Scarler Minivet.বা সিঁদুরে সোহেলীঃ-

এই পাখিটি আমাদের দেশীয় ও আবাসিক পাখি। আকারে দোয়েলের চেয়ে বড়; ২২-২৩ সে:মি:। পুরুষের দেহ প্রধানত সিঁদুরের মত লাল টকটকে। স্ত্রী পাখির দেহ হলুদ বর্ণের। পুরুষের মাথা ও পিঠ কালো। পেট কোমার, ডানা ও লেজ গাঢ় লাল রঙের। এরা মূলত সবুজ বনের রঙ্গিন ফুল ও ফল খেয়ে থাকে। প্রজননকালে স্ত্রী পাখিকে আকর্ষন করার জন্য পুনঃপুনঃ ডাকে টিউয়ি,টিউয়ি শব্দে। চট্টগ্রাম,খুলনা ও সিলেটের সবুজ বনে দেখা পাওয়া যায়।

 

Hill Moyna. বা পাতি-ময়না বা পাহাড়ী ময়নাঃ-

এই পাখি আমাদের দেশীয় ও আবাসিক পাহাড়ী অঞ্চলের পাখি। আকারে ভাত-শালিকের চেয়ে বড় ২৫-৩০সেঃমিঃ। পুরো দেহ উজ্জ্বল কালো। ডানায় সাদা পট্টি আছে। গালে ও ঘাড়ে হলুদ চামড়ার ঝুলন্ত পট্টি।চোখ কালচে বাদামী। পা ও আঙ্গুল হলুদ। পাহাড়ি গাছের ফল খেয়ে থাকে। গাছের গর্তে বাসা করে। এপ্রিল-জুন মাস প্রজনন কাল। গলার আওয়াজ বহু দুর থেকে পাওয়া যায়। টি-অঙ..টি-অঙ শব্দ করে ডাকে। সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ বনে দেখা পাওয়া যায়।

Indian Roller. বা বাংলা-নীলকন্ঠ বা নীলকান্তঃ-

এটাও আমাদের আবাসিক পাখি। আয়তন ৩০-৪০ সেঃমিঃ হয়। আকারে শালিকে চেয়ে বড়। কাকের চেয়ে কিছুটা ছোট। দেহের বর্ণ সাতটি রংয়ের সমন্বয়ে গঠিত। ডানা মেলে যখন পাখিটি উড়ে তখন নয়ন মেলে দেখতেই ইচ্ছে করে। দেহ সম্পূর্ন নীল, চাঁদি,ডানা তলপেট ও লেজ নীল। মুখ,গলা,ঘাড়,কাঁধ-ঢাকনি ও বুক লালচে বাদামী। গলায় সরু সরু খয়েরী ও নীল দাগ। তীক্ষ্ম সূরে ডাকে ক্রাক ক্রাক শব্দে। গ্রামে গাছর ডালে ও শহরে বিদ্যুতিক খুটিতে বা তারে থাকে। পোকা-মাকড়,ব্যাঙ, কেঁচো এদের প্রধান খাদ্য। খাবারের জন্য মাটিতে নামে। সারা দেশেই পাওয়া যায়।।

Chest-nut headed Bee eater. বাদামীমাথা-সুঁইচোরা।

আমাদের দেশীয় পাখির মধ্যে যত প্রজাতির সুঁইচোরা আছে তার মধ্যে খয়রামাথা সুঁইচোরা দেখতে সবচেয়ে সুন্দর। আকারে শালিকের চেয়ে ছোট। আয়তন ১৮-২০ সিঃমিঃ হয়। দেহ সবুজ। থুতনি ও গলা হলুদ। চঞ্চু ইস্পাত বর্ণের। গলা ও বুকের বরবার লালচে ও কালো লাইন টনা। বাকি দেহ সবুজ। কোমল সুরে ডাকে। মৌমাছি,পোকা-মাকড় এরা উড়ন্ত অবস্থায় শিকার করে খায়। সারা দেশে পাওয়া যায়। বিশেষ করে সিলেট ফরিদপুর ও চিরসবুজ বনে বেশী দেখা যায়।

Crimson-sunbird.বা সিঁদুরে মৌটুসীঃ-

আমাদের দেশীয় আবাসিক পাখি। আকরে চড়ুইয়ের চেয়ে ছোট। আয়তন ১১ সেঃমিঃ। পুরুষের দেহ লাল, স্ত্রীর দেহ হলদে সবুজ। পুরুষের গাল, গলা, বুক ও পিঠ উজ্জ্বল লাল বর্ণের। চঞ্চু গোলাপী। পেট হলুদ। ডানা জলপাই রংয়ের। দীর্ঘ নীল লেজ। সিপ,সিপ চিট,ইটসিট করে ডাকে। চট্টগ্রাম,সিলেট বিভাগের সবুজ বনে পাওয়া যায়। গতবছর আমি ঢাকার রমনা পার্কেও পেয়েছিলাম। সারা দেশে মোটামোটি পাওয়া যায়। ফুলের মধু খেয়েই এরা বেঁচে থাকে। অন্যান্য পাখির মত এরা পানি পান করে না। মে-জুলাই মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। নিজেরা বাসা বানায় ও ডিম পাড়ে।

Common Green Magpie.বা সবুজ বন পাখি বা সবুজ তাউরা বা সবুজ হাঁডিচাচা।

আমাদের দেশীয় একটি পাখি পাতি সবুজতাউরা রক্তলাল চোখ ও প্রবাল-লাল পায়ের মাঝারি আকারের সবুজ বর্ণের পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৮ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৮ সেন্টিমিটার, পা ৪.৫ সেন্টিমিটার ও লেজ ২০ সেন্টিমিটার। ওজন ১৩০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার বর্ণ তামাটে-মেরুন। পিঠের বর্ণ পাতা-সবুজ। দেহতল হালকা সবুজ। পরিমিত আকারের একটি সবুজ ঝুঁটি মাথার পেছন পর্যন্ত চলে গিয়েছে। ঠোঁট থেকে চোখ হয়ে একটি কালো ডোরা মাথার পেছন পর্যন্ত চলে গিয়েছে। ডোরাটি মাথার ঝুঁটিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। ডানার প্রান্ত ও মধ্যপালক স্পষ্ট তামাটে। লেজ লম্বা ও সবুজ। ডানার গোড়ার পালক ও লেজের পালকের আগা সাদাটে। চোখ রক্তলাল, চোখের বেড় মেটে-লাল। ঠোঁট বলিষ্ঠ; ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর প্রবাল-লাল। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত খাটো। ঝুঁটি ও মাথা কালচে-বাদামি। ঠোঁট ও পা অনুজ্জ্বল। দেহতল তুলনামূলক ফিকে ও লেজতল সাদা। সাতছড়ি,লাউয়াছড়া ও বান্দরবনের সবুজ বনে পাওয়া যায়।

Pheasant-tailed jacana. বা নেউ-পিপিঃ

নেউপিপি আমাদের দেশীয় পাখি। আকারে কবুতরের সমান ৩১ সেঃমিঃ। বাদামী পিঠ ছাড়া সারা দেহ সাদা। গলায় সোনালী রং। প্রজননের সময় পুরুষের লেজ লম্বা হয়। এপ্রিল-জুলাই পর্যন্ত এদের বংশ বিস্তারের সময়। বিলের ধারে বেশী থাকে। জলজ খাবার এদের প্রিয় খাবার। সারা দেশেই দেখা যায় কম বেশী। তবে হাওর অঞ্চলে প্রচুর দেখা মিলে।

Grey-capped Emerald Dove. বা সবুজ-শ্যামাঘুঘু বা বাঁশপাতা ঘুঘুঃ-

এই দেশীয় ঘুঘুগুলি আকারে কবুতরের মত ২৭ সেঃমিঃ হয়। পিঠ ও ডানা জ্বলজ্বলে পান্না সবুজ।ঘাড় কাঁধ গলা বুক ও পিঠ লালচে। লেজ ও ডানার প্রান্ত কালো।পুরুষের কপাল ধূসর ও সাদা পট্টি আছে। সারা দেশেই পাওয়া যায়। এরা বাঁশ বাগানে বেশী থাকতে পছন্দ করে। সাধারন কবুতরের মত খাবার খায়। খুব দ্রুুুত গতিতে উড়ে।

Red-Avadavat.বা লাল-মামুনিয়াঃ-

লাল মুনিয়া আমাদের দেশে ছনের ঝোপ ঝাড়ে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ৫ প্রজাতির মুনিয়া দেখা যায়। তার মধ্যে লাল-মামুনিয়া সবচেয়ে সুন্দর। পুরুষ লাল-মামুনিয়ার পিঠি ও বুক সম্পূর্ন টকটকে লাল বর্নের হয়। ডানা বাদামী রংয়ের।বুকে সাদা সাদা ফোটার মত হয়। যার জন্য পাখির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। এরা ছনের ভিতর বাসা বানায়। ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফটিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যায়। ঘাসের বীজ,পাকা ধান ও অন্যান্য বীজ এদের প্রধান খাদ্য।

আমার নিজের তোলা কয়েকটি দেশীয় পাখির (যা বাংলাদেশের পাখি হিসেবে পরিচিত) ছবিসহ অল্পতে পরিচিতি তুলে ধরলাম। আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে।

 

এই পাখিগুলি সহ সকল পাখি ও বন্যপ্রানী শিকার করা,মারা ও খাঁচায় বন্দী করে রাখা বন ও পরিবেশ আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। পাখিগুলি প্রকৃতিতে অবাধে মুক্ত ভাবে বিচরন ও বসাবসের অধিকার আছে। আমরা পাখিকে বিরক্ত না করি।

সবাই ভালো থাকুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।

0 Shares

৩৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ