আমরা মানুষগুলো অনেক ব্যাস্ত থাকি। ব্যাস্ততার কারণে চারপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে ভাববার অবকাশ পাইনা, ভাবি দূর কোন অচেনা সম্মোহনী নিয়ে। এভাবে ভেবে ভেবে একসময় নিজেকে একা করে ফেলি। এটাই হল প্রকৃতির প্রতিশোধ।

প্রকৃতি খুবই ক্রূরমতি কিংবা দুর্বোধ্য। মানুষ তার পাপ হয়তো ভুলে যায়, কিন্তু প্রকৃতি সময়মত যার যা প্রাপ্য কড়ায়গণ্ডায় হিসেব করে সব উশুল করে দেয় চরম প্রতিশোধ নিয়ে। একটি ব্যাপার সত্যি, আর তা হল প্রকৃতি আজ কিংবা কাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিশোধ নিবেই। আমরা প্রকৃতির বাইরের কোন পরিচ্ছদ নই।

মানুষকে সাহায্য না করতে চাওয়ার জন্য ব্যাস্ততা দেখানো  হচ্ছে বড় হঠকারিতা ও নির্দয়। মানুষকে যারা বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাদের চেয়ে যারা অজুহাত দেখিয়ে পাশে না থেকে দূরে সরে গিয়ে ছিল তাদেরকে মনে রাখে বেশি। প্রকৃতি চায় না এরকম অশোভন অক্ষম লোক টিকে থাকুক। প্রকৃতি থেকে যখন আমরা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে প্রকৃতিকে বিরোধী করে তুলি তখনই শুরু হয় প্রকৃতির প্রতিশোধ নেবার সময়।

কথার ছেঁদ না বাড়িয়ে প্রবেশ করি মূল কথায়। আমি প্রবাসী হওয়ার আগে মিরপুর একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে একটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। দুপুরের খাবার হিসেবে  টেকনিক্যাল সংলগ্ন একটি টংঘর দোকান থেকে হালকা কিছু খেতাম। প্রতিদিনের মত নড়বড় একটি টুলে আরাম করে বসে আয়েশ ভঙ্গিতে  বনরুটি খাচ্ছি। হঠাৎ চমকে দেখি এক ভদ্রলোক দোকানীর উপর চেচামেচি ঝাড়ছে , পরে বুঝতে পারি তার পার্ক করা দামী সাদা গাড়ী কে যেন পানের চিপটলি ফেলে লাল করে রেখেছে আর দোকানীর অপরাধ সে কেন পান বিক্রি করেন। এগিয়ে গিয়ে ভদ্রলোকটিকে বুঝিয়ে বলি চিপটলি কে ফেলেছে কেউ দেখেনি, এতে দোকানীর দোষ কোথায়।

সাথে সাথে ভদ্রলোক চেচিয়ে উঠলেন - ঐ ফকিন্নি কোনদিন গাড়ি কিনে দেখছোছ? এই কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি, তাতে সে আরও তেলেবেগুনে  জ্বলে উঠলো। তুই এমনকরে আমার দিকে   তাকাইয়া থাকস কেন - এই বলে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। পাশে থাকা তার স্ত্রী উদ্যত স্বামীকে সংযত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ভাবলুম,  যাক তার স্ত্রী অন্তত সভ্য আছে। কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গলো যখন তার মুখ থেকে বেরুলো - এই তুমি ফকিন্নিদের গায়ে হাত দিচ্ছ কেন?  দেখনা ওর গায়ে বিশ্রি গন্ধ। কথাটি শুনে আমি নিজেকে ধিক্কার জানাই, আমরা ফকিন্নি, আমাদের গায়ে মেহনতীর গামের কীড়া পরা মরা ইঁদুরের গন্ধ। উদ্যত ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে পঁচা আলুর মত ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমার উপর বীরের মত ঝাপিয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমি ও মাগো বলে চিৎকার শুনি। হতবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি তার স্ত্রী দোকানীর গরম চায়ের কেটলির উপর হাত-পা ছড়িয়ে পরে আছে। কিছু না ভেবে তড়িৎগতিতে আমাদের ফকিন্নির নোংরা হাতে তাকে টেনে তুলি, ভদ্রমহিলা আমাকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আলালী ঘ্রাণ ছড়াতে ছড়াতে বলে ভাই আমারে হাসপাতালে নিয়ে যান।

 

ভাবি, উনার সাথে ঠিক এমনটিই হওয়া উচিৎ ছিল, পাপ যখন তার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখন তার ভার সহ্য করতে না পেরে বর্বর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

  • আলমগীর সরকার লিটন-এর আমার মতো পোস্টে
  • সাখাওয়াত হোসেন-এর বয়স পোস্টে
  • সাখাওয়াত হোসেন-এর বয়স পোস্টে
  • সাখাওয়াত হোসেন-এর বয়স পোস্টে
  • হালিমা আক্তার-এর কম্পিত ডানায় পোস্টে

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ