এতক্ষণ অরিন্দম কহিল বিষাদে

এমডি. মাহবুবুল আলম ৪ এপ্রিল ২০১৪, শুক্রবার, ০৬:০৮:৪১অপরাহ্ন বিবিধ ৪ মন্তব্য

২৯ মার্চ ২০১৪ বিএফইউজের একাংশের সভায় খালেদা জিয়া আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন আমাদের এমন আন্দোলন হবে, সেখানে শত কোটি টাকা দিয়ে মানুষ আনতে হবে না। দেশের কোটি কোটি মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত লাখোকন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শত কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সঙ্গীত গাইলে লাভ হবে না। টাকা খরচ করে বাসভর্তি মানুষ নিয়ে এসে এই অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এভাবে গিনেজ বুকে নাম উঠানো যায় না। তিনি বাংলাদেশের মানুষের আবেগের এ অনুষ্ঠানকে তার আন্দোলনের সমার্থক করে আরও বলেছেন একদিন গণবিস্ফোরণ ঘটাতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে রাস্তায় নেমে আসবে। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে গিনেজ বুকে নাম লেখানো হবে।’ এ ধরনের বক্তব্য যে বেগম খালেদা জিয়ার কি ধরনের ধৃষ্টতা তা ভেবে পায় না দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ।

কিন্তু তিনি গায়ের জ্বালা মেটাতে যতই মুখের বিষ ছড়ান না কেন, লাখোকন্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ‘গিনিস ওয়ার্ল্ডবুক অব রেকর্ড’ স্থান করে নেয়ার জন্য জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমের উৎসারিত আবেগের ঢেউয়ে জানিয়ে দিয়েছে এদেশের মানুষ প্রয়োজনে কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। এর বাইরেও দেশের ভেতর এবং বিদেশে অবস্থানরত কোটি কোটি বাঙালি যে যেখানেই ছিল জাতীয় এ মহাযজ্ঞে সামিল হতে এটুকু কৃপনতা করেনি। সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল প্যারেড স্কোয়ারে লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে গলা মেলাতে।

দেশপ্রেম ও প্রাণের আবেগেই ‘লাখোকন্ঠে সোনার বাংলা’ গাওয়ার আয়োজনে শামিল হয়েছিল শিশু থেকে বৃদ্ধ ও সকল শ্রেণীপেশার মানুষ। সবচেয়ে বেশী অংশ গ্রহণ করেছিল নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও ছাত্র-ছাত্রিরা। কাজেই এ মহাআয়োজন সম্পর্কে কটুক্তি করে খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানে সমবেত লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক মানুষের আবেগকেই ছোট করে দেখেননি, আরো ধৃষ্টতা দেখিয়ে বলেছেন ‘ঐ গান গেয়ে’ লাভ হবে না বলে। তার এ বক্তব্য নিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারী খালেদা জিয়ার প্রতি ঘৃণামিশ্রিত স্টেটাস লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেকে তাদের স্টেটাসে এমন কথাও বলেছেন ‘খালেদা জিয়া যে পাকিস্তানপন্থী এই বক্তব্যে তা ই আবার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো।

তার এ বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনে অবস্থানরত প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি’ অমর সঙ্গিতের রচয়িতা আবদুল গফ্ফার চৌধুরী ২ এপ্রিল সহযোগী এক দৈনিকে তার এক নিবন্ধে বলেছেন,‘‘...বিএনপি-নেতানেত্রীরা ঢাকায় লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য সরকার যে ঐতিহাসিক আয়োজন করেছিল এবং যে সমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের অভূতপূর্ব প্রতিফলন ঘটেছিল, তার বিশাল গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। বরং জাতীয় সঙ্গীতকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যের এই মহাসমাবেশে নিজেরা যোগ না দিয়ে এই সমাবেশের মধ্যে অনর্থক অর্থ ব্যয় এবং গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম তোলার আগ্রহ তাঁরা আবিষ্কার করেছেন। যাঁরা নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের নামে মাসের পর মাস দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়ে দেশের অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতিসাধনে দ্বিধা করেননি, তাঁদের কণ্ঠে এখন জাতীয় ঐক্যের মহাপ্রদর্শনীর জন্য কিছু অর্থ ব্যয়ের দুঃখে মায়াকান্না দেখে সন্তান শোকে কুমিরের অশ্রু বিসর্জনের গল্পটি মনে পড়ে ’।

জনাব আবদুল গফ্ফার চৌধুরী শুধু খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যেরই সমালোচনা করেননি, তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি-জামায়াতের মুখপত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকারও। লাখোকন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনকে‘অনর্থক অর্থের অপচয় বলে অভিহিত করার জন্য এই পত্রিকাটির সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও তার হিজমাস্টার ভয়েজ অনুসারিদের সমালোচনা করে প্রশ্ন রেখে বলেছেন,‘বিএনপির এই মায়াকান্নায় গলা মিলিয়েছেন ইউনূস শিবিরের ‘আলো স্টার’ পত্রিকাও। ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম একটি ঢাউস নিবন্ধ লিখে ইংরেজি ভাষায় ইনিয়ে বিনিয়ে যা বলতে চেয়েছেন, তা হলো- ‘জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুষ্ঠানটি আর কিছু নয়, অনর্থক অর্থের অপচয়।’ তাহলে আমরা যে বছর বছর স্বাধীনতা দিবস পালনের উৎসব করি, সামরিক বাহিনীর মহড়া, কুচকাওয়াজ, আলোকসজ্জা, পতাকা প্রদর্শনী ও আনন্দ উৎসবে অজস্র টাকা খরচ করি তাও কি অনর্থক অর্থের অপচয়?’

আমিও জনাব আবদুল গফ্ফার চৌধুরীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চায় যারা এই মহা ঐক্যের আয়োজনকে অনর্থক অর্থের অপচয় বলে মনে করেন, তারা কি অন্ধ ও জ্ঞানপাপী? তারা কি একটি পরিবারের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারকে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি বলে মনে করেন না? তারা কি দেখেনি গত বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে এবং ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহতের নামে কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছিল বিএনপি-জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীরা, এগুলোতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি? তাদের কথা মানতে হলেতো স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখসহ সব আয়োজনই বন্ধ করে দেয়া উচিত। বন্ধ করে দেয়া উচিত লেখাধূলা ও আর্ন্তজাতিক সব ক্রীড়া আসর, বন্ধ করে দেয়া উচিত সকল সাংকৃতিক আয়োজন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা এ মহাআয়োজনের সাথে শামিল না হওয়ার কারণে সারাদেশে যে সমালোচনা হচ্ছে তা ঢাকা দিতেই বিএনপি নেত্রী এমন হাস্যকর অভিযোগ তুলে গায়ের জ্বালা মেটাতে চেয়েছেন। যে আয়োজনকে ঘিরে সারা বাংলাদেশের মানুষ মিশেছিল একই মোহনায় সেখানে শরিক হয়নি বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্ররা। এ অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি এটা তাদের দীনতা; কিন্তু ফেসবুকের স্টেটাসে ও বিভিন্ন বক্তব্যে ওই ঘরানার কিছু কিছু পাকিস্তানপন্থী মানুষ এ বিশাল কর্মযজ্ঞকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করে বলেছেন এটা নাকি লোক দেখানো কর্মসূচি। কেউ কেউ আবার বলেছেন এটা নাকি ‘অনর্থক অর্থের অপচয়’ যারা এ কথা বলেছেন তাদের করুনা করা ছাড়া আর কি ই বা করার আছে। কিন্তু দুঃখ হয় বিএনপিপন্থী তরুণ ও যুব সমাজ, তাদের জন্যে; যারা দেশকে সত্যিকারে ভালবাসে, কিন্তু ব্রেনওয়াস হয়ে যাওয়ার কারণে বিএনপিকে সমর্থন করে এমন মহাআয়োজনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য।

শেষ করবো এই বলেই, এ আয়োজনে জাতীয় ঐক্যের যে স্ফুরণ ঘটেছে তা দেখে পাকিস্তানপন্থীদের গায়ে যে বিছুটি জ্বালা শুরু হয়েছে তা প্রসমনের জন্যে খড়কুটো ধরে বাঁচার অভিলাসের মতো দলের হতাশপ্রায় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে বিএনপি নেত্রী, তার বড়পুত্র ও দলের অন্যান্য চ্যালাচামুন্ডারও জিয়াই ছিলেন দেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশের মানুষের ঐক্যের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় মেতে ওঠেছেন। কিন্তু সে অপচেষ্টাও অতুর ঘরেই মারা গেল দেশের সম্মিলিত মানুষের প্রতিবাদে।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ