প্রতি বছরের শেষ দিনে কিছু না কিছু লিখি। আমার একাকীত্ত্বে সঙ্গ দেয় এই লেখা। লিখতে গিয়ে স্মৃতিগুলো কাৎড়ায় অসহায়ভাবে। মনে পড়ে যায় সেই স্কুল জীবন। প্রতি ৩১ ডিসেম্বর রাতে আর্ট পেপারে লিখে রাখা HAPPY NEW YEAR. তখন একমাত্র চ্যানেল বিটিভি। সেখানে কিছুই হতো না থার্টি ফার্ষ্ট নিয়ে। আরেকটি চ্যানেল ছিলো দূরদর্শন। এন্টেনা ঘোরাতে ঘোরাতে কতো কষ্টে যে দেখতাম থার্টি ফার্ষ্ট অনুষ্ঠান। ঠিক বারোটার সময় বাপি বিছানা থেকে উঠে এসে একটা আদর দিয়ে বলতো "হ্যাপি নিউ ইয়ার নীলমন।" তখন এই থার্টি ফার্ষ্ট নিয়ে মাতামাতি ছিলো না দেশে। ১৯৮৮ সালে ঢাকা গেলাম, দাদা(বড়ো মাসীর বড়ো ছেলে বাবুনদা, আজ নেই আর) মামনিকে এসে বললো, এখনও মনে আছে, "আন্টি পিচ্চিকে নিয়ে যাই?" মামনি-বড়ো আন্টি সকলে না করলো। ওই তখন শুনলাম গুলশান-বনানীতে বিশাল অনুষ্ঠান হয়। সেই রাতে দাদা অনেক রাতে ফিরলো হাতে একটা পারফিউম। মনে পড়ে শোভনদা-নিপুদা-মুন্না-বাণী আমরা সবাই মিলে সেই রাতে বেশ মজা করেছিলাম। বাণী অবশ্য একটু দূরে দূরেই রাখতো নিজেকে। সেই প্রথম অনেকে মিলে থার্টি ফার্ষ্ট পালন।
আরেকটু বড়ো হলাম। কলেজ জীবনে একা একা থার্টি ফার্ষ্ট মানেই গান ছেড়ে নাচা। বিশেষ করে বছরের প্রথম দিন কুমকুম আপু আসতো। আপু তো নাচতো না, কিন্তু জ্বালাতাম। কি যে আহ্লাদী বকা। আর আমি হেসে হেসে নেচেই যাচ্ছি। কুমু আপু বলতো, "এই শয়তান্নী বাংলা গান দে শাইন(বাংলা গান দে তো)।" কিসের কি হয় ইংরেজী নয়তো হিন্দী ডেন্স গান। দেশে ছুটি নেই। কলেজে যেতাম, আর পৃথিবীর সেরা আনন্দ করে নিতাম। স্যারদের অতিরিক্ত প্রশ্রয়ে বেশ দাপট ছিলো। তাই আমায় আর কে পায়! এই ছিলো নতূন বছর পালন।
জাপান এলাম। ওখানে গান আর আড্ডা। নাই মামার থেকে কানা মামা আর কি! তবে মন্দ লাগতো না। শুধু ড্রিঙ্কস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা। যদিও ড্রিঙ্কস নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। নেশার কাছে নেশা না হলেই হয়। যাক সারারাত কেটে যেতো দুষ্টুমী-মজা-হাসি-আনন্দে। তনুশ্রী বৌদির বাসায় থেকে যেতাম। অসম্ভব মজা হতো। বৌদির একান্ত আন্তরিকতা এমনই যে কখনো অন্য লাগেনি। পূর্ণ অধিকারে বলতাম বৌদি এটা রান্না করবেন কিন্তু।
তারপর এলাম বেলজিয়াম। ওখানে দারুণ আনন্দ হতো। বিধানদার বাসায় আয়োজন হতো। বন্ধু জয়তীর ভালোবাসার কথা কি বলবো! আনন্দ উছলে পড়তো ওখানে। সেখান থেকে এলাম কানাডায়। নোভাষ্কোশিয়া প্রদেশের ছোট্ট শহর এন্টিগোনিশে। দেশের কয়েকজন ছাত্র ছিলো। ওদের সাথেই আয়োজন। আজাদ, রাব্বী-আবেদা, আলতাফ, ফাহিম, রোকন এই ক'জন মিলে নিউ ইয়ার পালন। মন্দ লাগতো না। ওইদিনই আজাদ বললো, "দিদি আপনার এ যুগে জন্ম হলে ভালো হতো।" কি জানি! ২০১২ সালের জুন মাসে চলে এলাম হ্যামিল্টন। আহা এতো আনন্দ! এভাবেই বুঝি কেটে যাবে আনন্দে। ভাবনার সাথে কি সব মেলে? নাহ! তবে আমি সবসময়কার আনন্দবতী, যার জন্যে অনেক কথা শুনতে হয়। তাতে কি! এই যে আজ একা একা পালন করছি থার্টি ফার্ষ্ট, অসম্ভব ভালো লাগছে। সেজেছি, ছবি তুলেছি, নাচছি-গাইছি। ছেলেটাকে বললাম ওরে বাপ রে একটু রেডি হ, আয় নাচি। আমার ছবি তুলে দিলো। নিজে ওসবে নেই। লিখতে লিখতে আবারও বললাম ওরে তীর্থ রেডি হ। তোর একটা ছবি তুলি। আয় দুজনে। জানিনা কি করে!
আজ বহু জায়গায় ফোন দিলাম। আসলে অনেকেই ফোন দিয়েছিলো। মনে মনে বলছিলাম, আজ যারা আমার খবর নেবে, সত্যি আমাকে ফিল করে। "না চাহিলে যারে পাওয়া যায়!" ওল্ড ইজ গোল্ড। বন্ধুরা এখনও জানে কিসের অপেক্ষায় থাকি। বেলাল বললো, "নীলা চল মার্চে দেশে।" গীতার মেয়ে আমার মামনিটা বললো, "মাসী তুমি তাড়াতাড়ি আসো। বলো কবে আসবে?" বললাম গুণতে থাক চলে আসবো দেখিস। "উফ মাসী কেন যে তুমি ওই কানাডায় পড়ে আছো। আজ এখানে থাকলে কতো জায়গায় তোমায় নিয়ে যেতাম।" সবশেষে ফোন দিলাম বাপি-মামনিকে। ফোনটা মনে হয় হাতে নিয়েই ছিলো। ফোন দিতেই বললো, "তোর কথা বলছিলাম। তুই কি কি করতি এই দিনে!" বললাম আগে যা করতাম সেটাই করি। এখনও নাচি। বলে "হুম নাচিস। তাহলে মোটু হবিনা।" "হ্যাপি নিউ ইয়ার" অনেক জোরে বললো বাপি। প্রথম উইশ রায়হান স্যারের। এইতো পাওয়া আমার। কতো কিছু পেয়ে গেলাম।
জীবন একটাই। আনন্দ করতে না পারলে, আনন্দ বিলিয়ে দেয়া যায়না। এ জীবনে সেই আনন্দ জড়িয়ে নিয়ে শ্বাস নিচ্ছি। আজীবন নেবো। নীলাঞ্জনারা আনন্দ নিতে পারে। দিতেও পারে, তবে সবাই সেটা নিতে পারেনা।
HAPPY 2016
HAPPY NEW YEAR all of my Friend.
আমি নির্ভরতা চাইনি কোনোদিন
চেয়েছিলাম স্বপ্নগুলো আরোও পরিপক্ক হোক
একাল-সেকাল ঘুরে বৃত্তের বাইরে
একটি খোলা আকাশ আমাকে শেখাবে উদারতা
কেউ কখনো মুখ ফিরিয়ে নিলে
আমি যেনো সেই চোখের গভীরে গিয়ে
মনের অন্দরে নাড়া দিতে পারি
কিছু যন্ত্রণায় নুয়ে পড়া কেবল নিজের মাঝেই
কেউ জানবে না , দেখবে না
এখানে যে পরিত্যক্ত কিছু ইতিহাস রয়েছে
আমার জন্মকালের সাক্ষ্মী হয়ে...
হ্যামিল্টন, কানাডা
১-লা জানুয়ারী, ২০১৬ ইং।
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
জীবন হোক অপার আনন্দের এ কামনা করি।
ফেলনা নয় কোন স্মৃতিই,
আবারও শুভেচ্ছা নূতন বছরের।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভালো থাকুন প্রতিদিনকার মতো।
জিসান শা ইকরাম
দুইবার পড়লাম লেখাটি
সামান্য সময়ের জন্যও মন সংযোগে অন্য কিছু আসেনি।
তুমি এমনই, আনন্দময়ী একজন
আনন্দ সৃষ্টি করো বলেই আনন্দ বিলাতে পারো।
শুভ নববর্ষ আনন্দময়ী নীলা
সারাক্ষণ ভালো থেকো। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
এভাবেই যেনো হাসি আর আনন্দে বেঁচে থাকতে পারি নানা।
হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভালো থাকুক প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমার। সুস্থ থেকো। -{@
মরুভূমির জলদস্যু
শুভ নববর্ষ
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যাপি নিউ ইয়ার
অরুনি মায়া
নীলাঞ্জনা আনন্দ দিতে পারে ,আবার আনন্দ নিতেও পারে |তাইতো তার একাকিত্ব মুখরিত হয় স্বপ্নের কোলাহলে | শুভ হোক নতুন বছর |
Happy new year আপু 🙂 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
কথাটি আমার না। নীলাঞ্জনারা শুধু আনন্দই নিতে পারে, একজন বন্ধু বলেছিলো।
স্বার্থপর বড়ো যেখানে আনন্দ নেই, সেখানে আমি নেই। আস্তে আস্তে সরিয়ে নেই।
হ্যাপি নিউ ইয়ার আপু। -{@
শুন্য শুন্যালয়
ভাবছি হাসি ছাড়া তোমাকে দেখতে কেমন লাগবে। দেখেছি বলে তো মনে পড়েনা ;? নীলাঞ্জনা আনন্দ দিতেও পারে, তবে সবাই নিতে পারেনা, দারুন বললে তো আপু। আনন্দ নিতে পারাও চাই।
তোমার লেখা পড়ে নববর্ষটাকে আরো একটু ঝলমল মনে হলো, এমনি থেকো সবসময় নীলাপু। সুইটুটাকে আমার আদর দিও। HAPPY 2016 . -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
হাসি ছাড়া আমি মানে দেখতে খুবই জঘণ্য। কেমন জানি রাগী রাগী চেহারা।
আমারই বমি এসে যায়।
আপু এ তো ঠিকই, ভানুর কৌতুক ইউটিউবে শুনে দেখো, যতোটা হাসি আসবে, চলমান কোনো হাসির দৃশ্য দেখেও হাসি সেভাবে না আসতে পারে।
তবে ভানুর কৌতুক দেবো না, তোমার জন্যে ভালোবাসার গান। -{@ (3
https://www.youtube.com/watch?v=ubJ7dkaxous
অপার্থিব
বেঁচে থাকাটাকেই পৃথিবীর সবচাইতে আনন্দময় কাজ বলে মনে হয় আমার। স্মৃতি চারণ ভাল লাগলো। নববর্ষের শুভেচ্ছা। পরিবার নিয়ে অনেক ভাল কাটুক নুতুন বছর।
নীলাঞ্জনা নীলা
বেঁচে থাকাটাই শুধু আনন্দময়? কি জানি! আমার মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় যতোক্ষণ বাঁচি, স্বস্তিসহ। আর স্বস্তি পাওয়া যায় প্রাণবন্ত হাসির ভেতর। এটা একান্ত আমার মত। তবে বেঁচে থাকাটা সুস্থভাবে সেটায় অনেক আনন্দ। তাইতো বলা হয়, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।”
হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভালো থাকুন স্বস্তির সাথে।
অনিকেত নন্দিনী
“পুরোনোকে পেছনে রেখে নতুনের পথে যতোই ছুটি না কেন, পুরোনো ফেলা যায়না। নিয়ে চলতেই হয় সে ক্ষতের সাথে ক্ষতি হোক কিংবা সুখের সাথে যন্ত্রণাই।”
ঠিক বলেছেন দিদি। গাছ যতো বড়োই হোক না কেনো শেকড় থাকে মাটির গভীরে, অতীতে।
আনন্দে থাকুন। আনন্দ বিনিময়ে জীবন হোক ঝলমলে, উজ্জ্বল। -{@ (3
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি এভাবে ঝলমলে থাকার কথা বললেন, ঠিকই ঝিলমিল করছি। 😀
ভালো থাকা যায়, চাইলেই। ভালো রাখুন। -{@ (3
অনিকেত নন্দিনী
ভালো থাকা যায়, চাইলেই। তারপরেও কেনো এই অসাবধানতা? কেনো হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা? 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
দিদি আমার দোষ ছিলোনা। কিন্তু ওই যে এক্সিডেন্ট না জানিয়ে আসে! 🙁
কিন্তু ফিরে তো এসেছি কৈ মাছের প্রাণ বলে কথা 😀