১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপির সহিংসতা ও সন্ত্রাসের বলি হলো এক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও আনসার সদস্যসহ ১৪ জেলায় মারা গেছেন ২১ জন। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক সহিংসতা চালায় । ভোটার উপস্থিতি ঠেকাতে ও নির্বাচন বানচাল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভোটারদের ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার-কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, ভোটবাক্সসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাস নাশকতা ও সহিংসতা চালায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও তাদের ছত্রছায়ায় নিষিদ্ধঘোষিত উগ্র ইসলামী জঙ্গিরা।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোল করে আসছিল বিএনপি-জামায়াত তথা নাম সর্বস্র ১৮ দলীয় জোটের বাকি শরিকরা। কিন্তু কোনো আন্দোলন সংগ্রামেই তারা সফলতা পাচ্ছিল না। শেষ ভরসা ছিল সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষ সময়টা। ২৫ অক্টোবর সরকারের মেয়াদের শেষ দিন সরকারের ওপর চুড়ান্ত আঘাত হানার ও প্রস্তুতি নিতে থাকে বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু হম্বি-তম্বি ও নাশকতা করেও সরকারের একবিন্দু ঘামও ঝরাতে পারেনি তারা।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলে নির্বাচন বয়কট ও তা প্রতিহতের ঘোষাণা দিয়ে ২৬ নভেম্বর ২০১৩ থেকে সর্বমোট ৬ দফা অবরোধ ও হরতাল চলাকালে একবার টানা ৪৮ ঘণ্টা ও আরেকবার টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। বিভিন্ন দফায় যে কর্মসূচি পালন করে তা হলো প্রথম দফায় ২৬ নবেম্বর থেকে ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা, দ্বিতীয় দফায় ৩০ নবেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর টানা ১৩১ ঘণ্টা, তৃতীয় দফায় ৭ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৪৪ ঘণ্টা এবং চতুর্থ দফায় ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। পঞ্চম দফায় ২১ ডিসেম্বর থেকে পালন করা হয় টানা ৮৩ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচী, যা ২৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচী ঘোষণা করেও তা পালন করতে পারেনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এর পর ১ জানুয়ারি থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ কর্মসূচী পালন শুরু করে। কিন্তু নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে অন্দোলন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোট। আর গেল বছরের মে মাস থেকেই বেশ কয়েক দফায় হরতালসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালন করে বিএনপি-জামায়াত। এ সব সহিংস কর্মসূচী পালনের সময় সারাদেশে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও চলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ককটেল ও পেট্টোলবোমায় পুড়িয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এসব আন্দোলন ও নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতায় প্রাণ হারায় প্রায় দেড়শতাধিক মানুষ। বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে অনেকটা বিএনপিকে জিম্মি করে জামায়াত-শিবির একাত্তরের মতো যেভাবে দেশব্যাপী নাশকতা চালায় তাতে দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপিকেও সমান দিয়ী করে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার ওপরেএকাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংসদের নিন্দা পাশ করে প্রতিবাত জানায় ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন উগ্র দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ আক্রমনের আহ্বান জানায় তাতে বিএনপি-জামায়াতের পাকিস্তান পন্থী হিসেবে আসল চেহারা দেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। তাই দেশের নতুন প্রজন্ম ও তরুণ-যুবা ছাত্রসমাজ ও সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে দেশের বিপুলসংখ্যাক দল নিরপেক্ষ নাগরিক বিএনপিজামায়াতের সন্ত্রাস নাশকতা ১৮ দলীয় জোটে ঘোষিত কোনো কর্মসূচিতেই সমর্থন জানায়নি। এ অবস্থায় গুটি কয়েক সুশীল সমাজের লোকদের বাদে সবাই বিএনপি জামায়াতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনার প্রতি বিরূপ সঘোষিত নাগরিক সমাজের বিরূপ প্রচারনা ও বিএনপি-জামায়াত-শিবির-জঙ্গি সংগঠন দেশের ভেতর মেুখোস এঁটে থাকা আইএসআইয়ের পেইড প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের চতুমুর্খী সংহিংসতা ও দেশবিরোধী নাশকতা সৃষ্টির পরও নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে যেসব সুশীল নামধারী ভদ্রবেশি দালালরা টেকশো মাতিয়ে বেড়িয়েছিল যে, দেশে-বিদেশে এ নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না; এমন কি এককাঠি আগ বাড়িয়ে বলেছিল এক তরফা নির্বাচনের কারণে দেশ আন্তর্জাতিক অবরোধের সন্মুখী হতে যাচ্ছে তাদের সব অপপ্রচার ভ্রান্ত প্রমাণ করে শেখ হানিা নির্বাচন করলো এবং সে নির্বাচনে এত নাশকতা ও সহিংতার পরও ৪০ শতাশের ওপর ভোট পড়লো, এবং সেসব অপপ্রচারকারীদের মুখে চুনকালী মেখে আজ ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় একমত্যের সরকার ও শপথ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মনোবল ও সাহস একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এত সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টির পরও শেখ হাসিনা সাহসিকতার সাথে সব কিছু সামাল দিয়ে নতুন সরকার গঠন করলেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং ঘোষণা অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে বিএনপি-জামায়াত এখন চরম হতাশ। যারা এতদিন নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী চরম সংহিংসতা চালিয়েছিল তারাও এখন সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। ব্যর্থ হয়েছে লাগাতার হরতাল ও অবরোধের মতো কঠিন ও চুড়ান্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এখন চরম হতাশায় নিমজ্জিত।

বিএনপি-জামায়াতের তাবেদার পেইড সুশীল সমাজ আরো বেশি হতাশ গতকাল ১২ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার পর। কেননা, তারা ভেবেছিল এই নির্বাচন দাতাগোষ্ঠী ও বৃহত শক্তি মেনে নেবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখো যাচ্ছে ওইসব দাতাগোষ্ঠীর দাদারা কাল নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে কেবল হাজিরইই হননি বরং শপথপাঠ শেষ হওয়ার পর হাততালি দিয়ে নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘না’ বলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপির পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, এরকম যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল দেশটি, সে দিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে সব প্রতিশ্রুতি ‘আপাতত সময়ের জন্য প্রত্যাহার’ করে নিয়েছে দেশটি! ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা আজ রাতে ‘বিশেষ বার্তা’ পাঠিয়ে খালেদা জিয়াকে তা জানিয়ে দেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। এ বার্তা পেয়ে হতাশ হয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সে দিন রাতে সাংবাদিকদের আমন্ত্রন জানিয়েও কোনো কথা না বলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেন। সম্প্রতি অনলাইন পত্রিকা প্রিয় দেশ ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলেছে,‘যুক্তরাষ্ট্র এতোদিন সমর্থন করে আসছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোটকে। ড্যান মজিনার সমর্থন ছিল বিএনপি, জামায়াতের জোটের প্রতি। খালেদা জিয়াকে নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পরামর্শ, সমর্থন দিচ্ছিলেন তিনি। তার পরিচিতও আছে ‘বিএনপিপন্থী কূটনৈতিক’ হিসেবে।...কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘বিশ্বমোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্র এবার বিএনপির প্রতি সমর্থন তুলে নিচ্ছে। খালেদা জিয়াকে আজ ড্যান মজিনা ‘বিশেষ বার্তায়’ সাফ জানিয়ে দেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠন হতে যাওয়া নতুন সরকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এমন বক্তব্য দেবে না, যেন সরকারের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক নষ্ট হয়।...বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা মজিনার ‘বিশেষ বার্তা’ প্রসঙ্গে প্রিয় দেশ ডটনেটকে বলেন, ‘ড্যান মজিনার কথিত ওই বার্তা পেয়ে খালেদা জিয়া খুব হতাশ হয়েছেন। এ কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেননি তিনি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই নেতা এসব কথা বলেন।
এদিকে রাশিয়াও বাংলাদেশের নতুন সরকারের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইতার তাস জানায়, রুশ সরকার নিশ্চিত করেছে যে তারা বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে তা হতে হবে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে গঠিত। রাশিয়া আশা করে বাংলাদেশে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সরকার ও বিরোধী দল দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। ভারতের পর রাশিয়ার এ সমর্থন বাংলাদেশকে নিয়ে চলা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন বিএনটি চাইলে একটি অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে তবে সংলাপের আগে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গত্যাগ ও সহিংসতা ও নাশকতার পথ পরিহার করে এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রসংগে বিএনপি নেতাদের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে কিনা, কিন্তু এ প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে অনেকটা ঘুরিয়ে তারা বলেছে ‘জামায়াতকে নিয়ে এখনই চিন্তার কোন কারণ নেই। তারা একটি আলাদা দল, আমরাও একটি আলাদা দল। আন্দোলন ও নির্বাচনের স্বার্থে আমরা তাদের সঙ্গে জোট করেছি।এ ছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য সংলাপ করে সমঝোতার পথও খোঁজা হবে। এ ব্যাপারে আমরা একটি অর্থবহ সংলাপ চাই। অবশ্য সারাবিশ্বও তাই চায়।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানযদিও মুখ রক্ষার স্বার্থে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারকে একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচন বাতিলে বাধ্য করতে চলমান আন্দোলন চলবে। তবে আমাদের এখন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে দলের যে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে, তা নিরসন করে নতুন উদ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। এই ঘোষণার একদিনের মধ্যে বাধ্য হয়েই বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোটকে পূর্বঘোষিত অনিদ্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করতে হয়েছে।

সব শেষে এই বলেই শেষ করবো বিএনপি জামায়াতের পরামর্শে ও শক্তিতে বিশ্বাস করে যে ভুল করেছে সে ভুলের মাসুল তাদেরকে দীর্ঘন দিতে হতে পারে। কাজেই আর দেরি না করে নিজেদের শোধরানোর সুযোগ এখনো আছে বিএনপির। যত তাড়াতাড়ি তারা অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে ততই বিএনপির মঙ্গল হবে। তা না হলে বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না। বরং তাদের শক্তিই ক্ষয় হবে। তাদের মনে রাখতে হবে রাজনীতিতে একটি ভুল সিদ্ধান্ত শুধু দলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় গণতন্ত্র সর্বোপরি দলের প্রতি অনুগত নেতাকর্মীরা।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ