রঙধনু আকাশ (৮ম পর্ব)

ইঞ্জা ১৬ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৪:০৩:৩০অপরাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

আংকেল আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন, আপনারা বসুন, ঠান্ডা মাথায় কথা বলুন, নীল ভাইয়ার সমস্যা সাময়িক, উনি দ্রুত ঠিক হয়ে যাবেন, রুদ্র নিজের মেজাজ ঠান্ডা করে কথা কটি বললো।

দেখো বাবা, আমাদের মেয়ের অনেক জীবন বাকি আছে, আমরা চাইনা আমার মেয়ে গুমরে গুমরে মরুক, অবিভাবক হিসাবে আমরা এ মেনে নিতে পারিনা।

কিসের অবিভাবক তোমরা, যেদিন তোমরা আমাকে নীলের সাথে বিয়ে দিয়েছো, সেদিন থেকে তোমরা আমার অভিভাবকত্ব হারিয়েছো, এখন আমার অবিভাবক আমার শ্বাশুড়ি, উনি আমাকে উনার মেয়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং দেখবাল করেন, বলেই থামলো রেনু।

ভাবী তুমি শান্ত হও, সুমি ভাবীকে ধরে রয়েছে। 

বেয়াই আপনারা আসছেন ভালো করেছেন, এইসব মাথা থেকে ফেলে দিন, নীল দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে, এ সাময়িক এক সমস্যা, রেনু তুমি নীলের কাছে যাও।

রুদ্র এদিক ওদিক তাকানোর সুযোগ পেয়ে দেখলো রিয়াও আছে এখানে কিন্তু সে চুপচাপ রয়েছে।

ও যখন কথায় শুনছেনা, চলো আমরা চলে যায়, ওর বুঝা ও বুঝুক, চলো, নীলের শ্বশুর উনার স্ত্রীকে বলেই  উঠে দাঁড়ালেন। 

বেয়াই সাহেব, খেয়ে যান, তাড়াহুড়ো করছেন কেন?

না আমরা খেতে আসিনি, রিয়া তোর কাপড়চোপড় সব নিয়ে আয়।

রিয়া থাকনা আর কদিন, রুদ্রর মা বললেন। 

না না চল, তাড়াতাড়ি আয় আমরা গাড়িতে বসছি, বলেই উনারা থমথম করে বেরিয়ে গেলেন। 

পরুদ্র, রুদ্রর মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।

রিয়াকে নিয়ে উনারা চলে গেলে, রুদ্র ড্রয়িংরুমে এসে আবার বসলো, কাজের ছেলেকে ডেকে পানি দিতে বলে মাকে বললো, কি থেকে কি হয়ে গেলো মম? 

কি জানি বাবা, হটাৎ এসেই রেনুর সাথে হম্বিতম্বি করতে শুরু করলেন। 

এমন করলে হয় নাকি, জীবন কি এতো সোজা?

সেটাই তো, তুই আসার আগে আরও বেশি আস্ফালন করেছেন উনি। 

ভাইয়া, রুহি কই মম?

ওরা ওদের রুমেই আছে, তুই যা ফ্রেস হয়ে আয়।

রুমে যাওয়ার সময় রেনুর সাথে দেখা, জিজ্ঞেস করলো ভাইয়ার কি অবস্থা এখন?

মুড নিয়ে বসে আছে?

কেন?

ড্যাড নাকি বিএমডব্লিউ নিয়ে দেবে বলে বিদেশ চলে গেছে।

আচ্ছা খেয়াল রেখো, ভাবী একটা কথা জিজ্ঞেস করি? 

হুম করো।

তোমার বাবার হটাৎ কি হলো?

যতটুকু শুনেছি মানুষ নাকি বলাবলি করছে আমার জন্যই নাকি রিয়ার বিয়ে হবেনা। 

এইটা কোনো কথা হলো?

দেখো আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকম মানুষ থাকে, হয়ত কেউ কেউ এসব বিষয় নিয়ে বাবাকে কান পড়া দিয়েছে। 

না এইটা ঠিক নয়, তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা, দরকার হলে ভাইয়াকে নিয়ে বিদেশ চলে যাও, ভালো করে চিকিৎসা করো।

আচ্ছা দেখি কি করা যায়।

 

রাতে ডিনার শেষে রুদ্র নিজ রুমে এসে ল্যাপটপ খুলে অফিসের কিছু কাজ গুছিয়ে নিলো পরদিনের জন্য জিএম সাহেবকে ইমেইল দিলো আগামীকাল সে ফ্যাক্টরিতে থাকবে, এইএসবিসি থেকে নতুন একটা করপোরেট ফর্ম আনতে হবে, সাথে স্টক এক্সচেঞ্জে কাউকে পাঠিয়ে ফ্যাক্টরির নামটা রেজিস্ট্রেশন করতে দিতে হবে, নাম হবে আরআর টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড, বাকি ডিটেলস সব লিখে পোস্ট করে যা ইমেইল এসেছে সব পড়তে বসলো, কাজ শেষে ডানহিল লাইটসের প্যাকেটটা নিয়ে সিগারেট ধরালো।

সেলফোনে রিং হচ্ছে দেখে ডায়ালে দেখলো আননোন নাম্বার, রিসিভ করে হ্যালো বললো।

আমি কি রুদ্র আহমেদের সাথে কথা বলছি, নারী কন্ঠ শুনে রুদ্র অবাক হলো।

জ্বি বলছি, কে বলছেন? 

আমি অনিলা। 

অনিলা, ওহ অনিলা হাউ আর ইউ?

আই এম ফাইন, থ্যাংক ইউ এন্ড ইউ? 

জ্বি ভালো, আমার নাম্বার কই পেলে?

আসলে বাবার কাছ থেকেই নিয়েছি, ওদিন আসার পর আর আপনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি।

না না ধন্যবাদ তো তোমাকেই বলতে হয় আমার, তুমি  এসেছিলে, খুব ভালো লেগেছে সবার।

আপনার আম্মা কেমন আছেন?

জ্বি ভালো।

উনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। 

ধন্যবাদ। 

আগামীকাল আপনার কি প্রোগ্রাম, মানে সন্ধ্যায় আমি গুলশান ক্লাবে থাকবো, চলে আসুন গল্প করি। 

আচ্ছা দেখি ফ্রি থাকলে আসবো একবার।

তাহলে এখন রাখছি। 

ওকে বাই।

বাই।

 

পরদিন সকাল সকাল বের হলো রুদ্র ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে, আশুলিয়া যেতেও এক দেড় ঘন্টা লাগে, ওখানে ওর বাবা দশ একর জমি কিনেছিলো প্রায় পয়ত্রিশ বছর আগে, আজকের সেই ফ্যাক্টরি ওই দশ একরের উপরেই, সাড়ে নয়টার সময় ফ্যাক্টরি গেটের সামনে যেতে ওর বেগই পেতে হলো, প্রচুর মানুষ এসেছে চাকরি প্রত্যাশায়।

গেইটম্যান সিটি বাজিয়ে লাঠি নাড়িয়ে গেইটের ভিতর গাড়ি নিয়ে যেতে পথ করে দিলো, রুদ্র দুই নম্বর বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি পার্ক করে ভিতরে গেলো, অলরেডি অফিস থেকে চারজন অফিসার এসেছে, ওদেরকে নিয়ে চিনু ব্যস্ত ইন্টারভিউ নিতে, যারা সিলেক্ট হচ্ছে ওদেরকে একটা করে সিলেকশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে যাতে পদবি লেখা থাকছে, সাইন করে রাখা হচ্ছে রেজিস্টারে, যেখানে বেতন ভাতা ইত্যাদির পাশেই সাইনের জায়গা রাখা হয়েছে, পরবর্তীতে তাদেরকে এপয়নমেন্ট লেটার দেওয়া হবে। 

রুদ্র সব পর্যবেক্ষণ করে অফিসের দিকে এগুলে বন্ধু চিনু ডাক দিয়ে এগিয়ে এসে বললো, তুই আগে এক নম্বর বিল্ডিং ঘুরে আয়, ওখানে অলরেডি সুতা তৈরির কাজ চলছে।

রুদ্র অবাক হয়ে তাকালো, এরপর এগিয়ে গেলো সামনে রাখা ইলেক্ট্রিক কার্টের দিকে, ঐটাতে উঠে বসলে কার্ট ড্রাইভার স্টার্ট করে এগুলো এক নম্বর বিল্ডিংয়ের দিকে।

 

এক নম্বর বিল্ডিয়ে প্রবেশ করতেই মেসিনের শব্দে কানে তালা লাগার যোগার, লুম গুলো জোরে শোরে চলছে, তুলার বেল গুলো থেকে সুতা উৎপাদন চলছে জোর গতিতে।

রুদ্র ঘুরে ঘুরে দেখছে, এই সময় একজন লোক দৌড়ে এসে সালাম দিলো।

কে তুমি, রুদ্র জিজ্ঞেস করলো। 

স্যার আমি সুপারভাইজার, লুম গুলো আমার আন্ডারেই চলছে।

আজ কত গুলো প্রডাকশন হবে?

স্যার আজ প্রথম তো, তাই সাদা সুতা এক লাখ হবে, ম্যানেজার স্যারে বলছে এগুলো দিয়ে পাঁচ সেট তোয়ালে (টাওয়াল) বানানো হবে। 

আচ্ছা তোমরা কাজ করো।

সুপারভাইজার সালাম দিয়ে চলে গেলে রুদ্র আরও কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো, এরপর রওনা হলো দুই নম্বর বিল্ডিংয়ে। 

রুদ্রকে আসতে দেখে চিনু এগিয়ে এলো, রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, কি অবস্থা?

অবস্থা ভালোনা বন্ধু, এ কয়জনে ইন্টারভিউ নিয়ে কুলাতে পারছিনা।

আরও কয়েকজন লাগবে? 

যা পারিস পারলে দে। 

রুদ্র অফিসে কল দিয়ে জিএম সাহেব সহ কয়েকজনকে আসতে বলে উপরের অফিসে চলে গেলো।

 

সন্ধ্যার আগে আগে রুদ্র ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে পড়লো বাসার উদ্দেশ্যে, উত্তরা পার হতেই মনে পড়লো অনিলা দেখা করতে বলেছিলো গুলশান ক্লাবে, ভাবলো যায় দেখা করে আসি, গাড়ি ছোটালো গুলশানের উদ্দেশ্যে। 

ক্লাবে পোঁছেই ভিতরে প্রবেশ করলো, ভিতরে এদিক ওদিক তাকালো অনিলার খোঁজে, না দেখে এগিয়ে গেলো বারের উদ্দেশ্যে, বললো আমাকে জ্যাক ড্যানিয়েল দাও। 

বারের ছেলেটা এক পেগ ঢেলে দিলে, রুদ্র ধীরে চুমুক দিয়ে সিগারেট ধরালো, হটাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুরে থাকালো, উপরের ডিস্কো থেকে কয়েক জন হুড়োহুড়ি করে নিচে এসে চিল্লালো, প্লিজ হেল্প, উপরে কয়েকটা ছেলে মেয়ে একটাকে নিয়ে টানাটানি করছে।

রুদ্র উঠে এগুলো সিঁড়ি দিয়ে, একজন বাঁধা দিলো যার নাক দিয়ে ধরধর করে রক্ত পড়ছে, বললো তুমি একলা গিয়ে কি করবে, আমার হাল দেখেছো?

রুদ্র অভয় দিয়ে দ্রুত উঠে গেলো, হৈ হুল্লোড় বিহীন ডিস্কোতে পা রেখেই খেয়াল করলো কয়েকজন ষন্ডা টাইপের মানুষ কেউ একজনকে ঘিরে ধরেছে, মানুষটা গোঙ্গাচ্ছে শুনে এগিয়ে গেলো রুদ্র, একজনের পিছনে হাত দিয়ে বললো, এখানে কি হচ্ছে, বলতেই লোকটা ফিরে বললো, এই তুই এইখানে কেন, নিজের কাজ কর গিয়ে, রুদ্র উঁকি দিয়ে ষন্ডাদের মাঝখানে  অনিলাকে দেখেই রুদ্র থমকে গিয়ে বললো, ভাইয়েরা ও মেয়েটা আমার।

 

কথাটি শুনেই সব গুলো এক সাথে ফিরে তাকালো রুদ্রর দিকে, অনিলা নিজের শরীর ঢাকার চেষ্টা করলো, একজনের হাতে নান চাক ছিলো, সেইটা দেখিয়ে বললো, বাঁচতে চাইলে বের হ বাইঞ্চোদ, রুদ্র আর কথা বলতে না দিয়েই নান চাকওয়ালাকে ধাই করে এক আপার কাট মেরে নান চাক ছিনিয়ে নিয়ে নান চাক ঘুরাতে শুরু করলো, কয়েকজন এগিয়ে আসছে দেখেই ধাই ধাই মারা শুরু করলো, মাত্র কয়েক সেকেন্ড যেন যুগ যুগ মনে হলো ষন্ডাদের, মার খেয়েই সব মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। 

এসব দেখে উপস্থিত সবাই জোরে হাততালি দেওয়া শুরু করলো।

রুদ্র নিজের কোট খুলে অনিলার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।

ইতিমধ্যে নিচ থেকে বারটেন্ডার ছেলেটাও উপরে উঠে এসেছিলো, সে দ্রুত এগিয়ে গেলো ডিস্কোর বারে, সেখানেই গ্লাসে করে লার্জ পেগ বানালো জ্যাক ড্যানিয়েলসের, এগিয়ে দিয়ে রুদ্রকে বললো, স্যার দুইটাই কম্পলিমেন্টারি ক্লাবের পক্ষ থেকে, এদেরকে আমরা পুলিশে দিয়ে দিচ্ছি।

রুদ্র গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দিয়ে অনিলাকে বললো, চলো। 

অনিলাকে নিয়ে রুদ্র বেরিয়ে এলো, নিজের গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট  দিলো। 

 

....... চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ