বিয়ের দুবছরের মধ্যেই আমাদের জীবনকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য ঘর আলোয় উদ্ভাসিত করে আসলো বেলী তাকাসকোভা ভ্লাদিমির। বেলী নামটা রেখেছিল নাদিয়া। বেলীর জন্মের সময় কোথা দিয়ে যেন বেলী ফুলের সুঘ্রাণে নাদিয়ার কক্ষ পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। জেস এই আমাদের বেলী ভ্লাদিমির, তোয়ালে মোরান টুকটুকে জীবন্ত পুতুলটাকে আমার কোলে দিয়ে যখন নাদিয়া বলল এ কথা, আমি বলি ‘ আমার একার নাম কেন নেবে সে? আমাদের দুজনের ভালবাসার ফুল সে, ওর নাম হবে বেলী তাকাসকোভা ভ্লাদিমির।

বেলী আমাদের ভুবনে আসার পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেদিন ছিল পূর্ণ জোছনা। হঠাৎ শয়ন কক্ষের জানালায় কিসের শব্দ। গ্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি দুটো সাদা ভল্লুক জানালার প্রায় কাছ ঘেষে দাঁড়ান। আমাকে দেখে একটুও ভয় না পেয়ে আনন্দে সাদা বরফের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আবার চলে গেল। পরের রাতে আবার জানালায় আঘাত। আমার যেতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় কয়েকবার তুষার নিক্ষেপ করল তারা। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পরে তাদের আবার আনন্দে গড়াগড়ি। এটি নিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। রোজ জানালায় তুষার ছুড়ে মারার শব্দ, জানালায় গিয়ে দাঁড়ানোর পরে আনন্দে গড়াগড়ি। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে জানালায় শব্দ পাবার সাথে সাথে বেলী জানালার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসতো।
ধীরে ধীরে বেলী বড় হচ্ছে, তাকে দেখিয়েছি ভল্লুক, সেও মনে হয় গড়াগড়ি দিতে চাচ্ছে ওদের সাথে এমন অবস্থা। নাদিয়ার নানির সাথে তার সখ্যতা তৈরী হয়েছিল খুব। দুজনে যেন এক আত্মা এক প্রাণ। যখন কথা বলতে শিখল, নাদিয়ার নানিকে সেও নানি ডাকা শুরু করলো।

পিচ্চি হলে কি হবে, নানির সাথে সখ্যতার কারনেই হোক বা শ্বেত ভল্লুকের প্রভাবেই হোক, তার আত্মা যেন বড় মানুষের চেয়েও পরিপক্ক। সারাক্ষণই সে নানির আদর চাইত। যখন সে বেড থেকে নামতে শিখল, নেমেই মেঝেতে গড়াগড়ি, যেমনটা আনন্দে গড়াগড়ি দিত ভল্লুক দুটো। নানি সহ আমরা দৌড়ে চলে আসতাম এই ভেবে যে সে বেড থেকে মাঝেতে পড়ে গিয়েছে। নানি তাকে কোলে নিয়ে আদর করত। অনেক পড়ে আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি যে এটি ছিল নানির দৃষ্টি আকর্ষনের একটি কৌশল 🙂 আমরা তাকে বুঝতে দেইনি কখনো যে আমরা তার এই কৌশল ধরে ফেলেছি। দু এক সময় সে এমনি গড়াগড়ি দিত তা বিফলে যেত, কারণ তখন আমরা কেহই কাছাকাছি থাকতাম না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন সে বুঝত যে আমরা কাছে নেই, তখন সে উঠে বাইরে খেলতে যেত।

ছোট বেলা থেকেই তার ব্যক্তিত্বে আমরা মাঝে মাঝে অবাক হতাম। তার হাঁটা চলা, কথা বলার মধ্যে একটি আলাদা বলিষ্ঠতা ছিল। খেলনা পিস্তল, ছুড়ি এবং কয়েনের প্রতি তার ঝোঁক ছিল প্রবল। আর বইয়ের প্রতি নেশা ছিল পাগলের মত। তার নিজের কক্ষটি বলতে গেলে একটি লাইব্রেরীতে পরিনত করে ফেলেছিল।
প্রতি উইক এন্ডে তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতেই হত। নতুন নতুন স্থানে তার ভ্রমন করা চাইই চাই। বেলীর ১৬ তম জন্মদিনে তার মা তার জমানো ২০০০ রুবল দিয়ে তাকে একটি ক্যামেরা কিনে দিল। বেলীর কাছে ক্যামেরাটি ছিল যেন জীবনের সেরা উপহার।

আজ ২০১৭ এর ২১ মে। ২০১৪ এর এই দিনে আমার ফেইসবুকে এই মেয়ে বন্ধু হিসেবে যুক্ত হয়। আমি আমার মেয়ে বেলীর সাথে এর হুবহু মিল দেখে ভাবি, এই কি আমাদের বেলী তাকাসকোভা ভ্লাদিমির?
*********************
পূর্ব জনমের স্মৃতি থেকে......
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৭
=====================
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ১
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ২
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৩
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৪
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৫
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৬ 

.

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ