ক্ষমা করে দিন আমাকে , আমাদেরকে -
যারা রাজাকারদের বিচার চেয়ে এসেছি ১৯৭২ সনের পর থেকে আজ পর্যন্ত
সেই বালককে যে ৭১ এর ৬ টি মাস অনহারে অর্ধাহারে চরম আতংকের মাঝে দিন গুলো পার করেছে । যার পরিবারের সমস্ত বাড়ি ঘড় পাকসেনা/রাজাকার কর্তৃক পুড়িয়ে দেয়া/ লুট করা হয়েছে। যার বাবাকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। যার বাবা সেই নির্যাতনের ব্যথা দীর্ঘ ২১ বছর বহন করে মৃত্যুকে বরন করেছেন।

যুদ্ধের দিনগুলোতে যেই বালক দেখেছে বড় ভাইয়ের বন্ধুকে পাকসেনারা হত্যার উদ্দেশ্যে সুগন্ধ্যা নদীর তিরে সেই বড়ই গাছটির দিকে নিয়ে যেতে, দেখেছে জঙ্গলে লুকিয়ে , আপন চাচাত ভাই রশিদকে পিঠমোড়া করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে রাজাকার আর পাক সেনারা। যে ভাইটি আর ফিরে আসেননি। একমাত্র ভাইটির জন্য আজও হাহাকার তাঁর বোনদের।
দেখেছে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে যুবতি মেয়েদের যেতে অনিচ্ছুক পশুদের মত নিয়ে যেতে।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর যে জেনেছে , তাকে বড় বোনের শ্নেহ দিতেন যে রমাদি , তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পাক সেনারা। জেনেছে ক্লাস টেনে পড়ুয়া বড় বোন সম , যিনি স্কুল থেকে টিফিন এর সময়ে প্রায়ই বাসায় এসে বলতেন আমার মাকে ' মাসিমা ভাত দাও ' - সেই সীমাদি , তাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাক সেনারা। রমাদি , সীমাদি আর ফিরে আসেননি। তাঁরা আর আসবেন না।

এমনি করেই ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হলেন , ২ লাখ মা বোন ধর্ষিতা হলেন। আমি এবং আমরা এর বিচার চেয়ে ভুল করেছি ম্যাডাম। ভুল করেছিলেন মা জাহানারা ইমাম , তাই তো দেশদ্রোহীর অপবাদ ( মামলা ) মাথায় নিয়ে তিনি চলে গিয়েছেন আমাদেরকে ছেড়ে। ভুল করেছেন শাহাবাগ এ প্রজন্ম চত্বরে উপস্থিত লাখো জনতা , শাহাবাগের চেতনাকে ধারন করা সারা বাংলার কোটি মানুষ।

আমাদের ক্ষমা করেননি আপনি , আপনি ক্ষমা করে দিয়েছেন , আপনার ফুলের মত চরিত্রের অধিকারী দুই পুত্রের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ এনেছেন , নির্যাতন করেছেন , দেশ ছাড়া করেছেন। ক্ষমা করে দিয়েছেন আপনার ১ টাকার বিনিময়ে প্রাপ্ত বাড়ি থেকে আপনাকে যারা উচ্ছেদ করেছেন তাঁদের ।

আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমরা মস্ত ভুল করে ফেলেছি খুনি , ধর্ষক , লুটেরা রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে। আমাদের এই অপরাধের কি কোন ক্ষমা নেই ?

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ