
এই করোনা কতজনের কতকিছু কেড়ে নিচ্ছে। কাছের মানুষ, আপনজন হুটহাট চলে যাচ্ছে। মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ( মুজাম্মিল হক) স্যার পয়তিরিশ দিন করোনা যুদ্ধের পর মারা গেলেন। শফিকুল চৌধুরী মারা গেলেল। কবে যে আমাদের কার পালা বোঝা দায়!
সেই যে শুরু হয়েছে আহ্!করোনা; উহ্!করোনা আর যাবার নাম গন্ধ নেই। পুরো বিশ্ব তার পায়ে নতশীর, নতজানু তবুও মানছে না।
উপরন্তু বলছে, ” এখনই! তোরা কত বার বেড়েছিস তোদের কত ধানে কত আটা( চাল) দেখিয়ে ছাড়ব”।
ব্যবসা, চাকরির উপরি পয়সা কিছু জায়গায় উন্নয়নের নামে বেড়ে ছয়লাব। আর কিছু কমে গিয়ে ছয়চাষ। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন নামগন্ধ নেই। নতুন বই, নতুন স্টুডেন্ট, পরীক্ষার হল, খাতা দেখা, স্টুডেন্টদের অকারণে বকাঝকা কিছু নেই। আমরা সব বেকার থেকে থেকে স্পাইডার ম্যান হয়ে যাচ্ছি।
গতকাল আমার এক পছন্দের স্টুডেন্ট বাসায় চলে এসেছে। অনেকদিন পর পেয়ে হেসে হেসে আপ্লুত। সাথে দরজা খুলতেই এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে, দমবন্ধ হলেও যেন ছাড়াছাড়ির ইচ্ছে নেই।
“কতদিন আপনাকে দেখিনা, ফেসবুকেও ছবি দেননা। ক্লাস নেই, পড়া নেই, বন্ধু বান্ধব নেই কি যে মিস করছি। কবে এসব থেকে মুক্ত হব। আর ভালো লাগছেনা ম্যাম।থাকা যায় এভাবে বলেন।”
থার্ড ইয়ারের এ মেয়েটি বিবাহিত। বললাম বেড়িয়ে আসো কোথাও থেকে। শুরু হল বরের দুর্নাম। নানা অভিযোগে ভরিয়ে দিল।
“আগে থেকেই কিপটা ছিল এখন আরও হয়েছে। কয়টা টাকা চাইলেই দেয়না, আবার বেড়ানো। আগে তো কলেজ,খাতা,কলমের অজুহাতে কিছু কামাই করতাম এখন তাও বন্ধ।”
একদম অনেক ভেতরের কথা বলে ফেলল। আমিও অনেকদিন পর স্টুডেন্টকে কাছে পেয়ে তার বোন হয়ে গেলাম। অনেক ভালো লাগলো। আমি রুমে আরও বাচ্চা, ছেলেমানুষ কত কথা বলে সন্ধ্যায় বিদায় নিল। অথচ এই মেয়ে ক্লাসে দুটো কথাও বলেনা।আসলেই দমবন্ধ করা অবস্থা। বিশেষ করে টিনএজ মেয়েদের। বাবা-মা টাকা দেয়না মার্কেট, বন্ধু/বান্ধব, তাদের সঙ্গ সব বন্ধ।😭😭
নিজের কথা বলি, বর কুতুবদিয়া থেকে সেদিন মাওয়াঘাটে ছিল, ফেরি ডুবেছে। পানিতে চলছে টিম নিয়ে মাপামাপি। ফোন দিলাম বহু আশায়। অধিকাংশ সময়ই তার বিকট জোরে হ্যালো আর ভ্যা ভু শব্দ শুনেই কান ঝালাপালা হয়ে যায়। বিরক্ত হয়ে কেটে দেই আমার শব্দের সংসারের লাইন। আজ একটু বেশিই জরুরি তাই শতশব্দ হোক তবুও কষ্ট করে সহ্য করতে মন চাচ্ছে। মন চাইছে তার টাকায় কিছু শীত কেনাকাটা করি। ও মা, টাকার কথায় ভলিউম আরো বাড়িয়ে দিল। ভালো তাবিজ জানে আমি ক্যামনে লাইন কাটব।
রাতে ফোন দিয়ে “বউ সরকার টিএডিএ সব কমিয়ে দিয়েছে তাছাড়া তোমার কলেজও তো নেই। এত কেনাকাটার কি দরকার। খুব জরুরি হলে এবার না হয় নিজের টাকায় নাও। আমি ফ্ল্যাটের কিস্তি দিব।”
রাগে ফোন কাটলাম, তোর ফ্ল্যাটের নিকুচি করি। আমার ঢাকা পছন্দ না। আর একটা বিয়ে করে থাকিস। তিনদিন কথাই বলববনা। মন খারাপে খালি গান শুনছি। বোঝেও না নিজের টাকায় কেনাকাটার মজা নাই, কষ্ট হয়। আর কোনদিন যদি সরকার ঘোষনা দেয় মাষ্টার বসায়ে খাওয়ামুনা তখন আমার কি হবে?😂😂
ভাবছি আমার যদি এরকম হয় তাহলে গৃহিনীদের আরও খারাপ অবস্থা বলা যায়। তাদের ব্যবসা সবচেয়ে ক্ষতির মুখে।বাড়ির পকেটমার বউয়েদের বাচ্চা স্কুলে নিয়ে যাওয়া- আসা আবার একইপথে বাজার সেরে আসা ছিল একটা নিয়মিত কাজ। স্বামীদের কাজ বেশি থাকায় তারাও শান্তি পেত এ দায়িত্ব না নিয়ে। ভালোই চলছিল তাদের মারিং কাটিং। বিশটাকার রিক্সাভাডা একশ বানানো, বাচ্চাদের খাতা কলম, চকলেট- বিস্কুটের অজুহাতে কিছু কামাই। পাঁচহাজার টাকার বাজারকে দশহাজার বানিয়ে ঝকঝকে ইনকাম। করোনা বেগম দিল সব থামিয়ে।
বরেরা এখন হিসেবি হয়েছে সময় মত নিজেই বাজার করে বাচ্চাদের নিয়ে বেডোয়। আবার বাসায় ফিরে হিসেবের টাকা গুণে রাখে। উপরন্তু কথাও শোনায়,”তুমি আমার বারোটা বাজিয়েছো। দামদর করতে জানোনা। আমি এখন সব সস্তা কমদামে পাচ্ছি”। কি আর করা স্কুলে বাচ্চা রেখে চলেন ভাবী ফুচকা খেয়ে আসি যখন বন্ধ। তখন হাঁড়ি পাতিলের উপর চলছে শোধবোধ। আর বরকে “যাও পাশের রুমে শোও গিয়ে”। স্বামী বেচারা করোনা কৃপণ হয়েছে। সময় এসেছে হিসেবি হবার বউ বিছানায় জায়গা না দিলেও শীত একাই কাটাবে। দুচারটে “চুমু”বিসর্জিত হলে হোক। টাকা বহুত জরুরি হ্যায়।😜😜
দেবরের বউকে ফোনদিয়ে বললাম ” এবার শীতে আর ঢাকা আসবনা কিছু টাকা দেই তুমি বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা কর”। সে বেশ গদগদ, খুশি। বুঝলাম অন্যকারন আছে। অবশেষে জানা গেল।
” ফোন নষ্টের পথে বরের কাছে কিনে চেয়েছে। সে বলেছে সারাদিন বাসায় বসে থাক আর ফেসবুকিং করে সময় কাটাও। ফোন কিনে দিতে পারবনা। টাকা নাই। করোনায় অযথা টাকা খরচ করা যাবেনা।”
শুরু হল ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ। তাতেও কাজ হয়না। আবার ঝগড়া কারন এন্টিপাটি চুপ থাকলে রাগের পরিমাণ বাড়তেই থাকে। কথা কেন বলনা? ঝগড়া চুলছেডা-ছিঁড়ি এক পর্যায়ে শার্ট,গেঞ্জি সব ছিঁড়ে গেল। বাকিজনেরও একই অবস্থা। টাকা নিয়েই ছাড়বে। অবশেষে শক্তিশালী মহিলা জয়ী হয়ে মানিব্যাগ ছিনতাই এ সফল হল! ফলাফল নতুন আইফোন।😍😍
করোনা যাক, কমে যাক চোখের পানি। আমরা আবার মেতে উঠি এমন মধুময় চুরি, ডাকাতি, মারামারি, খুনসুটিতে। হাসি আনন্দে ভরে উঠুক পৃথিবী। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে, হাতে হাত, চোখে চোখরেখে হোক রচিত প্রেমের ভাষা। বাচ্চা, বুড়ো, মধ্যবয়সী, তরুন-তরুনীরা মেতে উঠুক আনন্দ আবেগে। জন্ম হোক নতুন সকালের এই প্রত্যাশা।🌹🌹🌹
১৬টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
বাস্তবমুখি লেখেছেন কবি রুকু আপু জানি না করোনা কবে শেষ হবে বেচে থাকতে পারব কি না দোয়া করি ভাল থাকুন
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সবাই সবার জন্য দোয়া করি। ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহারে কিয়েক্টা অবস্থা মারিং কাটিংয়ের!! আপু কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরলেন রম্য দিয়ে। আপনি পারেন ও। করোনায় চুম্মা চাম্মি দিয়ে লাভ নেই, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়। শেষে আম ছালা দুটোই যাবার অবস্থা 🤪🤪🤪। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। করোনা তুই তাড়াতাড়ি বিদায় হ
রোকসানা খন্দকার রুকু
দিদিভাই ঠিকই বলেছেন। চুমুই বিসর্জন দিয়ে টাকা বাঁচানো আরকি!
আপনার মত পাঠকের জন্যই লিখতে পারি। শুভ কামনা রইলো।❤️❤️❤️
ফয়জুল মহী
পরিপক্ক লেখনী। মঙ্গল হোক আপনার ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো।😍😍
খাদিজাতুল কুবরা
হায় হায়!
কি করলা বন্ধু!
তোমার এই পোস্ট পড়ে কর্তা মশাইরা তো আরও সাবধান হয়ে যাবে। ভাগ্যিস আমার উনি পড়েননা।
লেখাটা রসে কষে দারুণ উপভোগ্য হয়েছে। ফোনটা ইদানিং বেইমানি করছে। লিখতে কলম ভাঙে এমন অবস্থা।
আশা করছি অনলাইন ক্লাস বনাম মায়েের ফেসবুকিং নিয়ে কিছু লিখবে।
কলম চলুক দুর্বার গতিতে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চলবে না😍😍
বলছ যখন তখন নিশ্চয়ই লিখব।
ভালোবাসা নিও❤️❤️
তৌহিদ
রম্যে রম্যে সত্যি কথাটাই উঠে এসেছে লেখায়। করোনা চলে যাক, এই অশান্তি আর ভালো লাগছে না।
তবে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে অবশ্যই। ভালো লিখেছেন রম্য।
শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
টাকার অশান্তি বড় অশান্তি॥ হাত খুলে খরচ করাও যাচ্ছে না।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া। শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
আপনার এবার খবর করবে সব গৃহিণী!!!!
এইসব কেউ ফাঁস করে।
করোনা যাক না যাক। সবকিছু একটু একটু খুলে দেয়া উচিত।
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। কথা কিন্তু সত্যি।
কি যে দুরঅবস্থা চলছে।
শুভ কামনা রইলো আপুনি❤️❤️❤️
জিসান শা ইকরাম
আপনাকে এই পোষ্ট দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই হচ্ছে তাহলে কৌশল! এভাবেই টাকার হিসেব পাইনি আমি আগে।
বর্তমানে বাজার করি রোজ আমিই, আমিও দেখেছি ব্যাপারটা যে আগে বাজারে টাকা বেশী খরচ করতেন ছেলের মা। এখন তো বুঝলাম ভিতরের কাহিনী কি? সব ফকফকা এখন। কৌশলগুলো জেনে গেলাম, শতর্ক থাকতে হবে।
আপনার শক্তিশালী দেবরের স্ত্রীর যুদ্ধ জয়ের দৃশ্য যেন দেখতে পেলাম আপনার লেখায়।
মানি ব্যাগ এভাবেই তালা দিয়ে রাখতে হবে এখন হতে।
চমৎকার উপস্থাপনা,
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
যাক একজন কিপটে বর পাওয়া গেল। এতকাজের ফাঁকেও বাজার করে।
কথা অতি সত্য হলেও ফুসকা খাওয়া টাকার তো দরকার।
কিছুটা ছাড় দিয়েন। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।😍😍
ছাইরাছ হেলাল
“কতদিন আপনাকে দেখিনা, ফেসবুকেও ছবি দেননা। ক্লাস নেই, পড়া নেই, বন্ধু বান্ধব নেই কি যে মিস করছি। কবে এসব থেকে মুক্ত হব। আর ভালো লাগছেনা ম্যাম।থাকা যায় এভাবে বলেন।”
ছবি দেখে পেট ভরে যায়!! এই -ই জানলাম। আহা ‘ফেচবুক’!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। ভাইয়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে লিখে আমার বন্ধু সংখ্যা তলানিতে। ইদানিং বাড়ানোর আশায় দুচারটে আমিও দেই। হায় ফেসবুক😜😜