ডাক্তার (১)

আদিব আদ্‌নান ৯ জুলাই ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩৫:২০পূর্বাহ্ন অন্যান্য ২১ মন্তব্য

বিশাল মনোহর বাতানুকুল অপেক্ষাকক্ষ ডাক্তার সাহেবের। অপেক্ষা করছি ডাক্তার সাহেবের। এই তো এলো বলে। বিরাট বপুর স্লিম টিভিতে ঝাকানাকা হিন্দি ছবিছুবি চলছে, চোখে গিলছি কানে পট্টি দিয়ে। দক্ষ কারিগরি ব্যবস্থাপনায় আমার রুগীর সিরিয়াল নম্বরটি 'টু'। আর যায় কোথায়, মার দিয়ে কেল্লা অবস্থা।

শানেনজুলে আসি এবারে।

একজন গ্রাম্য, অবশ্যই গাঁইয়া বুইড়া ভাম প্রকৃতির মানুষ, যথার্থ অপদার্থটি আমার কাছে এসে হাজির চৌক্ষের সমস্যা নিয়ে। এই ষাটোর্ধ আবাল কিসিমের মানুষটি এক সকালে আবিষ্কার করে যে তার একটি চোখ কেমুন জানি ঝাপসা ঝাপসা লাগতেছে। তা লাগুক না। এমন বয়সে লাগতেই পারে। মুখে বললেও মনে মনে প্রমাদ গুনে দ্রুত এই ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। বুড়োটার মন খারাপ। মুখে হাড়ি বেধে একটু দূরত্বে বসে বসে কড়িকাঠ গুনছে। গুনতে থাক বাবা, আমি ডাক্তারের খোঁজ নেই। এবারে জানলাম একটু দেরি হবে আসতে, সামান্য অসুস্থ। সাহেবের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, ক্লিয়ার হলেই এসে পড়বে।খুব বেশি সময় নেবে না। আর রুগী-পত্তর আরও আসুক। ভিড়-ভাট্টা না হলে কিসের বড় ডাক্তার। মাইনকা চিপায় যখন পড়েছি তখন আর কী করা। অগত্যা ছাইয়া দিল মে আনায় মন দিলাম। এর মধ্যে রোগ-শোক সীমিত আকারে আসতে শুরু করেছে লঘু পায়ে। হঠাৎ হাই হিলের মৃদু ছন্দ কানে যেতেই গা ঝাড়া দিয়ে চক্ষুষ্মান হলাম চোখ রগড়ে। বাতাসে হাল্কা সুঘ্রাণ ছড়িয়ে উনারা দু’জনে আসন গাড়লেন। নারীর ক্ষমতায়নের যুগে ভর করে বৃহৎ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি দ্বয়। এটি হালের ট্রেন্ড, দুষ্ট ডাক্তারদের জ্ঞান আহরণে ও বিতরণে খুব সুবিধা। মাভৌ, মাভৈ।
সহসাই ডাক্তার সাহেব হাসি মুখে প্রবেশ করলেন, সবাই কম বেশি উচ্চ-অনুচ্চ কণ্ঠে ছালাম প্রদান করলেন। অবশ্য সাহেব কতটা গ্রহণ- বর্জন করলেন তা বোঝা গেল না। অবশ্য কিন্নরীরা উচ্চ কণ্ঠেই মধু মধু সুরে কলকাকলি করে গেলেন। সাহেবের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যা বোঝা গেল তা সঙ্গত কারণেই চেপে যাচ্ছি।

একটু পরেই আমাদের ডাক এল ডাক্তার সাহেবের তরফ থেকে। অপদার্থ রোগীকে নিয়ে প্রবেশ করলাম, মন দিয়ে প্রাথমিক তথ্যাদি নিলেন। দেখলেন এবং রোগীর দু’চোখে দু’ফোটা ঔষধ ঢেলে আরও আধা ঘণ্টা পরে আবার দেখবেন বলে অপেক্ষা করতে বললেন। আমার রোগী এই অপেক্ষায় বেজায় অখুশি। আমি অতটা না। ভাবলাম এবারে একটু তাকাতাকি করি। অপেক্ষার লেবু সময়টিকে লেমনেড বানানোর চেষ্টা করে দেখার কঠিন ও ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বিধি বাম। আমার অদক্ষ চেষ্টা কামিয়াবির ধারে কাছেও পৌঁছে দিল না। ভগ্ন মনে হাল ছেড়ে না দিয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসলাম। ফলাফল ইউরেকা পর্যায়ে পড়ে অবশ্যই। দু’টির চালাক চালাক টিকে এক্টিভ ও অন্যটিকে প্যাছিভ বলে মনে হতে লাগল। আমার মনে কু ডাক দিয়ে ‘রংধনু’ ছড়িয়ে গেল। হায় পোড়া কপাল। (মাফ চাই)

চেম্বার থেকে ডাক এল। আবার দেখলেন অনেক ঔষধ লিখে দিয়ে যা বললেন তা এ রকম... একটি চৌক্ষের অবস্থা প্রায় ভয়াবহ। ঢাকায় গিয়ে মেজর অপারেশন করাতে হবে যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণই। এ দেশে মাত্র দু’তিন জন চিকিৎসক আছেন মাত্র এ জন্য। ঠায়-ঠিকানা লিখেও দিয়ে অতি দ্রুত ঢাকায় যেতে বললেন।

মুখে পাষাণহৃদয় ভাব নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে প্রমাদ গুনে দুরু দুরু বক্ষে চেক ও রিচেকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। ধারি বুড়োটা বিড় বিড় করে বলছে-------
চৌক দুইডা, একটা দিয়াও কাম-কাইজ চালাইয়া নেওন যাইবে। খুপ অসুবিধা হইবে না। তবে শরিলে কিছু জিনিস একটাই, হেডা একবার হুইয়া পড়লে আর সুবিধা অয় না, হৃদয় বলে কথা.........

পাকা শয়তানটি কী বলে কী বোঝায় কে জানে।

চলবে......

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ