২৬ মার্চ ২০১৪ বাংলাদেশের ৪৩তম জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবসে ঘটে গেল আরও একটি ঐতিহাসিক অভূতপূর্ব ঘটনা। লক্ষকন্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ‘গিনিস ওয়ার্ল্ডবুক অব রেকর্ড’ স্থান করে নেয়ার জন্য জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমের উৎসারিত আবেগের ঢেউয়ে জানিয়ে দিল এদেশের মানুষ প্রয়োজনে কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। এর বাইরেও দেশের ভেতর এবং বিদেশে অবস্থানরত কোটি কোটি বাঙালি যে যেখানেই ছিল জাতীয় এ মহাযজ্ঞে সামিল হতে এটুকু কৃপনতা করেনি। সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল প্যারেড স্কোয়ারে লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে গলা মেলাতে। এদেশের মানুষ যে জানে দেশপ্রেম ঈমানেরই অংশ।

এ দিনটি ছিল বাঙালির রেকর্ড ভাঙার দিন। আমরা জানি ২০১৩ সালের ৬ মে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নেয় ভারত। এতদিন এ রেকর্ডটি ছিল ভারতের। ভারতের জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন মানুষ। এ রেকর্ড ভাঙতে হলে বাংলাদেশকে ঘটাতে হবে এর চেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী। এটি মাথায় রেখেই কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল ৩ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে রচিত হবে নতুন রেকর্ড। কিন্তু এ আয়োজনে উপস্থিত হয়েছিল তারও অনেক বেশি মানুষ। গণনা মেশিনের গণনায় চূড়ান্ত রেকর্ড গড়ার সময় বাংলাদেশের আয়োজনে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন।কিন্তু এর বাইরেও কোটি কণ্ঠ গেয়ে ওঠেছিল আমার সোনার বাংলা। প্যারেড স্কোয়ারের বাইরেও শামিল হয়েছিল কয়েক লাখ মানুষ। এ ছাড়া কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাঙালীরা একই সময়ে ত্রিশলক্ষ শহীদের আত্মদান ও দুইলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় সংগীতের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে প্রদর্শন করেন দেশপ্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্ত।

আমরা সশরীরে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে এই মহাযজ্ঞে অংগ্রহণ করতে পারিনি বলে নিজেদের কাছে নিজেদেরকে খুবই নগণ্য ও ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল। কিন্তু এ জাগরণ সচোক্ষে প্রত্যক্ষ করা সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা তা টের পাচ্ছিলাম প্রস্তুতিপর্বে প্রতিটি মুহূর্তে। নিজের অজান্তেই এক সময় আবেগে থরথর করে কাঁপছিল আমার শরীর। আবেগের নোনাজলে বারে বারে ভিজে ওঠছিল চোখের পাতা। আমার এ অবস্থা দেখে আমাদের একমাত্র কন্যা মিথুন দৌড়ে গিয়ে তার ঘর থেকে নিয়ে এলো ক্যামেরা। সে আমাকে ও তার মা’কে টেলিভিশনের সামনে দাঁ করিয়ে দিয়ে বললো ‘দাঁড়াও এখানে’। এখানে দাঁড়িয়েই শরীক হও ইতিহাসের সঙ্গে। আমরা দু’জন অবোধ বালক-বালিকার মতো তার কথা তামিল করলাম। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের লক্ষ জনতার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে গেয়ে ওঠলাম “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি...’কখন যেন শেষ হয়ে গেল গানটা। সঙ্গে সঙ্গে বুক থেকে যেন নেমে গেল প্যারেড স্কোয়ারের মহাযজ্ঞে সশরীরে অংশগ্রহণ করতে না পারার গ্লানীর বিশাল পাথরটা।

এ মহাআয়োজনকে ঘিরে দেশপ্রেমিক সর্বস্তরের মানুষ, নতুন প্রযন্মের তরুণ-তরুণী, যুবক ও যুব মহিলাদের মাঝে যে আবেগ উচ্ছ্বাস দেখিছি তা কিছুতেই ভুলবার নয়। যার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হলো তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আয়োজনে কেবল সর্বাত্মক সহযোগিতা করেই তিনি বসে থাকেননি; তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে লক্ষ লক্ষ অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণা যোগিয়েছেন। এ মহাআয়োজনের মহামঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কন্ঠ মেলালেন লাখো কন্ঠের সাথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে যেন তিনি তাঁর নিজের অবেগ ও উচ্ছ্বাস ও ধরে রাখতে পারেননি। এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন,‘বাঙালী সব সময় ইতিহাস সৃষ্টি করে। বাঙালী আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, যে সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ভালবাসা জানাই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, যে জাতীয় সঙ্গীত আমাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত করে, আমাদের চেতনার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে, সেই জাতীয় সঙ্গীত লাখো কণ্ঠে আমরা গাইব, যা বিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকবে।’

এ মহা আয়োজনে কেবল প্যারেড স্কোয়ারে নয়। বাইরেও ছিল লাখ লাখ মানুষ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে যেখানে ছিলেন, সবাই দাঁড়িয়ে গেয়েছেন আমার সোনার বাংলা। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান সর্বস্তরের জনগণ। এখানে একটি কথা না বললেই নয়; যে আয়োজনকে ঘিরে সারা বাংলাদেশের মানুষ মিশেছিল একই মোহনায় সেখানে শরিক হয়নি বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্ররা। এ অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি এটা তাদের দীনতা; কিন্তু ফেসবুকের স্টেটাসে ওই ঘরানার কিছু কিছু পাকিস্তানপন্থী মানুষ এ বিশাল কর্মযজ্ঞকে খাটো করে বলার চেষ্টা করেছেন এটা নাকি ‘লোক দেখানো’ কর্মসূচি। যারা এ কথা বলেছেন তাদের করুনা করা ছাড়া আর কি ই বা করার আছে।

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ