রঙ্ধনু আকাশ (১৪তম পর্ব)

ইঞ্জা ২১ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ১১:৫৩:২৮পূর্বাহ্ন গল্প ৩৮ মন্তব্য

রুদ্রর সেলফোনে রিং হতেই রুদ্র ডায়ালে দেখে বললো, আমাকে এক্সকিউজ করুন স্যার, অফিস থেকে কল এসেছে।

সিউর তুমি কথা বললো, সুলতান সাহেব বললেন। 

প্লিজ আপনারা কন্টিনিউ করুন, আমি গাড়ি বারান্দায় আছি, বলেই রুদ্র উঠে বাইরে চলে গেলে সুলতান সাহেব রুদ্রর যাওয়া দেখলেন। 

জ্বি ভাই সাহেব কি বলছিলেন যেন, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন। 

ভাবী আসলে এই সময় কথাটি বলা উচিত কিনা ভাবছিলাম। 

ভাই আপনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন। 

ভাবী আপনারা আমার বিপদ বুঝতে পারছেন, আমি সত্যি অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছি। 

তা বুঝতে পারছি ভাই। 

আসলে এ আমার স্বার্থপরতা বলতে পারেন, আসলে রুদ্রকে আমার ভীষণ পছন্দ, তাই বলছিলাম আর কি, আপনাদের আপত্তি না থাকলে রুদ্রকে আমার মেয়ের বর হিসাবে চাইছিলাম। 

রুদ্রর মার চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেই ধপ করে নিভে গেলো, বললেন, ভাই অনিলাকে বউ হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু এর আগে আপনার একটা বিষয় জানা উচিত, যদি আমি না জানাই তাহলে পরবর্তীতে দোষী হব আমি। 

সুলতান সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভাবী সাহেব কি সমস্যা খুলে বলুন। 

 

রুদ্রর মা মাথা ঘুরিয়ে উঁকি দিয়ে তাকালেন রুদ্রকে দেখা যায় কিনা, এরপর নিচু স্বরে বললেন, এ কথাটি যেন আর কেউ না জানে প্লিজ ভাই। 

ভাবী চিন্তা করবেননা প্লিজ, আপনি আমাকে বলতে পারেন। 

আসলে সবাই জানে রুদ্র আমার ছোটো ছেলে, কিন্তু আসলে আমি ওর মা না, ছলছল চোখে বললেন রুদ্রর মা। 

রুদ্রর মা আবার বলতে শুরু করলেন, রুদ্র আসলে আমার ভাই মেঝোটির এক মাত্র সন্তান, আমার ভাই আর ওর বউ সিলেট যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করে, রুদ্রর মা স্পটে মারা যায়, ভাই আমার হাসপাতালে রুদ্রকে আমার কোলে দিয়ে ইন্তেকাল করে, সেই থেকে রুদ্র আমারই ছেলে হিসাবে বড় হয়েছে যা ওও জানেনা, আমি চাইওনা ও জানুক, ছেলে আমার কষ্ট পাবে, কয়েক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো রুদ্রর মার। 

বড় একটা নিশ্বাস ফেললেন সুলতান সাহেব, বললেন ভাবী আপনি নিশ্চিত থাকুন এ ব্যাপারে অনিলাও জানবেনা, কিন্তু আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি আজই ওদের বিয়ে দিতে চাই। 

রুদ্রর মা হেসে বললেন, ভাই আমি একটু রুদ্রর মতামত জানি, তারপর বলছি, বলেই উনি কমুকে নিয়ে বাইরের বাগানে গেলেন রুদ্রর কাছে।

 

মম তোমরা চলে আসলে, তাহলে আমি যাই বিদায় নিয়ে আসি। 

না না রুদ্র আমরা তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি, কুমু আন্টি বললেন।

রুদ্র অবাক হয়ে তাকালো। 

রুদ্রর মা সব খুলে বললে রুদ্র বললো, মম আমি এখন কিভাবে বিয়ে করবো, মাথার উপর এতো কাজ, এছাড়া চিনু ফোন দিলো, বললো পরশু ফ্রান্স যেতে হবে। 

এই ছেলে আগে কথা শুন, অনিলাকে কি তোর পছন্দ হয়না। 

না মম তা কি বলেছি? 

তাহলে আপত্তি কিসের, বিয়ে আজই হবে। 

মম আমার অবস্থা বুঝবেনা?

না আর কোনো কথা শুনবো না, আমার আর একটা মেয়ে দরকার। 

রুদ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ওর মায়ের দিকে, এরপর বললো, মম অনিলাকে জিজ্ঞেস করেছো?

আমরা কেন বাবা, তুমিই জিজ্ঞেস করো, কুমু আন্টি মিটিমিটি হাসছেন। 

আচ্ছা তোমরা ভিতরে যাও, অনিলাকে পেলে একটু আসতে বলো। 

রুদ্রর মারা ভিতরে চলে গেলে রুদ্র সিগারেট ধরিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। 

অনিলাকে আসতে দেখে রুদ্র সিগারেটটা ফেলে দিতে গেলে অনিলা না করলো, আমার অসুবিধা হয়না, আব্বু খান তো। 

 

রুদ্র তবুও সিগারেট ফেলে দিলো ডাস্টবিনে এরপর বললো, তুমি কিছু শুনেছো? 

হাঁ আব্বু বলেছেন। 

রুদ্র অবাক হয়ে তাকালো। 

কি বলেছেন? 

এই তোমরা খাবে আরও মেহমান আসছে, সবার জন্য রান্নার আয়োজন করতে।

আরেহ ধুর, আর কিছু বলেছেন স্যার?

না আর কি বলবেন? 

আসলে স্যার চান, বলেই রুদ্র থামলো। 

কি চান আব্বু, অবাক হয়ে তাকালো অনিলা। 

মানে, মানে। 

আরেহ আমার অনেক কাজ, মানে মানে করলে চলবে? 

স্যার চান আমি তোমাকে বিয়ে করি, বলেই রুদ্র জোরে নিশ্বাস ফেললো।

অনিলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। 

কি কিছু বললে না, রুদ্র অনিলার চোখে চোখ রাখলো। 

অনিলার মুখিটা রক্তাভ হয়ে উঠলো, বললো আমি এইসব কিছু জানিনা, আমি যাই, বলেই চলে যেতে পা বাড়ালে রুদ্র ডাক দিলো।

তুমি এ বিয়েতে রাজি। 

অনিলা চোখ নামিয়ে মাথা হেলালো। 

মানে তুমি রাজি না?

অনিলা চোখ তুলে তাকালো রুদ্রর দিকে, তুমি আমাকে করুনা করে বিয়ে করছো নাতো? 

রুদ্র থমকে গেলো, এরপর বললো, কেন এই কথা বলছো? 

অনিলার চোখ ভর্তি জল দেখে রুদ্র এগিয়ে গিয়ে চিবুক তুলে ধরে বললো, আমি তোমাকে পছন্দ করি, তাই বিয়েতে মত দিয়েছি, এখানে করুনার বিষয় কেন আসবে বলো? 

 

অনিলা রুদ্রর চোখে চোখ রেখে কি যেন খুঁজলো, আমাকে ভালোবাসবে? 

হাঁ। 

অনিলার চোখে মুখে হাসি দেখা দিলো, বললো চলো ভিতরে, সবাই নিশ্চয় অপেক্ষা করছে। 

তুমি যাও আমি আসছি। 

আচ্ছা, অনিলা ভিতরে চলে গেলে রুদ্র কয়েক বন্ধুকে কল দিয়ে আসতে বললো।

রুদ্র যখন ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো তখন পুরা ঘর জুড়ে উৎসবের আমেজ, সুলতান সাহেব উঠে গিয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বললেন, I am so happy my boy, তোমাদের জন্য অনেক দোয়া। 

রুদ্র তুই কি রেডি হতে যাবি বাবা, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন। 

আরেহ না না, ও পাঞ্জাবি পড়ে রয়েছে, একদম ফিটফাট , কুমু আন্টি বললেন।

কুমু তুই ভাইকে ফোন দে, বল আমার লাগেজ নিয়ে আসতে, সাথে বাচ্চাদেরকেও নিয়ে আসতে বল  তাড়াতাড়ি আসতে বল, কাজি সাহেব রাত আটটায় আসবেন, রুদ্রর মা বললেন। 

রুদ্র বাবা তুমি বসো। 

জ্বি স্যার, আপনিও বসুন। 

আরে কি কি স্যার করছিস, ভাই সাহেব আর স্যার নেই তোমার, এখন থেকে উনি তোমার শ্বশুর, বলেই রুদ্রর মা হাসলেন।

 

রাত সাড়ে আটটার পর সবার উপস্থিতিতে রুদ্র আর অনিলা কাজি সাহেবের কাছে কবুল বলার পর উপস্থিত   অনিলার খালু মুনাজাত করে দোয়া খায়ের করার পর সবাই অভিনন্দন জানানো শুরু করলো।

রুদ্রর কয়েকজন বন্ধু উপস্থিত ছিলো, তারা সবাই রুদ্র আর অনিলাকে ঘিরে ধরে ছবি তুলতে লাগলো। 

রুদ্র অনিলাকে নিয়ে গিয়ে অনিলার বাবা, রুদ্রর মাকে কদমবুচি করলে উনারা দুজনকেই জড়িয়ে ধরে দোয়া দিলেন। 

রুদ্র তুমি বন্ধুদের নিয়ে আসো, খাবার রেডি, ভাবী সাহেব চলেন খেতে সবাইকে নিয়ে, আপনারা সবাই আসুন, টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে, সুলতান সাহেব অনিলাকে নিয়ে সবাইকে পথ দেখালেন। 

খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে ছাদে, সবাই টেবিলে বসলে রুদ্র আর অনিলাকে নিয়ে বসলো বন্ধুরা। 

খাওয়া দাওয়ার পর এলো বিদায়ের পালা, রুদ্র সুলতান সাহেবের কাছে গিয়ে বললো, স্যার আমরা আগামীকাল সকালে ঢাকা রওনা হবো। 

স্যার নয় বাবা, আব্বু ডাকলে আমি খুশি হবো। 

রুদ্র মিষ্টি হেসে বললো, জ্বি স্যার, মানে আব্বু। 

তোমরা রওনা হয়ে যেও, আমি বিকালের ফ্লাইটে যাবো, ঢাকাতেই তোমাদের বিয়ের প্রোগ্রাম করবো কয়েকদিনের মধ্যেই।

এখন না প্লিজ, আমি কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্রান্স যাবো, ফিরে আসি, এরপর করবেন, এছাড়া আমার ভাইয়া ভাবী, বোনও নেই, উনাদের ছাড়া প্রোগ্রাম কিভাবে করি? 

আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, ওরা ফিরে আসুক তারপর করবো। 

 

রুদ্ররা বিদায় নিয়ে হোটেলে চলে এলো, রুদ্রর মা কমু আন্টিদের সাথে চলে গেলেন। 

হোটেলের রিসেপসনে এসে রুদ্র অনিলার এন্ট্রি করে রুমে এসে অবাক হলো, পুরা বিছানায় ফুল দিয়ে সাজানো। 

এগুলো তুমি করিয়েছো, অনিলা জিজ্ঞেস করলো। 

না আমি নিজেই অবাক হয়েছি, সেলফোনে কল হচ্ছে দেখে ডায়ালে দেখলো জামাল, রিসিভ করে হ্যালো বললো। 

বন্ধু রুমের চেহেরা পছন্দ হয়েছে? 

তুই করেছিস, কখন? 

তুই ফোন দেওয়ার পর আন্টি ফোন দিয়ে এরেঞ্জ করতে বলাতে এই কর্মযজ্ঞ করেছি। 

ধন্যবাদ বন্ধু। 

ওকে বিরক্ত না করি বন্ধু, ভাবীর দিকে নজর দে, বাই। 

বাই বন্ধু। 

আমি ড্রেসটা চেইঞ্জ করলে মাইন্ড করবে তুমি, অনিলা জিজ্ঞেস করলো। 

সিউর হোয়াই নট, আমি কি বাইরে যাবো?

না লাগবেনা, আমি ওয়াস রুমে যাচ্ছি। 

আমি সিগারেট খেতে পারবো? 

খাও, আমি আসছি, মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে অনিলা নিজের ব্যাগ খুলে স্লিপিং ড্রেস বের করে বিছানায় বসে গয়না গুলো খুলতে শুরু করলো। 

রুদ্র সিগারেট ধরিয়ে মুগ্ধ চোখে অনিলাকে দেখছিলো, তা খেয়াল করে অনিলা বললো, কি দেখছো? 

তোমাকে। 

জানো মম আমাকে এই গয়না গুলো দিয়েছে, বললেন সব উনার নিজের গয়না। 

তাই, মমও না কি করে, আসলে উনি খুব খুশি হয়েছেন। 

আর তুমি? 

রুদ্র হাসলো। 

 

....... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ