বৃষ্টিবারান্দা

খসড়া ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪, শনিবার, ০৯:৩৫:৪৩অপরাহ্ন বিবিধ ২৬ মন্তব্য

আমার একটি বৃষ্টি বারান্দা ছিল। বারান্দাই বলবো কারন এর দুই দিক জুড়ে ছিল অর্ধ দেয়াল। অর্ধ ঠিক নয় তার চেয়ে নিচু । আর এর অর্ধেকটায় ছিল ছাদ। সবুজ টিনের ছাদ। একে আমি জোৎস্না বারান্দাও বলতাম। কারন এখানেই আমি জোৎস্নার জলে গা ভেজাতাম। পাশে নিম গাছের ঝিরঝিরে পাতাগুলি অপূর্ব ছন্দ তুলে গুনগুনাতো যখন বাতাস বইতো।

যখন প্রচন্ড বৃষ্টিতে চরাচর ভিজে একাকার তখন আমি বারান্দায় আমার পা ভেজাচ্ছি বৃষ্টির জলে। কারন বাগানে ঘুরে ভিজে ভিজে এক সময় তো ঘরে ফিরতেই হয়। তখন যদি মন মাতানো বৃষ্টি থাকে আমি কেমন করে রইব ঘরে। গভীর রাতে যখন আকাশ ভেঙ্গে নামে তখন আমার মন চলে যায় বারান্দায়, ধীরে ধীরে আমি নিজেই চলে যেতাম সেই বারান্দায়।

প্রবল চাঁদনী রাতে তুমি আমি খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে দিয়েছি। শুয়ে শুয়ে আকাশে চাঁদের আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমের কোলে আশ্রয় নিয়েছি তা সূর্যি এসে পরশ না বুলানো পর্যন্ত টেরই পাইনি।

একদিন ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে তুমি আমাকে বললে ---দেখ,দেখ! দেখি দুটি চড়ুইপাখি। একটি অভিমান করেছে অন্যটি তার অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যস্ত। ওদের দেখতে দেখতেই একসময় বৃষ্টি চলে এল আর ওরা আমাদের সাথে আমাদের ছাদের তলে এসে আশ্রয় নিল।

তোমার মনে আছে কত রাত আমরা কাটিয়েছি ঐ বারান্দায়?। কত সময় কেটেছে উদ্দাম সঙ্গীতের ছন্দে?। পূর্ণিমার কত রঙ তুমি আমি মিলে দেখেছি। মাঘী পূর্ণিমাতে চাঁদ থাকে লাল, বৌদ্ধ পূর্ণিমায় ধবধবে সাদা। আর আষঢ়ের পূর্ণিমা আমি বলি প্রচন্ড রূপালী। কেমন ঝগড়া লেগে গিয়েছিল তোমার আমার সাদা না রূপালী এই নিয়ে। আমর ঠোঁটে ঠোঁটে ছুঁইয়ে --এই যে তোমার ঠোঁট, নাক, চোখ রূপালী হয়ে গেছে বলে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলে।

তুমি আমার জন্যই ঐ বারান্দাটা তৈরী করিয়েছিলে। যেদিন প্রথম ওবাড়িতে আমার গৃহ প্রবেশ হল তুমি চোখ বেঁধে আমাকে দোতালায় নিয়ে গেলে। সেখানে আমাদের ঘরটি দেখালে ঘরের সাথের লাগোয়া বিশাল বারান্দাটিও দেখালে। সিঁড়ির অন্য পাশের দরজা খুলে তুমি আমাকে বিস্মিত করে বললে --এইটা তোমার জন্য। আমি চমৎকৃত হয়েছিলাম। এত্ত সুন্দর সবুজ আর সবুজ। আমার শোবার ঘরের বারান্দা, মাথার উপর অর্ধেক ছাদ সবুজ টিনের --যেন বৃষ্টির শব্দ শুনি, একপাশে সবুজ নিম গাছ বারান্দা ঘেষে , টিনের ছাউনি এক সারি তারপরই খোলা নীল আকাশ, সামনে মাঠে মেহগনি, আকাশমনি ও শিশু গাছের সারি। বারান্দার কিনারায় দাঁড়ালে সমুখে সবুজের শেষে দিগন্ত দেখা যায়। আমি উপরে আকাশের দিকে তাকাতেই তুমি বললে -- তোমার জন্য আকাশ, এখানে তুমি শুধু তোমার।

কত বৃষ্টি কত ঝড় কত জোছনা কত হাসি আনন্দ , আনন্দাশ্রু,ভাললাগার কষ্ট--------

এখন ঐ বারান্দায় কী তুমুল বৃষ্টি । হৈ চৈ বৃষ্টি। আমি দূর থেকে দেখি,ভাবি- অনুভব করি কিন্তু যেতে পারিনা। যাওয়া যায় না।

যখন আমাদের জগতে ছিলাম শুধু তুমি আর আমি সেই দূর্দান্ত প্রেমের সময় আমাদের একটি চুক্তি হয়েছিল---- যদি কোনদিন মন অন্য কথা বলে তবে তা আমরা দুজনই কথা বলে ঠিক করে নেব কেউ কাউকে বা নিজেকে অপমান করবো না। সে যত কষ্টই হোক সুন্দর ভাবে সমাধান করবো। কিন্তু তুমি সেই কথা রাখনি।

খুব করুনা হয় তোমার জন্য। কি হাস্যকর ব্যাক্তিত্ব !
নিজেকে নিজেই এভাবে অপমানিত করেছ আর তোমার অপমানে আমি হয়েছি লজ্জিত।

এই বৃষ্টি বারান্দার জন্য আমি ভুলেই গিয়েছিলাম মানুষের মন বড় দূর্বল যে কোন মূহুর্তেই তার রং বদলাতে পারে, চাহিদা বদলাতে পারে বা অন্য কিছুকে ভাল লাগতে পারে।

আমি সত্য বলে ধরে নিয়েছিলাম কবি জসীম উদ্দীনের সে উক্তি-- মানুষের হৃদপিন্ডটা তো কুমড়ো নয় যে তা ফালি ফালি করে ভাগ করে দেয়া যাবে?।

তারপর শুধুই কষ্ট সীমাহীন কষ্ট। যতটুকু আনন্দ আমাকে দিয়েছিল বৃষ্টি বারান্দা তার সবটুকুই সেই বারান্দা সুদে আসলে শোধ করে নিয়েছে নিষ্ঠুর মহাজনের মত। আমি এতই বিভোর ছিলাম বৃষ্টি আর জোছনা নিয়ে যে বৃষ্টি জল স্রোত আর জোছনার জোয়ারে ভেসে গেছে আমার সমস্ত সবুজ । সব কেমন পঁচে, গলে গেছে। দূর্গন্ধ নাকে আসার পর দেখি শুধু গলিত লাশ পরে আছে।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ