আমাদের বাড়িটা…

ফাতেমা জোহরা ১৫ অক্টোবর ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪২:৫০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ১৫ মন্তব্য

আমাদের  বাড়িটা  দো'তলা। আজকাল এরকম  বাড়ি খুব একটা দেখা যায় না। লোকেরা সামর্থ্য থাকলে পাঁচ তলার বিশাল অট্টালিকা গড়ে, মাসশেষে হাজার টাকা ভাড়া গুণেই শান্তি নেয়! কিন্তু আমাদের  বাড়িটা একেবারে আলাদা। আমাদের ঘরের সামনে ছাদটুকুকে আমরা উঠোন হিসেবেই ব্যবহার করি।সেই উঠোনে দিনের শুরুতে সূর্যের আলো আছড়ে পরে। এরকম আবহাওয়াতে হু হু করে বাতাস বয়, দক্ষিণে একটা সজিনা গাছ আছে।গাছটার পাতায় উঠোনটা ছেয়ে যায়। রাতের ছাদটা আরো উপভোগ্য! বিশেষকরে চাঁদনী রাতে। মনখারাপের সময়টাতে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে গোটা একটা রাত কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে।

আমাদের একটা বড় ঝুল বারান্দা আছে। বৃষ্টির দিনগুলোতে বারান্দাটা বৃষ্টির দখলেই থাকে। সেদিন আমার ছোট ভাইটার আব্দারে বারান্দাটার উত্তরে একটা মাটির ঘট ঝুলিয়ে দিয়েছি। তাতে কিছু খরকুটো দিয়ে রেখেছি। ও ভাবছে ওখানে নাকি চড়ুই বাসা বাঁধবে! কি পাগলামি! হ্যাঁ, কিছুদিন আগে কয়েকটা রঙ বেরঙের মাটির টবে কতোগুলো লতানো গাছ লাগিয়েছি। গাছগুলো বড় হয়েছে বেশ। বারান্দার গ্রিলটাকে   আষ্ঠেপিষ্ঠে  জড়িয়ে ধরে আছে। সবুজ লতার ফাঁকে ফাঁকে গাঢ় গোলাপি ছোট ছোট ফুল উঁকি দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ভুল করে দু একটা চড়ুই এসে বসে বারান্দাটায়। তা দেখে আমার ছোট ভাইটার কি যে আনন্দ...

আমাদের জানালাগুলো বেশ বড়। পূর্বের জানালাটা দিয়ে যেরকম সূর্য উদয়ের সময়ে রোদের সরু আলো উঁকি দেয়, পশ্চিমের জানালা দিয়ে দিন বাড়ার সাথে সাথে রোদের প্রখর তাপে উৎপাতও বেশ অসহ্য! তবে পশ্চিমের জানালা দিয়ে বিকেল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমাদের এদিকে এখনো বেশকিছু ধানক্ষেত দেখা যায়। অনেক গাছপালাও আছে। বিকেলে ধানক্ষেতের উপরে নানা রঙয়ের ফড়িং উড়ে। আমার খুব ইচ্ছে হয় খেতের আইলগুলোতে একা একা  হাটতে। কিন্তু কিসব ভেবে যেন যাই না। হয়তো সারাদিন ক্লাস করে ফেরার পর ক্লান্তিটাই আমাকে গ্রাস করে ফ্যালে...

ওহ, আমাদের  বাড়িতেদুটো আমগাছ আর একটা মেহদী গাছ আছে। এবার একটা গাছে একটা মাত্র আম ধরেছিলো।  আম্মু বলেছে, দেখিস, এবার দুটো গাছেই আমের ধরবে। সেই কথা শুনে আমার ছোট ভাইটা এই সিজন থেকে আমের কুঁড়ি এসেছে কিনা তা নিয়ে মহাচিন্তায় থাকে!! একটা বিশাল টবে আম্মু কিছু লাউয়ের চারা বুনেছে।সেদিন দেখলাম মাটি ফুঁড়ে গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। তাই ছাদের একপাশে বাবা একটা জাংলা করে দিয়েছে , জাংলার লাউ নাকি দেখতে সুন্দর হয় !

আমার কিছু পাগল বন্ধু বান্ধব আছে। কয়েকদিন আগে এসেছিলো। ওরা বলছে এবার পরীক্ষার শেষে আমাদের বাসায় নাকি পিকনিক করবে। শিলা বলেছে, ওরা নাকি নিজের হাতে রান্না করবে। পাগলগুলোর এরকম কথা শুনে আম্মু হেসেই শেষ!

আমরা পাঁচটা মানুষ থাকি বাড়িটাতে। সত্যি বলতে কি, আমাদের সেরকম কোন আত্মীয়স্বজন নেই। তাতে কি, আমরা পৃথিবীর সবাচাইতে সুখী পরিবারের একটি। আমরা কেউ কারো কাছে কোন কথা গোপন করি না, গোপন করে রাখতেই পারিনা বলতে গেলে। সারাদিন তিন ভাইবোনের খুনসুটি, মাঝে আম্মুর সামান্য বকা; আমরা ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করি ! রাতে যখন বাবা বাসায় ফেরে, সারাদিন যাবতীয় ঘটনার সারসংক্ষেপ বলার দায়িত্ব আমার। বাবা যেন ঐ মুহুর্তেরই অপেক্ষায় থাকে যে, কখন  আমি কথার ঝুড়ি নিয়ে বসবো।

আমি আর মা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন রান্নাবান্না করি। নিজেরাই অদ্ভুত সব খাবার বানাই। যদি ভালো হয় তবে তো কথাই নেই, না হলে আর কি করা ! আসলে, আমরা প্রচুর ভোজনরসিক একটা পরিবার। খুব বেশি খাই না, তবে নানান পদের খাবার খাই। প্রতি শুক্রবার আমাদের জন্য ঈদের দিন ! বাবা বাসায় থাকে, আম্মু অনেক রান্না করে- ব্যস খাওয়া দাওয়া একেবারে জমে যায়। আমি রান্না পারি, তবে কিছুটা। এখনো মায়ের মতো হতে পারিনি, পারবোও না হয়তো।

এমন একটি পরিবেশে থাকলে অসুস্থ থাকলেও যেমন সুস্থ হয়ে যেতে বাধ্য, তেমন কিছুতেই একাবারে অনেকক্ষন মন খারাপ করেও থাকা যায় না।আচ্ছা, স্বর্গটা কি এর চাইতেও সুন্দর আর উপভোগ্য হয়?

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ