রহস্য সিরিজ(অদ্ভুতুড়ে মৃত্যু_১)

সুরাইয়া পারভীন ১০ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ০৭:৫০:২৯অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

২:১৫ মি. লাস্ট ট্রেন। কোনোভাবেই ট্রেনটা মিস করা যাবে না। এই শেষ ট্রেন মিস করলে আজ আর যাওয়ায় হবে না। কিন্তু আমাকে যে আজই যেতে হবে।
রাত আনুমানিক ১:৪৫ মি.। হাতে আর মাত্র আধাঘণ্টা সময় আছে। এবার না বের হলে সত্যি সত্যিই ট্রেনটা আমাকে না নিয়েই বেড়িয়ে যাবে। তড়িঘড়ি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

ঘুটঘুটে অন্ধকার জনমানবশূন্য নির্জন নিস্তব্ধ চারপাশ। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। অন্যান্য রাতে এ সময় শেয়ালের হাঁক ডাক শোনা গেলেও আজ কেমন থমথমে পরিবেশ।  মেইনরোডে পৌঁছানোর আগে কবরস্থান পার হতে হয়। একে তো নির্জন রাত তার উপর আমি একা। বুক ঢিপ ঢিপ করাটা স্বাভাবিক। আল্লাহ ভরসা বলে দ্রুত পা চালালাম। হঠাৎ অনুভব করলাম যতো দ্রুতই হাঁটি না কেনো মনে হচ্ছে খুব ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত! এতো জোরে হেঁটেও এটুকু রাস্তা পার হতে পারছি না।  কেমন গা ছমছম করে উঠলো। কবরস্থানের ঠিক মাঝামাঝি। পা দুটো অসার হয়েছে মনে হচ্ছে। আর হাঁটতে পারছি না। অদৃশ্য কোনো শক্তি যেনো পা দুটো জড়িয়ে ধরেছে। এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম।

নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করলাম। থেমো না, এগিয়ে যাও। ভয় পেয়ে থেমে গেলে চলবে না। তোমাকে স্টেশনে দ্রুত পৌঁছাতে হবে। নয়তো ট্রেন মিস করবে। এবার যেনো খানিকটা সাহসী হয়ে উঠলাম। শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে হাঁটতে শুরু করলাম। মেইনরোডে চলে এলাম।

মূল রাস্তাও কেমন ফাঁকা। একদম শুনসান হলেও রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বৈদ্যুতিক খুঁটি গুলোতে আলো জ্বলছে‌। এবার ভয়টা কমে গেলো। কিন্তু কই একটাও তো রিক্সা চোখে পড়ছে না। স্টেশনে যাবো কী করে? এতখানি রাস্তা হেঁটে স্টেশনে যেতে তো সকাল হয়ে যাবে। শেষে যাওয়াই হবে না। ধূর! এত বিরক্ত লাগছে না। নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। কোন দুঃখে এ সময়ে টিকিট করছি কে জানে। যা হোক সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় ক্রিং ক্রিং শব্দ শুনতে পেলাম। দ্রুত পিছনে ঘুরতে যাবো দেখি তো রিক্সা কিনা এমন সময় মনে হলো না একদম না। পিছনে ঘোরা যাবে না। কে বলতে পারে এটা কোনো মায়া বা বিভীষিকা নয়। শুনেছি রাতে নাকি তেনারা বিভিন্ন রূপ নিয়ে বের হয়। ঘুরলে যদি ঘাড় মটকে দেয়। আমি দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এবার শব্দটা আর কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। যেনো কানের কাছে এসে বেল বাজাচ্ছে।  এবার একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
-আপা উঠেন। স্টেশন যাবেন তো
এই লোকটা কি করে জানলো আমি স্টেশনে যাবো? তবে কি আমার ধারণায়় ঠিক! এ নিশ্চয়ই কোনো মানুষ নয়।
-আপা উঠেন। যাবেন না?

না আর ভয় পেলে চলবে না। যা আছে কপালে। পিছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করলাম।
-আপনাকে কে বললো আমি স্টেশনে যাবো?
-হা হা হা । কেউ কেনো বলবে? এতো রাতে বের হয়েছেন তখন নিশ্চয়ই স্টেশনেই যাবেন।
-এতো রাত হলেই স্টেশনে যেতে হবে কেনো?
-হাতে ব্যাগ। এখন আর কোনো যানবাহনও নেই তাই মনে হলো স্টেশনেই যাবেন। যা হোক না যেতে চাইলে থাক।
বলেই রিক্সাওয়ালা সামনে এগিয়ে যেতে উদ্যত হলো। তখন আমার মনে হলো দেখি তো লোকটার ছায়া পড়ছে কি না। মানুষ হলে নিশ্চয়ই ছায়া পড়বে। এই তো মানুষই। এই তো ছায়াও দেখা যাচ্ছে।
-এই খালি দাঁড়ান।

রিক্সায় উঠলাম। রিক্সা এতো ধীরে ধীরে চালাচ্ছে দেখে রীতিমতো রাগ হচ্ছে আমার। একটু জোরে চালাতে বললাম।
-আপা চিন্তা করেন না। ঠিক সময় পৌঁছে দেবো। এখনও অনেক সময় আছে।
-সময় আছে মানে? আমি কী সকালের ট্রেনে যাবো?
-আপা রেগে যান কেনো? কেবল তো ১:৪৫মি.। আপনার ট্রেন ২:১৫ মি.

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ