মাহবুবুল আলম

বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাধি হলো দুর্নীতি যা আমাদের দেশের সকল উন্নয়ন ও অর্জনকে ধূলোয় মিশিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। শুধু বাংলাদেশেই নয় বর্তমানে বিশ্বজুড়েই দুর্নীতিকে মারাত্মক সামাজিক সংকট ও সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর, প্রতিটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আজ দুর্নীতির শিকার। কোনো সমাজকে কলুষিত করে তাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে দুর্নীতিবাজরা যেন বদ্ধপরিকর। স্বাধীনতার সুফলকে আড়াল করছে আমাদেরই গড়া দুর্নীতির পাহাড়। তাই স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হয়েও নিজেদের দুর্নীতির কারণে আমরা তলিয়ে যাচ্ছি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা আর সামাজিক সংকটের অতল সমুদ্রে।

সাধারণভাবে দুর্নীতি হলো যে কোনো নীতি বিরুদ্ধ কাজ। দুর্নীতি (ইংরেজি: Corruption) দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারী ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। মানুষ যখন তার ন্যায়নীতি, আদর্শ আর মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে, আইন অমান্য করে কোনো কাজ করে তখন তাকে দুর্নীতি বলে। অন্য কথায় মানুষ তার ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত স্বার্থকে হাসিলের উদ্দেশ্যে নিজের নীতিকে বিসর্জন দিয়ে যে কর্মকান্ড করে সেগুলোই দুর্নীতি। বিশ্বব্যাংকের মতে- ‘ব্যক্তিগত লাভ বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হলো দুর্নীতি।’ দুর্নীতি শব্দটি যখন বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সাংস্কৃতিক অর্থে “সমুলে বিনষ্ট হওয়াকে”। রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক মরিস লিখেছেন, দূর্নীতি হল ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার। অর্থনীতিবিদ আই. সিনিয়র একে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, দূর্নীতি এমন একটি কার্য যেখানে (১) গোপনে প্রদানের কারণে, (২) তৃতীয় কোনো পক্ষ সুবিধা পায়, (৩) যার ফলে তারা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার নিশ্চিত করে, যা (৪) দূর্নীতির সাথে যুক্ত পক্ষটি এবং তৃতীয় পক্ষ উভয়ই লাভবান হয়, (৫) এবং এই কার্যে দূর্নীতিগ্রস্ত পক্ষটি থাকে কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাফম্যান, দূর্নীতির ধারণাটিকে আরো বিস্তৃত করেন “আইনানুগ দূর্নীতি” শব্দদ্বয় যোগ করার মাধ্যমে “যেখানে আইনকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করা হয়, যাতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের ক্ষমতা আইন প্রণেতার নিকট রক্ষিত থাকে।” অন্যভাবে বলা যায়, দুর্নীতি হলো মানুষের এমন ব্যবহার যা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে কোনো বিশেষ দায়িত্বে মনোনীত বা নির্বাচিত ব্যক্তিকে তার কাজ যথাযথভাবে করা থেকে বিরত রাখে। দুর্নীতির প্রকৃতি কিংবা প্রকারকে আমরা তিনটি দিক থেকে যেতে পারে। প্রথমত, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের দুর্নীতি। দ্বিতীয়ত সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারিদের দুর্নীতি। তৃতীয়তঃ বেসরকারি দুর্নীতি।

সেই কারণে দুর্নীতি সমাজের জন্য সব সময়ই নেতিবাচক। দুর্নীতির কারণে সমাজের সার্বিক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি বিঘিœত হয়। দুর্নীতির ফলে সমাজের সুবিধাবাদী ও ক্ষতিকর ব্যক্তিদের হাতে অর্থ ও সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়। ফলে এক সময় অর্থের প্রভাবে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের হাতে চলে যায়। এতে করে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমাজের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করে ও নিজেদের সুবিধামত ব্যবহার করে। দুর্নীতির ফলে দেশে কালো টাকার পাহাড় গড়ে ওঠে। যা বিদ্যমান অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। দুর্নীতিবাজরা দেশের অর্থসম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে। দুর্নীতির কারণে দেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এতে করে পণ্যের সরবরাহ কমে যায় আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায়। দুর্নীতি দেশকে আরো বেশি দরিদ্র করে ফলে। দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে।

ব্যক্তি ক্ষমতা হাতে পায় সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা সবাইকে তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সকলের ওপর তাদের কর্তৃত্ব থাকে। তাই তারা নির্বিঘেœ দুর্নীতি করতে পারে। তাদেরকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। অন্যদিকে যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি তারাও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি করে। প্রাচীন অর্থশাস্ত্রের লেখক কৌটিল্য বলেছেন-জিহ্বার ডগায় মধু/বিষ রেখে সেটার স্বাদ কেউ নেবে না এমন যেমন হয় না, তেমনি সরকারি তহবিল যার দখলে থাকে সেও তা আত্মসাৎ করবে না এমনও হয় না।” ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুর্নীতির বাইরে যে সমস্ত দুর্নীতি হয় সেগুলো হলো বেসরকারি দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘটে থাকে। যেমন কারো জায়গা জমি, অর্থ আত্মসাৎ করা, প্রতারণা করা ইত্যাদি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এখন সমাজের প্রত্যেক স্তরে প্রবেশ করেছে। তাই প্রায়শই দেখা যায় একটি শিশু বেড়ে ওঠে তার বাবা মায়ের দুর্নীতির টাকায়। এরপর সে একটি স্কুলে ভর্তি হয়। হয়তো সেখানেও তাকে পড়তে হয় ডোনেশনের আড়ালে ঘুষের দুর্নীতিতে। তারপর সে পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ফাস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রের সুবাদে খুব ভালো ফলাফল করে। একই উপায়ে হয়তো ভর্তি হয় কোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হয়তো ভালো নম্বর কিংবা বাড়তি কোনো সুবিধা পাবার আশায় সে বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক কিংবা অফিস কর্মচারিদের সাথে দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়। এরপর সে প্রবেশ করে কর্মজীবনে। তাও হয়তো মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে। এই যে দুর্নীতির চক্রে দুর্নীতির সংস্কৃতিতে সে বড় হয়ে ওঠে তাতে করে তার জীবনে দুর্নীতি স্থায়ী রূপ লাভ করে। সে প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে। একসময় সে নামে রাজনীতিতে। দেশ সেবার আড়ালে সে তখন আত্মসাৎ করে জনগণের টাকা, দখল করে সরকারি সম্পদ। ফলে দেখা যাচ্ছে পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই মানুষ দুর্নীতিতে আক্রান্ত ও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যখন কোনো দেশ ও সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়, মানুষের মধ্যে নীতি নৈতিকতার অভাব হয় তখন দুর্নীতি হয়। সমাজে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে এককভাবে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত এবং তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এককভাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত হলেও সেখানে দুর্নীতি হয়। সমাজে জবাবদিহিতার অভাব থাকলে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে কিংবা যেকোনো সাধারণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন যখন পর্যাপ্ত নয় সেখানে দুর্নীতি হয়।

দুর্নীতি প্রতিরোধে ও রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানই অনন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের চালিকাশক্তি ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সেই স্বপ্ন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং মুখ থুবড়ে পড়েছে। জাতির পিতার শাহাদাত, সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচারী, গণবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ক্ষমতা দখল জনগণের সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নকে বারবার দূরে সরিয়ে দিয়েছে। জনগণের জীবনে এ ধরনের শাসনের কুফল প্রতিফলিত হয়েছিল অনুন্নয়নে, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অবদমনে, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনায়, দুর্নীতিতে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শুদ্ধাচারের অভাবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’ স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বহুবিধ আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আরো কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’ শীর্ষক দলিলে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই আন্দোলনে সবাইকে অংশীদার হতে উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এছাড়া দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম যেসব আইন গত মহাজোট সরকারের সময় প্রণীত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’, ‘সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯’, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’, ‘চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন, ২০১০’, ‘জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’, ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’, ‘প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২’ ইত্যাদি। এসব আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত রাখার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর আওতাধীন অপরাধও দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু দুর্নীতিকে কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও নাগরিকগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। বাংলাদেশ জাতিসংঘের টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঈড়হাবহঃরড়হ অমধরহংঃ ঈড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ (টঘঈঅঈ)-এর অনুসমর্থনকারী দেশ। দুর্নীতি নির্মূলের জন্য ‘ফৌজদারী আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিকার ছাড়াও দুর্নীতির ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণকে’ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই কনভেনশনে। সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ‘এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা’ হবে, ‘যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত’ হবে। এই লক্ষ্য পূরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের অবশ্য-কর্তব্য এবং সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য পরাকৌশল।

সরকার আগামী কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বিকাশমান, আকারের দিক থেকে বিশ্বে এর অবস্থান ৪১তম। মাথাপিছু আয় বাড়ায় দেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় বাংলাদেশ নিন্ম-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতির বিকাশের এই যে ধারা, তা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলতে হবে অবশ্যই। তাই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। দেশ ও সমাজের উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আর এজন্য নিতে হবে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ। দুর্নীতি যেমন প্রাচীন তেমনি এর শিকড়ও সমাজের অনেক গভীরে প্রোথিত। দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সবসময়ই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এখন সময় এসেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। দুর্নীতিকে সমাজ থেকে চিরতরে দূর করার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। আমাদেরকে তৈরি করতে হবে দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় আন্দোলন। আর সচেতনভাবে সেখানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্ষম হতে পারব।

দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে- এটি স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দুর্নীতির কারণে  সেটা নষ্ট হতে দেয়া যায় না।’ দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যক্তি নিজ দলের হলেও ছাড় নেই। কার আয় কত, কীভাবে জীবনযাপন করে- সেসব খুঁজে বের করা হবে।” প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য দেশের দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি হুশিয়ারি ও সতর্কবার্তা। দেশে দুর্নীতি যে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থান জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও বটে। তাছাড়া এটি হতে পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণা বাস্তবায়নের সূচনাও। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যুবলীগের কর্মকা-ে বিরক্তি প্রকাশ করার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশকিছু নেতা-কর্মী এই অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান সাধারণ জনগণকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আশান্বিত করে তুলেছে। ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান এবং যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান এখন সকলের কাছে প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুব্ধ হওয়ার মূল কারণও ছিল দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের সঙ্গে ওই নেতারা জড়িত হয়ে পড়েছিল। এজন্য তাদের পদত্যাগও করতে হয়েছে।

কাজেই যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে সফল করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একার পক্ষে কখনওই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়, এ জন্য চাই দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষে ঐকান্তিক প্রয়াস। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই দুর্নীতির দুষ্টচক্রকে গুড়িয়ে দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

 

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ