আমরা প্রায়শ রিকশাচালকদের সাথে তুই তোকারি করে ব্যাবহার করি। এই রিকশা যাবি ? বেটা এতো ভাড়া চাস কেন ? আর একটা কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে কান ফাটিয়ে ফেলবো। জানিস আমি কে ? একসময় আমিও যে তাঁদের সাথে তুঁই তোকারি করে কথা বলতাম না তা নয় তবে তা আমার বয়সে ছোটদের সাথে মাঝে মধ্যে বলতাম। আমার নিজের মাঝেও পরিবর্তন আসে নিজের বয়সের পরিবর্তনের সাথে সাথে আর কর্মজীবনে প্রবেশের পর। আমিও খেয়াল করে দেখেছি তাঁদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে তাঁরা কিন্তু খুব খুশী হয়। আমি বলার জন্য বলছিনা সব সময় তাঁদেরকে চাচা , ভাগিনা, মামু  সম্বোধন করে কথা বলি। কিছুদিন আগে আছরের নামাজের পর একজন রিকশাচালককে  নিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করেছি এবং কয়েক জায়গায় দাঁড়িয়েছি কেনাকাটা করেছি । তবে তাঁকে আশস্ত করেছি যথাযথ ভাড়া দেবো। বাসার সামনে নামার পর যখন তাঁকে বললাম চাচা ভাড়া কত দিবো, তিনি বললেন আপনি হিসাব করে দেন। আমি বললাম আমি তো কম দেবো, তিনি বললেন অসুবিধা নাই। আমি বললাম এখন কি সেই রকম মানুষ আছে যাকে বলবেন যে আপনার খুশিমত দেন এবং আপনাকে তাইই দেবেন। তখন তিনি বললেন এখনো সেরকম অনেক মানুষ আছে নাহলে দুনিয়াটা থাকতো না। আমি হাসলাম তিনিও আমার সাথে হাসলেন। আমি বললাম আমি আপনাকে ৪০ টাকা দেবো আপনি রাজী ? তিনি হেসে বললেন তাই দেন। বললাম ৪০ টাকা দিলে তো আপনার কম হয়ে যাবে সেই সুন্দর হাসি মুখে ধরে রেখে বললেন কোন অসুবিধা নেই। আমি বললাম নারে বাবা আপনি ৫০ টাকাই নেন। আমি প্রথমে যা দিতে চেয়েছিলাম তার থেকে ১০ টাকা বেশী দিলাম। ১০ টাকা বড় কথা নয় কিন্তু তাঁর যে সহজ সরল সুন্দর হাসি দেখলাম তাতে আমার মনটা ভরে উঠলো। এখনো সহজ সরল মনের মানুষ আছে যারা আমাকে আপনাকে মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করে।

এখন কথা হল আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, বিবেকবোধ, নীতি নৈতিকতা, পরকালের ভয় কতটুকু আছে ?  আমরা তো এখন মানুষকে ঠকিয়ে মনে করি নিজেকে অনেক লাভবান করে ফেলেছি, নিজে নিজে আত্মপ্রাসাদে ভুগি- - আমি কত চালাক, আমার কত বুদ্ধি ! ওজনে কম দেই, খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি করি। পচা বাসী, ভেজাল খাবার খাওয়াই, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা দেইনা, কতভাবে কত কায়দায় কত পেশায় আমরা মানুষকে ঠকিয়ে থাকি। ভাইয়ের সম্পদ, বোনের সম্পদ হরণ করি, এতিমের হক আদায় করিনা। সঠিকভাবে যাকাত দেইনা, আরো কত কি! মাথার ঘাম পায়ে ফেলা দিন মজুর, রিকশাচালকরা অল্পতে তুষ্ট আর সন্তুষ্ট, আমরা কিন্তু অল্পতে কখনোই তুষ্ট বা সন্তুষ্ট হইনা। আমাদের শুধু খাই খাই ভাব !বর্তমান করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, মানুষকে ঠকিয়ে সাহেদ, আরিফ, সাবরিনারা মানুষের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দিচ্ছে নকল বা ভূয়া করোনা সার্টিফিকেট। ভেজাল আর মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ, চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জামে সয়লাব পুরো বাংলাদেশ। অতি সম্প্রতি ঢাকার চেইন মেডিসিন শপ লাজফার্মায় র‍্যাব অভিযান চালিয়ে বিশ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে নকল, ভেজাল আর মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধের জন্য।

এক সময় চিকিৎসা ছিল মানবিক এবং আর্থ মানবতার সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেশের স্বাস্থ্য সেবার জন্য। এখন সময় আর যুগ পাল্টেছে। এখন মানুষের জীবন নিয়ে, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ আর চিকিৎসা নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। আজকাল মানুষের বিবেক বুদ্ধি বিচার বিবেচনা মানবতা নৈতিকতা ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে খুব একটা চিন্তা করে না। সবার টাকা চাই টাকা। মানুষের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে হলেও টাকা চাই। পরকালের চিন্তা এখন আর কেউ করেনা। পাশাপাশি আমরা নিজেদেরকে শিক্ষিত ভদ্রলোক দাবী করি অথচ মানুষের সাথে অশিক্ষিত অভদ্রলোকের মতো আচরণ করি। দিন মজুর রিকশাচালক ওরাও মানুষ। মানুষের সাথে আসুন মানুষের মতো আচরণ করি। নিজেদের অন্তরে বিচার বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা মানবতা এবং মমত্ববোধ জাগ্রত করি। মানুষের সাথে আমাদের দানবের মতো আচরণ পরিহার করি। ব্যবহারে বংশের পরিচয়। মানুষের কাছে নিজের মান সম্মান ইজ্জত শিক্ষা দীক্ষা আর বংশপরিচয়ের সুন্দর দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করি।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ