আমি হুমায়ন আহমেদ এর " আমার ছেলেবেলা " বইটা পড়ে ভাবছিলাম আমি তো উনার মত বড় কেউ না।আবার আমি ছেলেও না, আমি লিখতে পারি আমার "মেয়েবেলা "। আবার এখানেও একটা কিন্তু আছে আর সেটা হলো এই নামের তসলিমা নাসরিনের একটা বই আছে। অনেক ভেবে ভেবে বের করলাম ছেলেবেলা আর মেয়েবেলা বাদ দিয়ে আমি লিখতে পারি আমার " হোস্টেল বেলা"। এটা অনেকটা ইউনিক আবার মজার ও হওয়ার কথা। কারন আমার আগে এমনটা কেউ লিখেছে বলে আমার অন্তত তা জানা নেই। বেশকিছু দিন হলো কলেজ হোস্টেলে আছি। সেখানের ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা গুলো গুছিয়ে লিখলেই অনেক বড় একটা লেখা হয়ে যাবার কথা। কিন্তু লিখতে বসে বুঝতে পারছি এই কাজ টা কতটা রসকষ হীন। তাই ভাবছি এটাও লিখবো না। আমি লিখবো আমার হোস্টেল লাইফের খাওয়া দাওয়া নিয়ে।

পৃথিবীর সব সন্তানের কাছেই তার মায়ের হাতের খাবার অমৃত। আমার কাছে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। আর এই কথাটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা শুরু করেছি যখন থেকে মায়ের খাবারের সাথে হোস্টেলের খালাদের রান্না করা খাবারের তুলনা করার সুযোগ হয়েছে।

বাড়ির খাবার নিয়মিত জোটেনা "২০১১" যখন এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তখন থেকে।

হোস্টেলে উঠলাম। প্রথম প্রথম ভাবতাম বুঝি আমার হোস্টেলের খাবারই "অতীব অ-সুস্বাদু"। কিন্তু পরে দু এক জন ফ্রেন্ডের কাছে জেনেছি আমার ডাইরিয়া তো ওদের কলেরা।

আমি মোটামুটি একটা মফস্বল এলাকার "ইউনিভার্সিটি" সম মান দেওয়া কলেজের কলেজ হোস্টেল থাকি। এই হোস্টেলে সিট পাওয়া টাও মোটামুটি ভাগ্যের বেপার। আমি কিভাবে সিট পেয়েছি সেটা এক বিরাট কাহিনী। সেই গল্প আজ নয় অন্য কোন একসময়। এখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাদে অধিকাংশ রাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। তার ফলে দেখা যায় প্রায় অনেকেরই কয়েক মাসের সিট রেন্ট বাঁকি পরে আছে। সে যাক আসল কথা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি মূল কথায় যাই। আবার বলা যেতে পারে এই আবোলতাবোল কথা গুলো হলো রসায়ন এর পর্যায়সারণি বা বীজগণিতের সূত্র। যা জানা থাকলে পরের ঘটনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে।

এখানে প্রত্যেক বেলা একটা গ্লাস আর একটা প্লেট আর বাটি নিয়ে কয়েদিদের মত খেতে যেতে হয়। অন্য কেউ না করলেও এখন আমি ইচ্ছা করেই প্লেট গ্লাসের শব্দ করতে করতে নামি,কারন আমরা এক অর্থে কয়েদিই।

আমার প্রথম দিনের হোস্টেলের খাবার:
প্রথম দিন একা একা অপরিচিত সবার মাঝে খাইতে যাওয়ার মত বিড়ম্বনা আর দ্বিতীয় টা নাই। আমি একটু দেড়ি করে গেলাম। বাটিতে করে তরকারি নিয়ে টেবিলে বসেছি। সেই দিন তরকারী দেখে প্রথম যে কথাটা আমার মনে এসেছে সেটা হলো " আমি একটা ডাইরিয়ার রোগী, যা খাই তাই বমি করে বেড় করে দেই। আর এই কাজ করতে যাতে আমার কোন কষ্ট না হয় তার জন্য এমন হলুদ মিশানো পানি আমাকে দেওয়া হয়েছে। খাওয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এবার মাংস মনে করে ভাতের সাথে কি যেন একটা মুখে পুরে দিলাম,দেখি কই মাংস আর কই কি? এতো সদ্য আদা। এবার ভাবলাম বুঝি মাংস নয় মাছের তরকারী। তা বেশ, আমি সেই মাছের পিচ আলুর ভেতর থেকে চিরুনি অভিযান চালিয়ে অনেক কষ্টে খুজে পালাম। কিন্তু ভাগ্য বিমুখ। মাছের পোড়া একটা পিচ আমার বাটিতে পরেছে। এটা ছিলো দুপুরের খাবার।

এবার রাতের খাবারের পালা। রাতে গেছি আবার সেই কয়েদি স্টাইলে। ভাত প্লেটে নেওয়ার সময় কে যেন পাশ থেকে বললো "ডাল আছে"। মনের মধ্যে খুশিতে হাজার পাওয়ারে বাল্ব জলে উঠলো। এই ভেবে যে যাক তরকারী যা থাক সাথে ডালতো আছে। রাতে অন্তত ঠিক মত খেতে পারবো। ভাত আর তরকারি প্লেটে নিয়ে ডাল খুজছি। এক বড় আপু বললো ঐ যে সসপিন দেখছো ঐটাতে ডাল আছে। আমার মন খারাপ হয়ে গেলো, কারন আমি একটু আগেই ওটা দেখে এসেছি। হালকা হলুদ পানি দেখে ভেবেছি কেউ বুঝি ভাত খেয়ে হাত ধুয়ে গেছে।

এবার সকালের খাবার। মনোকষ্ট নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেছি অনেক পরে। তাই পরদিন ঘুম থেকে উঠতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। তারা তারি নিচে নামলাম, কারন একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সকালের বেচে যাওয়া খাবার গুলো ভাত গালানো মারের সাথে দিয়ে দেওয়া হয়। কোথা থেকে যেন এক লোক এয়া বড় বড় বালতি নিয়ে এসে সেই খাবার তার গরুর জন্য নিয়ে যায়। সে যাক খাবার পেলাম। আমি খালাকে প্রশ্ন করলাম খালা এই শুকনা খিচুড়ি খাবো কি দিয়ে? কোন উত্তর পাইনি। খেতে বসেছি। খেতে যেন খারাপ না লাগে তাই একটা গল্পের বই নিয়ে বসেছি। প্রথম বার খেয়ে কিছু বুঝি নি। পরের বার আবার মুখে খাবার দিয়েছি দেখি কি যেন কচকচ শব্দ করছে। আমি ভাবলাম হয়ত বুট হবে কিন্তু নিজের কৌতূহল মেটাতে গিয়ে দেখি কি যেন একটা পোকা, কালো রং এর।

খাওয়া শেষে খালা বলেছিলো " হোস্টেলে কেনো উঠেছো বাবা??"

প্রথমে উনাকে পাগল মনে হলেও আমি সেই প্রশ্নের মানে বুঝেছিলাম অনেক পরে।

বি: দ্র: ‪
#‎জ্ঞানী‬ জন বলে গেছেন "ভোগে নয় ত্যাগেই শান্তি ", "কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে"।
# আম্মা তোমার "বাহিরে যা বুঝবি" কথাটার মানে আমি এখন খুব বুঝি।
‪#‎এখন‬ এই খাবার গুলোই অসাধারণ ( মিথ্যা কথা) লাগে।
# পোকা পাওয়ার বেপার টাতে খালার কোন দোষ নাই। আমার উচিৎ ছিলো সাবধান হওয়া।
# শুনেছি গরু নাকি এই খাবার গুলো খেতে চায় না বলে ঐ লোক বেচে যাওয়া খাবার গুলো নিবে না বলে দিয়েছে।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ