ঘোর সন্ধ্যা। চারিদিকে নিয়নবাতির আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করলেও ঘুটঘুটে অন্ধকারই মনে হলো রূপার। ঘোর সন্ধ্যায় কৃত্রিম আলোয় সজ্জিত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে রূপা ও অনি। অনি কথা বলছে আর রূপা নিঃশব্দে হেঁটে চলেছে অনির সাথে সাথে। অনি কি বলছে তাতে রূপার বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই।

রূপা ভাবছে যেনো সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা মানুষ। আজই প্রথম দেখছি এই মানুষটাকে। আজই প্রথম কথা। আর কখনো কোনো দিন দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একটা মানুষের পাশে হাঁটতে রূপার কিছুটা অস্বস্তি, কিছুটা বিরক্তি আর কিছুটা রাগ হচ্ছে।

অস্বস্তি হচ্ছে সম্পূর্ণ অচেনা ভেবে।

বিরক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত কথা বলছে দেখে।সেই যে কথা বলা শুরু করেছে আর থামছেই না।

রাগ হচ্ছে পরিচিত একটা মানুষকে সম্পূর্ণ অচেনা ভাবতে হচ্ছে বলে।

হ্যাঁ আজ রূপা যাকে সম্পূর্ণ অচেনা ভাবছে সে আসলে অচেনা অজানা কেউ নয়। কিন্তু পরিস্থিতি রূপাকে বাধ্য করেছে অনিকে অচেনা ভাবতে। এটা শুধু রূপার ভাবনাতেই নয় বাস্তবেও যেনো ওরা অচেনা। অথচ এই সম্পূর্ণ অচেনা মানুষটাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল রূপার শৈশব থেকে কৈশোরে পা দেওয়া।

অনি রূপার কাজিন। রূপা যখন ৯/১০ বছরের অনি তখন ১৯/২০ বছরের। রূপার মা চাইতো অনির সঙ্গে রূপার বিয়ে দেবে। তার মেয়ে জামাই হবে অনি। এই কথাটা সারাপাড়ার মানুষ জানতো। এই কথা নিয়ে সবাই রূপাকে ক্ষ্যাপাতো। সবাই বলতো অনির বউ, অনির বউ।
আর এই কথা শুনে রূপা রেগে যেতো, চিৎকার চেঁচামেচি করতো, কান্নাকাটি করতো। মাকে নালিশ করলে মা হাসতো। রূপা তখন আরও জোরে কান্না করতো।

আস্তে আস্তে রূপা বড় হতে থাকলো। এবার কেমন যেনো শান্ত লজ্জাবতী লাজুক লতা হয়ে উঠলো রূপা। সবাই যখন অনির বউ বলতো তখন লজ্জায় লাল হয়ে যেতো রূপার মুখটা। রূপা তখন অনিকে দেখে লজ্জায় পালিয়ে যেতো। রূপাও অনিকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। সত্যিই সে অনির বউ হবে! অনি তার বর হবে!

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ