একদিন কলেজের কমন রুমের আয়নায় দাঁড়িয়ে আমি পোশাক ঠিক করছিলাম। তখন একটা ফর্সামত মেয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার পাশে দাঁড়ালো এবং তার মুখ বেশি ফর্সা নাকি আমার, তা মাপতে শুরু করলো। আমি ফর্সা নই, উজ্জ্বল শ্যামলা বলা চলে। আর এসব রং, রূপ নিয়ে কোন কালেই আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। পাশ থেকে আরেকটি মেয়ে তাকে বললো, তোমাকে বেশি ফর্সা লাগছে। মেয়েটি তখন আহ্লাদিত হয়ে বললোঃ
:"আমি সাদীয়া আপুর চেয়ে বেশি ফর্সা।"
আমি তেমন কিছু বললাম না। তারপর সে আমার হাত ধরে নিজের হাতের সাথে মিলিয়ে দেখতে লাগলো কার হাত কতখানি ফর্সা। তাতেও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু তারপর সে যা করলো, তা রীতিমতো চরম অপমান। সে আমাকে শাদা হবার পরামর্শ দিতে লাগলো। শাদা না হলে আমার মত মেয়ের জীবনটাই নাকি বৃথা, এহেন উক্তি শোনাতে লাগলো। এটাও বললোঃ
:খালি দেখি চুলগুলাই সুন্দর, আর কি আছে? আর তো কোনই সৌন্দর্য নাই!
আমি হতবাক! মেয়েটা মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, আর আমি মাস্টার্স পরীক্ষার্থী তখন। তারপর আমি তাকে ডেকে বললামঃ
: তুমি কি সত্যিই মাস্টার্সে পড়ো?
:হ্যাঁ, কেন?
:তা এ পর্যন্ত আসতে তোমার গায়ের রং কতবার প্রয়োজন হয়েছে?
মেয়েটি চুপ।
:শোন, আমরা মেয়েরা নিজেরাই বুঝি না, আমরা আসলে কতটা মূল্যবাণ। আমরা নিজেদের মূল্যায়ণের মাপকাঠি হিসেবে নিজেদের গায়ের রং, আকৃতি এসবকে প্রাধান্য দেই। কিন্তু আসলেই কি এসবের গুরুত্ব আছে? এই যে তুমি একটা শিক্ষিত মেয়ে। এতটুকু শিক্ষা অর্জন করতে তোমাকে কত না অধ্যবসায়, কত না পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেসব কি একেবারেই মাটি হয়ে যাবে যদি তোমার রং শাদা না হয়?
শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে। কিন্তু এত শিক্ষা অর্জন করেও তোমরা যদি মুখের রং নিয়ে ঘষতে মাজতে থাকো, তাহলে কি করে হবে? যখন বুঝতে পারবে তুমি একটা মানুষ, তুমি একটা মেয়ে, তুমি এই স্বাধীন দেশে একজন শিক্ষিত নাগরিক এবং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, এই প্রত্যেকটা পরিচয় মিলিয়ে তোমার একটা আলাদা সম্মান আছে, তখন তুমি আরেকজনকেও সম্মান দিতে শিখবে। আর যদি মনে করো, সকল সম্মান শুধু তোমার ঐ ঘষামাজা করা চামড়ায়, তাহলে তোমাকে আর কিছুই বলার নেই।
তারপর আর কোনদিন মেয়েটির সাথে আমার দেখা হয়নি।
Thumbnails managed by ThumbPress
৯টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন হয় সময়ের সাথে সাথে। একটা সময়ে এসে মানুষ উপলব্ধি করে গায়ের রঙ, ধনী গরীব অথবা ডিগ্রীধারী শিক্ষিতদের ভীড়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠাটাই আসল।
শুভ কামনা 🌹🌹
বন্যা লিপি
প্রথমেই হাততালি👏👏👏👏👏এমন বিষয় নিয়ে লেখার জন্য। আমি বলব এই রং বৈষম্য নিয়ে আপনি/ আমি/ আমরা ক্রমাগত বিতর্কের মুখোমুখি হতেই থাকি। আমিও লিখেছিলাম ফেসবুক পেজে দু বছর আগে এই সাদা কালো নিয়ে। আপনার এ লেখা পড়ে আবারো লেখার ইচ্ছটা জাগলো।
সমাজে এখনো এই সাদা কালোর ভেদাভেদ মস্তিষ্কে চড়ে বসে আছে ন্যাক্কারজনক ভাবে।
আমরা আলোকিত হইনা আমাদের বোধের আলোতে।
শুভস্য🌺🌺🌺
সুরাইয়া পারভীন
হায় ফর্সা ধবধবে তুলোর মতো পুতুলেরা। আর কতো বড়াই করবে এই রূপ নিয়ে। আপনার লেখা পড়ে নিজের অতীত মনে পড়লো। আমিও এর ভুক্তভুগি….
যথার্থ বলেছেন
হালিমা আক্তার
আল্লাহ প্রদত্ত রুপ নিয়ে বড়াই করার কিছুই নাই। এটা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে না। তবু এরা রূপের বড়াই করতে ভালোবাসো। শুভ কামনা অবিরাম।
আরজু মুক্তা
মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কোন কিছুই হবেনা।
নিতাই বাবু
কালো যেখানে গলার মালা, সেখানে সাদার মূল্য সত্যিই দুর্মূল্য হবে না। কাজেই রূপ নিয়ে অহংকার বেশি ভালো নয়। রূপ চিরদিন একরকম থাকে না। একসময় শরীরের চামড়ায় বলে দেয়, রূপের কি দাম আছে।
শুভকামনা থাকলো।
নাজমুস সাকিব রহমান
আমাদের মধ্যে অশিক্ষা আছে এখনো। এগুলো তার প্রমাণ।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
মনির হোসেন মমি
যেমনটার সাথে তেমনটাই করতে হয়।যারা রূপ নিয়ে অতি চিন্তায় চিন্তিত থাকে তারা জ্ঞানার্জন বরং বরর্জনে বেশী চিন্তিত। চমৎকার লেখা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তার যোগ্য উত্তর দিতে পারার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। গায়ের রং টা কোনো কাজেই লাগে না। আজকাল তো কালোরাই জগৎ আলো করে আছে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম