আমি ২০১১ এর শেষদিকে এই জায়গার ছবি দেখি একজনের এ্যালবামে....পুরাই মাথা নষ্ট করার মতন জায়গা....রাতে ঘুমের ঘোরে ঔ পাথুরে দেয়ালের মাঝে দিয়ে ঘিরে রাথা পানির উৎসে ভাসতে থাকি বাঁশের ভেলায়.....কবে বাস্তবে যাব সেই চিন্তায় আমার ছুটির দিনগুলো অতিবাহিত হতো......হঠাৎ একদিন ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখলাম বুধবার সরকারী ছুটি....বৃহস্পতিবার কোনমতে অফিস খেকে ছুটি নিতে পারলেই কেল্লাফতে... 🙂 ....শুরু হয়ে গেলো প্লানিং.....গ্রুপ চ্যাটে ঢাকা থেকে ৯ জন আর আমরা ctg থেকে দুজন...আমি আর অপু ভাই....ctg থেকে আবার আ্যাড হলো আলো....১২ জন ফুলফিল....শীপন ও যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক...বেড়ে দাড়ালো ১৩ জন....আরো লোকজন আ্যাড হতে ইচ্ছুক....হঠাৎ করে রানা প্লাজা ধ্বস...ঢাকা থেকে সবাই ট্যুর ক্যানসেল করলো....হাতে সময় দুদিন....শুধু ctg থেকে আমরা চারজন.....নৌকার আসনের কথা ভেবে আরো দুজন আ্যাড করতে চাইলাম.....সবাই এক পা আগায় তো তিন পা পেছায়....শেষ মুহূর্তে আবারো আমরা চারজন....আম্মাকে বললাম বান্দরবান যাচ্ছি কিন্তু আব্বা যদি আমার কথা জিগ্গাসা করে তাহলে বলবেন আমি জাহাজে....রাত ১১.১৫ মিঃ এ আব্বা কল দিয়ে জিগ্গাসা করলো আমি কোথায়....আমি তোতা পাখির মতন বলতে শুরু করলাম--হঠাৎ শীপে প্রব্লেম হইছে , আজ শীপে থাকতে হবে পরশু নাগাদ বাসায় চলে আসবো....বাপজান আমারে কয় --কিন্তু তোর আম্মা কইলো বান্দরবান যাইতেছোস!!!.....খাইলাম ধরা 🙁 .....আমতা আমতা করে বললাম জ্বি আব্বা কথা সত্য...দোয়া কইরেন...আমি শুক্রুবারেই ফিরে আসবো....। কি আর করা...রওনা দিলাম আল্লাহর নাম নিয়া.....ভোর ছটায় বান্দরবানে গিয়া উপস্থিত হলাম....থানচির উদ্দেশ্য বাস ছাড়বে আটটায়....শুয়ে গেলাম দোকারের বেন্চে......সেল ফোনে কিশোর ভাইয়ের ম্যাসেজ....কই আপনারা??...এত্ত সকালে ম্যাসেজ দেখে দিলাম কল...লাইন কেটে দিলো অপাশ থেকে....রিপ্লাই দিয়ে বল্লাম থানচি যাওয়ার বাস স্ট্যান্ডে....দিলাম ঘুম....অপু ভাইয়ের ডাকে চোখ কচলাতে কচলাতে বাসে গিয়ে বসলাম....৮টা বেজে ৮.৩০ কিন্তু বাস ছাড়ার নাম নাই...বাস খেকে নীচে নেমে দাঁড়াতেই পরিচিত কন্ঠে অপুভাই ডাক শুনে দেখি কিশোর আর আহসান ভাই বত্রিশ দন্ত বিকাশিতো করে হাসছে......সেরাম এক্টা সারপ্রাইজ খাইলাম.....ওদের দেখেই মনটা অনেকগুন বেশী আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো....বাস ছেড়ে জীপ ভাড়া করলাম....আঁকা-বাঁকা রোডে তীরের গতিতে ছুটলো জীপ.....অপু ভাই গরমে অস্থির হইয়া জীপ থেকে নেমে বমি করে দিলো...এই দেখে আলোর ও গলার ভিতর কপুত কপুত শুরু হয়ে গেলো.....আমি মনে মনে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করছি যাতে কোন সমস্যা না হয়...নাফাক্ষুম দেখে রওনা দিলাম জিনা পাড়ার উদ্দেশ্য....বিকাল ৪.৩০ নাগাদ ওখানে পৌছে গেলাম....হেডম্যানের বাসায় ঢুকে আবারো গরমের পাল্লায় পরলাম....উপরে টিনের ছাদ....বাইরে এসে খোলা মাচায় শুয়ে পরলাম....সময়ই টানে না.....অলস শুয়ে খাকতে থাকতে বিরক্ত ধরে গেলো সবার.....কার্ড বের করে খেলা শুরু করলাম....এক পাহাড়ী জিগ্গাসা করলো --- ৯ কাড খিলতে পারু টুমি..?? জবারে পারি বলাতে সে মহা উৎসাহে আরো একজনকে ডেকে নিয়ে এসে বললো টাকা দিয়ে খেলতে ইচ্ছুক কিনা...দশ টাকা করে...গাইড আবুলের দিকে তাকালাম....আবুল এক্টু আগেই তার সাথে মিথ্যা মিথ্যা আগডুম-বাগডুম খেলে ১ লাখ ৬০ হাজার বায়বীয় টাকা জিতেছিলো.....আমরা খেলা শুরু করলাম....১০ গেমে দুই পাহাড়ী এক্টা লীড ও পেলোনা....ওদের এক্টাই কথা----উবাবা কেমু্ন করে মিল্লু এবাবে....টাকা ছাড়া রণে ভঙ্গ দিলাম খেলায়......সারাদিনের ক্লান্তি শেষে কোথায় এক্টু আরাম করে ঘুমাবো তা না...জিনা পাড়াতে অপু ভাই আর আহসান ভাই জীনা হারাম করে দিসিলো....কিভাব--- তা আর জন সন্মূখে কইলাম না..... :p ......পরদিন সকালে আকাশ মেঘলা দেখে হেডম্যান আমাদের ছাড়তে রাজি নয়...অনেক রিস্কি...নামতে পারবো না...ব্লা ব্লা ব্লা....আবুল তারে গর্বের সহিত বলতে শুনলাম--ওয়া ইতারা ১২০০০ ফিট বাওইন্না পোয়া...কিছু অইতো ন....(কাশ্ আবুল জানতো বার হাজারের শেষ দুইহাজার ফিট কেম্মে উঠছি... :p) ...রওনা দিলাম স্বপ্নময় অমিয়াক্ষুমের উদ্দেশ্যে.....অমিয়াক্ষুমে নামার মূল পাহাড়ের কাছে গিয়ে চক্ষু বের হয়ে আসার জোগার কোটর থেকে......নামতে হবে প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে সাথে আবুল যোগ করলো প্রায় ১৮০০ ফিট....দুরু দুরু বুকে নামা শুরু করলাম....আহসান ভাই সবার আগে হুরমুর করে নেমে যাচ্ছে...বিসমিল্লাহ্ বলে নামা শুরু করলাম....আধ ঘন্টা পর শুরু হলো দু পায়ের কাঁপুনি....পা রাখতেই পারছি না , নামাতো দূরের কথা....রেষ্ট নিয়ে নিয়ে নামলাম বাকী পথ........অমিয়াক্ষুমের পাথড়ের উপর দাঁড়িয়ে হারিয়ে ফেললাম ভাষা......
এত সৌন্দর্য কিভাবে এলো এই জায়গায়...........অজানা শীহরণে শিহরিত মন-প্রাণ-দেহ.........ওরে দেখরে তোরা সবে এ আমি কোথায় এসেছি...... 🙂
অমিয়াক্ষুমে বেশ কিছু ছবি তোলার পর বাঁশের ভেলায় চড়ে রওনা দিলাম সাতবাইক্ষুমের উদ্দশ্যে....
ট্রাজেডি শুরু.....ট্যুরের একমাত্র ক্যামেরার চার্জ শেষ যেটা অপু ভাইয়ের.....আমার সেল ফোনের চার্জ ইন্তেকাল করছে পাহাড়ে নামার আগেই....গাইড আবুলের সিম্ফনি ছিলো আমার শেষ ভরসা....
দুঃখে সবার মন বিক্ষিপ্ত....এত্ত সুন্দর এক্টা যায়গার ছবি নেই আমাদের......ব্যাপার না....ইনশাল্লাহ্ আবার আসবো এই সৌন্দর্যের রাণীর কাছে......
২৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর বর্ণনা।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ মোঃ মজিবর রহমান ভাই
মরুভূমির জলদস্যু
লেখাটা দেখতে খূব অদ্ভূত লাগছে।
এখানে যাওয়ার খুব ইচ্ছে আছে, কে জানে কবে যেতে পারবো।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
পাইরেটস ভাই মনোবলটাই আসল…আশা করি আপনি ও যাবেন একদিন
ছাইরাছ হেলাল
একজন প্রকৃত ভবঘুরেকে পেয়ে পড়ে অনেক ভালো লাগল।
মনে হল লেখাটি হঠাৎ শেষ হয়ে গেল।
সামান্য নিয়মিত হলে সমস্যা কী ?
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
হেলাল ভাই অনুপ্রেরনা দিয়েছেন…লিখবো… 🙂
নুসরাত মৌরিন
কী সুন্দর!! (y)
জিসান শা ইকরাম
ছবি দেখে তো আমারো পুরো মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু ৮০ ডিগ্রী, ১৮০০ ফুট দেখে ভয় পাচ্ছি।
মনে সাহস আছে, শরীরে সইবে কিনা বুঝতে পারছিনা।
একটি ভ্রমণ এবং ছবি পোষ্ট এমনই হওয়া উচিৎ
চমৎকার বর্ননা আর ছবিতে পোষ্ট ঝক ঝক করছে।
শুভ কামনা।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ জিসান ভাই…
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
একটি প্রকৃত ভ্রমণ পোস্ট পড়ার মজাই আলাদা। আফসোস ,কোনদিন দেখা হবে না।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
এইতো আমার চোখে দেখে নিলেন… 🙂
মামুন
ছবি সমৃদ্ধ সাবলীল বর্ণনাটি ভালো লাগলো। মুগ্ধতা রেখে গেলাম। 🙂
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ মামুন ভাই
খেয়ালী মেয়ে
সৌন্দর্যের রাণীর সাথে আপনার কাটানো সময়ের বর্ণনা ভালোই (y)
একেবারে শেষের ছবিটা দেখে আপনার জন্য খুব মায়া হলো, আহারে কত কষ্ট কইরা পাথর ঠেলে বের হওয়ার চেষ্টা করছে 🙁 “খুল যা ছিমছিম” আলীবাবা চল্লিশ চোরের সে বিখ্যাত মন্ত্রটা কি জানা ছিলো না আপনার :p
বাই দ্যা ওয়ে আপনেকে সোনেলাতে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে 🙂
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
same here… 🙂
মেহেরী তাজ
আপনার বর্ননা আর ছবি দেখে স্থানের প্রেমে পরে গেলাম ভাইয়া।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ আপু…
শুন্য শুন্যালয়
এ আমি কাকে দেখছি!!!! নাহ চোখ ডলেও বোহেমিয়ান কে দেখা যাচ্ছে। গর্ত থেকে বাহির হও। কেমন আছো?
এই জায়গায় আমিও বেড়াতে যাব, তুমি কিন্তু কথা দিছিলা মনে থাকে যেন।
আবারও স্বাগতম সোনেলায়। উত্তর দেয়ার জন্য কবে আসবা আল্লাহ্ মালুম।
আমরা এমন ছবি আরো দেখতে চাই।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
তুমি তো অমাবশ্যার চাঁদ হয়ে গেছো… :p
ব্লগার সজীব
পোষ্ট দিয়ে সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে গেলেন নাকি ? খুব ভালো উপস্থাপনা।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ সজীব ভাই…হারাই নাই…আছি… 🙂
লীলাবতী
আরে এ দেখি আমাদের পরিচিত সুইটু ভাইয়া? এতদিনে পেয়েছি আপনাকে।আমি মরে গেছি তাইনা?খুব খুশি হয়ে লিখেছিলেন।অপেক্ষা করেন, আপনাকে ধরা হবে 🙂 কত ভালো লেখেন আপনি।ফেইসবুকে এত সময় দিলে এখানে সময় দিতে পারবেন না ভাইয়া।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ফেসবুকে না গেলে পেটের খাদ্য হজম হয় না… :D)
সোনিয়া হক
সাম্প্রতিক মন্তব্য দেখে আসলাম আপনার পোষ্ট। বাংলাদেশে এমন সুন্দর স্থান আছে, জানতামই না ভাইয়া।বর্ননায় মজা পেয়েছি প্রচুর। আরো লিখুন ভাইয়া।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
অবশ্যই লিখবো আপু….
কামাল উদ্দিন
চেনা জায়গা, মনকে নষ্ট্যালজিক করে তোলে, শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম ভাই।