শিশু কথন – ৩ । নীল জামা

নাসির সারওয়ার ১৪ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার, ০১:৩৬:২৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

মামা বাড়িটা বেশ পরিচিত হয়ে গেছে অল্প সময়ের মাঝে। আমার রুটিন আমি গুছিয়ে নিয়েছি। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সিঁড়ির কাছে গিয়ে “আপ্পি” বলে চীৎকার করা দিয়ে দিনের শুরু। যে ঘরটায় আমরা থাকি সেখানে একটা ঢাউস আঁকারের বেড। জানিনা, আমার মামার পূর্ব পুরুষেরা কী রাজা-বাদশাহ না জমিদার ছিলো। বেডটা শুধু বড়ই না, অনেক উঁচুও বটে, যা থেকে আমি একা একা নামতে পারিনা।

অনেক ভেবেছি, কিন্তু এখনো জানা হলোনা মামার খাবার ঘরটা দোতলায় কেন! তার পাশেই একটা বড় ঘর যেখানে অনেক অনেক গুলো পাখি। আমি ওদেরকে দুহাত দিয়ে “আয় আয়” বলে ডাকি, কিন্তু একটাও আমার ধারে কাছে আসেনা। অথচ আপ্পির হাতে বসে ওরা কত ক্কী যে বলে! আমি ভেবেছিলাম বন্ধু হওয়াটা বেশ সহজ। মামী কেমন করে যেন আমার মন পড়ে ফেললো! একটা পাখি এনে আমাকে দিয়ে দিলো। অনেক ইচ্ছে হচ্ছিলো নিয়ে আসবো ওকে। ওর জন্য একটা ঘর বানাবো।

Bird1

নাস্তার টেবিলে দিনের কর্মসূচী হচ্ছে। শপিংএ যাচ্ছি আজ। বাহ, কিছু একটাতো আমি পাচ্ছিই নিশ্চিত। কেনাকাটা আমার বেশ লাগে। পুতুল, খেলনা অন্তত একটা বেলুনতো পাবোই। মামী জানান দিলেন আজ কিন্তু অনেক গরম পরবে। অতএব, হালকা কাপড় পরতে হবে সবার। অবাক করে দিয়ে সুন্দর একটা জামা এনে আমাকে পড়িয়ে দিলেন। গরমের জন্য একবারে যুতসই। নিজ হাতে বানিয়েছেন। এটাকে কি ভালোবাসা বলে!

এ আবার কেমন শপিংমল! একটা পুরানো দোতলা বাড়ি যার ঘরের মাঝেই গাছ গাছারা দিয়ে ভর্তি। আমি যাবোনা বলে পণ করেছি তাতে যদি আমাকে কিছু না কিনেও দেয়। কী না কী আছে ওখানে কে যানে! বাবা আর মামার কত কথা। কীর্তিপাশার এই চৌধুরী বাড়ির নাকি অনেক ইতিহাস। তারা এখানকার জমিদার ছিলেন। শুধু অর্থ কড়ি দিয়ে নয় সাথে শিক্ষাও ছিলো। শুনলাম তপন রায় চৌধুরী নাকি এখান থেকে বরিশাল জিলা স্কুলে পায়ে হেঁটে যেতেন যখন গাড়ির ব্যবস্থা ছিলোনা। বলে কি! এতো প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা! আমি পড়ার জন্য কেনো, কোন কারণেই এতোটা হাটতে পারবোনা।

Jomidar

হু হু করে গাড়ি চলছে বনের মধ্যে দিয়ে, পাশে শুধু গাছ আর গাছ। একটা ছোট নদীও আছে সাথে। বাবা আবার এই নদীকে খাল বানিয়ে দিলেন। কিছু গাছ দেখে মা একটু থতমত খেলো। কোনদিন নাকি সুপারি গাছ দেখেনি, বলে কি! আমার এতোটুকু জীবনে কত্ত কত্ত গাছ দেখে ফেললাম! পেয়ারা গাছগুলো কিন্তু বেশ। টসটসে পাকা পেয়ারা ঝুলছে যা দেখে আমার খুব খেতে ইচ্ছে হোল। আমিতো পেয়ারা অনেক পছন্দ করি। একসময় একটা ব্রিজের কাছে এসে আমরা থামলাম। সবাইকে নামতে দেখে আমি ভাবলাম এ আবার কোন জমিদারের ব্রিজে আসলাম।

boat1

বুঝে ফেলেছি, এই হোল শপিংমল। অবাক হবো কিনা ভাবছি। এ কেমন দোকানপাট! খালের দুপাশে সারি সারি নৌকা। না আছে পুতুল আর নাইবা আছে বেলুন। সবগুলোই সবজি বা ফলে ভর্তি। ব্যস্ততা শুরু হোল কেনাকাটার যা থেকে ইয়া বড় দুটো শসাও রেহাই পেলোনা। আমি থেমে গেলাম একটা পেয়ারায় নৌকার কাছে। পুরো নৌকাটাই চাই আমার। মামা আমাকে একটুও বঞ্চিত করেনি। এক-বস্তা পেয়ারা এবং সাথে সাথেই খাওয়া শুরু। আমি খাচ্ছি আর এই গরমের মাঝে হিমেল বাতাসে মনঃপ্রাণ জুড়াচ্ছি। খাচ্ছিতো খাচ্ছি।

Peara

কখন ঘুম এসে পড়লো কে যানে। শুধু মনে আছে কিছু একটা আমাকে ঝাপটে ধরে আছে যা শুধু ভালোবাসার অনুভবকেই মনে করিয়ে দেয়। সেটা আর কিছুই নয়, আমার ছোট্ট সুন্দর নীল-জামাটা।

আমার কোন জামা ই এত্ত সুন্দর নয়, হবেও না।

শিশু কথন – ১ । মামা বাড়ি

শিশু কথন – ২ । সমুদ্র সাঁতার

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ