ঘরের লকডাউন

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৪ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ০৮:৫১:১৭অপরাহ্ন রম্য ২২ মন্তব্য

দেশে লকডাউন শুরু হলে ঘরেও নানারকম লকডাউন হয়। আজ প্রথম লকডাউন কেমন কাটল? কারও কারও অতি চমৎকার হলেও আমার ভীষন খারাপ। বউসহ সবাই বলে সরকারী চাকুরেরা নাকি অফিসে তেমন কাজকর্ম করে না। তাই লকডাউনে বউ বুয়াকে বেতন দিয়ে ছুটিতে রেখেছে। এখন সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে করাবে। সকালটাই এমন শুরু হলো- ‘এই শুনছ, বাবুর পটিটা ফেলে দাওতো? থালাগুলো ধুয়ে ফেল? তোমার  গোসলের সাথে আমার কাপড়গুলোও কেচে দিও।’

ভালোলাগে বলেন? আগে তো অফিসের নাম করে গিয়ে খালি আড্ডা দিতাম। বিকেলে ফিরে খুব খাটুনি গেছে এমন ভান করে থাকতাম। বউ আর কোন কাজের কথা বলত না। বরং গরম পানিসহ সব এগিয়ে দিত। বারান্দায় বসে আড়াম করে সন্ধ্যার চা খেতাম। শুক্রবারেও অফিসের নাম করে ক্লাবে গিয়ে আড্ডা দিতাম। লকডাউন হয়ে পরছি বিপদে। ঘরে বউ এর প্যাদানী, বাইরে পুলিশের প্যাদানী।

অনেকদিন রুটি বানানো দেখি না। আজ বউ রুটি বানাচ্ছে আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। ভাগ্যিস আমি বানাতে পারি না, না হলে আমাকে দিয়েই বানিয়ে নিত। অবশ্য শুধু দেখছিলাম না। শাড়ির ফাঁক দিয়ে বউ এর পেট দেখা যাচ্ছিল। কাজ তো কিছু চাই, তাই একটু ছুঁয়ে দিতে মন চাইল। মাগো মা, বেলনা দিয়ে কি মাইরটাই না দিল।

“ যাও, ভাগো যত্তোসব আদিক্ষেতা।“

আরে ভাই, আদিক্ষেতা কেমনে বলেন তো? বিয়ের পর তো এমন করলে খুশিই হত।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাইরে যাবারও উপায় নেই,পুলিশ পাহাড়ায়। গতবার বউ এর প্যাদানী খেয়ে বাইরে গিয়ে দেখি পুলিশ। নিজেকে লুকাতে রাস্তার পাশেই বসে গেলাম ট্রাউজারের চেন খুলে পেশাব করতে। পেশাব কি যখন তখন বেরোয়। পুলিশও পেছনে দাঁড়িয়ে, পেশাবও বেরোয় না। অগত্যা উঠে দাঁড়ালাম যা থাকে কপালে। ওমা, ট্রাউজারের জিপার আর লাগে না। অনেক চেষ্টার পরও লাগাতে পারলাম না। এদিকে পুলিশ পেছনে পিটুনি শুরু করলে মান- সম্মান তো কিছুই থাকবে না। অগত্যা দুহাতে চেপে ধরে পুলিশকে পরিচয় দিলাম। পুলিশ সালাম দিয়ে বলল, ‘ স্যার আপনি?’

লজ্জায়  আমার খান খান হবার যোগাড়। বাড়িতে গিয়ে বউকে নিয়ে স্যারের জিপারের গল্প বলে কি হাসিটাই না হাসবে।

সারাদিন বাড়িতে বউ এর কাজ করতে করতে ক্লান্ত। মোটামুটি দিন গেল। রাতে তো মন আনচান। সিগারেট ধরানোর কোন অধিকার নেই। বাড়িটা যেন তার একার।এদিকে পবিত্র রমজান মাস। কি হবে আল্লাই জানে। ইফতারের পর বউ আবার একগাদা কাজ দিল। সিগারেট না টেনে মাথা গরম, সাফ জানিয়ে দিলাম আর কোন কাজ করতে পারব না। আমি ভীষন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সারাদিন এত কাজ করলাম তবুও ডাইনীর মন ভরল না।

মেজাজ ভীষন খারাপ, বউ খাবারের টেবিলে একটা কথাও বলেনি। আজ বিছানাতেও জায়গা হবে না। তাই খাবারের পর মুভি দেখতে বসলাম।

মুভি দেখতে দেখতে মনটা ভালো হয়ে গেল। বেশ হাসির ও রোমান্টিক মুভি।

“ অক্ষয় কুমার বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছে বউ দরজা খোলেনি। কোনমতে মই যোগাড় করে সেটি বেয়ে উপরে উঠে বউ এর বকা খেল। এ সময় চুপ থাকাই শ্রেয় তাই কিছু না বলে নিজেই রুটি শেকে নিল। বউকে খাওয়ালো। খুশি করার জন্য বউকে হুইস্কি বানিয়ে দিলো। অতপর বউ বেশি পেগ খেয়ে টাললি হয়ে গেল। এমন সময় বাচ্চা জেগে গেল তাকে পটিও করালো।

মনটা হঠাৎ বউ এর জন্য কেমন করে উঠল। রাগ- ক্ষোভ সব ফেলে বিছানায় গেলাম। কি মায়াময় ঘুম! মেয়েরা ঘুমালে আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।একগোছা চুল কপাল বেয়ে গালের পাশ দিয়ে গেছে। সরিয়ে দিয়ে গালে একটা চুমু দিতে মন চাইল। বিশ্বাস করেন, এর চেয়ে কিন্তু বেশি কিছুর ইচ্ছে ছিল না। বউ না জানি কি না কি ভাবলো!

যেই সরাতে গেছি অমনি ঠাস করে গালে এক চড় দিয়ে বলল,  ‘ রোজা রমজান মাস, অকর্মা সারাদিন বসে থেকে থেকে এখন এসেছিস আমাকে জ্বালাতন করতে। তোর না কাজ করার শক্তি নাই। এখন আবার এসবে,,,,,। খবরদার আমাকে ছুঁবি না।’

ভীষন রাগ হল, ‘এতবড় অপমান একটা চুমুর জন্য।তোকে আর জীবনেও ছুঁয়ে দেখব না। দেখি তুই কেমনে থাকিস আর কোনদিন ‘বাবু’ বলে এসে সোহাগ করে জডিয়ে ধরিস। দরকার কি আমার একার?’

বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে এপাশ- ওপাশ করছি। কিছুতেই ঘুম আসছে না। আর ডাইনীটা অঘোরে ঘুমাচ্ছে।

তন্দ্রার মত এসেছে মনে হল কে যেন ডাকছে। বউ ডাকছে। মেজাজ খিস্তি করে বললাম, ’আবার কি?’

-বিছানায় চল ঘুমাই। আমি জানি আমাকে ছাড়া তোমার ঘুম আসবে না। তুমি না ঘুমালে আমিও কষ্ট পাব। কাল তোমার মাথা ব্যথা করবে।

আমি বললাম, ‘ তোমাকে তো ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, সিগারেট খাওয়া যাবে না। সব তোমার আইন, তোমার বাড়ি তুমি ঘুমাও!’

বউ হাসলো। আচ্ছা সরি! আর সিগারেট খেয়ে অবশ্যই ব্রাশ করে আসবে!

ঈশ্! বউ কত ভালো। শুয়ে শুয়ে ভাবছি, জীবনে একজন মানুষের কত দরকার। তাকে ছাড়া ঘুম আসে না কিন্তু  তাকে হেল্প করতে পুরুষ ইগোতে লাগে। অথচ সে প্রতিদিনই এই কাজগুলি বিরক্তিহীনভাবে করে যায়।

আজ করোনায় আরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এ জীবনে আর লকডাউন নাও খুলতে পারে কিংবা এমনি করেই আমরাও হারিয়ে যেতে পারি। তাই সাবধানে থাকি, স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলি। সবার লকডাউন আনন্দময় হোক পরিবারকে নিয়ে। জীবনের প্রতিটি দিনই আমাদের শেষ দিন ভেবে নিয়েই চলি। রমজান মোবারক ও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল। সবার জন্য শুভ কামনা!!!!!

ছবি-  নেট থেকে।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ