আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূখন্ডেবিগত কয়েক বছর ধরে যে প্রাচীন সভ্য মানুষ প্রকৃতি ও বহিরাগতদের অজস্র আক্রমনের মোকাবেলা করে ক্রমাগত আপন আস্তিত্বকে দৃঢ়তর করেছে,যাদের উত্তরসূরীরা অসংখ্য ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বংশধারাকে বিস্তৃত করেছে অদ্যাবধি, তারাই আমাদের পূর্ব পুরুষ। এই বিশ্বস্ত মাটির বুকে কান পাতলেই শুনতে পার খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় দেড়হাজার বছর আগে যখন খাইবার ও গোলান গিরিপথ ধরে ভিন দেশী আর্যরা ক্রমাগত অগ্রসহ হচ্ছে এ অঞ্চলের তৎকালীন পন্ড্রু, গৌড় , বঙ্গো, রাঢ়, সমতট, হরিকেল নামক বিভিন্ন জনপদের দিকে। তখন বহু প্রাচীন কৌম সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এ অঞ্চলের অনার্য আদি অধিবাসীরা যারা অস্ট্রেলীয় বা ভিড্ডিড নামে পরিচিত
আর্যদের সাথে এদেশীয় অনার্যদের যুদ্ধ হয়েছিল হাজার বছর ধরে। তারপর জয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে কালক্রমে পারস্পরিক সভ্যতার আদান প্রদানের মাধ্যমে পরিপুষ্টি লাভ করেছে এতদেশীয় বৃহত্তর জাতিসত্বা। নৃতাত্তিক বিশ্লেষন অনুযায়ি আর্যদের আগমনের পূর্বে চৈনিক মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর রক্তধারা ব্যাপক ভাবে সংমিশ্রন লাভ করে এ অঞ্চলের আদি অধিবাসীদের সঙে, যার সুষ্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয় পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতীয়দের মধ্যে। আর্যদের আগমনের পর পারস্য তুর্কিস্থানের শেক’রাও ছড়িয়ে পরে ও মিশে যায় এ অঞ্চলের মানুষের রক্তের সাথে। এখানেই শেষ নয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্তে ভীনদেশী রক্ত মিশেছে অনেক ভাবে। বাইরের বহু পরাক্রমশালী রাজারা এদেশে অভিযান চালিয়ও কিয়দাংশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে মিশেছে। বিদেশী রাজকন্যা বিয়ের প্রচলন থেকেও এসেছে ভিন্দেশী রক্ত।কয়েকজন হাবসী রাজার রাজত্ব যেমন এনেছে কৃষ্ণবর্ণ মানুষ তেমনি মধ্য যুগের আরবী সুফি সাধক ও সওদাগররাও মিশিয়েছে সেমেতিক রক্তধারা। যাদের অত্যাচারে এদেশের মানুষ অতিষ্ট ছিল একদা, সেই মগ জলদস্যূদের রক্তও মিশেছে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে। বস্তুতঃ যুগে যুগে সময়ের দাবী মেটাতে, সভ্যতার বিকাশকে ক্রমাগত এগিয়ে নেয়ার তাগিদে আমাদের এই বাংলার ইতিহাস নানা সময় নানা দিকে মোড় নিয়েছে।বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে একেকটি নতুন বোধের মানুষের মনে যা কালক্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক জাতিসত্ত্বার বিকাশের দিকে এ অঞ্চলের মানুষকে টেনে নিয়েছে, যে জাতির নাম বাঙালী জাতি।জাতি গঠনে বিভিন্ন রক্তের সংমিশ্রনের ঘটনা ভূরি ভূরি।
বাঙ্গালী জাতিও তার ব্যাতিক্রম নয়। কবিগুরু যথার্থ বলেছেন—
“ হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবির চীন
শত হুন দল পাঠান মোগল এক দেহে হ’ল লীন।“
চলবে—
বিঃদঃ দেশের চলমান অবস্থা নিজেকে খুব অসহায় করে ফেলেছে তাই নিজের ইতিহাস খুঁজতে বসলাম।
১৮টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
তথ্যবহুল পোস্ট।
খসড়া
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
শিকর অনুসন্ধান করা অত্যন্ত জরুরী।
আমিও শুরু করেছিলাম,কিন্তু সময় আমাকে সময় দিচ্ছে না।
আমার প্রিয় একটি বিষয় নিয়ে খুব মুল্যবান এওটি পোষ্ট দিলেন
ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় ব্লগার।
আরো লিখুন
শুভ কামনা।
খসড়া
ভাল লাগল ভাই আপনার মন্তব্য। সত্যিই দিশেহারা হয়ে গেছি আজকের সকালে ঘুম থেকে উঠেই চৌদ্দগ্রামের এই নৃশংস আগুন দেখে,। শিকর খুঁজে ফিরি নিজেরই প্রয়োজনে। কঠিন লেখা ভাষার বাধুনি আনতে সময় লাগে তাই অল্প করে দিলাম।
ছাইরাছ হেলাল
মনযোগী ছাত্রের ন্যায় লেখাটি পড়লাম।
এক সময় এ বিষয়টিতে কিছু আগ্রহ জন্মেছিল, তা ঐ পর্যন্তই।
আবার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে আপনার লেখা পড়ে। লিখতে শুরু করুণ।
এতদিন পরে নয়, আরও দ্রুত লেখা চাই।
খসড়া
আসলে এখন দেশের এই পরিস্থিতি দেখে নিজের শিকরের সন্ধানে বের হলাম। বারবার একই প্রশ্ন করি নিজেকে আমি কি সন্ত্রাস থেকে উৎপন্ন।
লীলাবতী
ইতিহাস ভিত্তিক আমাদের উৎসের পোষ্ট ভালো লেগেছে আপু।পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
খসড়া
ধন্যবাদ লীলাবতী। আমাদের উৎস খুঁজতে হবে আমরা কি সত্যিই নিকৃষ্ট জাতি হিসাবে,
স্বপ্ন নীলা
তথ্যবহুল পোস্ট – দারুন ভাল লাগা
খসড়া
ভাল থাকুন আরও পরুন নিজেকে জানুন।
নওশিন মিশু
পলিবাহিত এই ব-দ্বীপটি খুবই নতুন একটি ভূখন্ড। এখানে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, নিগ্রো, মঙ্গল ও ককেশিয়ো রক্তের মিশ্রণ হয়েছে ব্যাপক হারে। এই নানান রক্ত, জাতি ও গোত্রের সহাবস্থানের মাধ্যমে গড়ে উঠে এই জাতি। যার নাম বাঙ্গালী জাতি … :p
খসড়া
এই জাতিরই রয়েছে সমৃদ্ধশালী ইতিহাস।
খসড়া
আপনার লজ্জা পাবার কারন কি?
নওশিন মিশু
ঐতিহ্যকে বহন করতে না পারা কি লজ্জার নয়?
খসড়া
ও আচ্ছা।
বনলতা সেন
এ ভাবেই শুরু? কত অজানা রয়ে গেছে তা এ লেখার কাছে এসে বুঝলাম।
খসড়া
পড়লেন দেখে ভাল লাগল।
শুন্য শুন্যালয়
খুঁজে খুঁজে চলে এলাম এ পোস্টে। পরের পোস্টগুলোতে দেয়া লিংকগুলো কাজ করছেনা আপু।
ইতিহাস তা যদি হয় নিজের শেকড়ের ইতিহাস, ভালো তো লাগবেই। আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট, এখন আপনার সবগুলো পর্ব একসাথে পড়বো।