পুরুষ তুমি বসতি বসাও
আমি ঘর বাঁধি, সাঁজাই গোছাই ,
সেই ঘরে তুমি’ আমি
তোমার আমার যাবতীয় সংসার করি ।
আমি কুটো নাড়ি
সাঁঝ প্রদিপ জ্বালি,
পঞ্চ ব্যাঞ্জনে আহার যোগাই ।
সকাল সন্ধ্যা স্রষ্টার নাম জপি
মঙ্গল প্রদিপ জ্বালি ,
বাটির চৌহদ্দিতে আপন ভুলে
অধিকার অনধিকারের সীমানা গড়ি ।
তথাপি , আমার বলে অধিকৃত নয়
স্বীকৃত নয় আমার বসবাস;
ইচ্ছে অথবা অনিচ্ছার নির্দেশে
তোমার অধিকার স্বীকৃত
শীল মোহর স্বাক্ষরিত কাগজটি
আমাকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে
মুহূর্তে ঘরচুত্য , নীড়হারা আমি,
অথচ আমিই ঘর বাঁধি
অনন্ত কাল হতে দাম্পত্য বহন করি ।
পুরুষ , তুমি উপনীত হও
আমি গর্ভধারণ করি।
নয়মাস দশ দিন গর্ভস্থিত যাতনাক্লেশ
প্রসবে মরণোন্মুখ , দ্বিতীয় জীবন লাভি
তবুও আমিই সন্তান দেই
দেই তোমাকে জন্ম বার বার, বারংবার ।
লালন পালন করি আচরহীন যত্নে,
অতঃপর সে, তোমারই বংশধর ;
তোমারই নাম ধারণ করে ।
সমাজ সংসার এই বিশ্বচরাচরে
তোমার উন্নত গ্রীবা , গর্বিত হুঙ্কার
স্বদর্পে প্রতিষ্ঠিত পিতৃত্বের দাবীদার ।
১৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এসব ভাবলে খারাপ লাগে।
পিতৃ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা যেদিন হতে শুরু হয়েছে,সেদিন হতেই এমন অবস্থা চলে আসছে।
ভাল লেগেছে কবিতা।
পারভীন সুলতানা
একজন মহান পুরুষ , যিনি আমার পিতা ছিলেন, ছিলেন গুরু তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন এর থেকে বের হবার একটাই পথ মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া । উনি আরও বলতেন একজন মা, বা স্ত্রী অবশ্যই সংসারের দায় মিটাবেন তবে তা সানন্দে , জীবনের নির্যাস উজাড় করে নয়। ভাল লাগলো আপনার অনুভূতি ।
বোকা মানুষ
সত্যিই, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এই বৈষম্য গড়ে দিয়েছে! আহা, এর বদলে যদি মানবতান্ত্রিক সমাজ হতো…!
হিলিয়াম এইচ ই
সকলেরই সমান অধিকার 🙂
তানজির খান
খুব ভাল লেগেছে
পারভীন সুলতানা
খুশি হলাম।
অনিকেত নন্দিনী
তারা একবার উপনীত হয় আমরা তা বহন করি চল্লিশ সপ্তাহ, মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে সন্তান জন্ম দেই বংশধর হয় তাদের। আমরা কেউ নই। পেট আমাদের, কষ্ট আমাদের, সব দায় আমাদের – সন্তান তাদের।
সন্তানদের তিলে তিলে গড়ে তুলি আমরাই। আমরাই জন্ম দেই পুরুষ। আমরাই বাড়াই পিতৃত্বের দাবীদার।
পারভীন সুলতানা
সবথেকে বড় কথা , আমরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সম্ভাব্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করি। তবুও আমরা কে ?
ছাইরাছ হেলাল
আপনি ঠিকই বলেছেন, একমাত্র আত্মনির্ভরশীলতা ই এর উত্তরণের একমাত্র উপায়।
তবে তাও খুব সহজ নয়, আমাদের সমাজব্যবস্থায়।
পারভীন সুলতানা
জী, তবে দেশ মানে রাস্ট্র যন্ত্র যদি এগিয়ে আসে তবে এটা সম্ভব । সবার উপরে আপ্নারা , যারা পিতা হয়েছেন, হবেন তারা আসুন নিজেদের পরিবার থেকেই শুরু করি।
লীলাবতী
সব নাম হয় পুরুষের,আমরা কিছুই না 🙁
পারভীন সুলতানা
তাইত হয়ে আসছে, এবার পালা বদলের পালা।
শুন্য শুন্যালয়
সবকিছুর পরেও যে “মা” রয়ে যায় আপু। নিজেকে এই বলে শুধু স্বান্তনা দিই, অসুস্থ হয়ে গেলে ছেলেটা শুধু আমাকেই খোঁজে।
সীমানা একদিন ভেঙ্গে যাবেই আপু। কতো সুন্দর করে কবিতায় সত্য উপস্থাপন করেন আপনি। শ্রদ্ধা আপনার প্রতি। -{@
পারভীন সুলতানা
আপ্নি সবটাই বলে দিয়েছেন , কি আর বলি ! সন্তানের জন্য এই জানটা, তাও নিশঙ্ক চিত্রে দিতে পারি। অনেক ধন্যবাদ । (3
রিমি রুম্মান
জন্ম থেকেই শুনি মেয়েদের বাবার বাড়ি নিজের বাড়ি নয়। স্বামীর বাড়িই আসল বাড়ি। স্বামীর বাড়ি এসে শুনা যায়__ ” আমার বাড়িতে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না”। শেষ বয়সে ছেলেরা বলে, মা, এখন থেকে তুমি আমার বাড়ি থাকবে। …… তাহলে নারীর বাড়ি কই ?
পারভীন সুলতানা
আর তাই আমি একটা কথাই বুঝি …………নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন । এটা করতে পারেনত স্বামী বলবে এটা তোমার বাড়ী, আমি তোমার অতিথি । ছেলে বলবে, মা তুমি যদি তোমার বাড়ীতে থাকতে না দাও তবে বের হয়ে যাব । শুধু বাবা বলবেন, হ্যা মা এটা তোমার বাড়ী । কিন্তু সে আর কতদিন ? ভাইরা অন্যদের মতই বলবেন। কিন্তু যদি আপনি মালদার হন, ভাই বলবে আপা তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি এখানে এসে থাক আমি ধন্য হই।
নীলাঞ্জনা নীলা
নারীরা যেদিন স্বনির্ভর হবে সেদিন কি সত্যি মেয়েদের নিজস্বতা ফিরে আসবে?
আপনার লেখায় এসে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই। -{@
পারভীন সুলতানা
পাবে , অবশ্যই পাবে। শক্তির উপকরনের মাঝে অর্থ এক বিরাট উপকরণ , অস্বীকার করার উপায় নেই।