ক্ষমাহীন –

বন্দনা কবীর ২৮ আগস্ট ২০১৩, বুধবার, ১২:১৩:৩৩পূর্বাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য
জগার দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ঘটনাটা দেখছে রঞ্জু। আর চলমান দৃশ্যটা দেখতে দেখতে দুই চুমুকের মধ্যিখানেই ঠোঁটটাকে একবার বেঁকিয়ে একবার মুচড়িয়ে ভাবছে ‘ইশ! মানুষ কি নিষ্ঠুর!’
কাপে শেষ চুমুকটা দেওয়ার পরে এক লহমা বাতাস সুড়ুৎ করে মুখের মধ্যে যেতেই চমকে কাপের দিকে তাকায় রঞ্জু ভ্যাবলের মতন। ‘যাহ্‌ শেষ!’চোখ দুটোকে সামনে রেখেই ‘ঐ আরেক কাপ দে’ বলে নড়ে চড়ে বসে রঞ্জু। সিনে নতুন চরিত্র ঢুকছে।
ভটভটিয়ে একটা মোটর সাইকেল ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়তেই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চরিত্রও দৌড়ে এলো বাঁশিতে ফু দিতে দিতে। এতোক্ষন পর্যন্ত তারাও রঞ্জুর মত সাইডে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছিল কিন্তু স্টেজে নামার সাহস করতে পারছিলনা বোঝাই যায়। মূল ঘটনার স্টেজের পাশের আলিশান ফ্ল্যাট বাড়ি দুইটার দুই দারোয়ান পরের দুইজন। আর প্রথমজন গায়ে পুলিশের পোষাক চাপানো এস আই টাইপ কেউ মনে হচ্ছে।

জোর দুই টানে চা শেষ করে রঞ্জু বড় বড় চার কদমে স্টেজের একটু কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। রাগান্বিত জনতার দুই চারজন তখনো মাটিতে পড়ে থাকা থেতলানো শরীরটায় জুতোর ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।

পুলিশের পোষাক পরা জন এতোক্ষন রঞ্জুর উল্টো দিকে ফিরে ছিল । কার একটা অশ্রাব্য গালিতে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই রঞ্জু থতমত খায়, ‘উরিব্বাশ! নাটক সিনেমার শুটিং হচ্ছিল নাকি এতোক্ষন?!’
ভাবনাটা মাথায় আসতেই রঞ্জু ইতি উতি দেখে কোনো ক্যামেরা ট্যামেরা আছে নাকি আশে পাশে কোথাও।
নেই কনফার্ম হতেই রঞ্জু মুগ্ধ হয়ে যায় ।
‘যাশশালা! এই ছেলে এইখানে কি করে?! এর তো সিনেমায় থাকা উচিৎ ছিল। ফাটাফাটি হ্যান্ডসাম এই ছেলে সিনেমায় নামা মাত্রই সাকিব জলিলের ভাত বাসি হয়ে যাবে কনফার্ম ’

এস আই এর রোমান্টিক মার্কা চেহারার কারনেই রঞ্জু এবার বেশ খানিকটা সাহস পেয়ে সকলকে ঠেলে ধাক্কিয়ে স্টেজের একদম কোল ঘেঁসে গিয়ে দাঁড়ায়। যাকে বলে এক্কেবারে সামনের সারিতে । উদ্দেশ্য, নিয়ে এতো কান্ড তাকে একটু দেখা । কিন্তু মাটির দিকে চোখ ফেলেই রঞ্জুর ঠোঁট পুরোটাই বিকৃত হয়ে ওঠে ।
‘ইশ্‌শ্‌শশিরেহ !! খুন করে পালানোর সময় ধরা পড়া ডাকাতকেও তো লোকে এইভাবে মারে না!’ রঞ্জুর চোখ টলমল করে ওঠে হঠাৎ।

পঞ্চাশ জন মারমুখি ক্রাধান্মত্ত লোকের একশো চোখের মধ্যে আক্রান্ত লোকটা কি করে যে রঞ্জুর চোখটাকেই দেখে ! কথা বার্তা ছাড়াই হঠাৎ লোকটা বাইম মাছের মতন একটা মোচড় দিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রঞ্জুর পায়ের উপরে।
-ভাইজান আমারে বাচান ।

জনতার পঞ্চাশ জোড়া ছানাবড়া চোখ নিমিশেই রঞ্জুর দিকে।

রোমান্টিক চেহারার পুলিশের ড্রেস পরা এস আই ছোকরাটা কিছু বুঝবার আগেই বিষ্ফোড়িত চোখে দেখে লোকজন আরেকটা ছেলেকে মাটিয়ে শুইয়ে ফেলেছে!!

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ