মামা বাড়িটা বেশ পরিচিত হয়ে গেছে অল্প সময়ের মাঝে। আমার রুটিন আমি গুছিয়ে নিয়েছি। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সিঁড়ির কাছে গিয়ে “আপ্পি” বলে চীৎকার করা দিয়ে দিনের শুরু। যে ঘরটায় আমরা থাকি সেখানে একটা ঢাউস আঁকারের বেড। জানিনা, আমার মামার পূর্ব পুরুষেরা কী রাজা-বাদশাহ না জমিদার ছিলো। বেডটা শুধু বড়ই না, অনেক উঁচুও বটে, যা থেকে আমি একা একা নামতে পারিনা।
অনেক ভেবেছি, কিন্তু এখনো জানা হলোনা মামার খাবার ঘরটা দোতলায় কেন! তার পাশেই একটা বড় ঘর যেখানে অনেক অনেক গুলো পাখি। আমি ওদেরকে দুহাত দিয়ে “আয় আয়” বলে ডাকি, কিন্তু একটাও আমার ধারে কাছে আসেনা। অথচ আপ্পির হাতে বসে ওরা কত ক্কী যে বলে! আমি ভেবেছিলাম বন্ধু হওয়াটা বেশ সহজ। মামী কেমন করে যেন আমার মন পড়ে ফেললো! একটা পাখি এনে আমাকে দিয়ে দিলো। অনেক ইচ্ছে হচ্ছিলো নিয়ে আসবো ওকে। ওর জন্য একটা ঘর বানাবো।
নাস্তার টেবিলে দিনের কর্মসূচী হচ্ছে। শপিংএ যাচ্ছি আজ। বাহ, কিছু একটাতো আমি পাচ্ছিই নিশ্চিত। কেনাকাটা আমার বেশ লাগে। পুতুল, খেলনা অন্তত একটা বেলুনতো পাবোই। মামী জানান দিলেন আজ কিন্তু অনেক গরম পরবে। অতএব, হালকা কাপড় পরতে হবে সবার। অবাক করে দিয়ে সুন্দর একটা জামা এনে আমাকে পড়িয়ে দিলেন। গরমের জন্য একবারে যুতসই। নিজ হাতে বানিয়েছেন। এটাকে কি ভালোবাসা বলে!
এ আবার কেমন শপিংমল! একটা পুরানো দোতলা বাড়ি যার ঘরের মাঝেই গাছ গাছারা দিয়ে ভর্তি। আমি যাবোনা বলে পণ করেছি তাতে যদি আমাকে কিছু না কিনেও দেয়। কী না কী আছে ওখানে কে যানে! বাবা আর মামার কত কথা। কীর্তিপাশার এই চৌধুরী বাড়ির নাকি অনেক ইতিহাস। তারা এখানকার জমিদার ছিলেন। শুধু অর্থ কড়ি দিয়ে নয় সাথে শিক্ষাও ছিলো। শুনলাম তপন রায় চৌধুরী নাকি এখান থেকে বরিশাল জিলা স্কুলে পায়ে হেঁটে যেতেন যখন গাড়ির ব্যবস্থা ছিলোনা। বলে কি! এতো প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা! আমি পড়ার জন্য কেনো, কোন কারণেই এতোটা হাটতে পারবোনা।
হু হু করে গাড়ি চলছে বনের মধ্যে দিয়ে, পাশে শুধু গাছ আর গাছ। একটা ছোট নদীও আছে সাথে। বাবা আবার এই নদীকে খাল বানিয়ে দিলেন। কিছু গাছ দেখে মা একটু থতমত খেলো। কোনদিন নাকি সুপারি গাছ দেখেনি, বলে কি! আমার এতোটুকু জীবনে কত্ত কত্ত গাছ দেখে ফেললাম! পেয়ারা গাছগুলো কিন্তু বেশ। টসটসে পাকা পেয়ারা ঝুলছে যা দেখে আমার খুব খেতে ইচ্ছে হোল। আমিতো পেয়ারা অনেক পছন্দ করি। একসময় একটা ব্রিজের কাছে এসে আমরা থামলাম। সবাইকে নামতে দেখে আমি ভাবলাম এ আবার কোন জমিদারের ব্রিজে আসলাম।
বুঝে ফেলেছি, এই হোল শপিংমল। অবাক হবো কিনা ভাবছি। এ কেমন দোকানপাট! খালের দুপাশে সারি সারি নৌকা। না আছে পুতুল আর নাইবা আছে বেলুন। সবগুলোই সবজি বা ফলে ভর্তি। ব্যস্ততা শুরু হোল কেনাকাটার যা থেকে ইয়া বড় দুটো শসাও রেহাই পেলোনা। আমি থেমে গেলাম একটা পেয়ারায় নৌকার কাছে। পুরো নৌকাটাই চাই আমার। মামা আমাকে একটুও বঞ্চিত করেনি। এক-বস্তা পেয়ারা এবং সাথে সাথেই খাওয়া শুরু। আমি খাচ্ছি আর এই গরমের মাঝে হিমেল বাতাসে মনঃপ্রাণ জুড়াচ্ছি। খাচ্ছিতো খাচ্ছি।
কখন ঘুম এসে পড়লো কে যানে। শুধু মনে আছে কিছু একটা আমাকে ঝাপটে ধরে আছে যা শুধু ভালোবাসার অনুভবকেই মনে করিয়ে দেয়। সেটা আর কিছুই নয়, আমার ছোট্ট সুন্দর নীল-জামাটা।
আমার কোন জামা ই এত্ত সুন্দর নয়, হবেও না।
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এত্ত দিন জানতাম মামা বাড়ী রসের হাড়ি! এখন দেখছি অশেষ হাড়ি!
কোনটা রেখে কোনটা ধরি!
রান্না ঘর, পাখি, জমিদার বাড়ী থেকে নৌকামল! কী নেই তাই ভাবছি অবাক মনে,
নীল জামা আর পাকা পেয়ারায় এত্ত মজা দেখে ভাবছি আমাদের কেন মামু বাড়ী নেই!!
মামু ডাইক্কা মামু বাড়ী যামুই যামু!
নাসির সারওয়ার
মামাবাড়ির আরো কত যে কথা আছে, তাকে অশেষ হাড়ি বলা ভুল হবেনা। বড় হয়ে ঐ জমিদার বাড়ি আরো যাবো। ইতিহাস তো ভবিষ্যতের কথাই বলে দেয়।
নীল জামাটা অনেক যত্ন করে রেখেছি। অনেক মায়ার এই নীল জামা আমার।
মন খারাপ করতে নেই। আমার অনেক মজার মামা বাড়ি নিয়ে যাবো।
মিষ্টি জিন
বারবি ডল,ইশ কি সুন্দর তোমার নীল জামাটা।আমার একটাও নীল জামা নেই।
🙁
তোমার এই শপিং মলে আমি অনেক ছোট বেলায় গিয়েছি।অনেক অনেক সুন্দর।
তোমার মত কেন আমার এত মায়া, ভালবাসায় ভরা মামা বাড়ীর নেই। ;(
অনেক অনেক দোয়া তোমার জন্য।
নাসির সারওয়ার
মামীকে বলে নীল জামা বানিয়ে দেবো। আমি বললে মামী না বলতেই পারবে না। আমার মামা বাড়ির আরো কত কত কথাযে আছে!
ওরকম শপিংমল কজনে দেখেছে!
অনেক বেশি বেশি দোয়া লাগবে কিন্তু আমার।।
মিষ্টি জিন
ইস বারবিডলের মত আমার ও একটা নীল জামা হবে , কি মজা, কি মজা। তোমার মামাবাডীর সব কথা একটু একটু করে আমাদের শোনাও।
অপেক্ষা করছি।
এত্ত এত্ত দোয়া।
নাসির সারওয়ার
মামাবাড়ীর আরো অনেক গল্প আছে, শোনাবো।
দোয়া চলতে থাকবে কিন্তু।
নীলাঞ্জনা নীলা
এঞ্জেলটার গায়ে এত্তো সুন্দর নীল জামা! অনেক মজা করছো মামা বাড়ীতে, তাই না? ইস আমারও যেতে ইচ্ছে করছে আমার মামার কাছে। 🙁
শোনো শক্ত পেয়ারা খেতে যেওনা কিন্তু, তারপর দাঁত ভেঙ্গে গেলে কি হবে! 😀
অনেক আদর এঞ্জেলমনি। -{@
নাসির সারওয়ার
কিছুদিন পরেই আবার যাচ্ছি মামাবাড়ি। আমার সাথে যাবার জন্য দাওয়াত দিয়ে রাখলাম কিন্তু। অনেক মজা হবে সেব্যপারে নিশ্চিত আমি।
কাউকে বলা যাবেনা, আমার দাঁত নাই। তাই ভেংগে যাবার কোন ভয়ও নাই।
আদরের সাথে দোয়িও লাগবে আমার। হুহুম
নীলাঞ্জনা নীলা
দোয়া অবশ্যই আছে এঞ্জেল।
মামাবাড়ী আবার যাচ্ছো? আমি কি করে যাবো? আমার যে পরীদের মতো ডানা নেই! 🙁
নাসির সারওয়ার
ডানা লাগবেনা। একটা নৌকা যোগার করো। আমার মামাবাড়ির আশেপাশে অনেক খাল আছে।
দোয়া পর্ব কিন্তু চলতেই থাকবে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আয় মেয়েরা আয় ছেলেরা
মামা বাড়ি যাই……
এমন সব কবিতার মতোই আপনার লেখা।নৌকামল মুন্সিগঞ্জ কাঠপর্টিতে দেেছিলাম।সারি সারি ফল মুলের নৌকা ভিড়ে আছে ঘাটে। -{@
নাসির সারওয়ার
এই ছড়াটা আমার খুবই প্রিয়। আমার মামাবাড়ি যে আমার অনেক প্রিয়, তাই।
এখনতো আবার মুন্সিগন্জও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা, ওখানে পেয়ারা আছেতো!
ইঞ্জা
ভাই আপনার লেখাটি নিয়ে কিছুই লিখবোনা শুধু ওই পুতুলটাকে ইনেক অনেক আদর আর চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে চাই। (3 (3
নাসির সারওয়ার
আচ্ছা। পৌঁছে দেবো আদর।
ইঞ্জা
😀
ব্লগার সজীব
ভ্রমন কাহিনী অনেক পড়েছি। শিশুর জবানীতে ভ্রমন কাহিনী এই প্রথম পড়লাম। ছোটখাট বিষয়গুলোও সুন্দর ভাবে তুলে এনেছেন। আসলেই তো, ঢাকায় যারা বসবাস করেন তারা তো সুপারী গাছই দেখেননি। শিশুটি ব বড় হয়ে এই লেখা যখন পড়বে, তার কেমন লাগবে ভাবছি 🙂
নাসির সারওয়ার
শিশুরা অনেক কথা বলে। তার অনেক কিছুই আমাদের বোধগম্য নয়। তবে আন্দাজের উপরে কিছু বুঝে নেয়া যায় (মাঝে মাঝে)। কে আদর করে তা কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারে ওরা।
আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ ওদেরকে প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
তাইতো, এসব পড়ে কি ভাববে বড় হয়ে! লেখককে পাগল না ভাবলেই হোল।
আবু খায়ের আনিছ
আপনি তো প্রখর স্বৃতিশক্তি ধারণ করেন দেখছি, এত ছোট বেলার কথা এখনো মনে আছে কি করে। শেরে বাংলার সময়ে হলে হয়ত দুইজনে প্রতিযোগীতা করতে পারতেন। দুইজনেই কিন্তু আবার এক বিভাগের মানুষ।
আমার কিছু মনে নেই যে কেন? থাকলে আমিও লিখতে পারতাম। আহারে! আপসোস 😮
নাসির সারওয়ার
আমাকে প্রথম যেদিন ন্যাড়া করলো, আমার ষেদিনের কথাও মনে আছে। আমার চিৎকার থামাতে সবাইকে অনেক ঘাম জরাতে হয়েছিলো।
অনেক কিছু ভুলে যেতে চাই, কিন্তু পারছি কই।
লীলাবতী
এই নীল জামাটা আমার লাগবেই। খুব মজা করা হয়েছে মামা বাড়ি তাইনা? 🙂 পিচ্চিটাকে আদর (3
নাসির সারওয়ার
এখনতো দেখছি মামীকে আরো অনেকগুলো নীল জামা বানাতে হবে! তবে আমারটার মতো ওতো সুন্দর না বানাতেই বলবো!!
মামা বাড়ীটা অনেক অনেক মজার জায়গা। চাইলেই আমি নিয়ে যাবো।
শুন্য শুন্যালয়
ইশ এমন একটা নীল জামা আমাকে কোন মামী কোনদিন বানিয়ে দিলো না 🙁 আমারও এমন মামাবাড়ী চাই ই চাই ;(
খালের উপর শপিংমল? এই পিচ্চি নির্ঘাত স্বর্গ রাজ্য ঘুরে এসেছে। ইশ কবে যে যাবো!
কেউতো পেয়ারাও দিলো না, নিজে গাছে উঠে উঠে পেড়ে খেতে হয়েছে। এই পিচ্চিটার রাজ কপালে একটা টিপ রইলো। এত্তো আদর (3
নাসির সারওয়ার
আমার মামীর মত মামী আর কারো থাকতেই পারেনা।
থাক, মন খারাপ করোনা। তোমাকেও নিয়ে যাবো আমার মধুর মামা বাড়ী এবং মামী তোমাকেও নীল জামা বানিয়ে দেবে।
দেখেছো, আমার মত কজন দেখেছে এ শপিংমল! মা তো আমাকে তিপ না দিয়েই বলে “টিপ দিয়ে যা”। আমি টিপ দিতে চাই।
অনেক বেশী বেশী ভালো থেকে কিন্তু।
ফারহানা নুসরাত
নীল জামা গায়ে দেওয়া শিশুটি কি আপনার ভাইয়া? মাশাল্লাহ্ খুব সুন্দর | শিশুর ভাবনা যে কত রকম হতে পারে তার ঠিক নেই | আমিও লিখেছিলাম এই বিষয়ে |
সাবিনা ইয়াসমিন
পড়ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। প্রথম পর্বে ভেবেছিলাম এটা কেবলই এক ভ্রমণ গল্প হবে। কিন্তু গল্পের ছলে কীর্তিপাশা চৌধুরী বাড়ির জমিদারেরও ইতিহাস জানা হলো। ভাসমান শপিংমল এর বর্ননা শুনে আমারও একবার যেতে ইচ্ছে করছে। আর কিছু না হোক অন্তত এক বস্তা পেয়ারা আমারও চাই 🙂
নাসির সারওয়ার
আমার মামাদের বললেই আপনাকে নিয়ে যাবে। সাথে সুপারি গাছও দেখে আসবেন।