কি লিখবো ঠিক বুঝতে পারতেছি না। খুব হতাশ হয়েও ভাবি -"না, হতাশ হবো না। আমার হাতের তো কলম আছে। আর এর চাইতে উৎকৃষ্ট অস্ত্র আর হয় না!" কিন্তু পরক্ষনেই আবার মনেহয়, যদি কাল হাতটাই না থাকে! যদি কাল দেহতেই মাথা না থাকে! হ্যাঁ, এমন একটা দেশে আমরা বসবাস করছি, এমন একটা সময় আমরা পার করছি যেখানে এই চিন্তাগুলো অমূলক নয়! কি দোষ ছিল অভিজিৎ রায়ের? যুক্তি দিয়ে ধর্মীয় গোঁড়ামিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া? নাকি সে একজন নাস্তিক সেটাই সবচাইতে বড় অপরাধ? যদি তা-ই হয় তাহলে অভিজিতদের হত্যার করার আগে আমাদের সংবিধানকে সংশোধন করতে হবে; যেখানে লেখা আছে "বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ!"  আর এই কথার বদলে লিখে দিতে হবে -"বাংলাদেশ মদিনার সনদে পরিচালিত একটি ইসলামিক দেশ!"...

আমি দেশের কথা ভাবি,দেশের কথা লিখি,দেশের মানুষের কথা ভাবি। কিন্তু ভেবে কি লাভ বলতে পারেন? যেখানে আমার রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে থাকলেও কেউ ধরতে আসবে না! হ্যাঁ সেরকমটাই হয়েছে। মাটিতে লুটিয়ে ছিল মানুষটা, চোখ দুটি তখনো খোলা, পাশেই তাঁর এক থোকা মগজ আর তাঁর স্ত্রীর একটি আঙুল... সেই অবস্থায় মহিলাটি সাহায্য চাচ্ছে, নিজে আহত হয়েও স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে আর পাশে সুস্থ স্বাভাবিক নংপুংসুকের দল তাকিয়ে তামাশা দেখছে। হায়! এই আমার সোনার বাংলা, যার বন্দনায় আমার ঘুম ভাঙে, যার বন্দনায় আমার ঘুম আসে। আমি বাকরুদ্ধ...

অপরাধী আগে থেকেই ছুরিতে শান দিয়ে রেখেছিলো ! অপেক্ষা কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত শিকার ! এসেছে, অপরাধী তাঁর অস্ত্রের যথার্থ ব্যবহার করে আমাদের সকলের সামনে দিয়ে চলেও গিয়েছে। আমরা দেখেছি, শুধু দেখেছি... Martin Niemöller এর কিছু উক্তির বঙ্গানুবাদ এ ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক-

প্রথমে তারা আসলো কমিউনিস্ট ধরতে। আমি বাঁধা দিলাম না। কারণ আমি তো কমিউনিস্ট না।

তারপর তারা সোশ্যালিস্টদের ধরতে আসলো। এবারও আমি চুপ থাকলাম। কারণ আমি তো সোশ্যালিস্টও না।

এরপর আবার আসলো তারা ইহুদিদের ধরতে। আমি চুপ করেই থাকলাম। কেননা আমি তো ইহুদি ছিলাম না।

তারপর তারা আসলো ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের ধরতে। আমি এবারো চুপ করে থাকলাম। কেননা আমি তো ট্রেড ইউনিয়ন করি না।

এবার তারা আসলো ক্যাথলিকদের ধরতে। আমি চুপ করেই থাকলাম। কেননা আমি তো ক্যাথলিক না, প্রটেস্টান্ট।

এরপর তারা আসলো আমাকে ধরতে। এবার আর আমার পক্ষে কথা বলার কেউ রইলো না...!!

অবাক হলেন? অবাক হবার কিছু নেই আমার, আপনার পালা সামনে আসতে চলেছে... প্রায় ২৪ ঘন্টা হতে চলেছে কাউকে ধরতে পারেনি আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। চোখ মেলে দেখুন অপরাধী আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে আর বলছে "এইবার তোর পালা!"

আজ (২৮ শে ফেব্রুয়ারি) গুরু আজম খানের জন্মদিন ছিল। লিখেছিলাম গুরুকে নিয়ে, রুচিতে আসেনি তাঁর মতো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে পোস্ট দিতে। তাই দেই নি। শুভ জন্মদিন গুরু, ভালো থেকো। উপর থেকে এই দেশের দিকে তাকিও না সহ্য করতে পারবে না। এ-যে এক মৃত্য উপত্যকা!!  আর কিছুই বলার নেই । শেষ করবো নবারুন ভট্টাচার্যের কবিতার কিছু লাইন দিয়ে-

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না
আমি আমার দেশকে ফির কেড়ে নেব
বুকের মধ্যে টেনে নেব কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল ও ভাসান
সমস্ত শরীর ঘিরে জোনাকি না পাহাড়ে পাহাড়ে জুম
অগণিত হৃদয় শস্য, রূপকথা ফুল নারী নদী
প্রতিটি শহীদের নামে এক একটি তারকার নাম দেব ইচ্ছে মতো
ডেকে নেব টলমলে হাওয়া রৌদ্রের ছায়ায় মাছের চোখের মত দীঘি
ভালোবাসা-যার থেকে আলোকবর্ষ দুরে জন্মাবধি অচ্ছুৎ হয়ে আছি-
তাকেও ডেকে নেব কাছে বিপ্লবের উৎসবের দিন

 

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ