আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-তেইশ)

 

-কিছু না! পিচ্চি প্রিয়া বলে আরাফ।

-ওহ! মম আপনাকে খেতে ডাকছে।

-চল।

-আরাফ দেখল প্রিয়া খুব হাস্য উজ্বল, তো! রাতে ঘুম কেমন হলো?

-জ্বী ভাইয়া ভালো।

-তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে.?

-জ্বী ভালো। কথা বলতে বলতে দুজনেই ডাইনিং রুমে ঢুকল।

 

আরাফ দেখল টেবিলে খাবার সাজানো, মিরা কাজে ব্যস্ত সবার মুখে হাসি, প্রিয়া দাদুমনির পাশে বসে পড়ল।

তুমি আমার পাশে বসো বাবা বলেই আজাদ সাহেব চেয়ার টেনে আরাফকে বসতে দিল। মনোয়ারা, আকরাম সাহেব খুশি হলেন মিরা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিল।

 

প্রিয়ার মন একটু খারাপ বন্ধু চলে যাবে, একদিনের বন্ধুত্বে অনেকটা মায়া জন্মে গেছে। পড়ার টেবিলে মন বসাতে পারছে না বার বার দাদুমনির রুমের দিকে উঁকি দিচ্ছে, কখন গুন্ডা ছেলে চলে যায় সেটা দেখার জন্য।

-সকালের খাবার খেয়ে আকরাম, মনোয়ারা,আরাফ কিছুটা বিশ্রাম নিল।

সকাল ১০টা চল এবার তাহলে রওনা দেওয়া যাক,  বাসায় আরাফাত আসছে ছেলেটা হয়ত একা ফিল করতেছে।

আকরাম সাহেবের কথা শুনে মনোয়ারা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, আজকের দিনটা থেকে যাও মা, দাদুমনির কথা শুনে প্রিয়া মনে মনে হাসলো থাকলে খুশি হব।

না মা বাসায় যেতেই হবে, পরে না হয় একদিন আরাফকে নিয়ে আসবো আপনাকে দেখতে।

দাদুমনি সময় পেলেই আমি আপনাকে দেখতে আসবো, এবার বিদায় দেন আমরা যাব।

 

আজাদ, মিরা খুব করে চাইছিলেন! আকরাম সাহেবকে কয়েকবার বললেন, আজকের দিনটা থেকে যেতে কিন্তু ওরা থাকবে না।

আবার আসবো বলে ওরা  কথা দিল, দাদুমনির মন খারাপ হলো আরাফের জন্য তবু বিদায় দিলেন।

-পিচ্চি আমি যাই মন দিয়ে পড়াশোনা করবে, বন্ধুকে ভুলে যাবে না কিন্তু! তাহলে খুব কষ্ট পাব।

 

-প্রিয়ার চোখে পানি এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে এখনি! মাথা নেড়ে সম্মতি দিল হ্যাঁ।

-পিচ্চি তোমাকে খুব মিস করবো।

-গুন্ডা ছেলে আমিও আপনাকে খুব মিস করবো!

-আবার আসবেন।

ওরা চলে গেল আজাদ,মিরা,প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে, আরাফ হাত নেড়ে বিদায় দিল।

প্রিয়া,আজাদও হাত নাড়ল কিছুক্ষনের মধ্যেই আরাফ,আকরাম, মনোয়ারাকে নিয়ে অট্রো রিক্সাটা বাস স্টেশনের উদ্দেশ্য রওনা হলো।

 

-এভাবে দিন চলতে লাগল প্রিয়া পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নতুন ক্লাস, নতুন বই, নতুন বন্ধু সব মিলিয়ে প্রিয়ার নতুন জীবন শুরু হলো। আষ্টম শ্রেণিতে ভালো রেজাল্ট করলো, সেই হিসাবে স্যার, ছাত্র/ছাত্রী সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠল।

আজাদের প্রমোশন হলো, মিরার হাত খরচ বেড়ে গেল, কারণে অকারণে প্রিয়ার হাজারটা বায়না মেটাতে হয় তাঁর। ফ্রি সময়ে প্রিয়ার নতুন ক্লাসের গল্প শোনে দাদুমনি, মিরা আজাদের অফিসের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

 

শীলার ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল আরাফ নিজে সব দায়ীত্ব নিয়ে বিয়ের অনুষ্টান শেষ করলো। বর্তমানে শীলা লন্ডন প্রবাসী স্বামীর সাথে চলে গেছে সেই কবেই। দরকার ছাড়া তেমন ফোন দেয় না। আরাফও কলেজ, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, পিচ্চি প্রিয়ার সাথেও কথা হয় না। এর মাঝে বাসা থেকে বিয়ের জন্য জোর করে আরাফ কিছুদিন সময় নেয়, ব্যবসাটা আরেকটু নিজের মতো দাঁড় করাই তারপর না হয় বিয়েটা করবো।

 

কিছুদিন আগে আজাদর আঙ্কেল ফোন দিয়েছিলো, তখন প্রিয়ার সাথে অল্প কথা হলো। প্রিয়া অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে শহরের নামকরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এখন সে নবম শ্রেণিতে পড়ে অনেক গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে মেয়েটা! কিন্তু আরাফ চায় প্রিয়া নিজ থেকেই ভালোবাসার কথা বলুক কেটে গেল প্রায় ১ বছর এর মধ্যে আরাফ প্রিয়ার আর দেখা হয়নি।

 

আরাফের ব্যবসায় দিন দিন সফলতা ফিরে আসে, কলেজে পরীক্ষা সব দায়ীত্ব আরাফের হাতে।

সমস্ত দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে ধাবমান। আরাফ বিকালে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে শীলা, তানিয়া সবাই বিয়ে করে সুখের সংসার করছে। কেবল আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি নাহ্! আর দেরি করা যাবে না।

 

প্রিয়ার শহরে যাব প্রিয়াকে বুঝাব যেই কথা সেই কাজ পরদিন ময়মনসিংহের  উদ্দেশ্যে রওনা হলো আরাফ। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্টেশনে পৌঁছল আরাফ, সামনে একজন ভিক্ষুক অল্প বয়সী মেয়ে কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে হাত বাড়াল। স্যার! দুদিন ধরে কিচ্ছু খাই নাই, ১০ টা টাকা দিবেন.?

আরাফের হৃদয়ে হাহাকার করে উঠল! দুদিন! আহারে। দাঁড়াও বলেই প্যান্টে হাত দিল ১০০ টাকা বের করে, বাচ্চাটার হাতে ধরিয়ে দিল।

কিশোরী মেয়েটার চোখে হাসি ফোটল সেলাম স্যার বলেই জায়গা ত্যাগ করলো হয়ত কিছু কিনে খাবে পেটের ক্ষুধা মেটাতে।

 

কত মানুষের কত রকম অভাব, কারো ভালোবাসার, কারো সুখের, কারো টাকার, কারো খাবারের, কারো কাপড়রের ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে স্টেশনে ট্রেন হুইসেল দিল।

আরাফ ট্রেনে চড়ে বসল, সিট পেল তাই একাই বসল ট্রেনে তেমন ভিড় নেই আরাম করে বসল। আজাদ অফিসের বস তাই সকালে তাড়াতাড়ি অফিস চলে যায়। প্রিয়াও স্কুলে গেছে অনেকক্ষন হলো মিরার অবসর নেই তবু ফ্রি সময় হাতের কাজ করে প্রিয়ার জন্য নতুন ডিজাইনের জামা তৈরি করছে।

 

দাদুমনি এই সময় একটু বিশ্রাম করেন, মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়েন, নানা রকম স্মৃতিচারনে মন আন্দলিত হয়,অনেক সময় কষ্ট পায় সে গুলো প্রিয়ার সাথে শেয়ার করে।

 

আরাফ ট্রেন ধরে সোজা ময়মনসিংহে পৌঁচ্ছল। রিক্সা ধরে প্রিয়াদের বাসার সামনে দাঁড়াল, মিরা আন্টিকে একবার ফোন দিয়ে আসলে ভালো হত। অনেকদিন আসলো বাসায় ঢুকতে লজ্জা লাগছিলো, তবু সব ভুলে কলিংবেল চাপ দিল। আরাফ অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,কোন সাড়া শব্দ নেই। তার অনেক পরে মিরা এসে দরজা খোলে দিল, এত বছর পর আরাফকে দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত! খুব খুশি হলেন! মা দেখে যান কে এসেছে।

 

আরাফকে দেখেই দাদুমনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন কতদিন পরে আসলে দাদাভাই!

-বাসায় বাবা,মা কেমন আছেন.?

-ভালো আম্মু সব সময় আপনার কথা বলেন। -ওনাদের আরেকবার আসতে বলো মাকে দেখে যাবে বললেন মিরা।

যাও ফ্রেশ হয়ে আস, এত  সকালে মনে হয় খেয়ে আস নাই.? আমি তোমার জন্য খাবার দিচ্ছি টেবিলে আস বলেই মিরা কিচেনে ঢুকল।

বাসায় যা রান্না ছিলো মিরা আরাফকে তাই খেতে দিলেন।

খাবার শেষে আরাফ দাদুমনির সাথে বসে তার জীবনের গল্প করছিলো। হঠাৎ আরাফ প্রশ্ন করলো, দাদুমনি! প্রিয়া স্কুল থেকে কখন আসবে?

...চলবে।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ