লোকমান হেকিমের কেরামতির গল্প-৫ শেষ পর্ব

নিতাই বাবু ১৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ১১:১৩:৩৯পূর্বাহ্ন গল্প ৩৮ মন্তব্য

গল্পের চতুর্থ পর্ব এখানে➘

লোকমান হেকিমের কেরামতির গল্প-৪

গল্পের চতুর্থ পর্বের শেষাংশ➷
মুহূর্তেই কোঁয়া কোঁয়া এক সাপের রূপধারণ করে ফেললো। জাহাজের নিচতলা থেকে লোকমান হেকিম দেখছে, জাহাজের জানালা বেয়ে এক বিশাল সাপ কুলসুম দরিয়ায় নামছে।

কোঁয়া কোঁয়া সাপের রূপধারণ করে কুলসুম দরিয়ায় যখন নামছে, তখনই লোকমান হেকিম তাঁর সাথে নেওয়া ঔষধের শিশিগুলো রেডি করে ফেললো। যাতে তাড়াতাড়ি তাঁর করণীয় কাজ সেরে নেওয়া যায়। লোকমান হেকিমের বাম হাত রাখল জানালার বাইরে। যাতে সাপের লেজটা খুব সহজে ধরতে পারে। লোকমান হেকিম ভয়কে উপেক্ষা করে সময়মতো সাপের লেজটা ধরে ফেললো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সাপের লেজ নাড়াচাড়া করতে শুরু করলো। এমন সময় লোকমান হেকিম সাথে নেওয়া এক শিশি ঔষধ সাপের লেজের মাঝা-মাঝি পানিতে ঢেলে দিলো। সাথে সাথে অনেকখানি জায়গা নিয়ে সাপের লেজের চারিদিকের পানি পাথরের মতো হয়ে গেল। পরপর আরও কয়েকটা শিশি ঢেলে দিলো। মুহূর্তেই বিশাল জায়গা জুড়ে পাথর হয়ে গেল। সেই সাথে রাক্ষসী কোঁয়া কোঁয়াও সেই পাথরের নিচেই আটকা পড়ে গেল। এরপর লোকমান হেকিম আর সময়ের অপচয় করলেন না।

তিনি বাদশার মুলুক থেকে জাহাজে উঠার সময় সাথে একটা ব্যাগ নিয়েছিল। সেই ব্যাগের ভেতরে কী ছিল তা আর কেউ জানতো না। সেসময় বাদশা তো কোঁয়া কোঁয়ার সাথে জাহাজের উপরেই বসা ছিল। আর অপেক্ষায় ছিল লোকমান হেকিমের। লোকমান হেকিম সাথে কী এনেছিল, সেইদিকে বাদশা আর নজর রাখেনি। সেই ব্যাগে করে লোকমান হেকিম নিয়েছিল পিতলের দু’টি হাত। সেই হাত দুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি পাথর হয়ে যাওয়া জায়গায় নামলেন। এরপর লোকমান হেকিমের নিজস্ব কারিগরিতে সেখানে সুন্দরভাবে হাত দু’টি স্থাপন করলেন। এরকম পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই লোকমান হেকিম তাঁর বন্ধু বাদশাকে সাগর ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই তিনি সাথে করে নিজেও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েছিলেন।

সেখানে লোকমান হেকিমের পিতলের হাত দু’টি স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো, এই কোঁয়া কোঁয়া রাক্ষসী কোনো এক সময় মোড়ামুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙে উপরে উঠে যেতে পারে। যদি পাথর ভেঙে উপরে উঠে যায়, তাহলে কোঁয়া কোঁয়া দুনিয়ার সবকিছু তচনচ করে ফেলবে। পুরোপুরিভাবে উঠতে না পারলেও, তাঁর লেজটা পাথরে আটকা থাকা অবস্থায়ও সাগরে চলাচলকারী নৌযান-সহ জাহাজের নাবিকদের আক্রমণ করতে পারে। তাই লোকমান হেকিম এই নির্দিষ্ট জায়গায় পিতলের হাত দুটি স্থাপন করে দেয়। যাতে এই ভয়ংকর জায়গার আশে-পাশে কোনও জাহাজ না আসে। তিনি এমনভাবে হাত দু’টি স্থাপন করেছিলেন, যেন দুটি হাতই না না করে সংকেত দিচ্ছে। স্থাপন করা হাত দুটি যেন সবার উদ্দেশ্যে বলছে, ‘তোমরা কেউ এদিকে আর এসো না, এদিকে আর এসো না।’

লোকমান হেকিমের এরকমই দুঃসাহসিক কাজ মাঝি-মাল্লারা সবাই চেয়ে চেয়ে দেখলো। কিন্তু লোকমান হেকিমের প্রাণপ্রিয় বন্ধু বাদশার কোনও খবর কেউ রাখল না। বাদশা তখনো অজ্ঞান হয়ে জাহাজের দোতলায় বিছানায় পড়ে আছে। লোকমান হেকিম করণীয় কাজ সম্পন্ন করে জাহাজের উপরে তাকিয়ে দেখল, তাঁর বন্ধু বাদশা নেই। মাঝিদের জিজ্ঞেস করলো, ‘আমার বন্ধু বাদশা কোথায়?’ একজন মাঝি দৌড়ে জাহাজের দোতলায় গিয়ে দেখে বাদশা অজ্ঞান হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। উপর থেকেই মাঝি লোকমান হেকিমকে বললো, ‘হুজুর আপনার বন্ধু বাদশাজি অজ্ঞান হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। আপনি তাড়াতাড়ি করে উপরে আসেন।’ লোকমান হেকিম তাড়াতাড়ি জাহাজের উপরে গেলেন। দেখলেন বাদশা ঠিকই অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। বাদশাকে ঔষধ সেবন করালেন পরপর অনেকবার। কিন্তু বাদশার জ্ঞান ফিরছে না।

এখন বাদশাকে নিয়ে লোকমান হেকিম পড়ে গেলেন দুশ্চিন্তায়! যেই ঔষধ পানিতে ঢেলে দেওয়ার পর পানি পাথর হয়ে যায়, সেই ঔষধের মত ঔষধও বাদশাকে সেবন করানো হয়েছে। তাতেও বাদশা জ্ঞান ফিরছে না। তাই লোকমান হেকিম এখন ভিন্ন রকমের ঔষধ সেবন করাতে চাচ্ছে। কিন্তু তাঁর কাছে আর জ্ঞান ফিরানোর অন্য কোনও ঔষধ ছিল না।আর মাঝ দরিয়ায় তো আর ঔষধি গাছ নে-ই। ঔষধি গাছ সংগ্রহ করতে হলে লোকমান হেকিমকে যেতে হবে বনে জঙ্গলে। তাই তিনি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের হুকুম দিলেন, তাড়াতাড়ি দরিয়ার পাড়ে জাহাজ ভেড়াতে। লোকমান হেকিমের কথামতো মাঝিরা জাহাজ পাড়ে ভেড়াতে করছে প্রাণপণ চেষ্টা, আর লোকমান হেকিম প্রিয় বন্ধু বাদশার পাশে বসে করছে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ।

লোকমান হেকিমের ফরিয়াদ হলো, “হে আল্লাহ! তুমি দয়ার সাগর। তুমি জীবের হায়াতের মালিক। তুমি দয়াল আমার কোল থেকে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে কেড়ে নিও না। তুমি আমাকে যে কবিরাজি ক্ষমতা দিয়েছ, সেই ক্ষমতার কলঙ্ক করো না। যদি আমার কোলে আমার বন্ধুর মৃত্যু হয়, তাহলে আমি যে হেকিমের বাদশা লোকমান হেকিম, এই নামের আর ইজ্জত থাকবে না, দয়াল। তুমি রহম করো, ইজ্জত রক্ষা করো।”

কিন্তু না, সেদিন লোকমান হেকিমের কোনও ফরিয়াদ মহান সৃষ্টিকর্তা শুনেনি। কারণ, সেদিনই ছিল বাদশার শেষ দিন শেষ সময়। হায়াতের খাতায় বাদশার জন্য আর বিন্দুমাত্র সময় অবশিষ্ট ছিল না। মানে বাদশার হায়াত বা আয়ু শেষ। জীবের আয়ু শেষ তো জীবের মৃত্যু! তা সে হোক বাদশা। হোক সম্রাট। হোক সে রাস্তার ফকির। আয়ু শেষ তো জীবন শেষ! তাই লোকমান হেকিমের কোলেই বাদশা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু লোকমান হেকিম তা আর মেনে নিতে পারছিলেন না। মহান সৃষ্টিকর্তার উপর রাগে গোস্বায় একাকার। লোকমান হেকিম বলতে লাগলো, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার বন্ধুকে আমার কোলেই মৃত্যু দিলে? তাহলে তুমিও শুনে রাখ, হে আল্লাহ! আমি লোকমান হেকিম এমন ঔষধ বানাবো, সেই ঔষধ কেউ সেবন করলে তাঁর আর মৃত্য হবে না। এমনকি সেই ঔষধ মৃত: মানুষের মুখে দিলে মৃতব্যক্তিও জিন্দা হয়ে যাবে। এর জন্য শুধু আমাকে একটু সময় তুমি দাও! যাতে আমি আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি।’

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক তাঁর আরশে বসে হেসে বলে, ‘না, লোকমান হেকিম। তা তুমি কখনোই পারবে না। সেই সুযোগও আমি তোমাকে দিবো না। এর আগেই সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী তোমারও মৃত্যু হবে। কারণ, সেই পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তোমার হায়াত শেষ হয়ে যাচ্ছে। যা আমি আল্লাহ তোমার আয়ুর হিসাবের খাতায় দেখতে পাচ্ছি। তোমার সময় শেষ হতে আর মাত্র এক ঘণ্টা বাকি! এরমধ্যেই তুমি যা খুশি করতে পারবে।’

এই সময়ের মধ্যেই মাঝি-মাল্লাদের আপ্রাণ চেষ্টায় জাহাজ দরিয়ার পাড়ে ভিড়ল। লোকমান হেকিম তাঁর প্রাণের বন্ধুকে জাহাজ থেকে নামালেন। সাগর পাড়ে জঙ্গলের ভেতরে বাদশাকে কবর দিলেন। এরপর জাহাজের মাঝিদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের মুল্লুকে ফিরে যাও! এখানে আমার কিছু করণীয় কাজ আছে। আমি আমার কাজ সমাধা করেই আস্তে-ধীরে মুল্লুকে ফিরবো, যদি হায়াত থাকে।’ জাহাজের মাঝি-মাল্লা লোকমান হেকিমের কথামতো চলে গেলেন। লোকমান হেকিম দৌড় দিলেন জঙ্গলের দিকে। তাঁর চিকিৎসা শাস্ত্র মতে অমরত্ব ঔষধ তৈরি করতে ১০৮ প্রকারের গাছ-গাছালির প্রয়োজন। লোকমান হেকিম জঙ্গলে ঢুকে সেসব গাছ সংগ্রহের কাজে লেগে গেলেন। এক এক করে ঔষধি গাছ সংগ্রহ করতে করতে প্রায় ৫০ প্রকারের গাছ সংগ্রহ করে ফেলে। আর বাকি থাকে ৫৮টি গাছ। এদিকে লোকমান হেকিমের আয়ুর অবশিষ্ট সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তা তো আর লোকমান হেকিম জানতেন না। তা জানতেন যমদূত নামে খ্যাত আজরাইল(আঃ)। একদিকে লোকমান হেকিম জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ঔষধি গাছ খুঁজছে।আরেকদিকে আজরাইল(আঃ) লোকমান হেকিমকে খুঁজছে। কারণ আজরাইল(আঃ)-এর কাছে থাকা মৃত্যু তালিকায় লোকমান হেকিমের নাম লেখা রয়েছে।

এমন সময় লোকমান হেকিমও তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান দ্বারা টের পেয়ে গেলেন, যে আজকেই তাঁর শেষ সময়। তিনি লোকমান হেকিম বুঝতে পেরেছেন পিছনে পিছনে কে যেন তাড়া করছে। তখন তিনি শুধু তিনিতে নেই। তিনি হয়ে গেলেন ৫০জন লোকমান হেকিম। ৫০ জন লোকমান হেকিম একসাথে জঙ্গলের ভেতরে কী যেন খুঁজছে। আজরাইল(আঃ) তা দেখে অবাক হয়ে গেলেন! তখন আজরাইল(আঃ) মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করে বললো, ‘হে আল্লাহ! আমার হাতে যেই মৃত্যু তালিকা আছে, সেই তালিকায় লোকমান হেকিমের নাম দেখতে পাচ্ছি। লোকমান হেকিম যে এই জঙ্গলে আছে তাও আমি জানি। কিন্তু হে, বারে এলাহি! আমি এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। আমি এখন ৫০ জন লোকমান হেকিমকে এখনে দেখতে পাচ্ছি। এখন আসল লোকমান হেকিম কে, তা আমি বুঝতে পারছি না। হে বারে এলাহি! আপনি আমাকে সাহায্য করুন!’

আজরাইল(আঃ) এর ফরিয়াদে মহান সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে গায়েবি আওয়াজ এলো, ‘তুমি এক এক করে সব-কয়টা লোকমান হেকিমের বুকে হাত দিয়ে দেখ কার বুকখানি থরথর করে কাঁপছে। যার বুক কাঁপছে, সে-ই হবে আসল লোকমান হেকিম। তুমি তাঁর জানই কবজ করবে। আর কাউকে তোমার খোঁজার প্রয়োজন নেই।’ আজরাইল (আঃ) এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে গায়েবি বার্তা আদান-প্রদানের সময়টুকুতে হয়ে গেল ১০০ লোকমান হেকিম। এখন আজরাইল(আঃ) যেদিকে তাকায় শুধু লোকমান হেকিমকেই দেখতে পায়। তারপরও আজরাইল(আঃ)-এর চলছে একেক জনের বুকে হাত দিয়ে চেক করা। এদিকে লোকমান হেকিমের মৃত্যুর সময় আছে আর মাত্র মিনিট পাঁচেক বাকি। আজরাইল(আঃ)ও খুব দ্রুত চেক করে যাচ্ছে।

শেষতক একজনের বুকে হাত দিতেই তাঁর বুকটা থরথর করে কেঁপে উঠলো। আজরাইল(আঃ)ও সাথে সাথে তাকে খপ করে ধরে ফেললো। যখন আজরাইল (আঃ)-এর হাতে ধরা পড়লো লোকমান হেকিম। তখন লোকমান হেকিম আজরাইল(আঃ)-এর কাছে একটু সময় চেয়ে বললো, ‘আজরাইল(আঃ), তুমি আমাকে আর ৯টি গাছ সংগ্রহ করার সুযোগ দাও! আমি ১০৮প্রকারের গাছের মধ্যে ৯৯প্রকার গাছ সংগ্রহ করে ফেলেছি। আর ৯টি গাছ আমি সংগ্রহ করতে পারলে এই দুনিয়ায় মানুষের জন্য অমরত্ব ঔষধ বানিয়ে যেতে পারবো। সেই ঔষধ সেবন করলে কেউ আর এই পৃথিবীতে মৃত্যুবরণ করবে না। কারোর মৃত্যুও হবে না। এমনকি কোনও মৃতব্যক্তিকে সেই ঔষধ সেবন করিয়ে দিলে সেই মৃতব্যক্তিও জিন্দা হয়ে যাবে। তাহলে তোমাকেও জীবের মৃত্যু তালিকা নিয়ে আর দুনিয়াতে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। তুমি আমাকে এই সময়টুকু দাও।’

লোকমান হেকিমের কথা শুনে আজরাইল(আঃ) হেসে বললো, ‘আমি আজরাইল(আঃ) মহান সৃষ্টিকর্তার গোলাম! তাঁর হুকুমের হেরফের আমি করতে পারি না। আমার হাতে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল জীবের মৃত্যু তালিকা থাকে। কার কখন মৃত্যু হবে, কার জান কবজ করতে হবে আমি তা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তোমার মৃত্যুর সময়ও হয়ে গেছে। মৃত্যু তালিকায় তোমার নাম উঠে গেছে। কাজেই আমি এখনই তোমার জান কবজ করবো।’ আজরাইল(আঃ)-এর কথা শুনে লোকমান হেকিম বলতে লাগলো, ‘আমি যদি জানতাম তুমি আমাকে ধরে ফেলবে। তাহলে আমি আগে থেকে গাছের ভেতরে লুকিয়ে থাকতাম।’ আজরাইল(আঃ) হেসে বললো, ‘তোমার সময় যখন শেষ হয়ে গেছে, তখন তুমি যদি সাগরের তলদেশে গিয়ে কোনো এক পাথরের ভেতরেও লুকিয়ে থাকতে, সেখান থেকেও আমি তোমাকে খুঁজে বের করে তোমার জান কবজ করতাম।’ এই বলেই আজরাইল(আঃ) লোকমান হেকিমের দেহ থেকে প্রাণ কেড়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেল। লোকমান হেকিমের দেহ পড়ে রইল জঙ্গলের ভেতরে। এভাবেই এখানেই ক্যাম্বাচারদের বলা লোকমান হেকিমের কেরামতির গল্প শেষ হয়ে গেল। কিন্তু বলা হয়নি লোকমান হেকিমের করব কোথায় এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছিল।

লেখকের নিজস্ব মতামত:
গল্পের শুরুতেই বলা হয়েছিল, এই গল্পের সাথে আমি কোথাও কোনও মিল খুঁজে পাইনি। সত্য আর মিথ্যা, তা বিবেচনায় নিবে আমার পাঠক ও সহ-লেখকবৃন্দ। তারপরও এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলে গল্পের পুরো কাহিনী বিফল হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছু শোনা কথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। শোনা কথা হলো, কোনো এক সাগরের মাঝে দু’টি হাত নিয়ে কথা। যা ছোটবেলা থেকেই আমরা সকলে শুনে আসছি। কিন্তু এর সত্যতা সবার কাছে আজও কেমন যেন অজানাই রয়ে গেল। বর্তমান বিশ্বের নামীদামি কোনও বিজ্ঞানীর কাছ থেকেও এর সত্যতা মেলেনি। কিন্তু কোনো এক সাগরের মাঝখানে যে দু’টি হাত ছিল এবং এক হাতে ডাকে আর এক হাতে না না করে; একথা আজও অনেক মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। এই কথা আর এই কাহিনী অনেকে বিশ্বাসও করে।

এখনো মাঝে মাঝে ৮০ থেকে ৯০ বছরের বুড়ো বুড়িরা বলে, ‘কোনো এক সময় নাকি ব্রিটিশ সরকার ঐ হাত দুটিতে গোলাবর্ষণ করে। কামানের গোলাবর্ষণে একটি হাত বিধ্বস্ত হয়ে নিচের দিকে হেলে পড়ে। এরপর থেকে নাকি হেলে পড়া হাতটি যেন ডাকে, আর ঠিক থাকা হাতটি না না করে।’ তাঁদের মতো আমরাও এমন কথাই ছোটবেলা থেকে শুনছি কোনো এক সাগরে মাঝে এক হাতে ডাকে, আর এক হাতে না করে। আসলে মনে হয় একসময় দুই হাতেই না না করেছিল। যাতে কেউ সেখানে না যায়। কিন্তু হাত দু’টো কে স্থাপন করেছিল তা কারোর মুখে শোনা যায় না। তবে নিজে থেকে একরকম ধারণা করা যায় যে, লোকমান হেকিমের স্থাপন করা হাত দু'টি বর্তমানে না থাকলেও, সেই জায়গাটা ঠিকই আছে বলে মনে হয়। সেই ভয়ংকর জায়গাটা হতে পারে বর্তমান গোল্ডেন ট্রাঙ্গল। যেখানে আজ পর্যন্ত কোনও জাহাজ যেতে পারেনি। আর যদিও ভুলবশত গিয়েেছ তো বিপদ হয়েছেই। এমনও হয়েছে কেউ আর ফিরে আসতে পারেনি।তাহলে এতে কী বোঝা যাচ্ছে? যা-ই বোঝা যাক বা না যাক, আর গল্পের কাহিনী যা-ই থাকুক না কেন, এখানেই থেকে যাচ্ছে সেসব শোনা কথার অজানা রহস্য।

এখানে☛লোকমান হেকিমের কেরামতির গল্প-১

0 Shares

৩৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ