একটা চা বানাতে এতোক্ষন? খাবার এখনো তৈরি হয়নি? সারাদিন করোটা কি? সামান্য রান্না তাই সময়মতো দিতে পারো না! সারাদিন রান্নাঘরে কাটিয়ে একি ডাল, ভর্তা, ভাজি তাও স্বাদহীন মুখে দেয়া যায় না? আমার সারাদিন কতো কাজ করতে হয়। একদিন আমার কাজ করেই দ্যাখো। কতো কঠিন! সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে, সিরিয়াল দেখে কাটাও। রান্না কি কোন কাজ?

পুরুষদের চিরাচরিত অভিযোগ। রাঁধুনির চুপচাপ শুনতে হয়। কারন সে কোন কাজ করে না। এটা কোন পেশা বা শ্রমের মধ্যে পরে না। যার কোন পারিশ্রমিক নেই। আজো একজন গৃহিনী তার পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে। তাকে সবাই ছোট করে দ্যাখে। বাস্তবতা আসলে কি তাই? না দিন বদলেছে ব্রো। রান্না এখন পেশা ও কাজ সাথে সুনামও এনে দেয়।

‘মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া’র সেরা তিনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী । বাংলাদেশি নারী কিশোয়ার চৌধুরী নুপুর লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা- চিরায়ত এমন সব বাঙালী খাবার রান্না করে অস্ট্রেলিয়ায় এখন আলোচনায়।

প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পান্তা ভাত’ পরিবেশন করেছেন। যেটি ওই শো’য়ে ‘স্মোকড রাইস ওয়াটার’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

৩৮ বছর বয়সী কিশোয়ার চৌধুরী দুই সন্তানের জননী। পেশায় একজন বিজনেস ডেভেলপার। সন্তানদের জন্য মজার মজার দেশী রাম্না করতে গিয়েই তিনি এতোসব রান্না শেখেন। তিনি মেলবোর্নের মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ আটর্স থেকে স্নাতোকোত্তর করেছেন। আজ ও কাল দূপর্ব মিলে ফাইনাল। তিনি আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতায় বিশ্বাসী হয়েই এগোচ্ছেন। সবাইকে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর ঐতিহ্য চিনিয়ে দেবার জন্য কিশোয়ার চৌধুরীকে অনেক ধন্যবাদ। সেরা তিনের ফলাফল যাই হোক আমাদের কাছে তিনি সেরাই! তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

আজ থেকে বেশ ক’ বছর আগে ভারতে ‘ মাষ্টার শেফ ইন্ডিয়া’ হয়েছিলো। তাতে একজন শিক্ষক মূল পর্বে আসার জন্য চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলেন। সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো কিন্তু তিনি আত্মবিশ্বাসী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ আমি শুধুমাত্র পেশা বদল করেছি।’

তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সকল পেশাই সম্মানের। কোনটা ছোট/ বড় নয়।

আমাদের মা- খালা বা আমরা গৃহিনীরা যেটা নিয়ে সঙ্কোচ করি তা এখন আর্ট। আসলেই ভাতে কখন পানি দিলে তা সুস্বাদু পান্তা হবে এটা অনেকেই জানেনা। আবার আলুভর্তায় কি পরিমান তেল, নুন, মরিচ দিয়ে কতোক্ষন মাখালে সফট ও টেষ্টি হবে তাও কিন্তু মোটেও সহজ নয়।

সময় বদলে এখন ছেলেমেয়েরা রান্না বিষয়ে ডিপ্লোমাসহ অনার্স- মাষ্টার্স করছে। তারপর বড় বড় হোটেলের শেফ হয়ে ক্যারিয়ার গড়ছে। যে রাম্না কোন কাজ নয়, তা এখন পেশা। আমরা যেটাকে বাবুর্চি বলি, তা এখন শেফ। অনেকেই এখন বাসায় বসে রান্না করে বেশ পয়সা কামাচ্ছেন। মেয়েদের মাঝে একসময় যে রান্নার অনিহা ব্যাপারটা লক্ষ করা যেত তা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রান্না ছেলেদের কাজ নয় এ ধারণাও বদলে সবাই দূর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশ এগিয়ে নেবার জন্য বহুমূখি কর্ম বা পেশা দরকার হয়। আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি নানা পেশায়, বহুমূখী কর্মে। তাই কোন কাজকে লজ্জা বা ছোট না ভেবে এগিয়ে যাবো সামনে এই কামনা।

ছবি- অনলাইন।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ