাওয়া কষ্টকর। যদিও আমরা অনেকেই নিজের ভাষা ও শুদ্ধ করে বলতে পারি না। মাতৃভাষা শুধু মায়ের মুখের ভাষা ই নয়। এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সেই সংস্কৃতির এখন বেহাল দশা। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ