একঘরে আপন

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার, ১০:২৭:১৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৫ মন্তব্য

শুভ সকাল! সবাই কেমন আছেন? কেন যেন মনে হচ্ছে আমার মতোই! বাইরে অঝোর বৃষ্টি। বেশ কিছুদিন পর এমন বৃষ্টি আনন্দদায়ক হবার কথা তা না হয়ে কেমন বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে ঘোরের ভেতর আছি। সবই করছি, চলছি কিন্তু এ জগতে নেই। কারও কথা শুনতে, বলতেও ভালো লাগছে না।

আবার কেন ভালো নেই এটা কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না।এরমধ্যে ভালো না থাকার কারণ যতোজনকে শেয়ার করেছি তারা দেখেছি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আত্মার সম্পর্ক যে অনেক বড়, এটা অনেকেই বোঝে না। কিংবা তাদের কাছে মূল্যহীন। অবশেষে সব শেয়ারিং- কেয়ারিং বন্ধ। শুধু একা একা অনেক কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার জন্য একা থাকবো তারও উপায় নেই।

যৌথ পরিবার হলে এই এক সমস্যা, আপনি চাইলেও একা হতে পারবেন না। আগে ‘মা’ আর ‘মামীমার’ অত্যাচার, এখন নতুন করে ‘বুবু’ যোগ হয়েছে। নিয়ম করে আঠার বার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখা। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেও ডেকে তুলে খাবারের অত্যাচার। আমি তো রীতিমতো বুডো মানুষ, তবুও তাদের কাছে বুডো না।

এই মানুষগুলো এতোটা কেন ভালোবাসে? একটা ভয় কাজ করছে, এতো ভালোবাসা আমার চাই না। ভালোবেসে হুটহাট চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া যায় না। অনেক অনেক কষ্ট হয়।

অবশেষে নিজেকে একঘরে করার থিসিস করছিলাম এবং সেটি অবশেষে কাজে দিয়েছে। কষ্টের মাঝেও নিজে যেহেতু হেসে কুটি কুটি হচ্ছি; যদি আপনাদেরও মন ভালো হয়, হাসি আসে তাই শেয়ার করছি।

সব পরিবারে টুকটাক ঝামেলা তো থাকেই। কবছর আগে ভাইয়ার সাথে রাগারাগী হওয়ায় মামার বাসায় এসে উঠেছিলাম। পরে ঠিক হলেও রুমটা ওভাবেই আছে, মাঝে মাঝে একা একা থাকি। একেবারেই সিঁড়ির গোড়ায় আলাদা বসত, ভালো লাগে।

মামার বাসার দুপাশে দুটো গেট। আমি যে বাসাতে থাকি তার জন্য একটা গেট আর পেছনের বাসা যাওয়ার জন্য আর একটা গেট। আমার রুমে ঢোকার জন্য সিঁড়ির গোড়াতেই একটা দরজা আছে। সবাই এটা দিয়েই আমার কাছে আসে। তবে পেছনের বাসায় যাওয়ার গেট দিয়েও আমার রুমে ঢোকা যায়। আমি পেছনটাতে তেমন বের হই না কিংবা কেউ আমার কাছে আসেও না।

হঠাৎ একঘরে করার বুদ্ধিটা এলো। বুদ্ধিমতো আমি সিঁড়ির পাশের আমার দরজায় বিরাট তালা ঝুলিয়ে দিলাম। এবার পেছন দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। প্রয়োজনীয় কয়েকদিনের খাবার দাবার নিয়ে নিয়েছি। ভাত না হলেও আমার চলে।

এবার বারান্দার লাইট অফ, টিভি অফ, ফোন সাইলেন্ট করে ভেতরে আমি একা চুপচাপ গুহাবাসী। শুধু পেছন দরজার কাছে হাল্কা জানালা খোলা, সামনে উদোম আকাশ। মেঘ, বৃষ্টির ছলচাতুরী বিছানায় শুয়েই দেখা যায়। চাঁদনী রাত হলে বেশি উপভোগ্য হতো। কোন কথা নেই, চুপচাপ।

বাসার বাচ্চারা বিকেলে সিঁড়ির পাশে খেলে, চিল্লায় আমি বকা দেই। তারা পুরো স্বাধীনতায় আছে।

বলাবলি করছে- দেখিসনা লাইট অফ। আন্টি নেই। চল এখানেই খেলি। বাইরে বৃষ্টি মনের আনন্দে তারা আমার রুমের সামনে খেলছে। খেলুক!

বুবু ফোন দিয়েছে- তোর রুমে তালা দেখছি! তুই কই?

-বুবু আমি বাইরে আছি। ফিরবো কদিন পরে। এডাল্ট হবার স্বাধীনতা নাকি আমার পরিবার আমাকে বিশ্বাস করে যে আমি অন্যায় কিছু করবো না তাই আর দ্বিতীয় প্রশ্ন নয়! যেটাই হোক, একদিন কাটিয়ে ফেললাম। আরও কয়েকদিন এভাবে থাকতে চাই।

প্রিয় কারও চলে যাওয়াটা খুব একটা সহজ হয় না। তার কথা, স্মৃতি খুব করে নাড়া দেয়, কাঁদায়। কাউকে সহজে ভোলার জন্য খুব হাউমাউ করে কাঁদতে হয় আমি সেভাবে কাঁদতে পারি না। সব কান্না গলায় এসে আটকে যায়। এরপর হয়তো সবই করছি, কিন্তু আমি সেখানেই যেন নেই এমন একটা ঘোরে কাটতে থাকে। বাবা মারা যাওয়ার পর ঘোরে কাটতে কাটতে স্ট্রোক হয়েছিলো। তারপর থেকে অধিকাংশ দুসংবাদে জ্বর আর বমি হয়। তবুও ফিরতে চাই, ফিরতে হয়, স্বাভাবিক হতে হয়। কারন জীবন মৃত্যুর জন্যই আসে।

আমরা সবাই চলে যাবো কিন্তু সময় কারও জানা নেই। তাই সবাই সবাইকে ভালোবাসবো, ভালো চাইবো। কষ্ট দেবো না, সর্বোপরী পাশে থাকার চেষ্টা করবো। শোক কাটিয়ে আবার আগের মতো ফিরবো নিজ অঙ্গনে!!!

ছবি- নেটের

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ