৯২৫ সালে চান্দেল রাজ্যের রাজবংশে জেজেকাভুক্তি স্থানে আমার জন্ম। বর্তমানে যে স্থানটি ভারতের মধ্যে প্রদেশের একটি ছোট গ্রামের নাম খাজুরাহো নামে পরিচিত। চন্দ্রত্রেয় বা চন্দ্রবর্মন ছিলেন আমাদের পুর্ব পুরুষ,যিনি একজন বীর যোদ্ধা।তিনি এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন, এবং তার নাম আনুযায়ী এই রাজ বংশের নাম হয় চান্দেলা। আমাদের এই রাজবংশ টিকে ছিল ১৪০০ সাল পর্যন্ত।
৯০০ থেকে ৯২৫ সালের মধ্যে রাজ্য এক ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে পরে। ঐ সময়টিতে বেশির ভাগ ঋষি-সাধকেরা যৌন মিলনে পাপ দেখেছেন, মিলন করলে ঈশ্বর সাধনায় বিঘ্ন হবে এমন ছিল তাদের দর্শন । তাদের কথায় মিলনের জন্য ঈশ্বর ধ্যানে চ্যুতি ঘটে। কামকে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। মিলনকে তারা নেগেটিভলি ব্যাপক ভাবে প্রচার করার ফলে, সামাজিক ভাবে এর প্রভাবে স্বামী স্ত্রীর যৌন মিলন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জন্মহার শূন্য হয়ে যায়। ৯২৫ সালে রাজ্যের সর্ব নিম্ন নর-নারীর বয়স হয় পঁচিশ। রাজ্যে ভবিষ্যৎ জনমানব শূন্য হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

রাজ্য পরামর্শক এর মধ্যে আমার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। দেখতে অত্যন্ত সুদর্শন, সাইকোলজি , দর্শন এবং কাব্যচর্চায় বিশেষ পারদর্শিতার জন্য আমার প্রস্তাব এবং মতামতকে সর্বোচচ গুরুত্ব দেয়া হতো। আমি ভেবে দেখলাম যে রাজ্যে যৌনতাকে ঘৃণা করে সবাই। রাজ্যের লোকেরা যাতে যৌনতাকে ঘৃণা না করে সেজন্য কিছু একটা করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে আমাকেই দায়িত্ব দেয়া হলো।

আমার পরিকল্পনা আনুযায়ী জেজেকাভুক্তি এলাকায় ৮৫ টি মন্দির নির্মাণ কাজ আরম্ভ হলো। এই সব মন্দিরের বিভিন্ন ওয়াল,কক্ষে নর নারীর মিলনের পাথরের মূর্তি স্থাপন এর সিদ্ধান্ত নেই। যা দেখে নর নারীরা মিলনে আগ্রহী হবে। আমাদের রাজ্য এবং অন্যান্য রাজ থেকে পাথরের মূর্তি তৈরীর শিল্পীদের আনা হলো। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল , শিল্পীরা নর নারীর নগ্ন শরীরের মূর্তি বানাতে পারলেও মিলন রত অবস্থার কোন মূর্তি তারা বানাতে পারলো না। যেহেতু তখন কোন ক্যামেরা ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না, ভিডিওও ছিলোনা,তাই এর ফট্‌ ভিডিও  তাঁদের সামনে দেয়া সম্ভব ছিল না। একমাত্র উপায় থাকলো- শিল্পীদের সামনে বাস্তব হয়ে উপস্থিত হওয়া।

রাজ্য রক্ষার জন্য অবশেষে সেই সিদ্ধান্তই নেয়া হলো। রাজ্যের নারীদের মধ্য হতে পঞ্চাশ জন সেরা সুন্দরী বাছাই করা হলো কিছুটা রাজকীয় হুমকি এবং অর্থ প্রদানের বিনিময়ে,কিছু নারী স্বেচ্ছায়ও এগিয়ে এলো। সমস্যা এখানেও সৃষ্টি হলো। লাস্যময়ীরা আবদার, জেদ করলো, একমাত্র সুদর্শন রাজপুত্র আমার সাথেই এসব হতে হবে । কি আর করা, একান্ত নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছা (এর প্রমাণ নেই) সত্ত্বেও রাজ্যের জনসংখ্যা শূন্য হতে রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য ঐ মন্দির গুলোর বিশেষ কক্ষে শিল্পীর সামনে এই কর্মে নিয়োজিত হতে হলো। আমার তখন মহা দুর্দিন (আসলে মহা আনন্দ), সমস্ত দিন শরীরে বল বর্ধনের জন্য যত ধরনের খাবার ছিল তা খেতে হতো। এভাবে চললো ২৫ বছর। ৯৫০ সালে এই কর্ম সম্পাদিত হলো এবং ৮৫ টি মন্দিরের ওয়ালে, কক্ষে বিভিন্ন ভাবে মিলনের মূর্তি গুলো স্থাপিত হলো। মন্দির নির্মাণকালীন সময়েই অবশ্য এখানে স্থাপিত মিলনের মূর্তিগুলো দেখেই জনতার মাঝে মিলনের ইচ্ছে পুনঃ জাগ্রত হয়েছিল।

12065774_722332931205121_7300812252776474811_n
৯৫০ সালের মন্দির গুলো উদ্বোধনের দিন আমি গায়েব হয়ে যাই। কোথায় ছিলাম কিছুই জানিনা। ২০১৪ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে আমি নিজেকে মালয়েশিয়ার এক গুহা মন্দিরের এক দেবীর পায়ের নীচে আবিষ্কার করি। ১০৬৪ বছর আমার স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এই দেবী পূজায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। দেবীর এখানেই যখন নিজেকে খুঁজে পেয়েছি, দেবীকেই আমার স্রষ্টা ভাবি। এতে আনন্দও পাচ্ছি খুব। দেবী আমাকে বলে দিয়েছেন, আমার আনন্দেই তিনি আনন্দ পান।

আনন্দে ঢোল বাজাই, আরতি দেই, নাচি, গাই। সৃষ্টির আনন্দ দেখে স্রষ্টা হাসেন।

========
* ফটোর উপরের অংশ প্রায় সত্যি ইতিহাস। খাজুরাহো লিখে সার্চ দিলে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে
** ছবির নীচের অংশ ?..............................

=====================

আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৪

0 Shares

৪৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ