বন্ধু মানেই এলিয়ে দেয়া নিরাপত্তার নিঃশ্বাস...

 

নয়- অহমের প্রতি

এই বুঝি চিনলি আমাকে ? তুই কি করিস , কেমন থাকিস সেসব যদি তোকে বলেই দিতে হয় , তাহলে তো আমি তোর তিরি-ই না । আর তোর মিথ্যের দৌঁড় আমার খুব জানা আছে । বুঝলি ? তাই মিথ্যের উপরে আবার আরেক স্তর মিথ্যের প্রলেপ দিলে তোর মাথার একটা চুলও রাখবো না ।

আজ একটা কান্ডই হলো । অফিসে যাবার জন্যে তৈরী হচ্ছি , তোর দেয়া সেই শাড়ীটা চোখের সামনে ঝুলছিলো । মনে আছে তোর প্রথম বেতন পেয়ে মিষ্টিমনি , উপমা আর আমার জন্যে শাড়ী কিনেছিলি ? তাও আমাকেই পছন্দ করে দিতে হলো । মিষ্টিমনির সেই হাসিটা এখনও যেনো আমার চোখের সামনেই । তোর বাড়ীতে আমি গেলেই মিষ্টিমনি বলতো , “আচ্ছা রে তিরি এই ছেলেটা কি বিয়ে করবে না ? চাকরী তো পেলো । তোর কথা ফেলে না , একটু বল না রে ।” তুই ফাজিল এমন , খুব কঢ়া চোখে চেয়ে দেখতি আমাকে । যেনো আমি-ই দোষী । যাক , সেই শাড়ী পেয়ে মিষ্টিমনি যারপরনাই আনন্দিত । সন্তানের প্রথম আয়ের টাকায় কিছু পাবার আশা করেনা মায়েরা , কিন্তু মায়ের আনন্দ সেখানেই , যখন দেখে সন্তান তার মাকে অনুভবে রাখে । এতো কিছু বলে ফেললাম , আসল কথা বলাই হলো না । এখন সময় শেষ , পরে বলবো । গেলাম রে । তোকে একটা ধাঁধা দেই , বলতো দেখি – আজ কি কান্ড হলো ? পারলে একটা চমক পেয়ে যাবি ।

তোর তিরি

 

দশ- তিরির প্রতি

নাহ তোকে নিয়ে আর পারা যায়না । এই তুই তো এমন ট্র্যাজিক মার্কা চরিত্র ছিলিনা ! বয়স যে বাড়ছে সেটা বুঝে গেছি । এরপর যদি আর কোনো স্মৃতি রোমন্থন করে তোর গাল ভিঁজে , চড়িয়ে লাল করে দেবো । তোর বর জানতে চাইবে গাল লাল কেন ? তখন আমি বলবো আমার চড় খেয়ে ।

এখন বল প্রথম দিনের অফিস লাগলো কেমন ? খুব সেজেগুজে গিয়েছিলি তো ? তুই তো একটা চরম ঢিলা টাইপের মেয়ে । না পারে সাজতে , না পারে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে । আজকের কান্ডটা কি বোঝাতে পারলাম ? নাকি বিশ্লেষণ করতে হবে ? নীল শাড়ী পড়লে তোকে কেমন লাগে রে ? ছবি পাঠাস । মজার কান্ড আর কি ঘটবে ? একটা লোক তোকে আড়াল থেকে বারবার দেখে যাচ্ছিলো , আর তুই খুব অস্বস্তি বোধ করছিলি । তবে চিন্তা করিস না , তোর দিকে চাইবে না অমন করে । পাগলী তুই পারবি , কখনো মাথা নীচু করে রাখিস না । তাহলে সবাই মাথায় উঠে যাবে ।

তোর অহম

 

এগারো- অহমের প্রতি

এইইইইইইইইই । তুই কি করে জানিস !!! উফ ! কি রে তুই ? আসলেই লোকটা না এখন আমার দিকে আর সেভাবে তাকিয়ে থাকে না । এটুকু জানি , তুই হুমকি বা ঝাড়ি দিয়ে কারো চরিত্র বদল করার চেষ্টা করিস না । জানতে ইচ্ছে করছে ঘটনাটা কি ? আর তুই আমাকে চড় মারবি , আমি কি চেয়ে চেয়ে দেখবো ? তোর একটা চড় , আমার কয়েক ঘন্টা মুখ ভার । পারবি তো আমার মন খারাপ করা মুখ দেখতে ?

শোন সেদিন আরেকটি ঘটনাও ঘটেছিলো , তোর দেয়া নীল শাড়ীটা পড়ে অফিস তো গেলাম ঠিকই । ফেরার পথে দেখা উচ্ছ্বাসের সাথে । কতো বছর পর ! অহম রে উচ্ছ্বাসের চোখে আমি আফসোস দেখলাম । যা কখনো চাইনি ।

তোর তিরি

 

বারো- তিরির প্রতি

এই মেয়ে , কি ভাবিস আমাকে ? প্লেনে উঠলে পর , যেতে যদিও দু’দিন লাগবে । তাতে কি ! তোর অলিখিত , অবৈতনিক দেহরক্ষী এই আমি এখনও । যদিও নিজেকেই রক্ষা করতে পারিনা তোর মতো রাক্ষুসীর থেকে । বোকা শোন ওই যে লোকটা প্রাঞ্জল চৌধুরী সে রিনীর বর । মনে আছে তো রিনীকে ? ও তোর গল্প এতো বেশী করে , তাছাড়া তোর ছবিও দেখিয়েছে । রিনী আমাকে ফোন করেছিলো , বললো তোর কথা । প্রাঞ্জলের সাথেও কথা হলো । তুই জানিস না এরপর যে কতো মজা হলো তোকে নিয়ে । খুব রাগ হচ্ছে , তাই না ? একটু রাগ কর । তোর রাগ এটাই দেখা হলোনা ।

আচ্ছা তিরি , এখনও এতো ভালোবাসিস ? ওই গাধাটা বুঝলো না তখন , আফসোস করবে না তো কি ? করতে বাধ্য । যদিও ছেলেরা বড়ো স্বার্থপর , বৌকে পেলে কাছে আর প্রেমিকা , তাও আবার প্রাক্তন মনেও করেনা । আমি ছেলে হয়ে এ কথা বলছি । তবে সব ছেলে না , এই যে আমি ;  দেখ এজন্য বিয়েই করছিনা । তোর জন্য আর যে কতো ত্যাগ করতে হবে ।

অনেক হলো । এবার বলছি শোন , হুমকি দিবি না মুখ ভার করার । কখনো না । কোনোদিন না ।

তোর অহম

 

হ্যামিল্টন , কানাডা

৯ আগষ্ট , ২০১৩ ইং ।

 

ক্রমশ প্রকাশ্য

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ