মুক্তির নারীঃ নূরজাহান…

ফাতেমা জোহরা ১২ অক্টোবর ২০১৫, সোমবার, ০৫:৩৭:৩৫অপরাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ ১৫ মন্তব্য

নূরজাহান বেগম, বাবার আদরের মেয়ে নূরজাহান।আদর করে বাবা যাকে নূরী বলে ডাকতেন।একাত্তরে নূরীর বয়স ছিল মাত্র পনেরো।কিন্তু মেয়ের বয়স যতোই কম বুকের ভেতরের আগুন ততোই বেশি।সেই আগুন ছিল পাকিদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেশ থেকে বিদায় করার আগুন, সেই আগুন ছিল লাল সবুজ পতাকার মাঝখানের হলুদ মানচিত্রের আগুন।চারিদিকে বাঙালিদের ওপর অসহনীয় অত্যাচার চালাচ্ছে পাকিরা।অত্যাচারের মাত্রা যতোই বাড়ে নূরীর ভেতরের আগুন ততোই বাড়ে।অবশেষে নূরী ঠিক করলো যেভাবেই হোক যুদ্ধে যাবে সে। আগুনরঙা মানচিত্রের জন্ম দেবেই সে...

যেই কথা সেই কাজ। আরও দুই জন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে, “আমি যেখানেই যাই ভালো থাকবো,আমার জন্য দোয়া করবেন”- এই দুই বাক্যের চিরকুট লিখে রওনা দেয় যুদ্ধে, মানচিত্র আনার যুদ্ধে, লাল সবুজ পতাকা আনার যুদ্ধে।তবে যুদ্ধে যাবার কিছুদিন আগে থেকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ভাবে সাহায্য করে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-

আগের দিনের মানুষ তো নানান কথা বলতো, একটা ছেলের সাথে দাড়ায়া কথা বলতে দেখলে নানান কথা বলতো। এই ভয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে দাড়ায়া কথা বলচি, সুযোগ পাইলে ওদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) জন্য ভাত রাইন্ধা গামছায় কইরা আনছি, আলু সিদ্ধ কইরা আনছি, তাঁরা ভাত প্লেটে নেবার সুযোগ পায় নাই। গামছার মধ্যেই ভাত মাইখা খাইছে, মাঝে মাঝে রুটি বানায়া আনছি।

এরপরে স্থানীয় এক কমান্ডারের সহায়তায় মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখায় এবং কসবা মাঠে ট্রেনিং নেয়। ট্রেনিং শেষে নূরজাহানের সহচর মেয়ে দুটিকে অন্যত্র যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয়া হয় আর নূরজাহানকে দেয়া হয় গোয়েন্দার কাজ। নূরীর যুদ্ধ চলছে, প্রাণটাকে হাতে রেখে পাকি ক্যাম্প থেকে একের পর এক খবরাখবর মুক্তিদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সে এবং সেইসাথে প্রতিটি অপারেশনেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে।এদিকে রাজাকারেরা জেনে যায় নূরীর যুদ্ধে যাবার কথা।হানা দেয় ওদের বাড়িতে , শিকার না পেয়ে হায়নাগুলা জ্বালিয়ে দেয় ওদের বাড়িঘর। মেরে ফেলে বাবাকে। কিন্তু নূরী তাতেও বিচলিত হয় না।তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এক অপারেশন থেকে ফেরার পথে বরিশালের শিকাপুরের কাছে এসে সে ধরা পরে যায় পাকিদের হাতে।এরপরেও দৌড়ে বাঁচতে চেষ্টা করে সে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় নাহ্‌।পাকিরা গুলি ছুড়ে তাঁর দিকে এতে করে তাঁর ডান পায়ে একটি গুলি লাগলে মাটিতে পরে যায়। তখন পেছন থেকে পাক সেনারা তাঁর মাথায় রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান । এরপরে একজন পাকসেনা কাঁধে করে তাঁকে গৌরনদী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে এক দিন অজ্ঞান অয়ে পড়ে থাকার পর জ্ঞান ফেরে তাঁর। জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পায় তাঁর হাতদুটো পেছন থেকে বাঁধা। এবং সেই অবস্থায় তাঁকে পুকুরে গলাসম পানিতে ফেলে রাখে হায়নাগুলো। আর পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে করতে সাথে বেয়ানট চার্জ করতে করতে জিজ্ঞেস করতে থাকে- “বোল মুক্তি কিধার হ্যাঁয়?”--- বার বার প্রশ্ন করেও কোন উত্তর না পেয়ে ওরা হিংস্র থেকে হিংস্রতর হতে থাকে। এক পর্যায়ে রাইফেলের বাট দিতে চোখে প্রচন্ড আঘাত করে। কিন্তু নূরী তখনো চুপ!! শুয়োরের বাচ্চাগুলো এক রাতে বীভৎসতার চরম সীমা অতিক্রম করে... মাত্র পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়েটাকে ওরা মন মতো ব্যবহার করতে না পেরে বেয়ানট দিয়ে কেটে ফেলে ওর যোনিপথ।যৌন বিকারগ্রস্ত পাকি পশুরা এতেই ক্ষান্ত হয়নি, দাঁত দিয়ে ওর উরু , পেট ও বুকের মাংস তুলে নেয়।এরপরে উলঙ্গ করে হাত পা বেঁধে ঘরের কোণে ফেলে রাখে।একদিন দুই দিন না একশো পঞ্চাশটা দিন মানে ৫ টা মাস এইভাবে ওর উপর নির্যাতন চালায় পাকি হায়নাগুলা।হায়েনাগুলোর নির্যাতনের সামান্য বিবরণ তিনি এভাবে দেন-

“ ওরা যহন বেয়ানট দিয়া আমার চোখে বারি দিছে তখন মনে হইছে আমার চোখটা বাইর হয়া গেছে। চোখটায় এখন ঝাপসা দেখি। একবার বিটিভির এক আপা, রোজি আপা আমার চোখের অনেক চিকিৎসা করাইছে। তারপর ওরা আমারে আরও অত্যাচার করছে। আমার ছাঁকনার হাড্ডিগুলা মনেহয় এখনো ভাঙা। এখন বয়স হইছে তো, এখন খুব ব্যাথা হইছে”

দেশ স্বাধীন হবার পর মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় তাঁদের কাছ থেকে জামা কাপড় পরিধান করে তিনি বেরিয়ে আসেন সেই ঘর থেকে।কিভাবে উদ্ধার পেলেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন-

“স্বাধীনতার পর মুক্তিবাহিনী গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে আক্রমন চালায়া পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।এই ক্যাম্পে তাঁরা আমারেসহ ১৪ জন মেয়ে উদ্ধার করেন।এদের মধ্যে একজনের নাম ছিল ছবি।আমাদের সাথে কয়েকজন হিন্দু মেয়েও ছিল।ক্যাম্প থেকে উদ্ধার পেয়ে পরে রাতের আঁধারে গ্রামে ফিরে আসি”।

পাকিস্তানীদের নির্যাতনের মাত্রা এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে আজ ৪৪ বছর পরেও সেই যন্ত্রণা এখনো অনুভব করেন তিনি। তাঁর ভাষায়-

“আমার সারা শরীরে বেয়ানটের দাগ, এই যে আমার চোখের কোণে বেয়ানটের দাগ। যুদ্ধের পর ৪ বছর লাগছে এই দাগগুলা শুকায়তে”

এইতো গেলো পাকিদের নির্যাতনের পালা। এরপরেই শুধু হল স্বজাতির মানুষদের মানসিক নির্যাতন যা কিনা তাঁর গত পাঁচ মাসের নির্যাতনের মাত্রাকেও যেন ছাড়িয়ে যায়। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ যেই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ তিনি স্বীকার করেছেন সেই তাঁরাই যদি তাঁকে “নষ্টা,খারাপ মেয়ে মানুষ” বলে তিরস্কার করে তবে সেই কষ্টের চেয়ে বড় কষ্ট-যন্ত্রণা আর কি হতে পারে বলতে পারেন কি?
গ্রামবাসীরা যখন নানাভাবে নূরজাহানকে অপমান করতে থাকে, কটূক্তি করতে থাকে তখন শোকে প্রায় দিশেহারা হয়ে যায় সে।আপন মনে চিন্তা করতে থাকে সত্যিই কি তাহলে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে বড় ভুল করে ফেলেছিল সে ! নূরজাহানের ভাষায়-

“হায় আল্লা, আমি কি ভুলই করলাম; নাকি ভালোই করলাম ! মালিক তুমিই জানো”

04_173878

প্রিয় পাঠক, উপলব্ধি করতে পারছেন কি সেই অসহায় মেয়েটির চাপা আর্তনাদ!বুঝতে পারছেন কি একটা মানুষ ঠিক কতোটা অসহায় কিংবা অবহেলিত হলে এইরকমটা ভাবতে পারে! জানি, এটা উপলব্ধি করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু ভাগ্যের মানুষের নির্মমতার সাথে ভাগ্যের নির্মমতাও যেন পাল্লা দিতে থাকে।অসহনীয় এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নূরজাহানের মা মাত্র চল্লিশ টাকা মূল্যে একটা গাছ বিক্রির টাকা নূরজাহানের হাতে দিয়ে বলে-

“তুই অনেক দূরে চইলা যা। আর কোনদিন এই গ্রামে ফিরা আসিস না।আমি মনে করুম তোর বাপেও যেমন মইরা গেছে, তুইও মইরা গেছোস।তুই আর কোনদিন আমার কাছে আসিস না...”

এবার শুরু হল বেঁচে থাকার আসল লড়াই।মায়ের কথামতো নূরজাহান গ্রামের এক মহিলার সাথে ঢাকায় এসে এক বাড়িতে কাজ নেয়।এভাবেই কেটে যায় কয়েক বছর। একদিন সেই বাসার বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যায় নূরজাহান। দুই একদিন ঘোরার পর লোকমুখে জানতে পারে সামনেই শেখ মুজিবের বাসা এবং এটা জানার পরদিনই বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে। একসময় বাসার ভেতর থেকে এক মেজরকে আসতে দেখে তাঁর পা জড়িয়ে ধরে মিনতি করে একবার বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করিয়ে দেবার জন্য। পরে সেই মেজর তাঁকে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করিয়ে দেয়। নূরজাহান বঙ্গবন্ধুকে সব খুলে বললে তিনি নূরজাহানের মাথায় হাত রেখে বলে, “আচ্ছা, মা আজ রবিবার; আর তুমি এই রবিবারের পরের রবিবার আমার সাথে দেখা করবা। আমি সেদিন অবশ্যই তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবো”। নূরজাহান অপেক্ষায় থাকে পরের রবিবারের। কিন্তু ঐযে বলেছিলাম না, ভাগ্যের পরিহাস বড়ি নির্মম ! সেই রবিবারের আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

এই খবর পেয়ে দিশেহারা হয়ে যায় নূরজাহান। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় নিজেকে শেষ করে দিতে এক বোতল কীটনাশক খেয়ে ফেলে।এরপরে যে বাসায় কাজ করতো তাঁরা নূরজাহানকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। কিন্তু সেই বাসার গৃহিণী ভাবে হঠাৎ কেন সে আত্মহত্যা করতে গেলো। কিছুটা সন্দেহপ্রবন হয়েই তাঁকে জিজ্ঞেস করে- “আমার  স্বামীর সাথে কি তোমার কোন সম্পর্ক ছিল? যদি না থাকে তাহলে কেন তুমি বিষ খেলে?” সেই সময়ে নূরজাহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সে এবং সেই মহিলাকে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। ফলে সেই মহিলা তাঁর ভুল বুঝতে পেরে নূরজাহানকে বুকে টেনে নেয় এবং বলে যে-  “আমাকে তুমি মাফ করে দাও বোন।আমি বুঝি নি যে তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।তুমি নষ্টা নও,তুমি হলে মুক্তিযোদ্ধা...”

এরপরে নানা রকম পরিবর্তন এসেছে নূরজাহানের জীবনে।এক বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে হয় তাঁর এবং একটি ছেলে সন্তানের মা হন।কিন্তু একাত্তরের সেই যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয় সেই সন্তানও।যখন নূরজাহানের ছেলে একাত্তরে তাঁর মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানতে পারে তখন অজানা এক ক্ষোভে সেও পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। এর উপরে ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক এক ঝামেলায় প্রতিপক্ষ তাঁর ছেলের হাত কেটে নেয়। নূরজাহানের জবানিতে-

অনেক কষ্ট করছি মা, এহনো তো মা কষ্ট। এইযে মানুষ মরলে যাইয়া গোসল করাই, কারো বাচ্চা হইলে যাইয়া ধরি, কেউ ৫০০ টাকা দেয়, কেউ ১০০০ টাকা দেয়, আবার ২/৪ টা কাপড় কিনা আইনা বেচতাম। এহন তো বয়স হইছে, তাই আর হাটতে পারি না।

এমন লাখো নূরীর যোনি নিঃসৃত রক্তের অর্জনই হল আমাদের এই ৫৬ হাজার বর্গমাইল...
এটা আমাদের জন্মের ইতিহাস। যেই ভূখণ্ডে আমরা আছি সেই ভুখন্ডের জন্মের ইতিহাস। এটা আমাদের জন্ম পরিচয়। যেই পরিচয়ে আমরা বিশ্বব্যাপী বাঙালি পরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে বলতে পারি যে- আমরাই একমাত্র জাতি,যারা দেশের জন্য ৩০ লাখ শহীদের রক্ত উৎসর্গ করেছে, ৬ লাখ মা ত্যাগ স্বীকার করেছে। ৪৪ বছরে দেশের ক্ষমতার রদবদল হয়েছে অনেকবার। প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় উঠে এসেছে নতুন নতুন মুখ। ৪৪ বছরে বিভিন্ন সরকারের আমলে বহুবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ না করেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সেজে গেছেন। মিথ্যে সার্টিফিকেট দিয়ে অনেকে সরকারি চাকুরীতে পদোন্নতিও নিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য বদলায় নি শুধু বীরাঙ্গনা মায়েদের। বীরঙ্গনা মায়েদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেবার বিল পাস হয়েছে সংসদে। নিঃসন্দেহে খুব ভালো সংবাদ এটা।দেরীতে হলেও, শুধু দেরী কেন বলছি অনেক দেরীতে হলেও মায়েরা তাঁদের যথার্থ সম্মান পাচ্ছে এটাই আর কম কিসে !

 

মাছরাঙ্গা টিভিতে নূরজাহান আম্মার সাক্ষাৎকার দেখুন-  https://www.facebook.com/totem.tagore/videos/753480541410317/

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

  • তানজির খান

    ফাতেমা জোহরা আপনার লেখা পড়ে আগেও অনেক কিছু জেনেছি।আপনার লেখা ” দালাল আইনের ইতিবৃত্ত ও বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষাপট” আমি দলিল হিসাবে রেখেছি আগেই। সোনেলায় রাজনীতি বিশ্লেষক খুব কম আছে। রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে বলতে গেলে কেউ লেখেই না। কেউ কেউ লিখলেও লেখনীতে ধার নেই। আজ আপনার এই লেখা পড়ে আমি কতটুকু মুক্তিযোদ্ধাদের বেদনা ধারণ করতে পেরেছি জানিনা, তবে আমার মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছে। মনে হচ্ছে আমি নিজেই নূরজাহান। নূরজাহানের পায়ে, শরীরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল আর আমার মনে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। জানি নূর জাহান আম্মার বেদনা কখনই অনুভব করতে পারব না। এমন লেখা আরো পড়তে চাই। বেশির ভাগ সময় যে সব লেখার বন্দনা হতে দেখি সেই সব লেখার কোন সাড়বস্তু নেই। এমন লিখা লিখে আমাদের কে দায় মুক্ত করুন।
    ভাল থাকুন, শুভ কামনা রইলো।

  • জিসান শা ইকরাম

    বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরজাহান বেগমকে স্যালুট।
    আমাদের এই দেশটির জন্মের জন্য এমনি লাখো নুরজাহান ত্যাগ স্বীকার করেছেন………
    আমরা তাঁদের ভালো রাখতে পারিনি।

    পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  • নীতেশ বড়ুয়া

    এই বছরই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতার বিরুদ্ধে আইন চালুর জন্য টিএসসিতে মানবন্ধন ও পরে প্রেস্ক্লাবে মানবন্ধন সহ কিছু কার্যক্রম হয়। তো টিএসসি’র সেই কার্যক্রমে ছিলাম বলে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা পেয়েছিলাম। মানবন্ধন করার আগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বলেন আমাদের মাঝে তাঁদের মাঝে একজন মহিলা উঠে আসেন যাকে আয়োজক ছোটভাইটি ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছিলো। পরবর্তীতে সেদিন মানবন্ধনের পরে মিছিল দু’ভাগে ভাগ হয়ে টিএসসি হতে শাহবাগ পর্যন্ত পায়ে হাঁটে। ২য় ভাগে কেন জানি না ব্যানার ধরেছিলাম আমি ও আমার আরো কিছু ছোট ভাই আর আমার ঠিক বাম পাশে সেই মুক্তিযোদ্ধা ‘মা’ ছিলেন। কি তাঁর নাম পরে বলছি।

    আজকাল মিছিলে ‘জয় বাংলা’ বলাটা প্যাশনের চাইতে বেশী বাণিজ্যিক বা প্রচারণার আবেদনে পৌঁছেছে। সেই সাথে ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালাও, রাজাকারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও সহ নানান জ্বালাময়ী স্লোগান যা সেই একাত্তরকেন্দ্রিক ছিলো (মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক বলার আবেদন আজ আর রাখে না)। তো আমি সাধারণত জয় বাংলা বলে স্লোগান দিলেও বাকিসব স্লোগান সহজে মুখে আনি না কারণ অযথাচিত মনে হয়! কি জ্বালাবো পোড়াবো? রাজাকারের আস্তানা? স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে চলে এইসব? মনের আগুন জ্বলে না জ্বলে প্রচারের আগুনের আলো সেখানে কেন এইসব স্লোগান দিতে যাবো। কিন্তু সেদিন দ্বিধা নিয়ে কয়েকবার দেই কেননা আমার বাম পাশের সেই মুক্তযোদ্ধা ‘মা’ ছিলেন। খেয়াল করলাম তিনিও জয় বাংলা স্লোগানের পরে আর কিছু বলছেন না!

    উনি যখন মিছিল ও মানবন্ধনের আগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় মুক্তিযুদ্ধের কিছু কথা ও বর্তমানের বেদনার কথা বলছিলেন তখন অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম, এতোটাই অবাক যে আমার পাশে হেঁটে যতক্ষণ মিছিলে ছিলেন ততোক্ষণ শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে ছিলাম আর থেমে থেমে উনাকে পানি খেতে দিচ্ছিলাম।

    সেই মুক্তিযোদ্ধা ‘মা’য়ের নাম নূরজাহান! রাতের বেলা ফেসবুকে একটা ছবি দেখেছিলাম উনার সাথে আমি মিছিলে আর জেনে নিয়েছিলাম আমি অনেক বড়ো ভাগ্যবান যে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সাথে চলাফেরা বা সাথে থাকার পরেও এই প্রথম একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে আমি মুক্তির স্লোগান দিয়েছি, মিছিলে হেঁটেছি!

    সেদিন উনি কিছু বলছিলেন, পুরোটা হুবহু মনে নেই তবেঃ বাবা, তোমরা আমার ছেলে/মেয়ে নাতিদের বয়েসী। আমরা যে কষ্ট সহ্য করে যে আবেগ থেকে যে ভাব থেকে এই দেশের জন্য লড়েছি সেই দেশের দায়িত্ব এখন তোমাদের কাঁধে।

    অতোটা গভীরে যেতে পারিনি সেদিন এইসব কথার মানে বুঝতে।

    আজ আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম যা আমি সামনে থেকেও বুঝতে পারিনি।

    ফাতেমা আপু, আমি আপনার পোস্টটিতে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম, এখানে তার কিছু উত্তর মনে হয় বুঝে নিলাম।

    আমি আগের পোস্টে বলেছিলাম আজকাল নানান বইতে নানান রকমের তথ্য থাকে একাত্তর নিয়ে যা পরস্পর বিরোধী। কেন বলেছিলাম জানেন? যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার দেখা বা কথা হয়েছে তাঁদের প্রায় সবাই বলেছেন বাজারের বইতে আসল মুক্তিযুদ্ধ আজো ফুটে উঠেনি।

    আমরা এমনই এক সৌভাগ্যবান জাতি যে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের পুরোটুকু পর্যন্ত এখনো আত্মস্ত করে উঠতে পারিনি।

    ধন্যবাদ ফাতেমা আপু। আমি খুব আশা করছি আপনার নিয়মিত তথ্য ও ইতিহাস পাওয়ার জন্য এই সোনেলাতেই।

    • ফাতেমা জোহরা

      আমিও ছিলাম সেদিন সেখানে। আমি আর আরাফ আম্মাকে সেদিন ওখানে নিয়ে গিয়েছিলাম। আরাফ বলতে এই ব্লগের “আরাফ কাশেমী”র কথা বলছি। আমি যেদিন মাকে, ফোনে সেই প্রোগ্রামের কথা বলেছিলাম, মা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে মাকে কে নিয়ে আসবে তা নিয়ে একটা ঝামেলা হওয়াতে, বলা হয় প্রথম দিনের মানববন্ধনে মা যাবে না। আমি যখন ফোন করে মাকে মানা করি, মা ক্যামন যেন মন খারাপ করছিলেন। সেটা দেখে আরাফ আর আমি বের হয়ে গেলাম মাকে আনতে। সেদিনের মায়ের কি উদ্দীপনা আর উৎসাহ !! এটা ভুলবার নয়।
      আর প্রতিবারেই যখন আমরা মায়ের কাছে যাই, মা যে কতো আদর করে আমাদের বুকে জড়িয়ে ধরে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না… ইচ্ছে হয়, মায়ের কাছে শত জনম থেকে যাই !!

      • নীতেশ বড়ুয়া

        আপনি ছিলেন কোনজন!!!!! আমি উচ্ছ্বাসের জন্যই সেদিন গিয়েছিলাম। ইদানীং মুখোশ পরে অনেকেই অনেক কিছু করে তাই না চিনলে যাই না। দেখেছি মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোশধারীরা ডেকে আনেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই 🙂

        বাপরে! আপনি তো তাহলে যে সেই নন…!!! 😀

        আমি সত্যি সেদিন উনার কথাগুলোর মানে বুঝিনি পুরোপুরি।

        আমি আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনতে চাই। ‘বিচ্ছু বাহিনী’র বিচ্ছুদের কথা। যাদের একজন ‘বিচ্ছু মনির’ মুক্তিযোদ্ধা। উনার ছেলেকে রক্ত দিতে গিয়ে উনার সাথে পরিচয় হয় আর কিছু কথা উনি আমাকে জানিয়েছেন যা অনেকেরই অজানা। উনাদের কাছে কত কিছু যে আছে বলার!

        ধন্যবাদ ফাতেমা আপু। হয়তো অনেক কিছুই করার কথা আমাদের কিন্তু করিনি। তবে আপনার কাছ থেকে অন্তত কিছু জানতে পারছি ভেতর থেকেই।

        অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো চাই এমন কিছু, অনুরোধ রইলো -{@

        যে কোন কারণেই হোক আমি প্রেসক্লাবের দিন আর যাইনি।

      • নীতেশ বড়ুয়া

        উনার কথার গভীরতা বুঝিনি সেদিন যা বুঝলাম আজকের এই পোস্টে এসে!

        ওওও আপনিই সেই!!! বাপরে! মুক্তিযোদ্ধা নূরজাহান আম্মার উত্তরসূরী বটে আপনারা 😀

        সকল মুক্তিযোদ্ধা ও আপনার মতো আপনাদের জন্য (3 -{@

        আরো চাই আপনাকে না বলা, না জানা কথাগুলো জানতে 🙂

  • লীলাবতী

    পড়লাম আপনার লেখাটি।ইচ্ছে করছে এই মাতা নূরজাহানকে ছালাম করি পায়ে হাত দিয়ে।দেশের প্রতি যার এত ভালোবাসা,তার কিছুটা ভালোবাসা নিতে।
    সোনেলায় কিছুটা নিয়মিত হওয়া যায় আপু?

    • ফাতেমা জোহরা

      আসলে আপু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠি না যে !! মনে এতো ইচ্ছা কিন্তু উপায় পাই না 🙁 পড়ালেখার দিকটা কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে নিয়মিত হবো আপু। আমাকে আমার জায়গায় পৌঁছে দিতে হলে আগে আমার পড়ালেখাটা শেষ করতে হবে যে !! ওটাই আমার লক্ষ্যপূরণের প্রধান সিঁড়ি। সিঁড়িটা ঠিকঠাক করে একে একে সব করবো, সব 🙂

      ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন -{@

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    “মা” শুধু একটিমাত্র অক্ষরে সৃষ্ট একটি শব্দ, যার সাথে আত্মার রয়েছে একটি গভীর আবেগীয় সম্পর্ক। মায়েরা মমতাময়ী হয়। কিন্তু যে মা নিজের গর্ভের সন্তানের কথা না ভেবে দেশের সন্তানদের কথা ভেবে আত্মবলিদান করেন, তাঁদের কি বলে সম্মান জানাতে হয়, আমি জানি না।

    শুধু নূরজাহান মায়ের চরণ ছুঁয়ে বলতে পারি, মা তোমাকে প্রণাম।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ