জ্ঞানের কান্ডারী শিক্ষক...
জ্ঞানের কান্ডারী শিক্ষক...

একটি জাতির মেরুদন্ড গড়ে ওঠে শিক্ষার মাধ্যমে। আর সে শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি শিক্ষকের কাছ থেকে। একটি কম্পাস যেমন নাবিকের দিকনির্দেশনায় সাহায্য করে, একজন সঠিক শিক্ষক তেমন করেই দিকনির্দেশক হিসেবে একটি উন্নত জাতি তৈরী করার শক্তি রাখেন। শিক্ষকতাকে তাই মহান পেশা বলা হয়ে থাকে। শিক্ষকসম্প্রদায় নিয়ে কোনো প্রবন্ধ লিখতে বসিনি আমি। আমার জীবনে যেসব শিক্ষকদের অবদান তাঁদের কথাই বলার জন্য এই লেখাটি।

আমার প্রথম স্কুল ময়মনসিংহ মিশনারি স্কুল। ওখানে বেশীদিন ছিলাম না। কিন্তু মনে পড়ে একজন শিক্ষিকা আমায় কোলে নিয়ে আদর করছেন। পরে শুনেছি উনি খুবই রাগী এবং কড়া শিক্ষিকা। থাকা হয়নি কারণ বাপিকে খুব মিস করতাম। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তারপর চলে আসি কানিহাটি চা' বাগানের বাসায় বাপির চাকরীস্থলে। স্কুলে তখনও ভর্তি হইনি, বাসায় একজন শিক্ষক আসতেন। সবাই উনাকে বুড়া মাষ্টার বলে ডাকতো। আমি মাষ্টার স্যার বলে ডাকতাম। স্যারের স্বভাব ছিলো লেখা একটু বাঁকা হলেই আঙুলের মধ্যে পেন্সিল ঢুকিয়ে শাস্তি দিতেন, নয়তো হাতের উপরে চিমটি কাটতেন। ব্যথা হলেও চুপ করে থাকতাম। কারণ দোষ তো আমারই কেন জানালার বাইরে ওই মাঠের দিকে দৃষ্টি রাখি? মনটা দূরের ওই গরু-ছাগলের স্বাধীনভাবে চলাফেরা দেখতে ছুটে যেতো। যদিও স্যার যা শেখাতেন সবই আমার শেখা হয়ে গিয়েছিলো। সত্যিকার অর্থে আমার জীবনে প্রথম শিক্ষক এই বুড়া মাষ্টার স্যার। যখন উনার কোনো ছাত্রই সেভাবে ছিলোনা, প্রচন্ড দারিদ্রতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন, মামনি-বাপি টাকা দিতেন। এইতো সেদিনের কথা আমি যখন ইন্টারে পড়ি তখনও তিনি এসেছিলেন। মাথায় হাতটা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। অনার্সে ভর্তি হবার পর একদিন দেখেছিলাম, তারপর শুনেছি আর নেই। আমাদের শমশেরনগর চা' বাগানের সব আপু-দিদি-ভাইয়াদের প্রথম শিক্ষাগুরু এই বুড়া মাষ্টার স্যার।

শমশেরনগর বাজারে রামচিজরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। চোখে ভাসছে বাপির সাইকেলে চড়ে স্কুলে গেছি হেডস্যারের রুমে। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক জসীম স্যার। স্যারের আদর-ভালোবাসা-স্নেহ এর তুলনা নেই। স্যারকে সবাই-ই ভয় পেতো। কিন্তু স্যার আসলে বাইরেই কঠিন। তা নইলে আমায় একটা বেত মেরে ভোররাতে সেই চার মাইল দূরে আমাদের বাসায় কেন যাবেন? অন্যায় তো করেছিলাম, সহপাঠীদের টানাটানিতে স্কুলের বাইরে গিয়েছিলাম। সত্যি বলছি একটুকুও ইচ্ছে করেনি লুকিয়ে যেতে। আমাদের ক্লাশ ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং চলছে। স্কুল বন্ধ। জসীম স্যার আমাদেরকে ইংরেজী ক্লাশ ওয়ার্ক দিয়ে নামাজ পড়তে গেছেন। আমাদের অঙ্কের শিক্ষক আশিক স্যার নামাজ শেষ করে এসে দেখেন ক্লাশে কেউ নেই। আশিক স্যার গিয়ে জসীম স্যারকে বললেন। স্যার নামাজ শেষ করে কারোও সাথে কথা বলছিলেন। তিনি এসে দেখেন কেউ নেই আমরা। যাক ক্লাশে ফিরে এসে দেখি জসীম স্যার বেত নিয়ে চেয়ারে বসা। উনি জিজ্ঞাসা করলেন বিথীকে বাইরে কেন গিয়েছি আমরা? বিথী বললো আমি নাকি সবাইকে টেনে নিয়ে গেছি। স্যারের থেকে প্রথম বেত এ হাতে। বাসায় গিয়ে হাত ফুলে ঢোল, সঙ্গে প্রচন্ড জ্বর। যেদিন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম, স্যারের খুশী দেখে কে! বাসায় ছুটে এলেন সন্ধ্যায়, আমায় কোলে উঠিয়ে নিলেন। আরেকদিন এলেন আবার স্যারের আনন্দ আমি সম্পূর্ণ সিলেট জেলার(মৌলভীবাজার তখন সিলেট জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিলো) মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করি। আমায় নিয়ে স্যারের কি গর্ব, কতো যে আশা! সেই স্যার এখনও বাপিকে দেখতে রোজ আসেন। প্রায়ই ফোনে কথা হয়। মজাও করেন। স্যার বড়ো একলা আজ, চাচী গতবছর রোজা মাসে ঠিক ইফতারীর সময় ঈশ্বরের কাছে চলে গেছেন। বাপি-মামনির পরে আমি যে দম্পত্তিকে দেখেছি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ, জসীম স্যার এবং চাচী তেমনই এক আদর্শ দম্পত্তি।

এই প্রাইমারী স্কুলে আরোও দুজন শিক্ষকের কথা না বললেই নয়। আমাদের অঙ্কের শিক্ষক আশিক স্যার। খুব শুকনা একজন মানুষ। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। হাতে বেত থাকতোই। আমাকে খুব ভালোবাসতেন স্যার। কিন্তু উনার ভালোবাসাটা অনুভব করার, দেখানো ছিলোনা। খুবই অন্তর্মূখী ছিলেন তিনি। স্যারের চলাফেরা, বসন-ভূষণ খুবই সাধারণ। কিন্তু স্যার অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বের হবার পর শুনেছি উনি আর স্কুলে নেই। স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুনেছিলাম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু জানা হয়নি স্যার কি আছেন? না কি...! আরেকজন শিক্ষিকা যাঁর কথা ভাবলেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। উনাকে সকলে ডাকতো মাষ্টারনী স্যার। আমাদের বাংলা এবং সমাজ বিদ্যা(ভুলে গেছি সমাজ বিজ্ঞান নাকি বিদ্যা?) পড়াতেন তিনি। উনার চেহারা, বেশ-ভূষার সাথে আমি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের মিল পাই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, মাথায় ঘোমটা থাকতো, কিন্তু উনি ধর্মান্ধ ছিলেন না। তার কারণ বলি। স্কুলে ভর্তি হলাম, আমাকে একেকজন এসে জিজ্ঞাসা করে আমার ধর্ম কি। সত্যি বলতে কি আমায় মামনি শিখিয়েছিলো ধর্ম একটাই আর সেটা মানবতা। আমি বললাম মানবতা। হিন্দু মেয়েরা বসতে দেয়না, এদিকে মুসলমান মেয়েরাও না। স্যারেরা ক্লাশে এলে বসতে পারতাম, নইলে না। আমি কখনো কারো নামে নালিশ করিনি। একদিন মাষ্টারনী স্যার এসে কিভাবে জানি দেখে ফেললেন আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে ব্রেঞ্চ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে বেত নিয়ে হাজির। আর প্রশ্ন কেন আমাকে বসতে দেয়া হচ্ছেনা। ওরা বললো মাষ্টারনী স্যার এর যে ধর্ম এখানে কারোর নেই। তখন উনি জানলেন মানবতার কথা। আমার স্পষ্ট মনে আছে কথাগুলো, বললেন, "এইটাই হইলো আসল ধর্ম। তুই পুজা করস, আর ওই মাইয়া তুই নামাজ পড়স। আল্লাহ/ভগবানরে দেখছোসনি?" সবাই না বললো। তখন বললেন, "আল্লাহ/ভগবান এইখানে, আমরার মনে। আমরা মানুষ, মানুষেরই মন থাকে। মানুষরে সালাম করিস, মানুষের ভিতরই আল্লাহ থাকে।" তারপর থেকে আমি বসার সিট পেলাম। মাষ্টারনী স্যারের কথা মনে আসতেই মনে আছে উনাদের বাড়ী স্কুলের একেবারে পাশে। উনি দুপুরের নামাজ পড়তে বাড়ী যেতেন, ফিরে এসে আমার মাথায় হাত ছুঁয়ে দিতেন। আজ বুঝি, ওই আশীর্বাদ আমাকে কখনো কোনো বিপদে আটকে রাখতে পারেনি।

**পুনশ্চ সেই শিক্ষকদের কোনো ছবি নেই আমার কাছে। কিন্তু মনের ফ্রেমে ঠিক বাঁধানো আছে। আর একটি কথা এ জীবনে আমার আদর্শ যে কয়েকজন শিক্ষক আছেন, তাঁদের সম্পর্কেই বলবো। এ জীবন অনেক ঋণী তাঁদের কাছে। সেই ঋণশোধ করা হবে না এসব লিখে, কিন্তু তাও লিখছি আপনাদের সকলকে জানাতে। আজকের আমার যদি কিছু ভালো থাকে, সব এই শিক্ষকদের থেকেই পাওয়া।

ক্রমশ---

হ্যামিল্টন, কানাডা
৮ জুলাই, ২০১৬ ইং।

0 Shares

৩৮টি মন্তব্য

  • অনিকেত নন্দিনী

    প্রাইমারি স্কুলে টুতে পড়ার সময়ে আমাকেও অন্য মেয়েরা বেঞ্চে বসতে দিতে চাইতোনা, দিলেও বাকিরা এমন ঠেলতো যে একদম কিনারে কোনোরকমে পড়ি পড়ি করে বসতে হতো। 🙁
    আহারে দিদি! সেই দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিলেন।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      দিদি এসব মজা তো আলাদা। আমায় ধর্মের জন্য বসতে দেয়া হতোনা। আর ছোটবেলায় আমি খুব চুপচাপ-শান্ত ছিলাম বাইরের পৃথিবীতে। প্রিয় কিছু মানুষের কাছে আমার যতো দাবী-আব্দার। আর নালিশ আজও করতে পারিনা। এখন নয় অন্যায় কিছুতে প্রতিবাদ করি, তখন ভেতরে ভেতরে কাঁদতাম। আমার কান্না বড়ো দামী, সবাইকে সেটা দেইনা।

      প্রাথমিক স্কুলের দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করেনা কখনো। তবে জসীম স্যারের সাথে ফোনে কথা বলে খুউব ভালো লাগে। খুউব।

      দিদি ভালো থাকুন। -{@

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      আজকালকার শিক্ষকদের দেখেছি। উনারা জ্ঞান বিতরণের জন্যে শিক্ষকতা করেননা। কোচিং ক্লাশে অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষকতা করেন। এরও কারণ আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের বেতন সবচেয়ে বেশী। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিন্তু ঠিক তাই। আমাদের দেশে সবচেয়ে গরীব হলো শিক্ষক। একজন ছাত্রের সঠিক ভিত গড়ে ওঠে পরিবার থেকে। তারপর শিক্ষকদের থেকে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলে কি লাগে এটি একটি স্কুল?

      আমাদের গোড়াতেই তো গলদ, দেশ উন্নত হবে কি করে?
      ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

  • শুন্য শুন্যালয়

    “আল্লাহ/ভগবান এইখানে, আমরার মনে। আমরা মানুষ, মানুষেরই মন থাকে। মানুষরে সালাম করিস, মানুষের ভিতরই আল্লাহ থাকে।” –আপু এমন শিক্ষক কি আমরা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছি আপু? 🙁 ভাবতে পারো কোন শিক্ষক তার ছাত্রের হাতে কলমের পরিবর্তে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে?
    আপু লেখো, লেখার মাঝেই বেঁচে থাক এই মহান শিক্ষকরা, কাগুজে ছবির কোনই প্রয়োজন নেই। শ্রদ্ধা তোমার এই প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি। ক্রমশর জন্য অপেক্ষা।
    কেমন আছো নীলাপু?

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      শুন্য আপু সেই ছোট থেকেই তো জেনে এসেছি মানবতার কথা। জানো আপু আমার ছেলেরই সহপাঠী ছেলেটির নাম ইবতেশাম। ওরা বাংলাদেশী। ওর মা যখন জানলো আমরা হিন্দু ইবতেশামকে মিশতে না করে দিলো। কিন্তু ওরা এ দেশে বড়ো হয়েছে, তাই মানেনা। তীর্থ আমায় এসে বললো সে কি মুসলমানের সাথে মিশতে পারবে? ইবতেশামের মা হিন্দুদের সাথে মিশতে না করেছে তাই এ কথা। বললাম মানবতার কথা। বোঝালাম। উল্টো প্রশ্ন করলো তাহলে ইবতেশামের মা কি ভুল? বললাম ভুল না। কোনো মায়েরাই ভুল না। ইবতেশাম বোঝেনি তো তাই এভাবে বলেছে। তীর্থকে বুঝিয়েছি ধর্ম একটাই, মানবতা। তবে এ জন্য আমার মামনির অবদানও কম না। মামনিও বুঝিয়েছে তীর্থকে।

      আপু আমাদের মানবতাকে ভাগ করে ধর্মক্লাশ। মনে আছে ধর্মশিক্ষার ক্লাশে আলাদা হয়ে যাওয়া। এখানে ধর্মের ক্লাশ হয়না। কিন্তু যাদের ধর্মের প্রতি আগ্রহ, তারা আলাদা ভাবে পড়ে। কেউ চার্চের লাইব্রেরীতে আর কেউ মসজিদ-মন্দিরের লাইব্রেরীতে।

      ভালো আছি অনেকটাই আপু। উড়াল দিতে ইচ্ছে করে এই হ্যামিল্টনের বাইরে। আমার যাওয়া হয়না। সামারটা চলে যাচ্ছে, আমি ব্যলকনি দিয়ে দূরের ওই সবুজ আর নীল আকাশ দেখি।

      ভালো রেখো। -{@

      • মৌনতা রিতু

        আমি মিশন স্কুলে পড়েছি। তাই সব ধর্মের সাথে পরিচয়। সবাই আমার সহপাঠি। আমি আমরা অনেকেই রবিবার গির্জায় যেতাম। ফাদারের সাথে সময় কাটাতাম। প্রার্থনার মিষ্টি খেতাম। কি যে শান্তি ছিল আপু জাননা। এ্যানি নামের আমার এক ক্লাসমেট ছিল, ও এখন সিস্টার হয়েছে এতো চমৎকার মিষ্টিভাষি এক মেয়ে ছিল কি বলব। তবে ইবতেশামের মায়ের মতো অনেকের সম্মুখিন যে হইনি তা না। হয়েছি। তবে এড়িয়ে গেছি। আমাদের মিশনের ফাদার মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য অনেক সীকৃতি পেয়েছে। আসলে মানবতা এই ধারাটা ওখান থেকেই শেখা। রবিবার আমাদের স্কুল ন’টার পরে হতো। আমি একটু আগেই যেতাম। গির্জায় যাওয়ার জন্য। মা জানত কিছুই বলত না। শুধু বলত সব ধর্মেই শান্তির বাণিটি শিখ। এ আসলে এক প্রশান্তি।
        মন্তব্যের ভিতরে আসলাম বলে বকবে না কিন্তু আমায়। মুই সোনা মনু না
        :p

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        বাহ আপু! মন্তব্যের ভেতর এসে যা শোনালে তার জন্য তো ভালোবাসা দিতে হয়। -{@ (3
        যদি সবাই জানতো, বুঝতো কোনো ধর্মগ্রন্থ বলেনি অশান্তির কথা। শান্তির জন্যে ধর্মের আবির্ভাব, অথচ আমরা ধর্মকে নিয়েই খেলছি। তান্ডব করছি। পশুদের ধর্ম ঠিকই পালন করছে পশুরা, কিন্তু মানুষ হয়ে গেছে পশু।

        মন্তব্যের ভেতরে আবার এসো শান্তির বাণী নিয়ে। 🙂

  • ইঞ্জা

    আজকালকার শিক্ষক শিক্ষিকারা আর তেমন নেই, সবাই এখন বেশ প্রফেশনাল, অনেকে তো ছাত্র ছাত্রীরা কি করছে তা কেয়ারও করেননা তার কারণও আছে আর তা হলো তার স্টুডেন্টরাই না আবার তাদের ইজ্জত মারে আর তাও হচ্ছেও বৈকি আর আমরা, আমরা এখনো আমাদের শিক্ষকদের দেখলে এগিয়ে গিয়ে কদমবুচি করে দোয়া নিই যা দেখে আমাদের বাচ্চারা অবাক হয় কিন্তু আমাদেরই তাদের শিখানো উচিত যে মাতা পিতার মতই শিক্ষক তাদের সম্মানের।

    ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের আবার পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      ঠিক বলেছেন। আমরা এখনও স্যারদের পায়ে ধরে প্রণাম করি। আমরা বাবা-মায়েরাই সেই শিক্ষা দেইনা। বরং শিক্ষকদের নামে সমালোচনা করি। কে কতো মার্কস দিলেন কোন শিক্ষার্থীকে। কেন দিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসে যাই নিজেদের সন্তানদের কাছেই। আর সন্তানরা সে সুযোগটা নেয়। আর বেশ কিছু শিক্ষকরা তো ভয়ঙ্কর, কখন যে কি করে বসে?

      তবুও আমরাই পারি আমাদের সন্তানদেরকে বোঝাতে, শেখাতে, চেনাতে। চলুন না শিক্ষকদেরকে শ্রদ্ধা করতে শেখাই তাদের।

      • ইঞ্জা

        সব চেয়ে দুঃখের ব্যাপার হলো আমরা যা করেছি তা আমাদের সন্তানদের আমরা শিখায় না কিন্তু সকল পিতা মাতাদের উচিত তাদের সন্তানদের শিক্ষকের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন শিখানো, আমি আপনার সাথে শতভাগ সহমত পোষণ করছি আর শুধু কথায় নয় আমি আমার সন্তানদের তা শিখিয়েছিও।
        ধন্যবাদ আপু।

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        আমি চেষ্টা করি জীবনের সঠিক শিক্ষাগুলো নিজের সন্তানকে দেয়ার।
        ঘরই তো আসল বিদ্যালয়, আর মা-বাবা হলো প্রথম শিক্ষক। আমার দাদুর মুখে কথাটি শুনেছিলাম।

        সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

  • মৌনতা রিতু

    প্রথমেই বলি, সেই সকালে লেখাখান পড়ছি। মন্তব্য পোষ্ট হয়নি। :@
    এবার লেখায় আসিঃ এখন আসলে আপু, সবকিছুই কেমন যেন যান্ত্রিক। শিক্ষকও যান্ত্রিক, তবে সবাই না কিন্তু। আর আমরাও কি আমাদের নতুন প্রজন্মকে সন্মান করতে, ভালবাসতে শিখাচ্ছি শিক্ষকদের ?
    আমারও এক স্যার ছিল আঙ্গুলের ফাকে কলম গুজে চাপ দিত।
    তবুও কতো স্নেহ করত। পরক্ষনেই মাথায় হাত বুলাত।
    তোমার লেখা দেখে আমারও লিখতে ইচ্ছে করছে স্যারদের নিয়ে।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      গুসসা করতে নাই।
      “যখন আসবে রাগ
      খাও শুধু লাল শাক।” 😀 (বিখ্যাত একজন কবির কবিতা এটি :p )

      আমরা শাস্তি যতোটুকু না পেতাম স্নেহ কিন্তু বেশী পেতাম। তাইতো ভুলেই যেতাম কখন এমন শাস্তি পেয়েছি।
      আপু লিখে ফেলো। আজকের প্রজন্মকে জানানোর দায়িত্ত্ব তো আমাদেরই।

  • ছাইরাছ হেলাল

    চাটুকার আর ভণ্ডের ভিড়ে প্রকৃত শিক্ষক হারিয়ে গেছে,
    আপনি ভাগ্যপ্রসন্না এমন শিক্ষকের দেখা পেয়েছেন (বেত সহ),

    লিখুন লিখুন ক্রমশঃ বড়র দিকের কথা লিখুন,
    সৎ ও সাহসী হয়ে!!

  • শামীম আনোয়ার আল- বেপারী

    যে জাতি গুরুর সম্মান করতে জানে , সে জাতি হিমালয় পর্বত জয় করতে জানে , আমার দাদিমার কথা। একবসর যাবত আপনার লেখা পরছি ,,,, খুব ভালোলাগে বলে বুঝাতে পারব না আপনাকে ,,,

  • নাসির সারওয়ার

    জেনেছি শিক্ষকরা হলেন বাবা মায়ের পরের খুঁটি। আমি আমাদের কালের কথা বলছি। ছাইরাছ হেলাল এর কথার সাথেই বলছি, প্রকৃত শিক্ষক হারিয়ে গেছে জানি কেমন করে।
    ভালো ভালো লেখা চলতে থাকুক।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      ভাইয়ূ এত্তো বুড়া বুড়া ভাব দেখান কেন? আপনার কাল কোন সালের? আমার কালের সাল ১৯৭৩ এর পর থেকে শুরু হয়েছে। 😀

      প্রকৃত শিক্ষাই তো নেই ভাইয়ূ। বই পড়ে বই হয়ে গেছে সবাই। আপনি কি মানসাঙ্ক করেছিলেন? এখনকার বেশীরভাগ পোলাপান বইয়ের বাইরে কিছুই তেমন জানেনা, শিক্ষকরাও অর্থের পেছন ছুটছে। শিক্ষার্থীরা ছোট থেকেই জেনে গেছে কোচিং ক্লাশের ব্যবসা।

      আজকাল আমার লেখায় আপনাকে দেখিনা। তাও মেনে নেয়া যায়, যদি নিজের লেখা দিতেন। প্লিজ লেখেন না ভাইয়ূ। -{@

  • ব্লগার সজীব

    মনের ফ্রেমে বাঁধানো কারো ছবি মন থেকে মুছে যায়না, এমন ছবি নষ্টও হয়না। আজকাল আমরা কৃতজ্ঞতা, ঋণী কারো কাছে, এমনটা বলতে ভুলে যাই। ভাল লাগলো এমন লেখা। লেখুন নিয়মিত।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      ভাভু বাইয়া আমার ভালো যদি কিছু থেকে থাকে, সেসব নিজের থেকে নয়। পাওয়া। বাবা-মা, শিক্ষক, বন্ধু, ভাই-বোন। আমি কৃতজ্ঞ স্রষ্টার কাছে এ জীবনে অজস্র ভালো মানুষের সাহচার্য পেয়েছি।
      এই যে আপনি বললেন এ লেখা ভালো লেগেছে, প্রেরণা পেলাম। লিখবো। এই প্রেরণা যে পেলাম আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছেও। 🙂

  • আবু খায়ের আনিছ

    ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কটা এমন , যে চাইলেও ছাত্র শিক্ষকে ভুলতে পারে না। দুয়েকজন শিক্ষক থাকে যাদের জন্য পুরু জীবনটাই বদলে যায়।

    এখন ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে, অনেক শিক্ষক হয়েছে, কিন্তু যেই শিক্ষক এর কথা বলছেন সেই শিক্ষক পাওয়া দুস্কর।

  • ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ

    পোস্টটা পড়তে গিয়ে বেশ নষ্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। কঠিনভাবে নাড়া দিয়ে গেল পোস্টটা আমাকে।

    মনে পরে গেল কত শিক্ষকদের জীবনে পেয়েছি; স্কুল থেকে কলেজ তারপর ইউনিভার্সিটি। প্রায় সবার কথা মনে পরছে। সময়ের পরিক্রমায় অনেকেই ওপারে চলে গিয়েছেন। কেউ বা আবার …

    ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলাম শিক্ষক কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনি। পোস্টটা ভাল লাগলো অনেক।

    ভাল থাকবেন আপু

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      সময় কিভাবে চলে যায়। আমরা ভুলে যাই একদিন যাঁদের জ্ঞানের আলোয় আমাদের জীবনের অন্ধকার কেটেছে।

      আমি শিক্ষকতায় ছিলাম। প্রায় চার বছর চাকরী করেছি। যেদিন ছেড়ে আসতে বাধ্য হই, সেদিন ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু নয়, গোপনে আমিও কেঁদেছিলাম। এতো ভালোবাসা পেয়েছিলাম ওদের থেকে।

      আপনিও ভালো থাকবেন।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ