শাদা রং এবং আমাদের মস্তিষ্ক

নীরা সাদীয়া ১৬ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ১২:৪৪:২৪পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ৯ মন্তব্য

একদিন কলেজের কমন রুমের আয়নায় দাঁড়িয়ে আমি পোশাক ঠিক করছিলাম। তখন একটা ফর্সামত মেয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার পাশে দাঁড়ালো এবং তার মুখ বেশি ফর্সা নাকি আমার, তা মাপতে শুরু  করলো। আমি ফর্সা নই, উজ্জ্বল শ্যামলা বলা চলে। আর এসব রং, রূপ নিয়ে কোন কালেই আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। পাশ থেকে আরেকটি মেয়ে তাকে বললো, তোমাকে বেশি ফর্সা লাগছে। মেয়েটি তখন আহ্লাদিত হয়ে বললোঃ

:"আমি সাদীয়া আপুর চেয়ে বেশি ফর্সা।"

আমি তেমন কিছু বললাম না। তারপর সে আমার হাত ধরে নিজের হাতের সাথে মিলিয়ে দেখতে লাগলো কার হাত কতখানি ফর্সা। তাতেও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু তারপর সে যা করলো, তা রীতিমতো চরম অপমান। সে আমাকে শাদা হবার পরামর্শ দিতে লাগলো। শাদা না হলে আমার মত মেয়ের জীবনটাই নাকি বৃথা, এহেন উক্তি শোনাতে লাগলো। এটাও বললোঃ

:খালি দেখি চুলগুলাই সুন্দর, আর কি আছে?  আর তো কোনই সৌন্দর্য নাই!

আমি হতবাক! মেয়েটা মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, আর আমি মাস্টার্স পরীক্ষার্থী তখন। তারপর আমি তাকে ডেকে বললামঃ

: তুমি কি সত্যিই মাস্টার্সে পড়ো?

:হ্যাঁ, কেন?

:তা এ পর্যন্ত আসতে তোমার গায়ের রং কতবার প্রয়োজন হয়েছে?

মেয়েটি চুপ।

:শোন, আমরা মেয়েরা নিজেরাই বুঝি না, আমরা আসলে কতটা মূল্যবাণ। আমরা নিজেদের মূল্যায়ণের মাপকাঠি হিসেবে নিজেদের গায়ের রং, আকৃতি এসবকে প্রাধান্য দেই। কিন্তু আসলেই কি এসবের গুরুত্ব আছে?  এই যে তুমি একটা শিক্ষিত মেয়ে। এতটুকু শিক্ষা অর্জন করতে তোমাকে কত না অধ্যবসায়, কত না পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেসব কি একেবারেই মাটি হয়ে যাবে যদি তোমার রং শাদা না হয়?

শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে। কিন্তু এত শিক্ষা অর্জন করেও তোমরা যদি মুখের রং নিয়ে  ঘষতে মাজতে থাকো, তাহলে কি করে হবে? যখন বুঝতে পারবে তুমি একটা মানুষ, তুমি একটা মেয়ে, তুমি এই স্বাধীন দেশে একজন শিক্ষিত নাগরিক এবং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, এই প্রত্যেকটা পরিচয় মিলিয়ে তোমার একটা আলাদা সম্মান আছে, তখন তুমি আরেকজনকেও সম্মান দিতে শিখবে। আর যদি মনে করো, সকল সম্মান শুধু তোমার ঐ ঘষামাজা করা চামড়ায়, তাহলে তোমাকে আর কিছুই বলার নেই।

তারপর আর কোনদিন মেয়েটির সাথে আমার দেখা হয়নি।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ