কী এমন মহাকান্ড রামলোচন?
আজ্ঞে কর্তা মশাই কান্ডটা আপনার নাকের ডগায়!
এ কী বলছো রামলোচন?
আজ্ঞে কর্তা মশাই নাকে একবার হাত দিয়ে দেখুন।
ফলাফল পাঁচমিনিটের মধ্যে।
আরে কী সব বকবক করছো রামলোচন।
কী হয়েছে সেটা বলার হলে বলো।
তোমার সবসময় ন্যাকামো আমার পছন্দ নয়।
এছাড়া আমি কি তোমার দাদাঠাকুর?
আজ্ঞে না কর্তা মশাই। আপনি কেন আমার দাদাঠাকুর হতে যাবেন?
হয়েছে, হয়েছে অনেক হলো রামলোচন।
এইবার থামো।
যা ঘটার আমার নাকের ডগায় ঘটবে। কান্ডটা নাকের ডগায় ঘন্টা বাঁজাবে।
সকাল পেরিয়ে ভোর হতে চললো এখনো পেটে দানা নেই আর তুমি নাকের ডগায় কান্ড দেখিয়ে আমায় হরির নাম নিতে বলছো?
আজ্ঞে না কর্তা মশাই।
আপনি একজন সাধকসিদ্ধ কালী মায়ের একজন নিবেদিত ভক্ত। আপনাকে কেন হরির নাম শুনাতে যাবো।
হরির নাম সেইদিন শোনাব কর্তা মশাই।
যেইদিন আপনি পরপারে চলে যাবেন।
হায়! হায়!
রামলোচন শেষপর্যন্ত আমায় পরপারে বিদায় দিতে চলেছ ?
আজ্ঞে না কর্তা মশাই। ঐ বল্লুম আর কী।
যেতে হবে যে একদিন!
হ্যাঁ তা তো বুজলাম। এইবার চুপচাপ বসে থাকো।
আর না হলে তোমার রণচণ্ডী বউকে সব বলে দিবো।
কর্তা মশাই আপনার দুটি চরণ ধরে ক্ষমা চাচ্ছি আপনি দয়াকরে আমার নামে আমার রণচণ্ডী বউয়ের কাছে নালিশ করবেন না।
রোজ কত পিটা আর কতবার যে গলাটিপে ধরেছে তা অগণিত কর্তা মশাই।
অগণিত! বহু অগণিত।
বউয়ের মঙ্গলের জন্য আমার শেষ সম্বল সাতটে পাঁঠা আপনার মন্দিরে বলি দিলুম।
আর এ সাতটে পাঁঠা শেষপর্যন্ত আপনার ভোগে যেতে চলছে কর্তা মশাই।
রামলোচন হয়েছে হয়েছে।

যাবার বেলা সাতটা পাঁঠার মাথা নিয়ে যেও।
চারটে পাঁঠার মাথা তোমার গলে আর তিনটে তোমার রণচণ্ডী বউয়ের গলে মালা পরিয়ে দিও।
আজ্ঞে কর্তা মশাই।
যথাজ্ঞা।
এ কথা হঠাৎ করে রামলোচনের বউয়ের কর্ণপাত হলে রামলোচনের বউ আবার রামলোচনের গলাটিপে ধরে বসেছে।
হয়তো এইবার শেষ রক্ষা নেই রামলোচনের।
ওগো গিন্নি আমি মরে গেলে তোমার দুর্দশা কী হবে?
ওরে আমার হতচ্ছাড়া পতি আমার যা হবার হবে।
তোমাকে আজ একটা ব্যবস্থা করে ছাড়ব।
তোমায় নিয়ে আমার অনেক হয়েছে।
আমায় পাগল বলে ঘরের শেষ সহায়সম্বল সাতটে পাঁঠা বলি দিয়েছ। আর আমার নাক,কান,গলার স্বর্ণ বন্দোবস্ত করতে যাচ্ছো এ তান্ত্রিক ব্রাক্ষণের কাছে।
শেষপর্যন্ত হতচ্ছাড়া পতি আমায় এ ব্রাক্ষণের কাছে বন্দোবস্ত করে ফেলে কি না তা জগৎপতি জানে!
না আজ হতচ্ছাড়া পতির একটা ব্যবস্থা করে ছাড়বোই। এ হতচ্ছাড়া পতি নিয়ে আমার সংসারধর্ম অনেক হলো। এদিকে রামলোচন বাবুর পূজাক্রিয়া শেষ হতে চললো।
এমনিতেই মহা অমাবস্যা তারমধ্য অমানিশা রাত্রি।
সবাই খেয়েদেয়ে যারযার বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
চার পাঁচজন জটাধারী তান্ত্রিক আর বিলাস বাবুর পরিবারপরিজন ব্যতীত আর কেউ নেই।
রাত্রি গভীর তারমধ্য মাঘের বাঘে প্রচন্ড ঠান্ডা। এ যেন হাঁড়কাপা শীত। বিলাস বাবু সবেমাত্র উপোস ভেঙ্গে তান্ত্রিকদের সাথে গাঁজায় টান দিতে বসলেন।
সাথে রামলোচন বাবু। এসব কান্ড কারখানা দেখে রামলোচনের বউ অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছে। এতসব লোকের মাঝে কিছু বলেও বলতে পারছেন না।
হয়তো বাড়িতে ফেরার পথে রামলোচন তার পিঠে পাটের বস্তা বেঁধে যেতে হবে।
কিন্তু রামলোচনের গলা বন্ধ করার কোন উপায় নেই..!

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ